গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ৯ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। নিশি এখন পুরোপুরি ভাবে সুস্থ। আজকে অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে নিশি। জর্জেটের একটা হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ পরে । তার সাথে জর্জেটের হলুদ রঙের ওড়না কুচি করে গলায় নেয়। হঠাৎ করে’ই সেদিনের কথা মনে পড়ে যায় । তাই আবার সেই ওড়না শরীরে ছড়িয়ে দেয়। চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে, কানো হলুদ স্টোন বসানো কানের দুল। হলুদ রঙের রেশমি চুড়ি, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা রঙের পিংক লিপস্টিক শেষ তার সাজ।গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে একটা সাইড ব্যাগ নিয়ে চলে যায় অফিসে।
.
স্কুডি চালিয়ে অফিসে আসে নিশি। নিশান নিজের কেবিনের বাইরে থেকে দেখে নিশি’কে । হলুদ পরী লাগছে তার জান পাখি’কে আজ। তাকে দেখেই যেনো অজান্তেই তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। দু’চোখ ভরে দেখছে তার জান পাখি’কে । কি আছে তার মাঝে যা তাকে এতো ব্যাকুল করে।
নিশি অফিস ঢুকেই সবার সাথে দেখা করে। দিয়া এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
“দিয়া : কেমন আছিস তুই। পায়ের ব্যাথা কমেছে তোর?
“নিশি : হ্যাঁ কমেছে। তুই কেমন আছিস।
“দিয়া : হুম ভালো। তা আজকে তোকে পুরো হলুদ পরী লাগছে জানিস!
“নিশি : তাই!
“দিয়া : হ্যাঁ। তোকে আজকে মিষ্টি হলুদ পরী লাগছে।
“নিশি : তা তো বুঝলাম। কিন্তু একজন’কে আজ দেখছি না কেন?
“দিয়া : তুই কি রকি’র কথা বলছিস?
“নিশি : হ্যাঁ কোথায় সে?
“দিয়া : বেচারা এখন হসপিটালে.?
“নিশি : কিহহহ?
“দিয়া : হ্যাঁ! যেদিন তোর এক্সিডেন্ট হলো সেদিন ওর’ও এক্সিডেন্ট হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ৬ মাস বেড রেস্ট থাকতে!
“নিশি : কি বলিস । এসব হলো কি করে?
“দিয়া : একটা গাড়ি ধাক্কা মেরেছিলো । তারপর মারাত্নক ভাবে আহত হয়েছিল রকি। পরে তাকে হসপিটালে নেওয়া হয়।
“নিশি : খুব খারাপ ভাবে গাড়ি’টা মেরেছিল !
“দিয়া : হুম। মে মেরেছিল মনে হয় অনেক রেগে ছিল তার ওপর!
“নিশি : হতে পারে!
.
এমন সময় নিশানের ডাক এলো। নিশি চুপচাপ নিশানের রুমে যেতে লাগল। নিশান একটা ফাইল কলম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল । কলম’টা হাত থেকে দরজার পিছনে পরে যায় । নিশান কলমটা ওঠাতে গেলে নিশি রুমে আসে। নিশান নিশি’র পিছনেই ছিলো। নিশি রুমে নিশান’কে না পেয়ে বির বির করতে থাকে….
“নিশি : ব্যাপার কি রামছাগল’টা আমাকে আসতে বলে নিজেই উধাও হয়ে গেল। আজব তো!
“নিশান : ( কলম উঠিয়ে দাঁড়িয়ে নিশি ‘র পেছন থেকে বলে ) আমি এখানে মিস নিশি!
“নিশি : ( নিশানের গলার আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে )
“নিশান : ( নিশি পিছনে ফিরায় নিশি’র লম্বা চুল গুলো নিশানের মুখে বাড়ি খায় )
“নিশি : সরি স্যার !
“নিশান : ( নিশি ‘র চুলের ঘ্রাণ তাকে পাগল করে দেয়। সে এক ধ্যানে সেই ঘ্রান নিতে থাকে )
“নিশি : স্যার!
“নিশান : হুম ( যদি সময়’টা কিছুক্ষণ এভাবে থেমে থাকত )। দেখে চলতে পারো না ।
“নিশি : সরি স্যার। কিন্তু আপনি দরজার পিছনে কি করছেন। লুকোচুরি খেলছেন নাকি? কিন্তু কার সাথে খেলছেন।
“নিশান : হুম ! তোমার সাথে খেলছি! ( দাঁতে দাঁত চেপে)
“নিশি : কিহ!
“নিশান : ইডিয়েট!
“নিশি : মানে?
“নিশান : আরে ইডিয়েট কলম পরে গিয়েছিল সেটা তুলছিলাম ।
“নিশি : ওহ্ আচ্ছা । কিন্তু কলম এখানে পরল কিভাবে?
“নিশান : ( নিশি ‘র দিকে কিছু’টা ঝুঁকে চোখ রাঙিয়ে ) আরেকবার ফেলে দেখাব?
“নিশি : ( ভয় পেয়ে ) ন… না থাক স্যার আমি তো এভাবেই জিঙ্গেস করেছিলাম ।
“নিশান : তাহলে এবার কাজ করেন যদি আপনার প্রশ্ন শেষ হয়ে থাকে তো!
“নিশি : জ্বি স্যার।
“নিশান : ওই যে টেবিলে ফাইল রাখা আছে। চেক করুন ওগুলো। আর হ্যাঁ কিছুক্ষণ পর একটা মিটিং আছে আমাদের তা আপনি আমার সাথে যাবেন। মনে থাকবে!
“নিশি : ওকে স্যার । ( ফাইল গুলো নিয়ে )
“নিশান : তা পা কেমন আছে এখন!
“নিশি : হ্যাঁ স্যার ঠিক আছে এখন।
“নিশান : হুম ।
।।
কিছুক্ষণ পর নিশি আর নিশান বের হয় মিটিং এর জন্য।। মিটিং টা ছিলো অন্য কোম্পানিতে। নিশান নিশি’র জন্য গাড়ি’র দরজা খুলে দিয়ে..
“নিশান : ওঠুন আপনি!
“নিশি : স্যার আপনি আমাকে আপনি বলছেন কেন?
“নিশান : তুমি এতো প্রশ্ন করো কেন?
.
নিশি বুঝতে পারে নিশান রেগে আছে, তাই সে কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে ওঠে পরে। এরপর নিশান গাড়িতে ওঠে । গাড়িতে কিছুক্ষণ বসে নিশান নিশি ‘র দিকে আগায় ।
নিশি নিশানের আগানো দেখে চোখ বন্ধ করে দেয়। তার হার্টবিট বেড়ে যায়। নিশান নিশি’র অনেক কাছে চলে আসে। তারপর ওর সিট বেল বেঁধে দেয়। নিশি এখনো চোখ বন্ধ আছে। নিশানের নিঃশ্বাস নিশি’র ওপর পরতে থাকে। নিশি শরীর এবার শিউরে ওঠে । বাতাস এসে নিশি ‘র চুলগুলো মুখের ওপর গিয়ে পরে। নিশান হাত দিয়ে নিশি’র চুল গুলো সরিয়ে কানে গুঁজে দেয়। তারপর। ফিসফিসিয়ে নিশি ‘র কানে বলতে থাকে….
“নিশান : গাড়িতে ওঠে সিট বেল বাধো না কেন? আমার আশায় থাকো নাহ্ । বেয়াদব মেয়ে!
“নিশি : ( মুখ ফুলিয়ে ) আপনাকে কে বলে প্রতিবার আমার সিট বেল বেঁধে দিতে!
“নিশান : মুখে মুখে তর্ক করছো!
“নিশি : আমি তর্ক করি না। তা সত্যি তাই বলি।
“নিশান : সত্যবাদি চলে এসেছে।
“নিশি : এই আপনি আমার সাথে মেয়েদের মতো ঝগড়া করেন কেন?
“নিশান : ওয়াট?
“নিশি : কথায় কথায় আমার সাথে ঝগড়া করেন। আচ্ছা এটা কি জরুরী!
“নিশান : বেশি কথা বলো তুমি!
“নিশি : হুহ।
.
নিশান আর নিশি চলে যায় মিটিং এ । মিটিং শেষ করে আসতে আসতে লাঞ্চ টাইম হয়ে যায় । নিশি পেটে হাত দিয়ে বসে থাকে। কারন তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে । নিশান তা বুঝতে পেরেও বসে আছে কারন নিশি তাকে কিছু বলেনি। সে চায় নিশি তাকে কিছু বলুক। এদিকে নিশি নিশান এর চৌদ্দ উদ্ধার করে।
“নিশি : হাতি,গন্ডার,শয়তান, নাইজেরিয়ান শিয়াল,লেজ কাটা ব্যাঙ, বিলেতি ইঁদুর,কালো বাঁদর , রামছাগল স্যার আমাকে এখনো বসিয়ে রেখেছে। বুঝতে পারছে না কিছু আমার ক্ষিদে লেগেছে। কতোক্ষণ বসিয়ে রাখবে এভাবে আমায়। জিঙ্গেস ও করছে না কিছু খাবো কি না । উনি জিঙ্গেস না করলে আমি কিভাবে বলবো উনাকে।
( বিড় বিড় করে )।
নিশি বিড় বিড় করেই যাচ্ছে। নিশান নিশি’র এমন বিড় বিড় করে কথা বলায় বুঝতে পারছে নিশি নিশানের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে। নিশান মুচকি হেসে নিশি’র দিকে তাকিয়ে আছে।
“নিশান : কিছু হয়েছে তোমার?
“নিশি : কিছু না ( শালা রামছাগল ! জিঙ্গেস কর খিদে লেগেছে কি না )
“নিশান : তাহলে এভাবে বসে আছো কেন?
“নিশি : এমনেই! কেন আপনার কোনো সমস্যা?
“নিশান : না আমার সমস্যা হতে যাবে কেন? তা খিদে লেগেছে তোমার? আমার কিন্তু অনেক খিদে লেগেছে তাই আর কি জিঙ্গেস করছি! খেতে যাবো!
“নিশি : কেন আমি না বললে কি খেতে যাবেন না !
“নিশান : হুম যাবো তো !
“নিশি : মানে !!
“নিশান : তোমার খিদে না লাগলে আমি কি করতে পারি বলো ! আমার লেগেছে তাই আমি তো খেতে যাবোই!!
“নিশি : ওহ্ তো যান ( তুই যাবি। রাক্ষস না তুই। তুই যাবি না তো কে যাবে বল। রামছাগল একটা!!)
“নিশান : আচ্ছা।।
.
নিশান একটা রেস্টুরেন্টে গাড়ি থামায়। নিজে নেমে তারপর নিশি দিকে গিয়ে গাড়ি’র দরজা খুলে বলে..
“নিশান : বের হও।
“নিশি : আমি কেন বের হবো । খিদে লেগেছে তো আপনার।
“নিশান : আমি জানি তুমি খাবে না । কিন্তু তাই বলে তুমি তো আর এখানে বসে থাকতে পারো না। তাই.. বের হও এখন।।
“নিশি : হুম ( আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়াবে । কিন্তু আমাকে খেতে দিবে না। আল্লাহ এটা কেমন বিচার।)
.
নিশি নামতেই নিশান নিশি’কে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। রেস্টুরেন্টে একটা কোনে খুব সুন্দর করে সাজানো। দেখতে বেশ লাগছে। নিশি ওখানে’ই তাকিয়ে থাকে। নিশি মনে মনে ভাবছে “ইস যদি ওখানে বসতে পারতাম। কি সুন্দর করে সাজানো ওটা”।
তখন একজন ওয়েটার আসে ওখানে..
– স্যার আপনি..?
“নিশান : নিশান চৌধুরী
– আপনার টেবিল বুক করা আছে। আপনারা আমার সাথে আসুন।
.
লোকটা তাদের সেই টেবিলে নিয়ে আসে। নিশি ওখানে যেতেই খুশি হয়ে যায়। এক গাল হেসে বলে..
“নিশি : আমরা এখানে বসবো
– জ্বি ম্যাম। টেবিল বুক করা ছিলো । আপনারা বসুন এখানে। আমি কিছুক্ষণ পর এসে ওর্ডার নিয়ে যাবো।
.
নিশান নিশি’র সেই হাসি’র দেখতে ব্যস্ত। নিশান নিশি’কে চেয়ারে বসিয়ে নিজে বসে বলে..
“নিশান : কেমন লাগল ডেকোরেশন’টা
“নিশি : খুব সুন্দর!
“নিশান : তাহলে বলছো পছন্দ হয়েছে
“নিশি : মে কেউ’ই করবে
“নিশান : হুম। তা তুমি তো কিছু খাবে না আমি তাহলে ওর্ডার করি।
“নিশি : করুন। ( গম্ভীর গলায় )
“নিশান : আচ্ছা ।।
.
ওয়েটার আসলে নিশান অনেক খাবার অর্ডার করে যার মধ্যে কাচ্চি বিরিয়ানি ছিল নিশি’র পছন্দের। নিশি’র ভাবতেই খারাপ লাগছে সে কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে পারবে না।
ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলে নিশি চুপচাপ বসে থাকে। নিশান কাচ্চি বিরিয়ানি’র প্লেট’টা নিশি’র দিকে দেয়। নিশি ভ্রু কুঁচকে তাকায় যার অর্থ কেন?
নিশান মুচকি হেসে বলে..
“নিশান : আমি জানি তোমার অনেক খিদে লেগেছে। খাও তোমার তো খুব পছন্দ।।
“নিশি : ( এক গাল হেসে ) সত্যি এটা আমার জন্য।।
“নিশান : হুম ।
.
নিশি এক চামচ নিজের মুখে নিতে’ই নিশান নিশি’কে থামিয়ে দেয়। তারপর এক চামচ নিজে খেয়ে মুচকি হেসে বলে..
“নিশান : দেখছিলাম সব ঠিক আছে কি না খাও এখন।
নিশানের সেই মুচকি হাসি’র অর্থ সে বোঝে না। সে কথা বলে এক কিন্তু তার মুচকি হাসি বলে অন্য কথা । নিশি মুচকি হাসি দিয়ে খেতে শুরু করে। কিন্তু নিশান খায় না। সে নিশি’র সেই খাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশি ভ্রু কুঁচকে বলে..
“নিশি : আপনি আমার খাবারে নজর দিচ্ছেন কেন । ( খাবারের চামচ মুখে দিতে দিতে )
“নিশান : ( মুখ ভেংচি দিয়ে ) তুমি কি আমার বিয়ে করা বউ নাকি যে আমি তোমার খাবারে নজর দেবো ।।
নিশি নিশানের এমন উওরে অবাক হয়ে যায় আর ওর হেঁচকি ওঠে যায় ।
“নিশান : আরে আরে আস্তে কি হয়েছে ? পানি খাও ( নিশি’র মাথায় হাত বুলিয়ে )
“নিশি : জানি না ( হেঁচকি দিয়ে ) থামছে না তো এটা !
“নিশান : আচ্ছা পানি খাও ।।
“নিশি : পানি খেয়ে ( আমাব হেঁচকি দিয়ে ) থামছে না ।
.
নিশান নিশি’র হেঁচকি থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু হেঁচকি নামার নাম’ই নিচ্ছে না।
“নিশান : নিশি ওখানে দেখো!
“নিশি : ( অন্যদিকে তাকিয়ে ) কি! ( হেঁচকি দিয়ে )
নিশি মুখ ফিরানোর সাথে সাথে নিশান নিশি গালে হুট করে একটা কিস করে । নিশি সাথে সাথে জমে যায় নিশানের এই ছোঁয়াতে। সে মুখ ফিরে বড় বড় চোখে নিশানের দিকে তাকায় । নিশান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেয়ে’ই যাচ্ছে যেনো কিছু’ই হয়নি । নিশি আশ পাশ তাকায়। তখন নিশান বলে ওঠে…
“নিশান : কেউ দেখে নি চুপচাপ খাও তুমি ।
নিশি নিশানের এমন উওরে চরম অবাক। সে খাবে কি নিশানের দিকে’ই তাকিয়ে থাকে ।
চলবে…..