ফিরে আসা পর্ব-১৩

0
661

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-১৩

মহিমা ফাতেমার কন্ঠে শুনে ফাতেমার দিকে তাকাতেই মনে হলো সে যেন কোন পরী দেখে ফেলেছে ।মহিমাও হা করে তাকিয়ে আছে ।
ফাতেমা মহিমা আর তার মায়ের এরকম চাউনি দেখে একটু লজ্জা পেল । আর একটু মুচকি হাসলো
ফাতেমা- কেমন আছেন আপনারা???
ফাতেমার কন্ঠটা শুনে মাহিন একটু নড়ে উঠলো । কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে কন্ঠটা কিন্তু মনে করতে পারছে না।
কিন্তু মাহিন একবারের জন্যও ফাতেমার দিকে চাইলো না ।
হঠাৎ ফাতেমার চোখ পড়লো মাহিনের দিকে ।
ফাতেমা- মনে মনে বলছে ]আরে উনাকে তো চেনা চেনা লাগছে ।কোথায় যেন দেখেছি?ও হে এমন পরেছে । এ তো সেই ছেলেটা যার গাড়ির সাথে আমার ধাক্কা লেগেছিলো। তাহলে ইনিই পাত্র।
হে মাবুদ উনি তো অনেক রাগি।
মেহেঘ- এই যে মা তুমি এখানে আমার পাশে এসে বসো ।
ফাতেমা – জ্বি । জাযাকিল্লাহু খয়রান।
মেহেঘ – তোমার নাম কী??
ফাতেমা – খুব মিস্টি করে হেসে খুব সুন্দর করে বললো, আমার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস ফাতেমা।
মেহেঘ- বাহ সুন্দর নাম তো ।
মেহেঘ বেগমের ফাতেমাকে খুব খুব খুব ভালো লেগেছে । তিনি মনে মনে বলছে এমন সুন্দর মেয়ে তিনি কোন দিন দেখেন নি ।
মহিমারও ফাতেমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।
মহিমা- আচ্ছা আমি কি তোমাকে ভাবি বলতে পারি??
ফাতেমা – খুব লজ্জা পেল। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে । এখন তো ফাতেমাকে আরো সুন্দর লাগছে। ফাতেমা মুচকি হাসলো ।
মহিমার কথা শুনে মাহিন রেগে গেল।
মাহিন মনে মনে বলছে „এই মহিমা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?কি বলছে এসব?ঐ মেয়েকে মহিমা ভাবি ডাকছে কেন । ওদের মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে নাকি???
মাহিন রাগে ফুলছে ।
মহিমা আর মেহেঘ বেগম নানা ধরনের প্রশ্ন করলো ফাতেমাকে ।
মেহেঘ- যাও মা তুমি এখন আসতে পারো। আমাদের প্রশ্ন করা শেষ।
ফাতেমা তার মায়ের ঘরে চলে গেল।
মহিমা- wow….মা । আমাদের ভাবি তো অনেক সুন্দর । এতো সুন্দর মেয়ে কিভাবে পর্দা করে??এমন সুন্দর মেয়েরা তো রাস্তা ঘাটে সুন্দর করে সেজেগোজে বের হয়। কিন্তু এ তো. ….
মাহিন- পছন্দ হয়েছে মানে?????? What the…..
মেহেঘ – মাহিন তুই থাম। তুই দেখেছিস ফাতেমাকে????
মাহিন- আমার কোন ইচ্ছা নেই এই সব গাইয়্যা ভুত দেখার।
মেহেঘ- আরে মেয়েটা এতোটাও গাইয়্যা না । তুই ভালো করে দেখলে বুঝতি ।
আমার কিন্তু বেশ পছন্দ হয়েছে ।
মাহিন- তুমি কি বলতে চাইছো মা?
মেহেঘ- আমার কিন্তু বিয়েতে অমত নেই । এমন সুন্দর মেয়ে তুই পাবি না।
মাহিন- {মায়ের কথাগুলো শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো} । কি বলছো এসব মা? আমি এই আনস্মার্ট পর্দাশীল মেয়ে আমি বিয়ে করতে পারবো নার। কিছুতেই না ।
মা তুমিই তো কথা দিয়েছিলে যে তুমি এ বিয়ে হতে দিবে না । তাহলে এখন কি হলো যে, তুমি তোমার কথা রাখছো না? ??
মেহেঘ – না মানে…..আমি কি জানতাম মেয়েটা এতো সুন্দর???
আর শুন বিয়ের পরে সব মেয়েরা বদলে যায়।তুই না হয় ফাতেমাকে তোর মতো বানিয়ে নিস।
মাহিন- কিন্তু মা………
মেহেঘ- আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না । আমি গিয়ে তোর বাবাকে বলছি আমার ফাতেমাকে পছন্দ হয়েছে ।
মহিমা – হুম মা, আমারো পছন্দ হয়েছে।
মাহিন তো রাগে ফুলছে ওদের কথা শুনে।
মেহেঘ বেগম আরমান সাহেবকে গিয়ে বলছে
মেহেঘ- এই শুনছো ,আমার কিন্তু ফাতেমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে ।
আরমান – আলহামদুলিল্লাহ ।রফিক তোর ভাবির আর মহিমার ফাতেমাকে পছন্দ হয়েছে ।
রফিক- আলহামদুলিল্লাহ । এই খাদিজা শুনছো?
খাদিজা- হুম বলো। [রফিক সাহেবের কাছে এসে]
রফিক- ওনাদের ফাতেমাকে পছন্দ হয়েছে ।
খাদিজা- আলহামদুলিল্লাহ ।এই বলে খাদিজা বেগম চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।
হাসান এদিকে দৌড়ে গিয়ে ফাতেমাকে বললো
হাসান- পুচকি ওনাদের তোকে পছন্দ হয়েছে । তোর বিয়ে ঠিক । এবার বিয়েটা হবেই ।
ফাতেমা – [কেদে দিলো আর ভাইকে জড়িয়ে ধরলো] এই ভাইয়া আমি তোদের কে ছাড়া কি করে থাকবো রে ??? আমার যে ওখানে বড্ড একা লাগবে ।
হাসান- [বোনের সাথে সাথে সেও কেদে দিলো ] আরে ধুর পাগলি তুই কি একেবারের জন্য চলে যাবি নাকি । তোর যখন মন চাইবে তুই চলে আসবি ।
আরমান – তাহলে তো সব ঠিকি হলো । এবার বিয়ের তারিখটা ঠিক করতে হবে ।
রফিক – হুম ঠিক বলেছিস । সব যখন ঠিক তাহলে আর দেরি করা ঠিক হবে না । তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ঠিক করতে হবে ।
আরমান – বিয়েতে তো কত কাজ ,কত অনুষ্ঠান করতে হবে।
খাদিজা – আপনারা যখন এখানে সবাই আছেন ,আমার একটা কথা বলার ছিলো । যদি অনুমতি দেন তাহলে কথাটা বলবো? ???
আরমান – জ্বি ভাবি বলুন।
খাদিজা- না মানে ফাতেমা আমাকে আগেই বলে রেখেছিলো যে, যেদিন ওর বিয়ে হবে বিয়েতে যেন এতো অনুষ্ঠান না করা হয় । বিয়েটা যেন ঘরোয়া ভাবে নবীজির সুন্নত অনুযায়ী করা হয়।
রফিক – কি বলছো এসব????আমার একমাত্র মেয়ে আর আমি কোন অনুষ্ঠান করবো না??এটি কি করে হয়। সমাজে তো আমার একটা নাম আছে । মানুষ কি বলবে??একটা মাত্র মেয়ে আর সেই মেয়ের বিয়েতেই অনুষ্ঠান হবে না । সমাজে তো আমার নাম থাকবে না । সবাই হাসি মজা করবে ।
মেহেঘ- ভাবি এটা আপনি কি বলছে আমার একমাত্র ছেলে আর বিয়েতে অনুষ্ঠান করবো না???আমাদেরও তো একটা স্টেটাস আছে সমাজে।
ইমন- চাচি ওনি ঠিকি তো বলেছেন । সুন্নতি বিয়ে হচ্ছে সবচেয়ে বরকত ময় বিয়ে। সুন্নতি বিয়ে হলো মসজিদে বিয়ে পড়ানো । খুরজা খেজুর দিয়ে। আর যে বিয়েতে খরচ কম সেই বিয়ে বেশি বরকতময়।
খাদিজা- ঠিক বলেছ বাবা ।ফাতেমাও আমাকে এ কথাগুলোই বলেছে।
ইমন – আর হে বিয়ের আগে দেনমোহর পরিশোধ করাও সুন্নত। দেনমোহর পরিশোধ ছাড়া কোন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না।
আরমান- ঠিক আছে বুঝলাম । কিন্তু একেবারে অনুষ্ঠান না করলে এটা খারাপ দেখায় ।
ইমন – চাচ্চু তুমি বিয়ের পরের অনুষ্ঠানটা করতে পারবে ।
আরমান – তাহলে বিয়েটা কত তারিখ করানো যায় রে রফিক । ??
রফিক – তুই বল?
আরমান – এতো অনুষ্ঠান যেহেতু করতে হবে না সেহেতু আগামী সপ্তাহেই বিয়েটা হোক ।
রফিক – হুম তাহলে আগামি সপ্তাহের শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।

ইনশাআল্লাহ
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here