শঙ্খচিল পর্ব-২০

0
1583

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ২০

” এটা কি করলেন। ”

তানহা ছল ছল চোখে বললো, ” ভুলে লেগে পড়ে গেছে। ”
” ম্যাডাম এটা সরকারের সম্পত্তি। সরকারি কোন কিছু নষ্ট হলে জরিমানা দিতে হয়। প্লাস..”

” প্লাস কি?”

ইলহাম বাঁকা হেসে বললো ” দন্ড ভুগতে হয়।”

দন্ড শব শুনে তানহা ভয় পেয়ে গেলো। সিরিয়াল কিলার কে ধরতে এসে না জানি তার নিজেরই জেলের ভাত খেতে হয়, ভাবতেই তানহা ভয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, তানহা মিন মিন করে বললো,

” আপনি কি আমাকে জেলে দেবেন? ”

” জরিমানা পরিশোধ করুন, তার পর বাকি টা দেখা যাবে। ”

” কত টাকা জরিমানা হয়েছে? ”

” পাঁচ হাজার। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো ” পাঁচ হাজার? ”

ইলহাম বাঁকা হেসে বললো “জ্বি।”

ধ্যাত পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ফুলদানি কেনো ফুলদানির গুষ্টি কেনা যাবে। ভুলে পড়ে গেলো ওমনি দাম বেরে গেলো। তানহা মাথা নিচু করে বললো,

” আমার কাছে এখন এতো টাকা নেই। ”

ইলহাম স্মিথ হেসে বললো,
” তাহলে ৪৮ ঘন্টা লকাপে থাকুন। ”

” আরে জরিমানা দেবো না না করেছি নাকি? ”

” ওকে দেন। জরিমানা দিন, বাকি কথা পড়ে। ”

তানহা রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি ইলহাম বললো, ” জরিমানা পরিশোধ না করে, কোথায় যাচ্ছেন।”

” বাড়ি যাচ্ছি টাকা আনতে। ”

ইলহাম চেয়ার নাড়িয়ে বললো,” যদি আবার ফিরে না আসেন তখন? ”

তানহা বিরক্ত হয়ে বললো, ” ফিরে কেনো আসবো না? কেস টা তো আমারই। ”

” সরি, আপনাকে একা ছাড়া যাবে না। ”

” ঠিক আছে । আপনি না হয় আমার সাথে চলুন। ”

” ওকে। বাট…”

” বাট কি? ”

” সরকারি গাড়ি দিয়ে গেলে, তৈলের খরচ দিতে হবে আপনাকে। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” তৈলের খরচ আমি কেনো দিবো? আপনি আমার সাথে রিকশায় চলুন। না গেলে বসে থাকুন। ”

ইলহাম কিছু একটা ভেবে বললো, ” আচ্ছা চলুন। মিস…অপস আপনার নাম টা কি যেনো?”

” তানহা।”

ইলহাম আর কিছু জিজ্ঞেস কিছু জিজ্ঞেস করলো না। তানহা চুপ চাপ এস. আই ইলহামের পিছু পিছু হাটা শুরু করলো। শাহবাগ থানা থেকে বের হতেই ইলহাম বললো, ” গাড়িতে উঠুন মিস তানহা। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” গাড়িতে? ”

” হ্যাঁ। সামনে আমাদের কাজ আছে। ”

তানহা গাড়িতে উঠে বসলো৷ ড্রাইভিং সিটে হারুন রশিদ বসে আছেন। গাড়ি ড্রাইভ করছেন পাশেই ইলহাম বসে আছে এবং পেছনেই তানহা। ইলহাম গাড়ির লুকিয়ে গ্লাসে বার বার তানহার দিকে আড় নিজরে তাকাচ্ছে, তানহা গ্লাসের দিকে তাকানোর আগেই ইলহাম নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। কালো সান গ্লাস পরে পূর্নরায় তানহা কে দেখলো। তানহা তার তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ গাড়ি থামতেই তানহা চমকে উঠলো, আমতা আমতা করে বললো,
” আমরা কি চলে এসেছি?”

” অন্য দিকে মনোযোগ না দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখুন।”

তানহা ইলহামের কথা শুনে ভেংচি কাটলো৷ এই লোকটা কি সোজা কথার সোজা উত্তর দিতে পারে না? তানহা বাইরে তাকিয়ে দেখতে পেলো তানহা বাসার মোড়ে চলে এসেছে। তানহা হঠাৎ চমকে উঠলো, কারন ওনারা কিভাবে জানলো এটা তানহার বাড়ির রাস্তা। ওনাদের তো জানার কথা নয়, দ্বিতীয়ত পুলিশ দের সাথে তার পূর্বে কোন পরিচিত ও নেই, যে তারা জানবে।
তানহা অস্থির হয়ে বললো, ” আপনার কি ভাবে জানলেন এটা আমার বাড়ির রাস্তা?”

ইলহাম স্মিথ হেসে বললো, ” ওটা আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি আগে জরিমানার টাকা নিয়ে আসুন। ”

” আগে বলুন। কি ভাবে জানলেন? ”

ইলহাম সান গ্লাস খুলে তানহাকে ধমক দিয়ে বললো, ” পুলিশের সাথে ত্যারামি করছেন কেনো? যা বলছি তাই করুন। ”

পেছন থেকে হারুন বললো, ” বস ইয়ে মানে স্যার.. কুল৷ ”

ইলহাম হারুন রশীদের কথা শুনে স্থির দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো। তানহা ছল ছল দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দেবে। ইলহাম শ্বাস ফেলে বললো,
” আপনার জিডির ফাইলে এড্রেস দেখেছি৷”

” আগে বললেই হতো৷ এভাবে কেউ বকে? ” বলেই তানহা হন হন করে বাসার গলিতে ঢুকে গেলো৷ পরক্ষণেই সে থামকে দাঁড়িয়ে ইলিহামের দিকে তাকালো। চোখ দুটো তার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই সে বিল্ডিংয়ের কাছে চলে এলো। বাসায় ঢুকে গেট খোলা পেয়ে তানহা সোজা দাদীর রুমে চলে গেলো,সত্যি কথা বলবে কি না ভাবতে ভসবতে দাদীর সামনে গিয়ে, তানহা মন খারাপ করে বললো,

” রাস্তা দিয়ে আসার সময় ভুলে মিশুর স্কুটি ভুল পথে চালিয়ে নিয়ে গেছিলাম। তাই পুলিশ ফাইন করেছে দাদী। ”

” তোকে না বলেছি স্কুটি চালাতে না। ”

” সরি দাদী আর ভুল করবো না। প্লিজ হ্যাল্প করো আমাকে৷ ”

শেহতাজ বেগম চশমা চোখে দিয়ে বললেন ” কত টাকা?”

তানহা মুখ গোমড়া করে বললো” পাঁচ হাজার টাকা। ”

” কিহহহ। পাঁচ হাজারে কয় টা শূন্য হয় তুই জানিস?”

” জানি। প্লিজ এবারে মতো বাঁচাও। ”

শেহতাজ বেগম আলমারি খুলতে খুলতে বললেন, ” তোর বিয়ের পর, তোর জামাইয়ের কাছ থেকে সব টাকা আদায় করবো আমি। ”

” করো দাদী। ব্যাটা কে ফকির বানিয়ে দিও। ”

শেহজাদ বেগম হাসলেন। তানহা কে টাকা দিয়ে বললেন, ” এবার লাস্ট। আর মিশুর স্কুটি ছুঁবিও না। মনে থাকবে তো?”

তানহা টাকা হাতে নিয়ে, মাথা দুলিয়ে বললো, “আচ্ছা দাদী। ”

তানহা নিচে নেমে বাসার গলি দিয়ে বের হয়ে, ইলহাম কে দেখতে পেলো না। অবাক হয়ে খানিক ক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। হারুন রশীদ দৌড়ে তানহার কাছে এলো হাপাতে হাপাতে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। তানহা জিজ্ঞেস্যু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, কিছু একটা ভেবে হারুন রশীদ বললো, ” বস আপনাকে বাসায় চলে যেতে বলেছে। ”

” কেনো? আপনার স্যার কোথায়?”

” এতো কিছু বলার সময় নেই। আপনি চলে যান। ”

” টাকা…” তানহা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হারুন রশীদ এক প্রাকার দৌড়ে চলে গেলো। তানহা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, অতঃপর বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো।

———————————————-

—- কুসুমতি ভিলা—-

অনিচ্ছা থাকা শর্তেও দুদিন পর মানহা কুসুমতি ভিলায় প্রবেশ করলো। সকাল বেলা তানিয়ার ফোন পেয়ে মুখের ওপর আর না করতে পারেনি মানহা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আজ সে শেষ বারের মতো যাবে কুসুমতি ভিলায়। শিহাব কে আর পড়াতে পারবে না সে, কুসুমতি ভিলায় যে তার একটা না হওয়া সংসার পড়ে আছে, তা তো একমাত্র মানহা-ই জানে। ভাবতে ভাবতেই কুসুমতি ভিলার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেললো।
দারোয়ান গেট খুলে দিয়ে বললো, ” আপা মুনি ভেতরে যাইবেন না?”

” হ্যাঁ যাবো। ”

বলেই বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো। কলিং বেল বাজাতেই তানিয়া আপু এসে দরজা খুলে দিলো, মানহা কে দেখে হাসি দিয়ে বললো, ” আগে বলো দুই দিন আসো নি কেনো? ”

মানহা কি বলনে বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করতে করতে বললো ” আসলে, শরিরটা ভালো লাগছিলো না তাই আর কি..”

” এখন কেমন আছো?”

মানহা মাথা দুলিয়ে বললো, ” এইতো ভালো। আপনার সাথে কথা ছিলো আপু.. ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি শিহাবের রুমে যাও আমি আসছি। ”

মানহা বসার রুম পার হতে যাবে ঠিক তখনি দেখতে পেলো ওয়াহাবের বাবা – মা বসে আছে। মানহা এক নজর তাকিয়ে, সালাম দিতেই ওহাবের বাবা হাসি মুখে সালামের উত্তর দিলো। তবে কুসুম বেগম ( ওয়াহাবের মা) বইয়ের দিকে মনোযোগ থাকায় মতি ( ওহাবের বাবা) বাবার সাথে তাল মিলিয়ে সালামের উত্তর দিতে পারলেন না৷ মানহার আপাদমস্তক খুটিয়ে দেখতে লাগলেন। মানহা কুসুম বেগমের তিক্ষ্ণ চাহুনি দেখে, সংকোচ নিয়ে দ্রুত শিহাবের রুমে চলে গেলো।
শিহাব বসে বসে অংক কষছে, মানহা রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে শিহাবের অংক কষা দেখতে লাগলো। ধাপে ধাপে শিহাব অংক কষে ফেললো। মানহার উপস্থিতি টের পেয়েই শিহাব হাসি দিয়ে মানহার দিকে গনিত খাতা বাড়িয়ে দিলো….

———————————————–

” শোন তানিয়া… ”

তানিয়া গাছে পানি দিতে দিতে মায়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো, ” হ্যাঁ বলো মা। ”

” মেয়েটা দেখতে খারাপ না। বছর তিনেক পর আবার ডাক্তার হবে, আমার ওয়াবের সাথে মন্দ লাগবে না। কি বলো তানিয়ার আব্বা?”

মতি সাহেব, খবরের কাগজ থেকে চোখ উঠিয়ে বললেন, ” আমারো তাই মনে হয়। মেয়ের আদোব – কায়দা আছে। নম্র ভদ্র ভালো মেয়েই তো ওয়াহাবের জন্য চাই। ”

কুসুম বেগম কিছুটা মুখ বাকিয়ে বললেন, ” সালাম তো সবাই দেয় এতো নম্র, কায়দা, কানুনের কি দেখলে। ”

মতি সাহেব চশমা ঠিক করে বললেন, ” আমার যা মনে হলো তাই বললাম। ”

তানিয়া ফিনিক হেসে তাকিয়ে রইলো। মায়ের কথা শোনার জন্য। কুসুম বেগম মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বললেন, ” মেয়ের বাড়ির লোকের সাথে যোগাযোগ করে দেখ তাড়া কি বলে…”

” আচ্ছা মা। আজই যোগাযোগ করবো। ”
বলেই তানিয়া সরে গেলো৷ রুমে গিয়ে ওয়াহাব কে খবরটা দিতেই ওয়াহাব কেবিনে চুপটি করে বসে রইলো৷ মা যে এতো তাড়াতাড়ি মানহার ব্যাপারে রেস্পন্স করবে সে ভাবতে পারে নি।
ঘন্টা দুয়েক বাদে তানিয়ার রুমের দরজায় নক পড়তেই দেখতে পেলো, মানহা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। তানিয়া তাড়া দিয়ে বললো,
” আরে মানহা দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে এসে… ”

মানহা ভেতরে ঢুকে বললো, ” আপু আপনার সাথে কথা ছিলো, আস…”

” মনে পড়েছে। তুমি তখন কি যেনো বলতে যাচ্ছিলে আমি ভুলেই গেছিলাম…”

” আমি কালকে থেকে আর পড়াতে আসবো না। কেনো আসবো না তা বলতে পারবো না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না আপু। আমি বাধ্য হয়ে টিউশনি টা ছাড়ছি। ”

তানিয়া অবাক হয়ে বললো…..



চলবে
বড় পর্ব দিয়েছি কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here