গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১০ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan
নিশি মুখ ফিরানোর সাথে সাথে নিশান নিশি গালে হুট করে একটা কিস করে । নিশি সাথে সাথে জমে যায় নিশানের এই ছোঁয়াতে। সে মুখ ফিরে বড় বড় চোখে নিশানের দিকে তাকায় । নিশান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেয়ে’ই যাচ্ছে যেনো কিছু’ই হয়নি । নিশি আশ পাশ তাকায়। তখন নিশান বলে ওঠে…
“নিশান : কেউ দেখে নি চুপচাপ খাও তুমি ।
নিশি নিশানের এমন উওরে চরম অবাক। সে খাবে কি নিশানের দিকে’ই তাকিয়ে থাকে ।
” নিশান : ( আবার বলে ) কেউ কিছু দেখে নি বললাম তো খেয়ে নাও।
“নিশি : ( কাঁপা কাঁপা গলায় ) আ..আপ…আপনি এটা কি করলেন.?
“নিশান : ( নিশি’র দিকে একটু ঝুঁকে ) যদি বলো আবার করতে পারি ! ( বাঁকা হেসে )
“নিশি : আপনি এটা কি করলেন? কেন করলেন??
“নিশান : হেঁচকি থেমেছে তোমার!
.
নিশি খেয়ার করল আসলেই তার হেঁচকি চলে গেছে। আজব তো কেউ’র হেঁচকি এভাবে থামানো যায় আজ জানলো সে । কি হলো এটা। আচ্ছা বুঝলাম উনি আমার হেঁচকি থামাতে চেয়েছেন । তাই বলে এটা!!
নিশি শুধু ঘামছে। তার সাথে তার শরীর কাঁপছে। মস্তিস্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিশি’র হার্টবিট বেড়ে গেছে। সে চুপচাপ বসে আছে। নিশান নিশি’কে এভাবে দেখে জিজ্ঞেস করে..
“নিশান : কি হয়েছে ? খাচ্ছো না কেন.?
“নিশি : না আর খাবো না । ( যা হয়েছে তাতে আমার পেট এভাবেই ভরে গেছে )
“নিশান : কেন খাবার ভালো হয় নি ।
“নিশি : না ভালো হয়েছে। আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি আর খাবো না ।
“নিশান : আচ্ছা । চলো তাহলে!
“নিশি : আপনি খাবেন না।
“নিশান : না । শেষ আমার খাওয়া চলো।।
.
নিশান ওঠে নিশি’র হাত ধরে ওঠায় । নিশি তো মনে হয় এবার মরেই যাবে । কেমন লাগছে তার নিশানের ছোঁয়া । এরকম আগে কখনো হয় নি। নিশি হাত ছুটাতে চাইলেও পারছে না নিশান অনেক শক্ত করে নিশি’র হাত ধরে আছে। যেনো হাত ছারলেই নিশি পালিয়ে যাবে। নিশি যেনো লজ্জায় মরেই যাচ্ছে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে নিশি। মাথা নিচু করেই নিশানের সাথে যাচ্ছে নিশি। নিশান নিশি’কে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল বেঁধে দেয় । নিশানের এতো কাছে আশায় নিশি ‘র যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কেন এমন হচ্ছে তার সেটা তার জানা নেই।
.
নিশান গাড়ি চালাচ্ছে আর আড়চোখে নিশি’কে দেখছে। বেচারি দেখতে দেখতে এক বোতল পানি শেষ করে ফেলেছে। শুধু পানি খেয়েই যাচ্ছে । নিশানের দিকে একটি বার ও তাকাচ্ছে না। শুধু বাইরে তাকিয়ে আছে। সাহস নেই তার নিশানেল চোখে চোখ রাখার ।
“নিশান : কি হলো নিশি ? এতো খিদে যখন লেগেছে তাহলে তখন খাবার না খেয়ে এখানে পানির বোতল কেন শেষ করছো..!
“নিশি : ( ভেবাছেকা খেয়ে ) না মানে স্যার…
“নিশান : …..
.
নিশান ইচ্ছে করেই আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি নিশি’কে । সে চায় নিশি একটু সময় পাক তার কাছ থেকে । এভাবে তো আর ভালোবাসা হয় না । সে যেমন অনুভব করেছি সেও চায় তার জান পাখি সেরকম’টা অনুভব করুক তাকে ভালোবাসুক । কিছুটা সময় দিতে চায় সে তার জান পাখি কে । কিন্তু তার জান পাখি বুঝতে পারবে তো…!!
.
এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি চলে আসে নিজের গন্তব্যে । মানে অফিসে । আজকে’র দিনটা আসলেই খুব সুন্দর ছিলো। প্রতেক’টা মুহূর্ত কাটানো তার জান পাখি’র সাথে সেটা তার আজীবন মনে থাকবে।
কিন্তু নিশি কি জানি ভাবছে আনমনে । নিশ্চয়ই আজকের দিনের কথা । নিশানের প্রথম ছোঁয়ার কথা ।
হঠাৎ কারো ডাকে হুঁশ ফিরে নিশি’র । তাকিয়ে দেখে নিশান তাকে ডাকছে!
“নিশান : অফিসে যাবে নাকি এখানেই এভাবে বসে থাকবে।
“নিশি : হ্যাঁ স্যার যাচ্ছি ।।
.
নিশি দৌড়ে বের হয়ে অফিসে ঢোকে । কেন জানি নিশানের সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার । খুব অন্যরকম রাগে তার কাছে থাকতে । নিশানের থেকে দূরে থাকাটাই বেশি ভালো তার জন্য।।
অফিসে এখনও লাঞ্চ টাইম চলছে। সবাই ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে । নিশি ও যোগ দিলো তাদের সাথে। সবার হাতেই কফি। মানুষের ব্যস্ততা কাটানোর এটাই এক মাত্র মাধ্যম । খুব আজব না ব্যাপার টা। ( ভাবছে নিশি )
বেশি কিছু না ভেবে সেও এক কাপ কফি নিয়ে বসে পরে তাদের সাথে । সবাই গল্প করছে। দিয়া আর বাকি কয়েকজন মেয়ে’র সাথে । সবাই ওদের কলিগ কিন্তু এতো কথা হয় না ওদের সাথে । হুট করেই সবাই নিশানের টপিক নিয়ে কথা বলা শুরু করে। সেটা অবশ্য নিশি’র জন্য। কারন সেদিন নিশান সবার সামনেই নিশি’কে কোলে তুলে নিয়ে ছিল। যা সবাইকে এখনও ভাবাচ্ছে।
.
একটু আগে ঘটা ঘটনা তার মধ্যে সবাই আবার নিশানেল কথা বলায় একটু অস্তিকর লাগে নিশি’র কাছে। কি হচ্ছে এটা? যার কাছ থেকে পালাতে চাইছে সেই বার বার তার সামনে চলে এসেছে। এটা সে স্বয়ং নিজে হোক কিংবা তার কথা । একজন বলে ওঠে..
– আমাদের এই স্যার’টা কিন্তু খুব সুন্দর না।।
– আর খুব হ্যান্ডসাম ও ইয়ার ।
– আচ্ছা নিশি তোমার কেমন লাগল যখন তোমাকে, স্যার কোলে নিয়েছিল!
“নিশি : কেমন আবার লাগবে ?
– মানে এই ধরো তোমার খুব দারুন লাগল বিষয়’টা।আবার ধরো এই attraction.
“নিশি : সরি এরকম কোনো ফিলিং আমার কখনো আসিনি।
– কি মেয়ে গো তুমি?
– হ্যাঁ তাই তো আমরা চাই স্যার আমাদের সাথে থাকুক কথা বলুক কিন্তু স্যার তো আমাদের’কে পাত্তাই দেয় না। আর তুমি..
“নিশি : কি আমি ( মুখ ভেংচি দিয়ে )
– তুমি মানে তুমি! স্যার তোমার সাথে ভালো মতো কথা বলে,তোমার কেয়ার করে এটা।
“নিশি : আমি এরকম ভাবে কখনো ভাবি নি..!!
– কেনো তুমি কখনো তার চোখ দেখো নি! তার চোখের সেই মায়া,সেই নেশা । ঘন কালো হরিনীচোখ।
.
নিশি আর দিয়া গালে হাত দিয়ে ওদের কথা শুনতে থাকে । দুইজনেই একসাথে বলে…
– আর..!!
– তার সেই গোলাপি রঙের দু’ঠোট কখনো চোখে পড়ে নি,
– আবার তার সেই চুল,, উফফ কি সুন্দর লাইট ব্রাউন করা স্কিল চুল যা সবসময় স্যারের চোখের ওপর পরে থাকে।।
( নিশি আর দিয়া দুইজনেই মাথা নাড়িয়ে না বলে )
– আচ্ছা ওসব বাদ তার ফ্যাশিন সেন্স টা তো দেখছো। ওটাও খুব সুন্দর । বেশি সময় লাগে তার হাতের ওয়াচ থাকে আর তখন তার হাতা ফোল্ট করার স্টাইল’টা । এসব কখনো দেখোনি।
“নিশি : না গো আমি পিএ হয়েও তার এসব দেখার টাইম পাইনি । সারাদিন যা কাজ করান আমাকে দিয়ে!
“দিয়া বলে ওঠে…
– আচ্ছা সব তো বললি স্যার এর হাসি’র কথা তো বললি না।
– তুই দেখেছিস স্যার এর হাসি।।
“নিশি : কেনো তুমি দেখনি। আমি কয়েকবার’ই দেখেছি ।
“দিয়া : আমি ভাই একবারই দেখেছি। যখন তুই ঘুমিয়েছিল আর স্যার তোকে জাগাতে আসছিলেন। তখন স্যার হেসেছিলেন । তাও মুচকি হাসি ।
– আমাদের সাথে তো স্যার হেসে কথাই বলে না তাই আমরা দেখতে পায় নি । আচ্ছা স্যারের হাসি’টা কেমন ।
“নিশি : ( আনমনে ) হাসি’টা খুব সুন্দর । বিশেষ করে তিনি যখন হাসেন তার দাঁতের ওপরের সেই দাঁত’টা দেখা যায়। তখন ময় চায় তার সেই হাসি’র দিকেই তাকিয়ে থাকি। আসলেই তার সেই হাসি দেখে যে কেউ তার প্রেমে পড়ে যাবে । ( নিশি ভাবতে থাকে যখন নিশান তাকে কোলে নিয়ে হেসেছিল । তখন তার সেই হাসি’টার কথা )
উনার হাসি’র মানেই আলাদা । আর উনার সেই হরিনীচোখ । হ্যাঁ চোখ দুটি আসলেই হরিনীচোখ। কারন তার সেই চোখে অনেক কথা আছে । আরো অনেক কিছু আছে যা বলে বুঝাতে পারবো না। আর উনার হাসি’টা কিছু’টা বাচ্চাদের মতোও। কারন উনি হাসলে বাচ্চাদের মতো উনার চোখ দুটি বুঝে যায় ।
– বাহ্ তুমি নাকি কিছু’ই খেয়ার করো না । তাহলে এসব কি..??
“নিশি : আরে তেমন না । আমি তো এমনেই বললাম ( কি বলছিলাম এতোক্ষণ । ওনার হাসি নিয়ে এতো কথা বললাম কিভাবে )
– যাই হোক তুমি যা বললে তাতে স্যার এর ওপর আমার ইন্টারেস্ট আরো বেড়ে গেলো।।
“দিয়া : ব্যাপার কি তোরা দেখি স্যার বলতেই অজ্ঞান।।
“নিশি : হ্যাঁ তাই তো দেখছি।
– আরে এরকম একজন’কে কে না চায় তার জীবন সঙ্গী করতে। সব গুন আছে তার ।
– হ্যাঁ একটা মেয়েকে পাগল করার জন্য সবই আছে তার। তোরা জানিস তিনি কিন্তু খুব ভালো গান ও গায়।
“নিশি : সত্যিই!!
“দিয়া : তোর ইন্টারেস্ট বেড়ে গেলো যে ?
“নিশি : আসলে আমার গান খুব পছন্দ তাই
সবাই : ওহহহহহ!
“নিশি : এই তোরা যা ভাবছিস তা কিন্তু না আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি..
সবাই : কিহহ ( দাঁড়িয়ে )
– আচ্ছা সে কি দেখতে অনেক সুন্দর!!
– স্যার এর মতো কি হাসি।হুমমম!!
“নিশি : সে দেখতে যেমনি হোক না কেন আমার কাছে সেই সবচেয়ে সুন্দর!!
“দিয়া : কে সে??
“নিশি : আছে একজন.. আচ্ছা আমি এখন যাই লাঞ্চ টাইম শেষ!!
“দিয়া : হুম।।
।।
নিশি নিশানের কেবিনের দিকে যায় । নক করে রুমে ঢোকে দেখে নিশান ল্যাপটবে মুখ গুঁজে আছে। নিশি নিশান’কে ডাকতেই নিশান ওঠে নিশি’র দিকে তাকিয়ে থাকে । নিশানের ওমন তাকানোতে নিশি’র কাছে মনে হয় সময়’টা যেন এখন স্থির হয়ে আছে। হুট করছি নিশান ওঠে দাঁড়ায়। আর নিশি’র কাছে আসতে থাকে। নিশানের ওমন ভাবে আগানোতে নিশি পিছুতে থাকে। তার হার্টবিট বাড়তে থাকে। কেমন এক নিস্তব্ধতা পরিবেশ।
নিশি দেওয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকায় এল মানে আর জায়গা নেই পিছনে যাওয়ার। কিন্তু নিশান তাও আগাচ্ছে।
.
নিশি এবার চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশান নিশি’র কানে ফুঁ দেয়। নিশি চোখ বুঝে নেয়।
“নিশান : চোখ খুলুন ম্যাম
নিশি চোখ খুলে দেখে নিশান তার থেকে কিছুটা’টা দূরে তার দিকে তাকিয়ে আছে । নিশি বুঝতেই পারে না নিশান কেন তার এতো কাছে এসেছিল। নিশি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। নিশান নিশি’র ভ্রু কুঁচকে তাকানোতে প্রশ্ন খুঁজে পায়। তাই সে মৃদু হাসি দিয়ে বলে….
“নিশান : তোমার কানে কিছু একটা ছিল সেটা সরিয়ে দিলাম।
“নিশি : ওহ্ আচ্ছা।
“নিশান : কেন তুমি কি ভেবেছিলে?
“নিশি : কি… কিছু না তো?
“নিশান : ওহ্ আচ্ছা তাহলে পিচ্ছাচ্ছিলে কেন??
“নিশি : আপনি আগাচ্ছিলেন তাই!!
“নিশান : তাহলে…
এমন সময় কেউ নক করে। নিশান নিশি থেকে সরে গিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে।
এরপর তাদের মাঝে আর বেশি কোনো কথা হয় না।
চলবে……
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/383775973344181/