ফিরে আসা পর্ব-৩৯

0
507

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব -৩৯

ফাতেমা – আচ্ছা তুমি মিমি নামে কাউকে চিনো??
মহিমা- হুম চিনি তো।কিন্তু কেন ??
ফাতেমা – একটু দরকার ছিলো তাই।আচ্ছা কিভাবে চিনো??ও কে হয় তোমাদের??
মহিমা- আরে ভাবি ও আমাদের পরিবারের কিছু হয় না।
ফাতেমা – তাহলে??
মহিমা- মিমি আপু তো ভাইয়ার বান্ধবি।এই তো কয়েক মাস আগেই ভাইয়ার সাথে বন্ধুত্ব করেছে।ভাইয়া আমাকে একবার বলেছিলো।কয়েকবার মিমি আপুর সাথে আমার ফোনে কথাও হয়েছে।কিন্তু তুমি মিমি আপুর কথা কেন জানতে চাইছো??তুমি ওকে চিনো নাকি??
ফাতেমা – না আমি আগে কোনদিন নাম শুনি নি।
মহিমা বোন আমার ,আমি তোমাকে নিজের বোনের মতো ভাবি।তাই তোমার সাথে আমি সব কথাই শেয়ার করি।আজও তোমার সাথে একটা কথা বলবো।যেটা এই বাড়ির আর কারোর সাথেই বলা সম্ভব না।বলাও যাবে না অন্য কারো সাথে।
মহিমা – কি কথা ভাবি???
ফাতেমা – তুমি হয়তো আগে থেকেই জানো তোমার ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে না।আমাকে একদম দেখতেই পারে না।
মহিমা- সেটা আমি আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।
ফাতেমা – আর তুমি এটা কি জানো তোমার ভাইয়া আমাকে পছন্দ না করার মূল কারন কী??
মহিমা- না ভাবি।
ফাতেমা – সেই মূল কারন হচ্ছে মিমি।
ফাতেমা মহিমাকে এই কথাগুলো বলছে আর গাল পেয়ে চোখের পানি পড়ছে।
মহিমা- কি বলছো এসব??মিমি আপু??
ফাতেমা – হুম বোন ।আমিও আগে জানতাম না ।কিন্তু কাল রাতেই তোমার ভাইয়া আমাকে বলেছে ।
মহিমা – কিন্তু মিমি আপুর জন্য কেন??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ফাতেমা – তোমার ভাইয়া আর এই মিমি হারাম সম্পর্কে জড়িত।নাউযুবিল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ।
ওরা দুজন হারাম প্রেমের সম্পর্কে জড়িত।
মহিমা – সত্যি???ওরা প্রেম করে??
ফাতেমা – হুম ।।যা সম্পুর্ন হারাম।
মহিমা – আচ্ছা প্রেম করা কি হারাম??কিন্তু প্রেম তো পবিত্র।আচ্ছা মানলাম ভাইয়া তোমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে ।এটা অত্যন্ত খারাপ বিষয়।কিন্তু আমার কথা হলো প্রেম করাকে তুমি হারাম বলছো কেন??প্রেম ভালোবাসা তো পবিত্র।
ফাতেমা – অবশ্যই প্রেম ভালোবাসা পবিত্র।কিন্তু সেটা যদি বিয়ের আগে পর পুরুষ বা পর নারী করে তা সম্পুর্ন হারাম বা নিষিদ্ধ।বিয়ের পর কোন পুরুষ বা নারী যদি পর পুরুষ বা পর নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয় তাহলেও তা হারাম হবে।
মহিমা – সত্যি????
ফাতেমা – হুম ।কিন্তু অনেকেই বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম সেটা কিছুতেই মানতে চায় না।তারা নানা অযুহাত দিয়ে এই হারাম সম্পর্কটাকে হালাল প্রমান করতে চায়।কেউ এমন অযুহাত দেয় যে, আমারা তো অনেক দুরে থাকি তাই আমাদের প্রেম পবিত্র ।আমাদের গুনাহ হবে না।আমরা তো আর খারাপ কাজ করছি না।আমরা তো একেকজন একেকজনের থেকে অনেক দুরে।তাই আমাদের কোন পাপ হবে না।আমরা শুধু ফোনে আলাপ করি,শুধু মেসেজে আলাপ করি।
এই রকম নানা অযুহাত দিয়ে বিয়ের আগে প্রেমকে তারা পবিত্র মনে করে।কিন্তু এটা সম্পুর্ন শয়তানের ধোকা।
মহিমা – আচ্ছা এখানে গুনাহর ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলো তো ভাবি।আমি না বুঝতে পারছি না।
ফাতেমা- আচ্ছা ঠিক আছে বলছি বুঝিয়ে।
দেখো বিয়ের আগে প্রেম যেহেতু হারাম ।বিয়ের আগে পর নারি পুরুষের প্রেম ভালোবাসা কুরআন হাদিসে নিষিদ্ধ।তাই সেই প্রেমের উদ্দেশ্যে কেউ যদি ম্যাসেজ করে তাহলে তার হাতের জিনা ,অন্তরের জিনা হবে।যদি কেউ সেই হারাম সম্পর্কের উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে হেটে দেখা করতে যায় তাহলে তার পায়ের জিনা হবে।আর দেখলে হবে চোখের জিনা।আর জিনাকারীর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।আখিরাতে এর জন্য অনেক ভয়ানক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।শুধু আখিরাতে না দুনিয়াতেও এসব অবৈধ প্রেমের কারনে নানা পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়।যেমনটা হয়েছে আমার সংসারে।
মহিমা – কিন্তু ভাবি কেউ যদি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে প্রেম করে তাহলে তো সেটা খারাপ না।
ফাতেমা – না বোন হারাম তো হারামই ।বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আর যেই উদ্দেশ্যেই হোক না কেন গুনাহ হবেই।যেমন ধরো তুমি যদি কুরবানির উদ্দেশ্যে গরু চুরি করে কুরবানি দাও তাহলে কি সেই কুরবানি আল্লাহ কবুল করবেন???
মহিমা – না না ।চুরি করা জিনিস তো আল্লাহ কবুল করবে না।
ফাতেমা – ঠিক তেমনি কেউ যদি বিয়ে করার উদ্দেশ্যে প্রেম করে তাহলেও সেই প্রেম বৈধ হবে না।
এবার বুঝেছো ননদিনি???
মহিমা – হুম বুঝেছি।না …ইয়ে.. মানে….।
ফাতেমা – না. .ইয়ে মানে এরকম করছো কেন??তাহলে কি তুমিও ….
মহিমা – আমায় মাফ করো ভাবি।আমি এসব আগে জানতাম না।তাই আমিও এসব হারাম সম্পর্কে কিছুদিন আগেই জড়িয়েছি।কিন্তু এখন তো আমি এর ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে জানতে পেরেছি।আমি জীবনে আর এসব করবো না।
ফাতেমা – আমার কাছে না বোন আল্লাহর কাছে মাফ চাও।তিনি অবশ্যই মাফ করবেন।কারন তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো।
মহিমা – আল্লাহ কি আমায় মাফ করবেন??
ফাতেমা – অবশ্যই ।কারন আল্লাহর রাগের তুলনায় ক্ষমা করার গুন বেশি।
কারন সুরা হিজরের ৪৯ নাম্বার আয়াতে আছে “আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও নিশ্চই আমি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
মহিমা – তোমার কথাই ঠিক ভাবি।
আচ্ছা এখন ভাইয়া আর মিমি আপুর ব্যাপারটা নিয়ে কি করবে??
ফাতেমা – তুমি আমাকে একটু সাহায্যে করতে পারবে বোন??
মহিমা – অবশ্যই ।বল কি করতে হবে??
ফাতেমা -তুমি কি এই মিমির সাথে একটু দেখা করিয়ে দিতে পারবে??
মহিমা- কিন্তু এই মিমির সাথে দেখা করে তুমি কি করবে?
ফাতেমা – আমি মিমিকে বুঝাবো।যদি ও না বুঝে আমি ওর পায়ে ধরে আমার স্বামীকে ওর কাছ থেকে ভিক্ষা চাইবো।আমি ওর কাছে আমার সংসারটা বাচানোর জন্য ভিক্ষা চাইবো।
এই বলে ফাতেমা কাদতে লাগলো।
মহিমা- এ তুমি কি বলছো ভাবি??তুমি ঐ মিমির পায়ে ধরবে কেন??
ফাতেমা – এছাড়া আমার কোন উপায় নাই।প্লিজ বোন তুমি আমার এইটুকু উপকার করো।প্লিজ।ঐ মিমির সাথে আমাকে একটু দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও প্লিজ।
মহিমা- কিন্তু কিভাবে?ও কি তোমার সাথে দেখা করতে রাজি হবে???
ফাতেমা – সেটাও তো ভাববার বিষয়।মিমি যদি জানতে পারে আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই তাহলে তো দেখা করতে চাইবে না।
মহিমা – সেটাই তো আমিও ভাবছি।
ফাতেমা – দাড়াও ভাবতে দাও কি করা যায়।
ফাতেমা মাথায় চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগলো।
কি করা যায়? কি করা যায়?
আইডিয়া পেয়েছি ।আলহামদুলিল্লাহ।
মহিমা – কি আইডিয়া??
ফাতেমা – তুমি মিমিকে ফোন দিয়ে তোমার পরিচিত একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলবে।তুমি ওকে বলবে যে, তুমি ওর সাথে দেখা করতে চাও।কিন্তু আমার কথা বলো না।তারপর ও যদি রাজি হয় আমি তোমার সাথে যাবো মিমির সাথে দেখা করতে।তখন তো আর কথা না বলে চলে যেতে পারবে না।তখন আমি ওকে বুঝাবো।ওর হাতে পায়ে ধরে হলেও ওকে আমি বুঝাবো।
আর তুমি মিমিকে বলে দিবে যে,তুমি যে ওর সাথে দেখা করতে চাও এটা যেন তোমার ভাইয়াকে ও না বলে।
মহিমা – গুড আইডিয়া।ঠিক আছে আমি কালকে সকালেই মিমি আপুকে ফোন দিবো।আচ্ছা কখন দেখা করতে বলবো???
ফাতেমা – যোহরের নামাযের পরে।
মহিমা – আচ্ছা ঠিক আছে।
সব প্লেন ঠিক করে ফাতেমা আর মহিমা ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন সকাল ৯ টা বাজে।
মহিমা আর ফাতেমা একসাথে বসে মিমিকে ফোন দিলো।
মহিমা- আস সালামু আলাইকুম মিমি আপু ।কেমন আছো???
মিমি- ওয়াআলাইকুমস্লাম।I am fine. But তুমি কে??চিনতে পারছি না তো??
মহিমা – মিমি আপু আমি তোমার বন্ধু মাহিনের ছোট বোন মহিমা।?
মিমি- omg. মহিমা।sorry dear আমি তোমাকে চিনতে পারি নি।কেমন আছো তুমি?
মহিমা – আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
মিমি- মাহিন কোথায়?
মহিমা – ভাইয়া ওর ঘরে ঘুমাচ্ছে।আচ্ছা একটা দরকারে ফোন দিয়েছি তোমাকে।
মিমি- Yes dear বলো কি দরকার?
মহিমা- তোমাকে না অনেকদিন ধরে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।তাই আজ একটু দেখা করবে প্লিজ??খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে দেখতে।
মিমি- okk dear.তোমার ঐ গাইয়্যা আনকালচার ভাবিকে দেখে দেখে হয়তো হাপিয়ে গেছো।তাই এই স্মার্ট ,মর্ডান আপুকে দেখতে মন চাইছে তাই না??হাহাহাহা
মহিমা মনে মনে বলে “তুই মর্ডান না ছাই।ইশ ……তোকে দেখতে আমার বয়েই গেছে।তোর চেহারা কোন দিন দেখতে চাই না আমি।ভাবি বললো বলে তোর সাথে দেখা করতে চাইছি””।
মহিমা – হিহিহি।আচ্ছা শুনো আমি যে তোমার সাথে দেখা করতে চাইছি সেটা ভাইয়াকে বলো না।একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।
মিমি- okk dear.I love surprise.কখন দেখা করবে বলো??
মহিমা – যোহরের নামাযের পর। তুমি আর ভাইয়া যেই রেস্টুরেন্টে দেখা করো সেটাতে।
মিমি- okk dear.তাহলে রাখছি ।Bye.see you soon.
মহিমা – হুম ঠিক আছে।আস সালামু আলাইকুম।
মহিমা ফোন রেখে দিলো।
মহিমা – আলহামদুলিল্লাহ ভাবি।মিমি আপু রাজি হয়ে গেছে।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।এবার শুধু দোয়া করো।এই মিমি যাতে আমাদের জীবন থেকে ভালোই ভালোই সড়ে যায়।তাহলেই আমি তোমার ভাইয়াকে খুব সহজেই হেদায়েতের পথে আনতে পারবো।
মহিমা – হুম দোয়া করি।
তাহলে আজ আর কলেজে যাবো না।দুপুরে মিমি আপুর সাথে দেখা করতে যাবো।
ফাতেমা – ঠিক আছে।
দড়াও আগে মায়ের কাছ থেকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে আসি।
মহিমা- ঠিক আছে।
ফাতেমা মেহেঘ বেগমের ঘরে গেলো।
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম।
মেহেঘ- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।আয় মা ভিতরে আয়।
ফাতেমা মেহেঘ বেগমের সাথে বিছানায় বসলো।
ফাতেমা – মা আজ যোহরের নামাযের পর মহিমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।তাই তোমার অনুমতি নিতে আসলাম।
মেহেঘ- কোথায় যাবি রে মা?
ফাতেমা – বলতে পারো একটা নেক কাজ করতে।কিন্তু কোন জায়গায় যাবো সেটা এখন তোমাকে বলবো না।কাজটা শেষ হলে তারপর বলবো।তুমি কি অনুমতি দিবে??আর হে তুমি আমার উপর ভরসা রাখতে পারো।আমি কোন খারাপ কাজ করতে যাবো না।
মেহেঘ- এটা তুই কি বলছিস রে মা??
আমার নিজের থেকে তোর উপর বেশি ভরসা আছে।আচ্ছা যাওয়ার অনুমতি দিলাম।
ফাতেমা – জাযাকিল্লাহু খইরান মা।
মেহেঘ- ওয়া ইয়্যাকি।
ফাতেমা – তুমি এটা কোথা থেকে শিখলে?
মেহেঘ- মহিমা শিখিয়েছে ।আর মহিমা তো তোর কাছ থেকে শিখেছে।
ফাতেমা – খুব ভালো ।আচ্ছা মা তুমি দোয়া করো যে কাজটা আমি করতে যাচ্ছি সেই কাজে যাতে সফল. হই ।
মেহেঘ- ইনশাআল্লাহ।
ফাতেমা – আচ্ছা মা আমি এখন আসি।নুরিকে একটু রান্নার কাজে সাহায্য করে আসি।
এই বলে ফাতেমা রান্না ঘরে গিয়ে রান্নার কাজে নুরিকে সাহায়্য করে দিলো।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো।
ফাতেমা মহিমাকে তাড়াতাড়ি নামাযের প্রস্তুতি নিতে বললো।
ফাতেমা – মহিমা তুমি তাড়াতাড়ি নামাযের প্রস্তুতি নাও।আমরা কিন্তু নামায পড়েই বের হবো।
মহিমা – ঠিক আছে ভাবি।
ফাতেমা নিজের রুমে গেলো।মাহিন রুমে বসে ফোন টিপছে।ফাতেমা ঘরে ঢুকায় মাহিন আড় চোখে ফাতেমাকে দেখলো।আজ ফাতেমা মাহিনের সাথে একটা কথাও বলে নি।ফাতেমা নিজের মতো করে কাজ করছে।নামাযের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফাতেমা।
ফাতেমা গোসল করে যোহরের নামায আদায় করে নিলো।আর আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার আজকের মিমির কাছে গিয়ে যাতে মিমিকে বুঝাতে পারে সেজন্য।
মাহিন এখনো বসে ফোন টিপছে।
ফাতেমা তাড়াহুড়া করে রেডি হচ্ছে।ফাতেমার এই সময় রেডি হওয়া দেখে মাহিনের মনে প্রশ্ন জাগলো।
মাহিন- এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো????
একটু ভাব নিয়ে মাহিন কথাটা বললো।
ফাতেমা মাহিনের দিকে একনজর তাকালো।
মাহিন- ও বুঝতে পেরেছি।আমি যেহেতু তোমাকে কিছু বলি না তাই তুমিও বলবে না।তাইতো???
ফাতেমা – না না।সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না।আপনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার দেন নি ঠিক আছে ।কিন্তু আমি আপনাকে স্বামীর অধিকার দিয়েছি।তাই আপনার সম্পুর্ন হক আছে আমি কোথায় যাচ্ছি সেটা জানার।আর এটা ভাববেন না আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।এতো সহজে আমি আপনার পিছু ছাড়বোনা মশাই।আমি একটা নেক কাজ করতে যাচ্ছি।দোয়া করবেন যাতে সেই কাজে সফল হই ।
মাহিন- আমার জীবন থেকে চলে যাওয়াই হবে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় নেক কাজ।
মাহিনের এই কথাটা তীরের মতো বিধলো ফাতেমার মনে।
ফাতেমা – সেই নেক কাজটা যখন আল্লাহ আমার দ্বারা সম্পন্ন করবেন সেই দিন আপনি হয়তো বেশি কষ্ট পাবেন।
আচ্ছা চলি।আগে আমার কাজটা সেরে আসি।
ফাতেমা মহিমার রুমে গেলো।আজ মহিমা বাইরে যাওয়ার জন্য ফুলহাতা একটা জামা পড়েছে।সাথে সুন্দর করে মাথায় হিজাব পড়েছে।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।মহিমা আজ হঠাৎ এতো শালীন ভাবে যাচ্ছো।ব্যাপার কি??
মহিমা- এখন থেকে ভেবেছি নিজেকে আস্তে আস্তে বদলে ফেলবো।আস্তে আস্তে পর্দা শুরু করবো।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ তোমাকে পরিপুর্ন পর্দাশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন ।আমিন।
আচ্ছা তাড়াতাড়ি চলো।মিমি হয়তো এসে গেছে।
মহিমা – আচ্ছা চলো।
ফাতেমা যাওয়ার পথে ফাতেমা মেহেঘ বেগমকে বলে গেলো।
ফাতেমা আর মহিমা বাসার গাড়ি করে রেস্টুরেন্টে গেলো।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখে মিমি এখনো আসে নি।মহিমা মিমিকে ফোন দিলো।মিমা জ্যামে আছে তাই আসতে একটু লেট হচ্ছে।
মহিমা আর ফাতেমা একটা কোনার টেবিলে গিয়ে বসলো।যে পাশে মানুষজন কম।
একটু পরেই একটা পেন্ট গেঞ্জি পড়া ,চোখে একটা বড় সানগ্লাস লাগানো মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ডুকলো।সব ছেলে তার দিকে কু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।আর হে এইে মেয়েটিই হলো the great মিমি।
ছেলেরা তাকে চেয়ে চেয়ে গিলছে এতেই মিমির মহা শান্তি লাগছে।
মিমি রেস্টুরেন্টে ঢুকে মহিমাকে খুজছে।
অবশেষে খুজে না পেয়ে ফোন দিলো মহিমাকে।
মিমি- মহিমা তুমি কোথায় ?তোমাকে তো খুজে পাচ্ছি না।আমি কাউন্টারে দাড়িয়ে আছি।তুমি এখানে আসো।
মহিমা- আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি আসছি।
মিমি ফোন কেটে দিয় দাড়িয়ে আছে।মিমি যেখানে দাড়িয়ে আছে তার পাশের টেবিলে কতগুলো বড়লোকের বখাটে ছেলে বসে ছিলো।তারা মিমিকে দেখে যত্তসব নোংরা নোংরা প্রশংসা করছে।আর এতেই মিমি খুব খুশি।
মহিমা – ভাবি তুমি বসো।আমি মিমি আপুকে নিয়ে আসি।
ফাতেমা – আচ্ছা।
মহিমা কাউন্টারে গিয়ে দেখে মিমি দাড়িয়ে আছে।মিমির পোষাক দেখে মহিমার লজ্জা লাগছে।
মহিমা – মিমি আপু।চলো আমার সাথে।
মিমি- আরে মহিমা চলো।
চলতে চলতে মিমি মহিমাকে বলছে “এসব কি পড়েছো মহিমা?তুমি না একটা মর্ডান মেয়ে ।আমার মতো এসব ড্রস পড়বে তুমি।তাহলে সব ছেলেরা তোমার দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করবে।
মহিমা- না আপু।এতো প্রশংসা আমার লাগবে না।
মিমি আর মহিমা ফাতেমা যেখানে বসে আছে সেখানে গেলো।
মিমি ফাতেমাকে চিনে নি।কিন্তু এরকম আপাদমস্তক ঢাকা মানুষটাকে দেখে মিমি অবাক হলো।
আর এদিকে মিমিকে এসব ড্রেসে দেখে ফাতেমা অবাক হলো।ফাতেমা মনে মনে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে উঠলো আর মিমির জন্য আল্লাহর কাছে হেদায়েত চাইলো।
মিমি- Who is she মহিমা???
মহিমা – বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে।আর এটাই হলো,তোমার সারপ্রাইজ।
মিমি ফাতেমাকে পা থেকে মাথা অবদি কিভাবে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে দেখলো।
মিমি- এটা সারপ্রাইজ??????
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম।আপু কেমন আছেন??আর আপনি দাড়িয়ে কেন বসুনা প্লিজ।
মিমি বসতে বসতে সালামের জবাব দিলো।
মিমি- ওয়ালাইকুমস্লাম।
ফাতেমা – ওয়ালাইকুমস্লাম না আপু।ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলতে হয়।
মিমি- আচ্ছা মহিমা উনি কে??আর আমার থেকে তো বয়সেরবড় মনে হচ্ছে।but উনি আমাকে আপু বলছেন কেন???
মহিমা – হিহিহি।উনি তোমার বয়সে বড় না।বরং তোমার থেকে অনেকটাই ছোট বয়সের।এ হলো আমার ভাবি ফাতেমা ।মানে মাহিন ভাইয়ের বিবাহিত স্ত্রী।
মিমি- What????তাহলে এই সেই গাইয়্যা ভুত I mean to say that মাহিনের পর্দাশীল বউ??
ফাতেমা – জ্বি আপু ।আমিই সেই গাইয়্যা ভুত ,চাচি ,বুড়ি ,আনস্মার্ট মেয়েটা।যা ইচ্ছা ডাকতে পারো ।No problem।
মিমি- মহিমা তুমি তো বলেছিলে তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও।তাহলে ওকে কেন নিয়ে এলে?তুমি আমাকে মিথ্যে কেন বললে?
মহিমা- আরে আপু তুমি ভুল করছো।আমি মিথ্যা বলি নি।আমি তো একবারো বলি নি যে আমি একা আসবো।বলো আমি কি একবারো বলেছি আমি একা আসবো??
মিমি- তা বলো নি।কিন্তু …
ফাতেমা – মিমি আপু তুমি রাগ করো না প্লিজ।আমি তোমার সাথে কিছু দরকারি কথা বলতে এসেছি।প্লিজ আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনো।
মিমি- আমার সাথে তোমার কিসের কথা???
ফাতেমা – দেখো বোন আমি জানি আমার স্বামীর সাথে তোমার প্রেমের সম্পর্ক আছে।কিন্তু বোন এই সম্পর্কটা সস্পুর্ন হারাম।ইসলামে তোমাদের এই সম্পর্ককে সমর্থন করে না।তোমাদের এই সম্পর্কটা অবৈধ।
মিমি- what rubbish।এসব কি উল্টা পাল্টা বলছো???অবৈধ মানে???তুমি কি জানো এসব তুমি কি বলছো??
ফাতেমা – বোন দয়া করে রাগ করো না।দেখো আমি তোমার ছোট বোনের মতো।উনার সাথে তো আমার বিয়েটা হয়ে গেছে।তাই. বোন তোমার পায়ে ধরি বোন তুমি আমাদের জীবন থেকে চলে যাও।কারন হারামে কোন দিন তুমি সুখ পাবে না।হারাম সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না।তাই বোন তোমার পায়ে পড়ি দয়া করে আমাদের. জীবন থেকে তুমি চলে যাও।দেখবে আল্লাহ তোমাকে আমার স্বামীর থেকে আরো ভালো কাউকে তোমার জীবন সাথি হিসেবে দান করবেন।
মিমি ফাতেমার কোন কথা কানেই নিচ্ছে না।রাগি রাগি ভাব নিয়ে ফাতেমার দিকে চেয়ে আছে।
মহিমা – ভাবি ঠিক বলছে মিমি আপু।প্লিজ তুমি ভাই আর ভাবির জীবন থেকে চলে যাও।ভাই তোমার জন্য ভাবিকে দেখতেই পারে না।একবারের জন্যও ভালো করে কথা বলে না।
ফাতেমা কান্না করছে।
ফাতেমা – প্লিজ বোন বুঝার চেষ্টা করো।আর তুমি ইসলামের পথে চলার চেষ্টা করো।দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করো।তুমি এখন যেভাবে জীবন যাপন করছো এটা তোমার জাহান্নামের কারন হতে পারে।তাই বোন দয়া করে আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো।
মিমি- How dare you???চিৎকার করে মিমি বসা থেকে উঠে দাড়ালো।
তোমার সাহস হয় কি করে আমার লাইফস্টাইল নিয়ে কথা বলার??নিজেকে আর আমাকে একবার চেয়ে দেখেছো??ফকিন্নি একটা।আগে নিজের দিকে চেয়ে দেখো।গাইয়্যা ভুত একটা।তোমার সাহস হয় কি করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার।তোমার কোন যোগ্যতা আছে আমার সমান হওয়ার???নিজের স্বামীকে বেধে রাখতে পারো না আর আমার কাছে এসেছে যাতে আমি মাহিনের জীবন থেকে চলে যাই??
মিমির এসব কর্মকান্ড. রেস্টুরেন্টের সবাই চেয়ে চেয়ে দেখছে।
মহিমা- প্লিজ আপু একটু চুপ করো।সবাই দেখছে।
মিমি- দেখুক সবাই।আমি কি কাউকে ভয় পাই নাকি???
আচ্ছা সরে গেলাম আমি মাহিনের জীবন থেকে।এবার দেখি মাহিনকে তুমি আমার জীবন থেকে কি করে সরাও।মাহিনকে সরিয়ে দেখাও।আর আজকের এই বদলা আমি নিয়ে ছাড়বো।আমার লাইফ স্টাইল নিয়ে প্রশ্ন তাই না????দাড়াও তোমাকে আমি মজা দেখাচ্ছি।
এই বলে মিমি এখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছে।
মহিমা- তোমার কোন দিন ভালো হবে না মিমি আপু।তুমি আমার ফুলের মতো পবিত্র ভাবিটাকে কষ্ট দিলে।
ফাতেমা কাঁদছে।
ফাতেমা – চুপ করো মহিমা বোন আমার ।তুমি মিমিকে অভিশাপ দিয়ো না।কারন অভিশাপ দেওয়া মুমিনের ধর্ম নয়।মুমিনের ধর্ম সবার কল্যান আর হেদায়েত কামনা করা।
মহিমা- তুমি ভালো ।কিন্তু আমি তোমার মতো এতো ভালো না।আমি ওকে অভিশাপ দিলাম ওর কোনদিন ভালো হবে না।ওর জন্য তোমার এতো কষ্ট।
মিমি চলে গেলো।ফাতেমা, মহিমাও বাসায় চলে এলো।
এই ঘটনার পর তিন দিন কেটে গেলো।মিমি মাহিনের সাথে কোন যোগাযোগ করে না।মাহিন চিন্তায় পড়ে গেলো।অবশেষে মিমির বান্ধবি হাসির মাধ্যমে মাহিন মিমির সাথে যোগাযোগ করলো।
আর তখনি আবার আরেকটা অশান্তির বোমা ফাটলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ।………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here