গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব- ৩৭+৩৮

0
3105

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
পর্ব- ৩৭+৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

গাঁয়ে এখনো বৌ-ভাতের লেহেংগানিয়ে-ই’,রুদ্রিককে অনাবরত ফোন করে যাচ্ছি। রুদ্রিক ফোনটা-ই’ ধরছে নাহ। আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে। রুদ্রিক কোথায় গেলো? ফোনটা-ই’ বা ধরছে নাহ কেনো? আমাকে এইভাবে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখে দিদুন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“এইভাবে উত্তেজিত হয়ে না দিদিভাই। রুদ্রিই দাদুভাই নিশ্চই কোনো কাজে আছে। ”

—“তা-ই’ বলে ফোনটাও ধরবে নাহ।”

কথাটি বলে আমি রুদ্রিকের নাম্বারে আবারো কল করলাম,কিন্তু এখন তো বন্ধ করে ফেলেছে।

আমি ফোনটা ফেলে দেই। দিদুন বললেন,

—“আমি বলে কী দিদিভাই তুমি একটু শান্ত হও। রুদ্রিক দাদুভাই সময়মতো ফোন করে দিবে। তুমি আগে নিজের গাঁয়ে লেহেংগাটা পাল্টে এসো।”

দিদুন আমার হাতে একটি শাড়ি দিয়ে, রুম ত্যাগ করেন।

আমিও শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।

আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়োতে-ই’, মুসকান কোথা থেকে যেনো দৌড়ে চলে আসে। আমি মুসকানের কাছে গিয়ে দেখি মুসকানের ছোট্ট একটি চিরকুট রয়েছে।
আমি মুসকানের দিকে ঝুঁকে বলে উঠলাম,

–“মুসকান সোনা। তোমার হাতে কিসের চিঠি? ”

মুসকান আমার কথা শুনে, আদো গলায় বলল,

–“একটা আংকেল আমাল হাতে দিতে । তোমাকে দিতে বলতে।”

আমার জন্যে চিরকুট? কে দিয়েছে? আমি মুসকানের হাত থেকে চিরকুট নিয়ে নেই। আমি চিরকুটটি হাতে নিয়ে খুলে দেখি রুদ্রিকের লেখা চিরকুট । তাতে লেখা রয়েছে,

—“কাজল আমাকে ফোনে না পেলে তুই ‘বেলি কুঞ্জ ‘ চলে যাবি। সেখানে কিছু প্রুফ আছে মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে। তুই সে প্রুফ গুলো আজকের জন্যে হলেও লুকিয়ে ফেলবি। আমার যতটুকু মনে
হচ্ছে মাহির আহমাদ কোনোভাবে বেলিকুঞ্জে যাওয়ার চেস্টা করবে এইসব প্রমান লুকানোর জন্যে। তুই তার আগে সব প্রমাণগুলো লুকিয়ে ফেলবি। আমার জন্যে চিন্তা করবি নাহ। আমি যেখানে-ই’ আছি। ঠিক আছি৷ ”

রুদ্রিকের লেখা চিরকুট পেয়ে মনে হলো কলিজায় পানি আসলো। বুঝতে পারছি নাহ রুদ্রিকের মনে এখন কি চলছে। নাহ এখন ভাবার সময় নেই।

আমি আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাতের পার্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

অন্যদিকে,

মাহির প্রশ্ন করে বললো,

—“আপনি রুদ্রিক শেখের আইনজীবি?

—-“জ্বী। ”

—-“আপনার এখানে কাজ কিসের? যেখানে আমার কাছে সব পেপার-ই’ রয়েছে। ”

—-“হুট করে একজন এর কম্পানি নিজের নামে বলে চালিয়ে দিলে-ই’ তো হবে নাহ। রাফসিন শেখ রুদ্রিক আপনার নামে ফ্রড কেস করেছেন। পুলিশ আগে সবকিছুর তদন্ত করে দেখবেন, তার আগে আপনি শেখ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টির পাউয়ার নিতে পারবেন নাহ। ”

আইনীজীবির কথা শুনে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।

কথাটি বলে রুদ্রিকের আইনজীবি ফারুক সাহেব কিছু পেপার মাহিরের হাতে তুলে দেয়। মাহির পেপার গুলো চেক করে দেখে, রুদ্রিক সত্যি কেস করেছে। ”

মাহির পেপারসগুলো দেখে বাঁকা হাঁসে। মাহির কিছুটা হেঁসে-ই’ বললো,

—-“ঠিক আছে আমি আপাতত পাউয়ার নিচ্ছি নাহ। পুলিশ তো তদন্ত করার জন্যে ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছে। যত-ই’ তদন্ত করুক এই কম্পানির পাউয়ার শেষে আমাকে দিতে-ই’ হবে,কেননা এই পেপারস গুলো আসল। সব থেকে বড় কথা আফজাল শেখের সাইন আছে। পেপার স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে,আফজাল শেখ নিজ ইচ্ছায় এই কম্পানির পাউয়ার আমাকে দিয়েছে। ”

আফজাল শেখ রাগে চিৎকার করে বললো,

—“একদম মিথ্যে বলবে নাহ মাহির। আমি তোমাদের কোনো পাউয়ার দে-ই’ নি। তোমরা ছলনা করে আমার থেকে কম্পানির পাউয়ার নিয়েছো। তোমাকে আর কি বলবো? যেখানে নিজের বোন-ই’ বিশ্বাসঘাতকতা করে। ”

ইশানি আফজালের দিকে তাঁকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো,

—“ভাইয়া…..

ইশানিকে থামিয়ে আফজাল শেখ বললেন,

—-“তুমি একদম কথা বলবে নাহ। নাহলে আমার হাত কিন্তু তোমার গালে চলে যাবে,নিশ্চই এই বয়সে আমার হাতে গালে থাপ্পড় খেতে চাইছো নাহ। ”

—-“রিলাক্স আফজাল সাহেব। এত্তো উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কেন? আপনার বয়সের দিকেও একটু্ খেয়াল করুন। আপনিতেও কম্পানি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে পড়ে যদি হার্ট অ্যাটাক টাইপের কিছু হয়ে যায়…

মাহিরের কথা শুনে সাদ এইবার চরম রেগে তেড়ে এসে মাহিরের কলার চেপে ধরে বলে,

—“হাও ডেয়ার ইউ। আংকেলকে এইসব কথা বলার সাহস পান কোথা থেকে? ”

—-“সাদি কী করছো কী? ”
কথাটি বলে লাজুক এসে সাদিকে মাহিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

সাদি রাগে ফুশছে। লাজুক সাদিকে শান্ত করে বলে,

—“এখন আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে। শান্ত হও। ”

মাহির নিজের কলার ঠিক করতে করতে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“এই বয়সে ছোট খাটো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে গেলে কি করে চলবে ইয়াং ম্যান। ”

সাদি রাগে ফুশছে

—-“কালকে আমি পাউয়ার নিয়ে-ই’ নিবো। এইসব কেস করে কোনো লাভ হবনা। আজকে-ই’ আপনাদের সময় দিলাম। নিজেদের অফিস শেষবারের মতো দেখে নিয়েন। চলো ইশানি। ”

মাহির কথাটি বলে ইশানির হাত ধরে বাইরে চলে গেলো।

মাহির চলে যেতে-ই’ রুদ্রিকের আইনজীবি মিঃ আফজাল শেখকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—“মি শেখ রুদ্রিক আমাকে দিয়ে কেস করিয়ে দিয়েছেন। কেস যখন করা হয়েছে তখন চিন্তা করবেন নাহ। এখনো হাতে ২৪ঘন্টা সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে রুদ্রিক কিছু না কিছু একটা করবে-ই’।”

আইনজীবির কথা শুনে আফজাল শেখ কিছুটা ভরসা পায়। তিনি জানেন রুদ্রিক এই কম্পানিকে বাঁচানোর জন্যে শেষ পর্যন্ত যাবে।

—-“ভাইয়ূ তুমি বরং এখন বাড়িতে যাও। আমি এবং লাজুক পুলিশ অফিসারের কাছে যাচ্ছি। ”

দিয়ার কথা শুনে লাজুক ও সায় দিয়ে বললো,

—-“হ্যা স্যার আপনি এখন চলে যান। এইসময় আপনার থাকাটা ঠিক হবেনা। আমি এবং দিয়া ম্যাম এইদিকটা দেখে নিচ্ছি। আমাদের উপর একটু আস্হা রাখুন। ”

লাজুকের কথায় আফজাল শেখ সম্মতি দিয়ে বললেন,

—“ঠিক আছে আমি বরং যাই। ”

লাজুক এইবার আইনজীবির কাছে গিয়ে বললেন,

—“আমরা পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি আপনিও কি যাবেন?”

—“জ্বী আমি যাচ্ছি কিছুক্ষন পরে। ”

—-“আমিও কি যাবো?

সাদির প্রশ্নে লাজুক বললো,

—” আপাতত আমরা বরং যাই। তুমি বরং আপাতত মায়া কুঞ্জে গিয়ে দেখো সেখানকার কি অবস্হা।”

সাদি মাথা নাড়ালো।

লাজুক ও দিয়া বেড়িয়ে গেলো। আফজাল শেখও চলে গেলেন।

__________

তনয় আজ সিলেটে চলে যাবে। তাই তনয় ও নিতিয়া বাসের জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পরে-ই’ বাস ছেড়ে যাবে। হাতে এখনো পাঁচ মিনিট সময় আছে। তনয় নিতিয়ার কাছে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,

—“তুই বাসে উঠে পড়। আমি আসছি৷ ”

নিতিয়া মাথা নাড়িয়ে তনয়ের থেকে বোতলটা নিয়ে বাসে উঠে যায় । তনয় একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে, স্মোক করতে থাকে । পিছন থেকে কেউ নিচু গলায় বললো,

—“তনয় ভাই’।

পরিচিত গলা শুনতে পেয়ে তনয় তাঁকিয়ে দেখে ছুটকি দাঁড়িয়ে আছে। এমা ছুটকির চোখে জল কেন?

___________

আফজাল শেখ চলে যেতে-ই’ আইনজীবি সাহেব ও বেড়িয়ে যান। আইনজীবি বাইরে এসে সরাসরি রুদ্রিকের নাম্বারে ফোন করে।

রুদ্রিক গাড়ি চালাচ্ছিলো আইনজীবি ফারুক সাহেবের নাম্বার দেখে রুদ্রিক গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়ে, ফোনটা রিসিভ করে।

—-“জ্বী ফারুক সাহেব ওইদিকের কতদূর অবস্হা? ”

—“মিঃ রুদ্রিক আপনার প্ল্যান অনুযায়ী ২৪ঘন্টা হাতে সময় নিয়ে নিয়েছি। মাহির আহমেদ এখন ২৪ ঘন্টার আগে পাউয়ার নিতে পারবে নাহ। ”

রুদ্রিক গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে বললো,

—“গুড ভেইরি গুড। থ্যাংকস আ লট মিঃ ফারুক। আমি এখন রাখছি। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক ফোন কেটে দেয়।

—-“মিঃ মাহির আহমেদ গেমের রুলস এইবার আপনাকে রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেখাবে। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক নিজের সানগ্লাসটা পড়ে নেয়। গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে। এখন তার গন্তব্য যশোর।

মাহির ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে বেড়োচ্ছে। তার বেড়োনোর মাঝে-ই’ ইশানি এসে বললো,

—“কোথায় যাচ্ছো তুমি? ”

—-” আমার মনে হচ্ছে রুদ্রিক কোনো গেম খেলছে। আমাকে এখুনি ‘বেলিকুঞ্জে’ যেতে হবে। ওইখানে কুঞ্জ নিশ্চই কোনো প্রমান রেখে গেছে। উফ আমার মাথায় আগে কেনো ‘বেলিকুঞ্জের ‘ নাম মাথায় এলো নাহ। আচ্ছা যা-ই’ হোক তুমি থাকো। আমি এখুনি যাচ্ছি। ”

কথাটা বলে মাহির তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলো।

মাহির বেড়িয়ে যেতে-ই’ ইশানির মন কচকচ করতে লাগলো। সে বুঝে গেছে মাহির কাজ ঠিক করছে নাহ। এখন মাহিরের যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে?

অন্যদিকে,

আমি ‘বেলিকুঞ্জে’ গিয়ে দেখি, সবকিছু এলোমেলোভাবে রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিলে থাকা কিছু ফাইলস চেক করলাম। এগুলো তো কুঞ্জ পিপির লিখা চিঠি ও সব ডাইরি। তারমানে এখানে এমনকিছু রয়েছে, যা মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে। বুঝতে পারলাম এগুলো এখানে থাকা বিপদজনক। আমি ফাইলগুলো হাতে নিলাম। তখনি বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণ শুনা গেলো। এখন আবার এখানে কে এলো? আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে দেখলাম, মাহির আহমেদ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।
এখন কী হবে?

বাকীটা আগামী পর্বে..

চলবে কী?

[কেউ ছোট বলবেন নাহ। প্রচন্ড প্রেশার আছি। যদিও আমি কাউকে বলেনি আমার আম্মু কালকে হাফ দিন হসপিটালে এডমিট ছিলো। এখনো প্রচন্ড অসুস্হ। সবাই আম্মুর জন্যে দোয়া করবেন।তারমধ্যে দুইদিন পর আমার এক্সাম। আশা করি সবাই বুঝবেন]

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

মাহির আহমেদ রুমে ঢুকতে-ই’ আমি কোণায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। মাহির চারপাশে চোখ বুলিয়ে রুমের আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে,সবকিছু ছুড়ে ফেলে ঘাটাঘাটি শুরু করে দেয়। আমি লুকিয়ে তা দেখতে থাকি। মাহির আহমেদ সবকিছু ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু কোনো কিছু-ই’ খুঁজে পাচ্ছে নাহ। বিরক্ত হয়ে মাহির দেয়ালে পাঞ্চ করে বলে,
–“কুঞ্জের লেখা কিচ্ছু খুঁজে পাচ্ছি নাহ। যতটুকু সম্ভব এখানে-ই’ তো সবকিছু থাকার কথা। তার মানে কী রুদ্রিক সব প্রমাণ গুলো পেয়ে গেলো? ওহ শিট। ”

মাহির চেয়ারে বসে পড়ে ।

আমি কোনোরকম উঠে দাঁড়ালাম। মাহির আহমেদ অন্যদিকে ঘুড়ে আছেন। এই সুযোগে-ই’ আমাকে পালাতে হবে। কথাটি ভেবে আমি বাইরের দিকে খুব সাবধানতার সহকারে পা রাখতে-ই’ বেখায়ালিভাবে আমার হাত থেকে ফাইলগুলো নীচে পড়ে যায়। আমি আবারো নিজের জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ি।

হঠাৎ রুমে শব্দ হতে-ই’ মাহির ঘুরে তাঁকিয়ে দেখে কেউ নেই। কিসের শব্দ হলো? তারমানে কী রুমে কেউ আছে?

মাহির উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—“কে এখানে?”

কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাহির এগিয়ে গেলো।

মাহির আহমেদ তো আমার দিকে-ই’ এগিয়ে আসছে। কী হবে এখন? হে আলাহ সাহায্য করো।

আমি আর কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলাম।
কাজলকে হঠাৎ দেখে মাহির বুঝে গেছে কাজলের কাছে-ই’ সব প্রমাণ রয়েছে। তাই মাহিরও কাজলের পিছনে ছুটে যায়।

রুদ্রিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যশোরের ভিআইপি হরোষ্টিক হোটেলের ভিতরে চলে যায়। কাউন্টারের সামনে আসতে-ই’ একজন মেয়ে মিস্টি হেঁসে বললেন,
–“জ্বী স্যার কি হেল্প লাগবে বলুন?”

রুদ্রিক নিজের কার্ডটা মহিলাটির দিকে এগিয়ে বললো,

—“আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিক। এখুনি এই হোটেলের মেনেজার উদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই। আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে।”

—“ওকে স্যার কিছুক্ষন ওয়েট করুন। আমি এখুনি স্যারকে ফোন করে দিচ্ছি। ”

মেয়েটি উদ্দিন সাহেবকে কল করে রুদ্রিকের কথা বলে। রুদ্রিকের কথা শুনে উদ্দিন সাহেব মেয়েটিকে রুদ্রিককে তার কেবিনে পাঠিয়ে দিতে বলে।

রুদ্রিক উদ্দিন সাহেবের কেবিনে ঢুকতে-ই’, উদ্দিন সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—“আহা আমার কী সৌভাগ্য। আসো রুদ্রিক বাবা ভিতরে আসো। ”

রুদ্রিক সৌজন্যতা মূলক হাঁসি দিয়ে বললো,

—“কেমন আছেন আংকেল? ”

—“এইতো ভালো-ই’ আছি। তোমার বাবা তো এখন আমার খবর-ই’ রাখে নাহ। আমি যে তার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড তা বোধহয় সে ভূলে গেছে। আচ্ছা যা-ই’ হোক আগে তুমি কী খাবে বলো? ”

রুদ্রিক এইবার কিছুটা তাড়া দিয়ে-ই’ বললো,

—“নাহ আংকেল আপাতত আমি কিচ্ছু খাবো নাহ। এখন শুধু আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে। ”

—“কিহ ইনফরমেশন লাগবে তোমার বলো? ”

________

সাদি ‘মায়া কুঞ্জ ‘ এসে দেখে সিথি এক কোণে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে। সাদি সিথির পাশে বসে উঠে,

—“আর ইউ ওকে? ”

সিথি হঠাৎ করে সাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বলে,

—“সাদি ভাইয়া আমার না কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ। বড্ড কান্না পাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষন। আমি জানিনা কী করবো এখন? একদিকে ভাইয়ূ ফোন তুলছে নাহ,অন্যদিকে কাজলও যেনো কোথায় বেড়িয়ে গেলো। আমার সত্যি আজকে অসহায় লাগছে।”

সাদির কি হলো কে জানে? সাদি নিজেও সিথিকে জড়িয়ে ধরে, সিথিকে শান্ত করে নরম কন্ঠে বললো,

—“নিজেকে একদম অসহায় মনে করবে নাহ। একটা কথায় সবসময় মনে রাখবে তোমার সাদি সবসময় তোমার সবরকম বিপদে তোমার পাশে আছে। ”

—‘তোমার সাদি ‘ কথাটাতে ছোট্ট কিন্তু সিথির জন্যে বিশাল কিছু। সিথি সাদির বুকে একেবারে মিশে গিয়ে বলে উঠলো,

—“তুমি-ই’ তো আমার সব সাদি ভাইয়া। তুমি তো আমার সবথেকে বড় ভরসার জায়গা। ”

____________

ছুটকির চোখে জল দেখে তনয় ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
–“ছুটকি তুমি এখানে কেন? তোমার চোখে জল-ই’ বা কেনো? মুছো তাড়াতাড়ি। ”

ছুটকি নিজের চোখের জলটুকু মুছতে গিয়েও মুছলো নাহ। বরং তয়নের দিকে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,

—“আমার চোখের জলের প্রতিটি বিন্দু প্রতিটা অশ্রু তো আপনাকে ঘিরে-ই’ তনয় ভাই। তা কী আপনি বুঝতে পারেন? হয়তো পারেন তবুও অবুঝ হয়ে থাকে। ”

তনয় আবারো সিগারেট ঠোটে চেপে ধরে। যেনো ছুটকির কোনো কথা-ই’ সে শুনেনি।

তনয়কে চুপ থাকতে দেখে ছুটকি হতাশ হলো। সে হতাশার সুরে-ই’ বললো,

—“তনয় ভাই কিছু বলছি আমি৷ ”

তনয় সিগারেটের টাকা দোকানদারের হাতে গুজে দিয়ে, নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুটকির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—“পড়াশোনা মন দিয়ে করো । এইসব বাচ্ছামি করার সময় এখন তোমার নয়। ”

তনয় এগিয়ে গেলো।

—“ভালোবাসি । আমি বাচ্ছামি করছি নাহ। ”

তনয় থেমে যায় । তবুও পিছনে ফিরেনা। এইসব ভালোবাসা তার কাছে এখন তুচ্ছ লাগে। সবকিছু-ই’ মিথ্যে।

তয়ন আবারো যেতে নিলে ছুটকি বলে উঠে,

—“আপনি আজকে চলে যাচ্ছেন তো তনয় ভাই? সমস্যা নেই। আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আপনাকে এই ছুটকির দারপ্রান্তে এসে কোনো একদিন দাঁড়াতে-ই’ হবে। ”

কথাটি গিয়ে তনয়ের বুকে লাগে।

ছুটকি তার কান্না আটকানোর চেস্টা করছে কিন্তু পারছে নাহ। সে-ই’ কেঁদে-ই’ দিলো।

তনয় বাসে উঠে চলে গেলো। ছুটকি মুখে হাত দিয়ে চলে গেলো।

_______

শাড়ি নিয়ে-ই’ একপ্রকার দৌড়ে ছুটে চলেছি আমি।
মাহির আহমেদ আমার পিছনে গাড়ি নিয়ে আসছে।
আমার মাথা এখন ঠান্ডা করতে হবে, যে করে-ই’ হোক। হাতের সব ফাইলগুলো সবার আগে পুলিশ স্টেশনে জমা দিতে হবে।

আমি আবারো দৌড়ে ছুটতে লাগলাম। তখনি আমার সামনে একটি গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিলো। আমি ধপ করে মাটিতে পড়ে যাই। গাড়ি থেকে ইশানি ম্যাম বেড়িয়ে আসেন। ইশানি ম্যাম আমার কাছে এসে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললেন,

—“এই ফাইলগুলো তুমি কোথায় পেলে? ”

ইশানি ম্যামের কথার মাঝে-ই’ পিছন দিয়ে মাহির আহমেদ এর গাড়ি এসে থামলো। এইবার কি হবে?

মাহির আহমেদ বেড়িয়ে এসে বাঁকা হেঁসে বললো,

—“একদম পার্ফেক্ট টাইমে এসেছো। ”

কথাটি বলে ইশানির থেকে ফাইলগুলো মাহির নিয়ে
তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আমি আটকাতে গিয়েও পারলাম নাহ। ইশানি ম্যাম আমাকে শক্ত করে চেপে ধরেছে। এইবার কি হবে?
রুদ্রিক আমাকে এতো ভরসা করে একটা কাজ দিলো,কিন্তু আমি তা করতে পারলাম নাহ। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।

ইশানি জানে সে ভূল করেছে,কিন্তু ইশানি বা কী করবে? এইসব প্রমাণের মাধ্যমে সকলের সামনে অতীত চলে আসবে, যার জন্য মাহিরের ক্ষতি হতে পারে। যা ইশানি কিছুতে-ই’ হতে দিতে পারেনা।

মাহির ইশানিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“কালকে আমাকে যে করে-ই’ হোক কম্পানির পাউয়ার নিতে হবে। তার মাঝে এই কাজল বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে হবে। ওর ব্যবস্হা তুমি করে দিও। ”

ইশানি ম্যাম আমার হাত ধরে উঠাতে নিলে আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করতে-ই,’ উনি আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে মাহির আহমেদ এর দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“তুমি কোনো চিন্তা করোনা মাহির। ”

__________

ভোরের আলো মুখে পড়তে-ই’ আমি সোজা হয়ে বসি। আমার হাত বেঁধে একটি অন্ধকার রুমে বন্ধ করে রেখে গেছে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ।

আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের হাতের বাঁধন খুলার চেস্টা করলাম, খুললো নাহ। তাই আমি হাল্কা করে দরি দিয়ে ঘসতে শুরু করলাম। এতে খুব সহজে-ই’ আমার হাতের বাঁধন খুঁলে গেল। আমি নিজের শাড়ির আঁচল থেকে চিঠিটা বের করে নিলাম।
বুদ্ধি খাটিয়ে, কুঞ্জ পিপির লেখা চিঠিটা শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যার মধ্যে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কীভাবে কুঞ্জ পিপির আত্বহত্যার পিছনে মাহির আহমেদের হাত রয়েছে।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে

তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গেলাম। দরজা বন্ধ তাই জানালা দিয়ে-ই’ তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলাম।

_____
সকাল সকাল করে-ই’ আফজাল শেখ, সিথি, সাদি,দিয়া ও লাজুক অফিসে পৌছে গিয়েছে।

কাজলের নাম্বার বন্ধ দেখে সিথির চিন্তার শেষ নেই।

মাহির ও ইশানি ও অফিসে প্রবেশ করে।

মাহির নিজের কোটাটা ঠিক করে আফজাল শেখের কাছে গিয়ে কটু গলায় বললো,

—“তা মিঃ আফজাল শেখ পুলিশ তো কিছু করতে পারলো নাহ। এখন কী হবে?

কথাটি বলে মাহির হু হা করে হেঁসে উঠলো।

সবাই দাঁত খিচে সহ্য করে আছে। সাদির ইচ্ছে করছে লোকটাকে মাটিতে পিষে ফেলতে।

আমি আজকে অফিসের পাউয়ার আমি নিয়ে-ই’ ছাড়বো। (মাহির বললো)

______

আমি যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে যাচ্ছি। অফিসে পৌছাতে-ই’ হবে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ আমার সামনে একটি গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে রুদ্রিক বেড়িয়ে এসে বললো,

—“কাজল তুই এখান কীভাবে? ”

রুদ্রিক খেয়াল করে দেখে কাজলের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে একেবারে। কাজলকে দেখেও বেশ অসুস্হ লাগছে।

আমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। রুদ্রিক আমাকে ঝাঁকিয়ে বললো,

—“আর ইউ ওকে? কাজল? ”

আমি রুদ্রিকের হাত ধরে বললাম,

—“আম ওকে রুদ্রিক ডোন্ট বি প্যানিকড। আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ”

—“সব হবে তার আগে তোর রেস্টের এর প্রয়োজন। ”

—-“রুদ্রিক….

আমার কথার মাঝে-ই’ রুদ্রিক গম্ভীর সুরে বললো,

—“কাজল একদম কথা নয়।

রুদ্রিক আমার হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিলো।

আমি ঢগঢগ করে পানি খেয়ে নিলাম।

রুদ্রিক বলে উঠলো,

—“এখন তোমার যা বলার বলো। ”

আমি রুদ্রিককে সবকিছু খুলে বললাম। রুদ্রিক নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদকে এর যোগ্য জবাব সে দিবে।

রুদ্রিক আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,

—“এখন আমাদের তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।
লেটস গো কাজল। ”

______________

আফজাল শেখ চেয়ারে বসে পড়লেন, তিনি বুঝতে পারছেন এইবার তার কম্পানি চলে যাবে।

মাহির পকেটে হাত গুজে বললো,

—“আপনারা শুধু শুধু অফিসে বসে আছেন কেন?
কোনো লাভ হবে নাহ। রুদ্রিক কিচ্ছু করতে পারবে নাহ। হাহ। এই শেখ গ্রুপ অফ কম্পানি এখন মাহির আহমেদের। ”

মাহির হেঁসে উঠে।

—-“মাহির আহমেদ স্বপ্ন দেখা ভালো,বাট
নিজের লেভেল অনুযায়ী স্বপ্ন দেখা উচিৎ। আফটার অল লাইফ একটা গেম। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক প্রবেশ করে।

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে….কী?

(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 👏👀। সবাই কমেন্ত করে দিয়েন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here