ফিরে আসা পর্ব-৪৫

0
563

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-৪৫

হঠাৎ মাহিনের চোখ পড়লো কয়েকদিনের আগে লেখা গুলোর উপর।যা ফাতেমা খুব কষ্ট আর অভিমান থেকে লিখেছিলো।লেখাগুলো ছিলো““ আমার রাগি মশাইটা আমাকে একটুকুও ভালোবাসে না।আমার সাথে একবারোও ভালো ভাবে কথা বলে না।সে কি বুঝে না এতে আমার অনেক কষ্ট হয় ।সে যখন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তখন আমার বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায় খরার সময় যেমন অবস্থা হয় ফসলের ক্ষেতের।কিন্তু তবুও আমি তাকেই ভালোবাসি।তার মায়া ভরা মুখটার মায়ায় পড়ে গেছি।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে আমি আল্লাহর কাছে এমন একজনকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলাম যে হবে ইমানদার ,পরহেজগার,সুন্নত-লেবাসী„যে তার জীবনকে নবীজির সুন্নত অনুযায়ি পরিচালনা করে„যে আমাকে জান্নাতের পথ দেখাবে,আমাকে সে দ্বীনের কাজে সাহায্য করবে,যে আমার সাথে কুরআন পড়ার প্রতিযোগীতা করবে আরো অনেক অনেক ইচ্ছা ছিলো ছোট্ট এ জীবনে।ইচ্ছা গুলো বেশী দামি না।এগুলো মুল্য দিয়ে হিসেব করা যায় না।তো যখন বাবা প্রথম বলেছিলো রাগি মশাইয়ের মতো এমন একজনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে তখন খুব খারাপ লেগেছিলো।কিন্তুজন্ম ,মৃত্যু ,বিয়ে এ তিনটা জিনিস তো আল্লাহর হাতে।তাই আল্লাহ যা করের তা ভালোর জন্য করেন এটা ভেবে রাজি হয়েছিলাম।তখন আর; দ্বিমত পোষন করি নি।আমি রাজি হয়ে গেছিলাম।ভেবেছিলাম হয়তো তাকে আমি চেষ্টা করে ভালোবাসা দিয়ে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে পারবো।আমার শ্বশুড় বাড়ির সবাই অনেক ভালো।হয়তো এমন একটা পরিবার পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।যদিও তারা দ্বীনদার না।কিন্তু তাদেরকে ঠিক ভাবে বুঝালে তারা ঠিকি বুঝে।কিন্তু আমার রাগি মশাই এমন কেন???যেদিন বিয়ে হয়েছিলো সেদিন ভেবেছিলাম বাসর ঘরে তাকে সব সুন্নত বুঝিয়ে দিবো।কিন্তু যখন তিনি ঘরে এলেন আমায় এমন সব কথা বললেন যা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এমন কেন আমার রাগি মশাই??তার নাকি আমাকে পছন্দ না।তাকে নাকি জোর করে আমার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি নাকি গাইয়্যা ,ক্ষেত,অানস্মার্ট আরো কতো কী!!!!আচ্ছা পর্দা করলেই মানুষ এসব হয়??রাগি মশাইটা আমার এমন কেন??
সেদিন রাতে উনি আর একটা কথাও বলেন নি।চুপচাপ শুয়ে পড়েছিলেন বিছানায় ।আর আমি ছিলাম সোফায়। বিয়ের রাতের সুন্নতগুলোও পালন করা হয় নি।।।কিন্তু আমি ভেবে ছিলাম দুজনে সারা রাত গল্প করবো।তাকে দ্বীনের অনেক কিছু বুঝাবো তার পর এক সাথে তাহাজ্জত পড়বো।কি তা আমার স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেলো।পরদিন থেকে শুরু হলো আমার ধৈর্য্যর পরিক্ষা।একদিনো উনি ভালো করে কথা বলেন নি।বৌভাতের দিন তো আমার রাগি মশাই আর উনার বন্ধুরা মিলে চাচি ডেকে আমাকে নিয়ে অনেক মজা করলো।বন্ধুরা মজা করেছিলো তাতে আমার কষ্ট হয়নি।কিন্তু আমার রাগি মশাইও বন্ধুদের সাথে সাথে আমাকে নিয়ে মজা করেছিলো।খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার।চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিলো সেদিন।
ডায়েরির এই লেখাগুলোর উপর চোখের পানির ছাপ ছিলো।কারন একথাটা লিখার সময় ফাতেমার চোখের পানি ডায়েরিতে পড়েছিলো।
এ লেখাটা পড়ে মাহিনের চোখ দিয়েও পানি চলে এলো।মনে পড়ে গেলো সেদিনের কথা যেদিন মাহিন বন্ধুদের নিয়ে ফাতেমাকে চাচি বলে অপদস্ত করেছিলো।
আজ সব মনে পড়ে গেলো মাহিনের ।নিজেকে আজ মারতে ইচ্ছে করছে মাহিনের।
মাহিন ডায়েরিটা আবার পড়তে লাগলো।
““রাগি মশাইবে যেদিন প্রথম নামাযের জন্য উঠাতে মুখে পানি ছিটা দিয়েছিলাম সেদিনও তিনি আমাকে অপমান করেছিলেন।সেদিন খুব খারাপ লেগেছিলো।কিন্তুআমি কিছু বলি নি।আর যদিন সবাই প্রথম একসাথে খেতে বসেছিলাম সেদিন রাগি মশাই আমাকে দেখে না খেয়ে চলে গেছিলেন।আরেকদিন আমি রান্না করেছিলাম বলে সেদিন রাতে রাগি মশাই কিছুই মুখে দেন নি।
মাহিনের সব কিছু যেন চোখের মধ্যে ঝল ঝল করে ভাসছে।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব অত্যাচারের কথা যা মাহিন ফাতেমার সাথে করেছিলো।এতো শারীরির অত্যাচার না হলেও চরম সীমার মানসিক অত্যাচার।
ডায়েরির আরেক পাতায় লেখা মাহিন পড়তে লাগলো।
আমি যখন রাগি মশাইকে নিয়ে আমার বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম তখন চলে আসার একদিন আগে রাতের বেলা উনাকে নিয়ে ছাদে গেছিলাম।তখন তিনি বলেছিলেন আমি নাকি অনেক ভালো মেয়ে।কিন্তু আমি নাকি উনার যোগ্য না।আমি নাকি মুন্সি টাইপের কাউকে বিয়ে করলো সুখি থাকতাম।উনি নাকি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবেন না।সেদিন আমার কষ্টে যেন বুক ফেটে যাচ্ছিলো।অনেক কেদেছিলাম ছাদে একা একা দাড়িয়ে থেকে।খুব কষ্ট হয়েছিলো সেদিন।কিন্তু এতো কিছুর পরও আমি আশা ছাড়ি নি।ভরসা রেখেছি মহান সত্তার উপর।যিনি বিচার দিনের মালিক।

সেদিনের কথাও মাহিনের মনে পড়ে গেলো।নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে এখন মাহিনের।কারন মিমির মতো একটা বেদ্বীন মেয়ের জন্য মাহিন এতোদিন জান্নাতের টুকরাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো।
ডায়েরির আরেকটা পাতায় লেখা আছে““একদিন রাগি মশাইকে নামায পড়ার জন্য আমি মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে ছিলাম।সেদিন উনি আমাকে ঠাস করে চড় মেরেছিলেন।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।
এতোদিন ভেবে পাচ্ছিলাম না কেন আমার রাগি মশাই আমার সাথে এমন করে।আজ রাতে উনি অনেক দেরি করে বাড়ি ফিরেছিলেন।তাই রাতে আমি উনার জন্য না খেয়ে বসে ছিলাম।উনি যখন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলেন তখন আমি উনার জন্য না খেয়ে বসে আছি এটা বলাতে উনি আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।আমি নাকি সিনেমার নায়কাদের মতো আদর্শ বউ সাজার চেষ্টা করছি।অভিয়ন করছি।কিন্তু আমার মনে কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না।।তারপর হঠাৎ আজ বললেন উনি নাকি মিমি নামে কাউকে ভালোবাসেন।কিন্তু এটা যে হারাম।উনাদের স্পর্কটা হারাম।এটা আমি উনাকে বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চেষ্টা করেন নি উনি।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে একা একাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।আমিও আর কিছু খেলাম না।আজ খুব কষ্ট লেগেছে তাই ডায়েরিতে এগুলো লিখে রাখলাম।
ডায়েররির পাতায় চোখের পানির চাপ পড়ে গেছে।এই পাতাটায় পানির ছাপ একটু বেশিই।
মাহিন নিজেও ডায়েরিটা পড়ে কাদছে।
মাহিন- এতো কষ্ট দিয়েছি আমি আমার হুর পরীকে??আমি একবারো ওর মনটা বুঝার চেষ্টা করি নি।হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো তুমি।আমাকে হেদায়েত দাও।হেদায়েত দাও তুমি মাবুদ।
ডায়েরির আর কয়েকটা পাতা বাকি আছে পড়ার।
মাহিন সেগুলো পড়তে লাগলো।
সেই পাতা গুলোতে ছিলো“““আমি যখন সারা দিন না খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম আর রাতে যখন ডাক্তার এসেছিলো আর আমার ব্লাড টেস্ট করার জন্য ইনজেকশন বের করেছিলো আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।কারন আমি ইনজেকশান দেখে প্রচুর ভয় পাই।কিন্তু ডাক্তার যখন রক্ত নিচ্ছিলো তখন আমার রাগি মশাই জড়িয়ে ধরে ছিলো আমাকে।যদিও বাবা বলাতে উনি আমায় ধরেছিলেন।তখন মনে ভিতরের ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছিলো।অনেকটা সাহস পেয়েছিলাম মনের মধ্যে।ইশ…সারা জীবন যদি এভাবে উনি আমার পাশে থাকতেন কতই না ভালো হতো।কিন্তু উনি তো আমাকে সহ্যই করতে পারেন না।হায় আফসোস।যাকে আমি ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না
মাহিন ডায়েরির এ লেখাটা পড়ে বলে উঠলো -আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি ,অনেক ভালোবাসি।হয়তো আগে বাসতাম না কিন্তু তোমার শূন্যতা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা তোমাকে আমি ভালোবাসি।
ডায়েরির আরেক পাতায় ছিলো“হে আল্লাহ যদি রাগি মশাই আমার মনের মতো হতে পারতো??হে আল্লাহ উনাকে তুমি হেদায়েত দান করো।এমন যদি হতো তিনি হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছেন।ফিরে এসেছেন দ্বীনের পথে ।আর তিনি সুন্নতি লেবাস ধারন করেছেন।সাদা পাঞ্জাবি ,পাজামা,টুপি,মুখে নবি করিম সাঃ এ সুন্নতি দাড়ি।ইশ কতো সুন্দর লাগতো আমার রাগি মশাইকে।এমনিতেই তিনি অনেক সুদর্শন।কিন্তু দাড়ি রাখলে তাকে আরো সুদর্শন লাগবে।বিয়ের আগে যখন কলেজ যাওয়ার সময় বা বাড়ি ফিরার সময় এমন অনেক দম্পতিদের চোখে পড়তো যারা সুন্নতি লেবাসে আছে,সাথে বউ পড়েছে কালো বোরকা ,হাত মোজা ,পা মোজা ,হিজাব আর তার স্বামী পড়েছে সাদা পাঞ্জাবি ,পাজামা ,টুপি এদেরকে দেখে খুব ভালো লাগতো।মনে হতো যেন জান্নাতি জোড়া।নিজেও মনে মনে ভাবতাম আমার যখন বিয়ে হবে আমি আর আমার উনিও এভাবে বাইরে বের হবো।বিয়ে তো হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু সেই ইচ্ছেটা এখনো অপূর্ন রয়ে গেছে।কি জানি কবে সেই ইচ্ছেটা পুরন হবে।
মাহিন- তোমার এ ইচ্ছেটাও আমি পূরন করবো আমার হুর পরী।তোমার মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করবো।যেদিন নিজেকে তোমার মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবো সেদিন তোমার সামনে গিয়ে তোমাকে চমকে দেবো।কিন্তু হয়তো এর জন্যও তোমাকে কিছু সময় ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে।
কিন্তু আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন???জীবনের অনেকটা সময় তো রবের নিকট থেকে দূরে ছিলাম।নামায কালাম কিছুই পড়ি নি।অনেক খারাপ কাজও করেছি।এমনকি হারাম সম্পর্কেও জড়িয়েছি।আর আমি তো কুরআনও পড়তে পারি না।হে আল্লাহ এখন আমি কি করবো???
ফাতেমার ডায়েরিতে কয়েকটা আয়াত লেখা ছিলো।
মাহিন সেগুলো খুব ভালো করে দেখলো।
““তওবা করে ফিরে আসলে আল্লাহ পুর্বের গুনাহ গুলো নেকি দ্বারা পুর্ন করে দেন।””
সূরা ফুরকান-৭০

““জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর নারীর উপর ফরজ।”” বায়হাকি-১৬১৪
অন্তরকে আল্লাহর অনুগত্যের দিকে ঘুরানোর দোয়া–আল্লা-হুম্মা মুছররিফাল ক্বুলুবি ছাররিফ ক্বুলূবানা- আলা – ত্বয়া-আ‘তিক।
মনকে নামাযের দিকে ফিরানোর দোয়া বা নামাযি হওয়ার দোয়া।যা কুরআনে আছে
““রব্বিজ আলনি মুকিমাছছলাতি ওয়ামিং যুররিইয়াতি রব্বানা ওয়াতা কাব্বাল””–সূরা ইব্রাহিম- ৪০
মাহিন এ আয়াত গুলো দেখলো।প্রথম আয়াতটা দেখে মাহিন কিছুটা ভরসা পলো।কারন যারা তওবা করে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দেন।
মাহিন– যে করেই হোক আমার নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে।হয়তো একটু কষ্ট হবে।কিন্তু আমি আর পাপের রাজ্যে ডুবে থাকতে চাই না।ফিরে আসবো আমি রবের হেদায়েতের ছায়া তলে।
মাহিন ডায়েরিতে আরো একটা লেখা দেখতে পেলো।সেটা কোন কুরআনের আয়াত না।ফাতেমার লেখা কয়েকটা লাইন।যেটা পড়ে মাহিন হাসলো।
মাহিন- বাহ্ আমার বউটা তো দেখি বেশ সাহিত্যিক।হাহাহ
মাহিন ডায়েরিটা পড়া শেষ করে যত্ন করে রেখে দিলো।
যেদিন ফাতেমার সাথে দেখা করবে সেদিন ডায়েরিটা ফিরিয়ে দিবে নিজ হাতে।
“““““““
ওদিকে ফাতেমার বাবা রফিক সাহেব রাতে বাড়ি ফিরলেন।রফিক সাহেব রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে গেলেন।খাদিজা বেগমও রুমেই আছেন।তাই ফাতেমা ভাবলো এখন হাসানের বিয়ের সম্পর্কে কথা বলার একদম মূখ্য সময়।
ফাতেমা সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকলো।রফিক সাহেব সালামের জবাব দিলেন।
রফিক– ফাতেমা কিছু বলবি??
ফাতেমা — হুম বাবা।একটা দরকারি কথা বলতে এসেছিলাম।
রফিক- হুম বল।
ফাতেমা – বাবা আমি ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম।
রফিক- কী???হাসানের বিয়ের ব্যাপরে??
ফাতেমা – হুম বাবা।দেখো বাবা ভাইয়ার তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।আর কতদিন সে একলা একলা থাকবে??তাই ওর বিয়ে দেওয়া দরকার।মাকেও আমি বলেছি।মা তো রাজি হয়েছে।ভাইয়াও রাজি।এখন শুধু তোমার মতামত জানতে চাই।
রফিক– ছেলেদের তো এতো অল্প বয়সে বিয়ে করা ঠিক না।আর ও এখনো প্রতিষ্ঠিতও না।আর তার উপর তোর এমন অবস্থা।কি করে এসময় আমি ওর বিয়ের কথা ভাবি বল তো???
ফাতেমা — বাবা আমার কথা তুমি একদম চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।আর বিয়ে করলে এমনিতেই একটা ছেলে দায়িত্ববান হয়ে যায়।এমনকি পাপ কাছ থেকেও দুরে থাকে।
ফাতেমা আরো অনেক কিছু বলে বুঝালো।যদিও রফিক সাহেব প্রথম দিকে রাজি হন নি।কিন্তু শেষে ফাতেমার মুখের দিকে চেয়ে রাজি হয়েছেন।
ফাতেমা – তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাবা।জাযাকাল্লাহু খয়রান।
খাদিজা- তাহলে তো এখন থেকেই পাত্রী খুজতে হবে।
রফিক– হুম ঠিক বলেছো।কিন্তু হাসানের কেমন পাত্রী পছন্দ??
ফাতেমা – আমি জানি ভাইয়ার কেমন পাত্রী পছন্দ।অবশ্যই পাত্রী দ্বীনদার হতে হবে।হোক সে মাদরাসার বা হেদায়েত প্রাপ্ত।দেখতে যেমনি হোক তাকে তো দ্বীনদার হতে হবে।
কারন বিয়ের জন্য পাত্রপাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটা সর্বপ্রথম প্রাধান্য দিতে হবে তা হলো দ্বীনদারতা।আর ভাইয়া নিজেকে যথেষ্ট পরিবর্তন করেছে।দাড়িও রেখেছে।সুন্নত অনুযায়ি চলার চেষ্টা করে।তাই তার জন্য একজন দ্বীনদার মেয়ে দরকার।
খাদিজা- ঠিক আছে আমরা এমন পাত্রীই খুজবো।আর শুন তোর চেনা জানা কেউ থাকলে আমাদেরকে বলিস।
ফাতেমা – ঠিক আছে মা।
তাহলে আমি এখন আমার রুমে যাই।
এ বলে ফাতেমা নিজের রুমে চলে এলো।
ফাতেমা নিজের রুমে এসে বেলকনিতে গেলো।এর মধ্যেই ফাতেমার ফোনটা বেজে উঠলো।
ফাতেমা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রিয়া ফোন করেছে।
ফোন ধরে সালাম বিনিময় করে দুজনে কথা বলা শুরু করলো।
ফাতেমা – কিরে রিয়া কেমন আছিস??আর এতো রাতে ফোন করলি যে??কোন সমস্যা হয়েছে কি??
রিয়া — আমি ভালো নেই রে ফাতেমা।
ফাতেমা – এসব বলতে নেই।কারন সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়।এবার বল কি হয়েছে??
রিয়া –আমার বাবা তার বন্ধুর ভাইয়ের বখাটে ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে চাইছে।ছেলেটা একদম ভালো না।দেখে হিরোইন খোর গাঞ্জা খোরের মতো দেখা যায়।
ফাতেমা – এভাবে বলতে নেই রে।
রিয়া – তাহলে কি করে বলবো??
ফাতেমা – এতো তাড়াতাড়ি তোর বাবা বিয়ে দিতে কি করে রাজি হলো??তুই তো একদিন বলেছিলি তোর বাবা এতো তাড়াতাড়ি তোকে বিয়ে দিবে না।তাহলে এখন কি হলো??
রিয়া – আর বলিস. না।ঐ গাঞ্জা খোরটা কয়েকদিন আগে এসেছিলো আমাদের বাসায়।আমি ভুল করে ওদের সামনে বেপর্দা অবস্থায় চলে এসেছিলাম।ঐ সময় ঐ বেটা আমাকে দেখে ফেলেছিলো।আমি সাথে সাথে ওখান থেকে চলে গিয়েছিলাম।
ফাতেমা – তারপর??
রিয়া– তারপর ঐ বেত্তমিজটা নাকি ওর চাচাকে মানে বাবার বন্ধুকে বলেছে আমাকে নাকি ওর খুব পছন্দ হয়েছে।আমার মতো সুন্দরি নাকি আর কোনদিন দেখে নি।বল তো এখন কি করি??
ফাতেমা – হে আল্লাহ।তোর তো পর্দার ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত ছিলো।
রিয়া– জানি তো।এর জন্য পরে অনেক কেদেছি আল্লাহর কাছে।আল্লাহর কাছে মাফও চেয়েছি।সতর্ক থাকি নি বলেই হয়তো আল্লাহ আমাকে এ শাস্তি দিতে চাইছেন।কিন্তু আমি ঐ বেটাকে বিয়ে করতে পারবো না।এর থেকে আমি মরে যাবো।
ফাতেমা – চুপ কর।এসব কথা বলতে নেই।আরো গুনাহ হবে।তুই চিন্তা করিস না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।
রিয়া- প্লিজ তুই কিছু একটা কর।বিয়েটা যে করেই হোক ভাঙতে হবে।আমি ঐ বেটাকে বিয়ে করবো না।ঐ বেটা যদি তোর হাসান ভাইয়ের মতো হতো আমি নাচতে নাচতে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতাম।কিন্ত ঐ বেটাকে দেখেই কেমন জানি বেত্তমিজ টাইপ মনে হয়।আমার মাও রাজি না।কিন্তু বাবা রাজি।আর বাবা আমাকে যেমন ভালোবাসে তেমন শাসনও করে।অনেক রাগি আমার বাবা।তাই বাবা কথার উপর কিছু বলতে পারি না।
ফাতেমা – আমার ভাইকে তুই কিভাবে দেখলি??
রিয়া- তোর বিয়ের দিন একনজর দেখেছিলাম।আমি বোরকা পড়া ছিলাম তবুও তোর ভাইয়া আমাকে দেখে চোখ নামিয়ে রেখেছিলো।এটা দেখে খুব ভালো লেগেছিলো।ইশ এমন কাউকে পেলে নাচতে নাচতে বিয়ে করে ফেলবো।কিন্তু তুই কিছু একটা করে এই বিয়েটা ভাঙ।তোর অনেক বুদ্ধি।
ফাতেমা –আচ্ছা যদি বলি আমার ভাইকে বিয়ে করতে ।করবি???
রিয়া একটু লজ্জা পেলো।
রিয়া- কি বলছিস রে??এটা সম্ভব হবে কি করে??তোর ভাইয়া কি আমাকে বিয়ে করবে??আর আমার বাবা মা কি রাজি হবে??
ফাতেমা – তুই চিন্তা করিস না।তুই তোর মায়ের নাম্বারটা দে।আমি আমার মায়ের সাথে তোর মায়ের আলাপ করিয়ে দেবো।
রিয়া– আচ্ছা ঠিক আছে ।ফোন রেখে আমি তোকে নাম্বারটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দেবো।
কিন্তু তুই কি ময়মনসিংহে???
ফাতেমা – হুম।
রিয়া- এ সময় এখানে কেন??আর দুলাভাই মানে তোর জামাই মাহিন কোথায়??
ফাতেমা – সে এখানে নেই।
রিয়া- তাহলে তুই এখানে একা কবে এলি??
ফাতেমা – অনেক লম্বা কাহিনী।দেখা হলে বলবো।আচ্ছা তোর মা কি এখন সজাক আছে??
রিয়া– হুম।
ফাতেমা – তাহলে নাম্বারটা দে ।আমি এখুনি মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।আর তোর মাকেও আমি যা বললাম তা বলে রাখ।তাহলে কথা বলতে সুবিধা হবে।
রিয়া- আচ্ছা।আমি ফোনটা কেটে দিয়ে এখুনি দিচ্ছি।
রিয়া ফোন রেখে দিয়ে মায়ের নাম্বারটা ফাতেমাকে পাঠিয়ে দিলো।
ফাতেমা নাম্বারটা নিয়ে মায়ের রুমে গেলো।সেখানে রফিক সাহেবও ছিলেন।ফাতেমা সব কথা বাবা মাকে বুঝিয়ে বললো।রফিক সাহেব আর খাদিজা বেগম রাজি হলেন।
ফাতেমা – তাহলে মা তুমি রিয়ার মাকে একটা ফোন করে জানিয়ে দাও যে তোমরা রিয়াকে দেখতে যেতে চাও আর বিয়ের কথা বলতে চাও।
খাদিজা – ঠিক আছে।
এই বলে তিনি রিয়ার মাকে ফোন দিলেন।
রিয়ার মা আর খাদিজা বেগম দুজনে কথা বলে ফোন রেখে দিলেন।
ফাতেমা – মা আন্টি কি বললো???
খাদিজা- উনি আমাদেরকে কালকে যেতে বলেছেন।আর যে ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ে ঠিক হচ্ছে ঐ ছেলেকে উনার পছন্দ হয়নি।আর উনার স্বামী একটু রাগি টাইপের তাই উনি কিছু বলতে পারেন না।কিন্তু কাল যদি আমরা গিয়ে কথা বলি তাহলে হয়তো উনার স্বামী বুঝবেন।তাই কাল যেতে বলেছেন।
ফাতেমা – ঠিক আছে।আল্লাহ যেন সব ঠিক করে দেন।হে মাবুদ তুমি সব ঠিক করে দিয়ো।
ফাতেমা নিজের রুমে ঘুমাতে গেলো।কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না।মাহিনের মুখটা বার বার মনে পড়ছে।আর মাহিনের করা খারাপ ব্যবহার গুলো তার বার বার মনে পড়ছে।তাই কাদতে কাদতে চোখের পানিতে বালিশ ভিজে গেছে।কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো বেচারি।
তাহজ্জতের সময় ঘুম ভাঙলো ফাতেমার ।তাহাজ্জতের নামাযের মুনাজাতে আজ রিয়ার জীবনের সুখ কামনা করলো ফাতেমা।কারন একজন বেদ্বীন স্বামী যে একজন পরহেজগার মেয়ের জন্য কতটা কষ্টের তা ফাতেমা হারে হারে টের পাচ্ছে।কিন্তু মাহিনের হেদায়েত কামনা করা এখনো বন্ধ করে নি ফাতেমা।একটু পর ফজরের নামাযটাও আদায় করে নিলো ফাতেমা।আজান পড়ে নি।তবুও ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে তাই ফজরের নামাজটাও পড়ে নিলো।
এদিকে ওবাড়িতে শুরু হলো এক আশ্চর্যকর কাহিনী।
মাহিন ফজরের আজানের সময় উঠে তৈরী হয়ে বাবাকে গিয়ো বললো বাবা চলো ।আজ থেকে আমি মসজিদে গিয়ে নামায পড়বো।
আরমান সাহেব আর মেহেঘ বেগম মাহিনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।উনারা তো অবাক।যে ছেলে ১২টার আগে ঘুম থেকে উঠে না সে আজ ফজরের নামাযের সময় উঠে বলছে মসজিদে যাবে নামায পড়তে।তাই উনারা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
মাহিন- কি হলো বাবা হা করে তাকিয়ে আছো কেন??চলো নয়তো দেরি হয়ে যাবে।
মেহেঘ- আমি স্বপন দেখছি নাতো??
মাহিন- আরে না না মা।এটাই বাস্তব।
মহিমা সবার আওয়াজ শুনে এদিকে এলো।
মহিমা- মা মাগো ও মা আমার তো মাথা ঘুরছে??এটা ভাইয়া ???নাকি আমি স্বপন দেখছি??আমাকে একটু ধরো গো মা।
ভাইয়া তাও আবার ফজরের টাইমে??তাও আবার নামায পড়তে যাচ্ছে বাবার সাথে??
মাহিন- পাকামি বন্ধ করে যা নামায পড় গিয়ে।
বাবা চলো তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এই বলে আরমান সাহেব আর কোন কথা না বাড়িয়ে মসজিদে চলে গেলেন মাহিনের সাথে।
আজ মসজিদে মাহিনকে দেখে অনেকেই অবাক হলো।নামায পড়ে আসার সময় অনেকে নানা ধরনের প্রশ্নও করেছে মাহিনকে।
ওদিকে ফাতেমা ,খাদিজা বেগম আর হাসান এবং রফিক সাহেব যোহরের নামায পড়ার পর রিয়াদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
রিয়াদের বাড়িতে পৌছানোর পর যা হলো তা তারা কেউ কল্পনাও করতে পারলো না।

চলবে ইনশাআল্লাহ……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here