গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ৬ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan
নিশান নিশি”র থেকে কিছুটা দূরে চলে যায়। নিশি এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। তারপর আবার বলা শুরু করে….
– তাহলে বলুন আপনার গফ কোথায় ? কেমন দেখতে সে ? অনেক সুন্দরী না। তা তাকে আনলেন না কেন ? আমিও একটু দেখতাম। কতো ইচ্ছা ছিলো দেখার। এতোক্ষণ এইজন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম জানেন। ( বলেই জিহ্বা কামড় দেয় )
– ( নিশান ড্রাইভ করতে করতে নিশি”র দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে ) কি বললা তুমি
.
নিশি দাঁত বের করে হেসে..
– না কিছু না
– না তুমি কিছু বললে আবার মনে হলো
– না সত্যি কিছু না
– ওহ্।
এমন সময় গাড়ি”টা থেমে যায়। নিশি ভয়ে ভয়ে নিশানের দিকে তাকায়। কিন্তু নিশান তো সব জানে কি হয়েছে তাই সে কোনো কিছু বলে না।।
নিশি বার বার নিশানের দিকে তাকায় আর এক হাতের ওপর আরেক হাত রেখে বার বার ঘসতে থাকে। কারন আশপাশ একবারে নীরব। কোনো বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে না। শুধু গাছপালা ভরা মনে হয় জঙ্গল।।
নিশি : তা এটা কি হলো। এখানে তো পুরাই নীরব। আর এতো গাছপালা। মনে হয় না এখানে কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে। আমি তো চেয়েছিলাম স্যারের গফ’কে শাকচুন্নী ভর করে। এখন তো মনে হচ্ছে আমাকেই ভর করবে। আল্লাহ প্লিজ প্লিজ প্লিজ এমন কিছু কইরো না। ( চোখ বন্ধ করে বির বির করতে করতে )
.
এদিকে নিশান ইচ্ছে করেই নিশি”কে এখানে এনেছে। ও জানতো গাড়ি”র পেট্রোল শেষ হবে। খুব ইচ্ছে ছিল তার নিজের জান পাখি”র সাথে বসে চাঁদ দেখবে। আকাশের তারা গুনবে আজ তা পূরন হবে। নিশান নিশি”র দিকে তাকায়। দেখে চোখ বন্ধ করে কি জানি বির বির করছে।
নিশান নিশি”কে ডাকে..
নিশান : নিশি এই নিশি
নিশি : ……
নিশান : নিশি
নিশি : ……
নিশান : ( নিশি”র হাতের ওপর হাত রাখে )
.
নিশি নিশানের হাতে”র ছোঁয়া পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। ওর শরীর শিউরে উঠে। হার্টবিট বেড়ে যায়। সে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে নিশানের দিকে তাকায়। দেখে নিশান শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিশানের এমন চাহনি দেখে নিশি”র মন যেনো শান্ত হয়ে যায়। কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। তখন নিশান নিশি”কে জিজ্ঞেস করে….
– নিশি ঠিক আছো তুমি
– ( মাথা নেড়ে ) হুম
– ( নিশান হাত সরিয়ে ) কি বির বির করছিলে এতোক্ষণ
– না কিছু না
– তাহলে চলো বাইরে যাই
– ব…বা..বাইরে
– হ্যঁ বাইরে
– না না আমি যাবো না বাইরে
– কেনো
– বাইরে গেলে শাকচুন্নী এসে আমার ঘাড় মটকাবে আমি যাবো না বাইরে
– তোমাকে কে বলল বাইরে শাকচুন্নী আছে
– আপনি দেখছেন না বাইরে কতো গাছপালা
– হ্যাঁ তো
– আর শাকচুন্নী তো গাছে”ই থাকে। আর যদি তালগাছ থাকে। তাহলে তো
– তাহলে তো…
– তাহলে তো তালগাছে”র পেত্নি এসে আমায় ধরবে
– আমি তো জানি আম গাছে ভুত- প্রেত থাকে
– হ্যাঁ হ্যাঁ আম গাছও তো আসে। তারপর সুপারি গাছ, জাম গাছ,, নারকেল গাছ,, কাঁঠাল গাছ ও তো আছে।
– ওহ্ আচ্ছা এইগুলাতেও ভুত থাকে
– আরে ভুত তো গাছে থাকে। আর তা সব গাছে”ই থাকে বুঝলেন
– হ্যাঁ তুমি অনেক বোঝালে আমায়। আমি বাইরে গেলাম দেখতে হবে গাড়ি”র কি হয়েছে
– আরে বাইরে যাওয়ার দরকার কি আমি বলে দিচ্ছি পেট্রোল শেষ গাড়ি”র
– তা তুমি কিভাবে জানলে…
– আরে আমি”ই তো ( নিশি জিহ্বা কামড় দিয়ে চুপ হয়ে যায় )
– আমি তো মানে
– ( কিরে তুই নিশি । কি করছিস ? যদি জানতে পারে তুই গাড়ি”র পেট্রোল শেষ করার জন্য ঢাকনা খুলেছিস তাহলে স্যার তোকে নদী”র পানিতে চুবিয়ে মারবে )
– কি হলো নিশি ?কি ভাবছো এতো ( জান পাখি 😁 তুমি নিজের জালে নিজে ফেসেছো। এখন বাচবে কিভাবে ? শুধু একবার বলো এটা তোমার কাজ। দেখো কি করি আমি তোমার)
– আসলে স্যার এখানে”ই দেখাচ্ছে। দেখুন আপনি। গাড়ি পুরো খালি ( গাড়ি”র হ্যান্ডেল”এর দিকে তাকিয়ে )
– ওহ্ হ্যাঁ ( বেঁচে গেলে)
– হুম ( খুব বাঁচা বেচে গেলাম আজ)
নিশান বাইরে বের হলো। তারপর ওপাশে নিশি”র কাছে গিয়ে বলল…..
– নামবে
– উহু না
– তুমি নিজে”ই একটা শাকচুন্নী তোমার আবার শাকচুন্নী”র ভয় এতো( এই বলে নিশান ফোন”টা হাতে কাউকে কল করতে করতে চলে গেলো )
– কি আমি শাকচুন্নী । এতো সাহস উনার উনি আমাকে শাকচুন্নী বলেন। এই দাঁড়ান আপনি।
.
নিশান কাউকে গাড়ি আনতে বলে পিছনে ফিরে দেখে নিশি দু হাত কোমরে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
নিশি নিশানের কাছে এসে বলে ওঠল…..
– কি বললেন তখন আপনি আমায় ? আমি শাকচুন্নী। আপনার আমাকে শাকচুন্নী”র মতো লাগে। আপনি নিজেই তো মামদো ভুতের নাতনি, রামছাগল।।
কি ভাবেন নিজেকে হুম।
– দেখো তোমার পিছনে শাকচুন্নী
– থাকুক গিয়ে শাকচুন্নী ! ক…ক..কি বললেন শাকচুন্নী( ঢোক গিলে )
– হুম দেখো তোমার দিকে আসছে।।
নিশি ভয় পেয়ে নিশানের কাছে গিয়ে ওর শার্টের বোতাম আঁকড়ে ধরে
– প্লিজ প্লিজ প্লিজ ওটা “কে তাড়িয়ে দিন না। শাকচুন্নী”কে বলুন নিশি খুব ভালো মেয়ে। ও কখনো কারো পিছনে লাগে না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ বলুন না।
– 🤣 নিশি তুমি পারো ও বটে
– মানে
– আমি তো মজা করছিলাম।
– কিহহহহহহ🤬
নিশান গাড়ি”র কাছে গিয়ে গাড়ির উপরে গিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিশি : স্যার আমরা এখান থেকে যাবো কখন…??
নিশান : আমি ড্রাইভার”কে কল করেছি। সে গাড়ি নিয়ে আসছে।। ( নিশি”র দিকে তাকিয়ে)
দেখে নিশি একটা সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পরা। আর রঙ বেরঙের একটা উড়না গায়ে। চুল গুলো বেনি করা। চাঁদের আলোতে নিশি”কে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। রাস্তা”টা অনেক নীরব। আশপাশ কেউ নেই। এমনি দূর – দূরান্তে কোনো ঘর বাড়িও নেই। শহর থেকে প্রায় অনেক”টা দূরে তারা। নিশান কিছুক্ষণ নিশি”র দিকে তাকিয়ে আবার চাঁদে”র দিকে তাকায় । নিশি নিশানের কাছে গিয়ে গাড়ি”র ওপর নিশানের পাশে বসে নিশান”কে বলে……
– আপনি কি আপনার গফ এর কথা ভাবছেন
– হুম
– তা কেমন দেখতে সে
– ( আকাশের দিকে ইশারা করে ) ওই যে ওই চাঁদ”টার মতো
– বাহ এতো ভালোবাসা
– হুম । কিন্তু কথায় বলে চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। কিন্তু ওর কোনো খুদ নেই।
– ওহ আচ্ছা।
– তা আমাকে দেখাবেন তাকে
– না
– কেন
– তোমাকে দেখাবো কেন ।
– আমি দেখতে চেয়েছি তাই
– তুমি আসলেই অনেক বোকা।
– মানে
– আচ্ছা বাদ দাও। আকাশ”টা আজ অনেক সুন্দর না।
– সাথে আপনার চাঁদ টাও।
– হুম
.
নিশান আর নিশি কতোক্ষণ বসে সেই আকাশ দেখতে লাগল। দুজেন মাঝে নিরবতা। নিশান নিজের জান পাখি”র সাথে এভাবে সময় কাটাতে ভালোই লাগছে।
নিশান : আসলে যা হয় ভালোর জন্যই হয়। যদি তোমাকে আমি ওভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতাম তাহলে এতোটা ভালো লাগতো না যতটা এখন তোমার সাথে কাটাতে লাগছে। ( নিশি”র দিকে তাকিয়ে মনে মনে ) ।
নিশি নিশানের দিকে তাকাতেই নিশান চোখ সরিয়ে ফেলে।
.
নিশি : আচ্ছা আপনার গফ এর নাম”টা কি আমায় বলবেন না।
নিশান : তুমি জানতে চাও।
নিশি : হুম
নিশান : তার নাম জা……
তখনই একটা গাড়ি আসল। নিশান আর কিছু বলতে পারল না। গাড়ি থেকে ড্রাইভার বের হয়ে নিশান এর কাছে আসল।
ড্রাইভার : স্যার গাড়ি চলে এসেছে।
নিশান : হুম। আপনি আগে এই বাচ্চা টাকে বাসায় দিয়ে আসুন।
নিশি : ( নিশানের দিকে তাকিয়ে ) আপনি আমাকে বাচ্চা বললেন কেন?
নিশান : তুমি’ই তখন বললে আমি বাচ্চা
নিশি : হুহ
নিশান : ( হেসে ) ড্রাইভার এই বাচ্চা মানুষ টাকে দিয়ে আসেন যান।
নিশি : ( রেগে হাঁটতে হাঁটতে গাড়িতে ওঠল। )
.
ড্রাইভার গাড়িতে ওঠতে যাবে তখন নিশান বলল…
নিশান : ড্রাইভার ( ড্রাইভার এর কাছে গিয়ে )
ড্রাইভার : জ্বি স্যার
নিশান : চাবি”টা আমাকে দিন । গাড়ি আমি চালাচ্ছি।
নিশি : ( এই রামছাগল টা আবার গাড়ি চালাবে। )
ড্রাইভার : জ্বি স্যার এই নিন।
নিশান : হুম।
.
গাড়িতে ওঠার পর…
নিশি : আপনি গাড়িতে ওঠলেন কেন
নিশান : নিজের সম্পত্তি নিজে নিয়ে যাওয়া ভালো। এগুলো তুমি বুঝবে না
নিশি : মানে
নিশান : কিছু না
নিশি : উহু ( কি বলে নিজের সম্পত্তি । আমাকে বলল নাকি। কিন্তু আমাকে কেন বলবে। নাকি এটা বলছে না নিজের গফ কে দেখতে যাবে নিশ্চয়ই এটাই হবে। ওটাই ওর ওনার সম্পত্তি। )
.
নিশান গাড়ি চালিয়ে নিশি”কে বাড়িতে নামিয়ে দিল। নিশি বের হয়ে নিশান”কে একটা ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। নিশান দাঁড়িয়ে নিশি”র চলে যাওয়া দেখতে লাগল।
চলবে…..