ফিরে আসা পর্ব-৪৬

0
632

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব- ৪৬

রিয়াদের বাড়িতে যাওয়ার পর যা ঘটলো তা তারা কেউ কল্পনাও করতে পারলো না।
রফিক সাহেব ,খাদিজা বেগম,হাসান ,আর ফাতেমা রিয়াদের বাড়িতে গিয়ে পৌছালো।
উনাদেরকে দেখে রিয়ার মা খুব খুশি হলেন।তিনি অতি সুন্দর ভাবে সবাইকে সালাম দিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে বসালেন।
ফাতেমা – আন্টি রিয়া কোথায়??
হেনা বেগম- রিয়া ওর ঘরেই আছে।তুমি ওর কাছে যেতে পারো।
ফাতেমা – ঠিক আছে আন্টি।
ফাতেমা রিয়ার ঘরে গেলো।আর বাকিরা সবাই ড্রয়িং রুমেই আছে।রিয়ার বাবা এখনো উনাদের সামনে আসে নি।
রফিক – আচ্ছা আপনার স্বামী কোথায়??উনাকে তো দেখছি না।
হেনা বেগম- ও একটু রুমে আছে।আগে আপনারা নাস্তা খান আমি ওকে ডেকে নিয়ে আসছি।
এই বলে হেনা বেগম রিয়ার বাবাকে ডাকতে গেলো।
হেনা বেগম- কিগো শুনছো উনারা এসে গেছেন ।চলো নিচে চলো।
রায়হান সাহেব- উনারা এসে গেছেন মানে??কারা এসেছে??
হেনা বেগম- ঐ যে রিয়ার বান্ধবী ফাতেমা আর তার পরিবারের সবাই।রিয়ার বিয়ের আলাপ করতে এসেছেন।
রায়হান সাহেব– রিয়ার বিয়ের আলাপ মানে??কি বলছো এসব??আমি তো আমার বন্ধুর ভাতিজার সাথে রিয়ার বিয়ে দেবো বলে কথা দিয়েছি।তাহলে উনারা এখন কিসের বিয়ের আলাপ করতে এসেছে??
হেনা বেগম- দেখো তুমি যে ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ে দিবে বলছো তাকে রিয়ার পছন্দ না।ছেলেটাকে আমারও পছন্দ হয় নি।বেশি সুবিধার মনে হলো না।কেমন যেন বেয়ারা টাইপের।কিন্তু ফাতেমার ভাই শুনেছি অনেক ভদ্র আর পরহেজগাড় ছেলে।
রায়হান সাহেব– বড়লোকের ছেলেরা একটু ঐ রকমি হয়।আমার বন্ধুর ভাই টপ লেভেলের বড়লোক।তাদের টাকা পয়সার সীমা নেই।আর ফাতেমার ভাইয়ের মতো হুজুর ছেলে আমার পছন্দ না।
তাই আমি ওদের সাথে রিয়ার কথা বলতে পারবো না।তুমি ওদেরকে নাস্তা খাইয়ে বিদায় করে দাও।
হেনা বেগম- এটা তুমি কি বলছো।আমি উনাদেরকে ফোন করে দাওয়াত দিয়েছি।আর তুমি যদি একবার না যাও তাহলে সেটা অনেক খারাপ দেখায়।
রায়হান সাহেব- আমি না বলেছি মানে না।!!এর উপর কোন কথা বলো না।
হেনা বেগম- দেখো রিয়ার তোমার বন্ধুর ভাতিজাকে একদম পছন্দ না।ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিলে রিয়া সুখি হবে না।কারন রিয়া এখন দ্বীনের পথে চলার চেষ্টা করছে।তাই দ্বীনের পথে রিয়াকে সাহায্য করার জন্য একজন দ্বীনদার পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হবে।
রায়হান- তোমার মেয়েকে পর্দা করার অনুমতি দিয়েছি বলে কি ও মাথায় উঠেছে নাকি??বেশি করলে কিন্তু ওর পর্দা করা আমি ছুটিয়ে দেবো।
হেনা বেগম– ছিঃ বাবা হয়ে এমন কথা কিভাবে তোমার মুখে আসে??
রায়হান – আমি এতো কিছু শুনতে চাই না।ওদেরকে তুমি বিদায় করো।
হেনা বেগম- দয়া করে বুঝার চেষ্টা করো।নিচে গিয়ে একটু ওদের সাথে কথা বলো তাহলেই বুঝতে পারবে ওদের পরিবারটা অনেক ভালো।আর তুমি বড়লোকের কথা বলছিলে না??উনারাও যথেষ্ট বড়লোক।রিয়া সবদিক থেকে সুখেই থাকবে।
প্লিজ নিচে চলো।প্লিজ।
রফিক- – অনেক্ষন তো হয়ে গেলো উনারা এখনো আসছেন না কেন??
খাদিজা– মনে হয় কোন কাজ করছেন।
হেনা বেগম – দেখো অনেক্ষন হয়ে গেছে উনারা নিচে ড্রয়িং রুমে বসে আছেন।উনারা কি ভাববেন বলো তো??প্লিজ চলো।একটি বার কথা বলে দেখো ।
অনেক জোরাজুরির পর রায়হান সাহেব নিচে উনাদের সামনে গেলেন।কিন্তু রিয়ার বিয়ের কথা বলতে না।শুধু সম্মান রক্ষার খাতিরে।
রায়হান সাহেবকে দেখে রফিক সাহেব দাড়িয়ে সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে গেলেন কিন্তু রায়হান সাহেব কোন পাত্তা না দিয়ে একটা ভাব নিয়ে সামনের সোফায় বসে পড়লো।
রফিক সাহেবর সেটা সম্মানে লাগলো।রায়হান সাহেবর এমন অদ্ভুত আচরনে রফিক সাহেব আর বাকিরা কিছুটা বিষ্মিত হলো।
রফিক – ভাইসাব আমরা আপনার মেয়ে রিয়ার বিয়ের কথা বলতে এসেছি আমার ছেলে হাসানের সাথে।
রফিক সাহেব হাসানকে দেখিয়ে বললো এ হলো আমার ছেলে হাসান।
রায়হান– দেখুন আমি আমার মেয়ের বিয়ে আরেক জায়গায় ঠিক করে ফেলেছি।তাই আপনাদের সাথে এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।
রফিক- জি আমরা সেটা জানি।কিন্তু আমরা এটাও জানি রিয়ার ঐ ছেলেকে পছন্দ না।তাই তো আপনার স্ত্রী আমাদেরকে দাওয়াত দিয়ে এনেছেন আমার ছেলের সাথে বিয়ের কথা বলার জন্য।আর রিয়া আমার মেয়ে ফাতেমার বান্ধবি।ফাতেমা রিয়াকে ভালো করেই চিনে।তাই ফাতেমা আমাদেরকে রিয়ার কথা বললো বলেই আমরা এ ব্যাপারে মত দিয়েছি।
রায়হান- দেখুন আমি আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।অপনারা এসেছেন ভালো কথা।আপনারা নাস্তা খেয়ে যাবেন।আমি উঠছি।আমার অনেক কাজ আছে।
হেনা বেগম- তুমি কি বলছো এসব??
রায়হান সাহেবর কথাগুলো রফিক সাহেবের গায়ে খুব লাগলো তিনি খুব অপমান বোধ করলেন।কিছুটা রেগেও গেলেন।
রফিক- আপনি কি আমাদেরকে অপমান করছেন??আর আপনি কি আমাদেরকে ছোটলোক মনে করেছেন??আপনার. স্ত্রী আমাদেরকে ফোন করে ডেকেছে তাই আমরা ভদ্রভাবে বিয়ের কথা বলতে এসেছি।এভাবে বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করার মানে কি??
রফিক সাহেব কথাগুলো জোরে জোরে বললেন।কারন তিনি রেগে গেছেন।
হাসান- বাবা শান্ত হও ।প্লিজ শান্ত হও ।ভালো করে বসে কথা বললেই সব সমস্যা সমাধান হবে।
রায়হান- রফিক সাহেব একটু গলাটা আস্তে করে কথা বলেন।এটি ভদ্রলোকের বাড়ি।আর আপনার ছেলেকে আমার পছন্দ হয় নি।আমি যার সাথে রিয়ার বিয়ে ঠিক করেছি সে অত্যন্ত বড়লোকের ছেলে আর স্মার্ট ছেলে।ও আপনার ছেলের মতো না।
রফিক- এই একি ভুল আমিও করছি।যার মাশুল আজ আমার নিরিহ মেয়েটাকে দিতে হচ্ছে।বড়লোকের স্মার্ট ছেলের সাথে আমার মেয়েটাকে আমি বিয়ে দিয়েছিলাম।আর সেই বড়লোকের স্মার্ট ছেলে আমার মেয়েটাকে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
খাদিজা বেগম রফিক সাহেবকে চুপ করতে বললেন।
খাদিজা – এসব কথা এখানে তুমি কেন বলছো।???
রফিক- আমাকে বলতে দাও।আমার মতো ভুল যাতে অন্য কোন বাবা মা না করেন।আমাদের মতো বাবারা বড়লোকের ছেলে দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাই।আমরা শুধু ভাবি টাকা পয়সা থাকলেই সুখি হওয়া যায়।একবারো ভাবি না ছেলেটা কি দ্বীনদার ??সে কি আমার মেয়েটাকে সুখে রাখতে পারবে??তার তাকওয়া কতটুকু।।মানুষ তার আমল দ্বারা সুখি হয় টাকা দিয়ে না।
রায়হান- আপনি আপনার এসব লেকচার অন্য কোথাও দিয়েন।এখন আপনারা আসতে পারেন।
সবার চেচাচেচি শুনে ফাতেমা রিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে এলো।আর রিয়াকে ঘরেই থাকতে বললো।
ফাতেমা এসে দেখে রফিক সাহেব রাগারাগি করছেন।
রফিক- আপনি কিন্তু কাজটা ভালো করছেন না।আপনাকে শেষে কিন্তু পস্তাতে হবে।এখনো সময় আছে যদি মেয়েটাকে সুখি দেখতে চান তাহলে আপনার এ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন।না হয় পরে কপাল চাপড়াতে হবে।
রায়হান- আমি ঐ ছেলের সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দেবো আমার মেয়ে ওখানে কত সুখি থাকবে।আপনাকে আমি দেখিয়ে দেবো।আর এক সপ্তাহের ভিতরে আমি রিয়ার বিয়ে দিবো।দেখি কে আটকায়।
আপনারা এখন আসতে পারেন।
রফিক- আমরা এখন চলে যাচ্ছি।কিন্তু আপনাকে এর জন্য পস্তাতে হবে।
হেনা বেগম– প্লিজ আপনারা রাগ করে যাবেন না।ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।প্লিজ।
রফিক– আমাদেরকে মাফ করবেন আমরা চলি।
তারপর রফিক সাহেব এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ালেন না ।সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন।
রিয়া আড়াল থেকে সব দেখছিলো।ওরা চলে যাবার পর রিয়া নিচে নেমে এলো।
রিয়া- এটা তুমি কি করলে বাবা।উনাদেরকে এভাবে কেন অপমান করলে???এটা কিন্তু তোমার ঠিক হয় নি।
একথা বলতেই রায়হান সাহেব রিয়াকে ঠাস করে চড় মারলেন।
রায়হান সাহেব রিয়াকে বললেন-তোর বড্ড বার বেড়েছে তাই না??পর্দা করতে দিয়েছি বলে মাথায় উঠেছিস।তোকে আমি আমার বন্ধুর ভাতিজা টনির সাথেই বিয়ে দেবো।তাও আবার এক সপ্তাহের মধ্যে।দাড়া আমি এখনি টনির বাবাকে ফোন দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলছি।
রিয়া কাদতে কাদতে বললো- প্লিজ বাবা তোমার দুটি পায়ে পড়ি তুমি এমন করো না।আমি ঐ রকম বেদ্বীন ছেলেকে বিয়ে করবো না।এর থেকে আমি মরে যাবো।
হেনা বেগম- প্লিজ রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েটার জীবনটা শেষ করে দিয়ো না।দেখলে তো রফিক সাহেব কি বলে গেলেন।ফাতেমাকে বড় লোকের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু সেই ছেলেই ফাতেমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
রিয়া- এটা তুমি কি বলছো মা??ফাতেমাকে ওর স্বামী বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে মানে??
হেনা বেগম- রফিক সাহেব তো এটাই বলে গেলেন।
তুমি এমন ভুল করো না গো।আমি চাই না আমার মেয়েটারো এমন অবস্থা হোক।
রায়হান – আমি কোন কথা শুনতে চাই না।আমি বলেছি এক সপ্তাহ পরে বিয়ে মানে এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে।বেশি কিছু করলে মা মেয়ে দুজনকেই ঘরের মধ্যে আটকে রাখবো।
এই বলে রায়হান সাহেব ঘরে চলে গেলেন।এদিকে রিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লো।
হেনা বেগম রিয়াকে সান্তনা দিয়ে বললেন চিন্তা করিস না মা।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।ঊনি যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।রিয়া দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।
ওদিকে রফিক সাহেব বাসায় এসে প্রচন্ড রেগে আছে।
রফিক – বাসায় ডেকে নিয়ে এতো বড় অপমান।আল্লাহ ঠিক এর শাস্তি দিবেন উনাকে।উনার মেয়ে কোনদিন সুখি হবে না।
ফাতেমা – বাবা তুমি এমন করে বলো না।এখানে রিয়ার তো কোন দোষ নেই।ও তো কিছু করে নি।আর আমি দুঃখিত।আমার জন্য তোমাকে এসব শুনতে হলো।
রফিক- এতে তো তোরও কোন দোষ নেই।তুই কেন মাফ চাইছিস??যা তুই নিজের ঘরে যা।
হাসান এখানে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে।বেচারা পড়েছে বেরাকলে।জীবনের প্রথম পাত্রী দেখতে গিয়ে এ পরিস্থিতির স্বিকার হলো।
ওদিকে ও বাড়িতে মাহিন ড্রয়িং রুমে বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছে।আর একটু পরে পরে ঘুমে ঢলে পড়ে যাচ্ছে।
মহিমা মাহিনের সাথেই বসে মোবাইল চালাচ্ছিলো।
মহিমা মাহিনকে এমন করতে দেখে বললো কিরে ভাইয়া এভাবে ঘুমে ঢলে পড়ে যাচ্ছিস কেন ??সারা রাত কি ঘুমাস নি নাকি??
মাহিন মহিমার কথা শুনে আমতা আমতা করতে লাগলো ।
মাহিন – না মানে…
মহিমা – কী না মানে??
মাহিন কাল সারা রাত ঘুমায় নি ফজরের নামায পড়বে বলে।কারন মাহিন জানে একবার ঘুমিয়ে পড়লে সে এলার্ম দিলেও উঠতে পারবে না।তাই সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে বেচারা।
ভালো হওয়ার জন্য কত কষ্ট করছে বেচারা।কিন্তু ছোট থেকে যদি দ্বীনের শিক্ষা পেত তাহলে হয়তো আজ কাউকে এ দিন দেখতে হতো না।
মাহিন- আমি কাল সারা রাত ঘুমাই নি রে।যদি ঘুমাতাম তাহলে ফজরের নামায পড়তে পারতাম না আজ।তাই একটু ঘুম পেয়েছে ।
মহিমা – কি বলছিস কি তুই???বাহ্ তাহলে এখন সত্যি সত্যি ভালো হতে চাচ্ছিস মনে হচ্ছে।
মাহিন-এতো দিন পাপের রাজ্যে ডুবে ছিলাম।পাপ করতে করতে পাপের ঝুড়ি অনেকটাই ভারি করে ফেলেছি।তাই সেই পাপের পরিমান এখন কমাতে চাই।
মহিমা – বাহ্ খুব ভালো কথা বললি তো।
মাহিন- ভেবেছি এখন থেকে আর দাঁড়িতে হাত লাগাবো না।মানে আর দাঁড়ি সেইভ করবো না।দাঁড়িও রেখে দিবো।কিন্তু একটা সমস্যা।
মহিমা – কি সমস্যা??
মাহিন- আমি তো কুরআন শরীফ পড়তে পারি না।এখন এটা শিখবো কি করে??এখন যদি হুজুর রেখে শিখি তাহলে তো লজ্জা করবে।
মহিমা — অারে এতে লজ্জা কিসের??শিক্ষার কোন বয়স হয় না।সব সয়সে জ্ঞান অর্জন করা যায়।এতে লজ্জার কিছু নেই।কিন্তু তোর যদি হুজুর রেখে পড়তে এতোই লজ্জা করে তাহলে তুই অনলাইনে তো শিখতে পারিস।ভাবি একদিন আমাকে বলেছিলো।অনলাইনে নাকি অনেক কোর্স আছে কুরআন শিখার।তুই অনলাইনে কোর্স করতে পারিস।তাহলে আর লজ্জা করবে না।
মাহিন – সত্যি বলছিস ??অনলাইনে কোর্স আছে?? #পবিত্র_কোরআন_শিক্ষা_কোর্স
https://bit.ly/3cLQTwM
মহিমা- হুম।আজকাল তো বেশির ভাগ দ্বীনের প্রচার অনলাইনেই করা যায়।আর এটা অনেক সহজ একটা পদ্ধতি।তাই ওলামায়ে কেরামরা অনলাইনেই দ্বীনের প্রচার শুরু করেছেন।অনেকে অনলাইনে কোরআন শিখায়।
মাহিন- খুব ভালো আইডিয়া তো।আমি তো আগে জানতাম না
মহিমা – জানবি কি করে ??সারাদিন তো শুধু মিমিকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতি।
মাহিন- তুই ওর নাম আর কোনদিন মুখে আনবি না।ওর নামটাও আমি শুনতে চাই না।
মহিমা-ঠিক আছে।আর বলবো না।
তোর জন্য ভাবিকে অনেক মিস করছি।এখন যদি ভাবি থাকতো কতো ভালো হতো।
মাহিন মনে মনে বললো ‘আমি কি কম মিস করছি নাকি আমার হুর পরীকে??আজ আমার গোড়ামির জন্য বেচারি এতো কষ্ট পেলো।কিন্তু আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো হুর পরী আমি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দেবো না।তোমার কাছে কান ধরে মাফ চাইবো।”
মহিমা – কিরে কি ভাবছিস??
মাহিন- কিছু না।আমি আজি অনলাইনে সার্চ দিয়ে কোর্স গুলোর ব্যাপারে ভালো করে খুজ নেবো।তার পর আল্লাহর নাম নিয়ে কোর্স শুরু করবো।
এদিকে রাতের বেলা এশার নামাযের পর রিয়া ফাতেমাকে ফোন দিলো।দুজনে সালাম বিনিময় করে কথা বললো।
রিয়া- আমাকে তুই মাফ করে দিস রে ফাতেমা ।আমার জন্য তোদের আজ এতো অপমান সহ্য করতে হলো।
ফাতেমা — আরে পাগলি মেয়ে কাদছিস কেন??তোর তো কোন দোষ নেই।
রিয়া- জানিস বাবা নাকি ১ সপ্তাহের মধ্যে ঐ টনির সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।এখন আমি কি করবো বল??ওকে বিয়ে করার থেকে তো আমার মরে যাওয়া ভালো।কিন্তু আত্মহত্যাও তো করতে পারবো না।কারন এটা মহা পাপ।সারা জীবন জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে।
ফাতেমা – দেখ রিয়া এখন তোর আল্লাহর উপর ভরসা রাখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।আমি তো চেষ্টা করেছিলাম ।কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না।এখন একমাত্র আল্লাহই ভরসা।আল্লাহকে ডাক।
রিয়া- হুম তা তো ডাকছিই।কিন্তু এখন কি হবে।
ফাতেমা তোকে নাকি মাহিন ভাই বাসা থেকে বের করে দিয়েছে???এটা কেন করলো উনি??এটা শুনার পর তো আমার আরো ভয় করছে।আমার সাথেও যদি এমন হয়।
কেন করলো মাহিন ভাই তোর সাথে এমন??
ফাতেমা রিয়াকে সব কথা খুলে বললো।
রিয়া তো আরো বেশি দুঃখি হয়ে গেলো ফাতেমার কথা শুনে।
রিয়া– হে আল্লাহ!!!তোর সাথে এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো আর তুই একবার জানালি না পর্যন্ত??
তুই এতো ভালো একটা মেয়ে তোর সাথে যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে আমার সাথে কি হবে?????
ফাতেমা – তুই মন খারাপ করিস না।যা হয় ভালোর জন্য হয়।হয়তো আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার পিছনে কোন ভালো উদ্দেশ্য আছে।কারন সব কিছুর পিছনে কোন না কোন ভালো উদ্দেশ্য থাকে।তুই ভাবিস না হয়তো এতেই তোর কল্যাণ রয়েছে বলে তোর এ বিয়েটা ঠিক হয়েছে।
ফাতেমা আর রিয়া কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
রিয়া আজ প্রথম তাহাজ্জতের নামায পড়তে বসেছে।নামাযের মোনাজাতে রিয়া আজ খুব কাদলো।ফাতেমার কথা শুনে তো আজ ওর আরো দুঃখ হলো।
রিয়া– হে আল্লাহ আমি তোমার গুনাহগাড় বান্দি।জানি জীবনে অনেক গুনাহ করেছি।যা বলে শেষ করা যাবে না।কিন্তু হে মাবুদ এখন তো আমি তোমার আদেশ মতো চলার চেষ্টা করি।আমাকে দ্বীনের পথে কবুল করে নাও মাবুদ।আর বিয়ে যার সাথেই হোক না কেন সে যেন আমার জন্য কল্যাণকর হয়।আমি যেন দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে পারি।আমিন।
পরদিন দুপুরে রিয়ার বাবা রিয়াকে আর রিয়ার মাকে ডেকে বললো “দেখো আমি টনির বাবার সাথে ফাইনাল আলাপ করে ফেলেছি।ওরা বিয়েতে রাজি।তাই বিয়েটা যাতে তাড়াতাড়ি হয় এজন্য তাদেরকে বলেছি।ওরা বলেছে আগামি সোমবার বিয়ে হবে।এতে আমার কোন সমস্যাও নেই আর ওদেরও কোন সমস্যা নেই।বিয়েটা ধুমধাম করেই হবে।আমি সব আয়োজনের দায়িত্ব কমিউনিটি সেন্টারের লোকদের দিয়ে দিবো।ওরা সব ঠিক ঠাক করে রাখবে।বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারেই হবে।আর যা যা অনুষ্ঠান দরকার যেমন -গায়ে হলুদ,মেহেন্দি,আর যা যা হয় সব হবে।
আর রিয়া তোর বিয়ের দিন কিন্তু ওরা পর্দা করতে না করেছে।কারন ওদের. অনেক বড় বড় আত্মীয়রা আসবে।তাই তোকে পার্লার থেকে ওরা সাজাবে বলেছে।
একথাটা শুনে রিয়ার মতো মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।১ সেকেন্ডের ভিতরে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসলো।কারন একজন পর্দাশীল নারীকে যখন বেপর্দা হওয়ার কথা বলা হয় তখন যে তার. মনের ভিতরে কি যে কষ্টের ঝড় ওঠে তা শুধু সেই ব্যাক্তিই জানে।
রিয়া- কিন্তু বাবা আমি তো বেপর্দা হতে ….
রিয়ার কথা শেষ না হতেই রায়হান সাহেব বলেলেন. আমার মুখের উপর কোন কথা বলা আমি পছন্দ করি না।এতোদিন পর্দা করেছিস কিছু বলি নি।কিন্তু বিয়ের দিন যদি কোন ফালতু ড্রামা করিস তাহলে কিন্তু এর পরিনতি ভয়াবহ হবে।
হেনা বেগম- তুমি রাগি মানুষ এটা আমি জানতাম কিন্তু এতো পাষন্ড হলে কবে থেকে।আমাদের একমাত্র মাত্র মেয়ে রিয়া।তুমি কি ওর মনের কথাটা একবার বুঝবে না???
রায়হান- আমি যেমন ভালোর ভালো তেমন খারাপের খারাপ।আমি সময় বুঝে কাজ করি।আর তোমরা মা মেয়ে যে এতো ঢং করছো তোমরা কি জানো টনির বাবা এ শহরের টপ ধনীদের মধ্যে একজন।কি নেই ওদের??রিয়ার বিয়ের পর সেখানে রিয়া রানীর মতো থাকবে।
আমি আর কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।তোমাদের জানানো দরকার ছিলো তাই জানিয়েছি।
আর রিয়া তুই বিয়ের প্রস্তুতি নে।আমার অনেক কাজ করতে হবে।শহরের সবচেয়ে দামি কমিউনিটি সেন্টারে বুকিং দিতে হবে।দেখতে হবে না কার মেয়ের বিয়ে??
রায়হান সাহেব এই বলে বাইরে চলে গেলেন।
রিয়া- আমি তো বিয়েটা করতে রাজি হয়েছি মা।কিন্তু বেপর্দা হয়ে আমি কি করে সবার সামনে যাবো??
হে আল্লাহ এটা তুমি আমাকে কোন পরিক্ষায় ফেললে।??
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে।বিয়ের মাত্র ১ দিন বাকি।রিয়া ফাতেমাকে সব জানিয়েছে।ফাতেমা বেচারি রিয়ার এমন অবস্থা শুনে খুব কষ্ট পেলো।কিন্তু তার তো কিছু করার নেই।
রিয়ার যে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হবে সেটা ফাতেমাদের বাসার কাছেই।বেশি দুরে না।
রিয়া আজ সারা রাত কেদেছে।এখন তো আর কিছুই করার নেই।একমাত্র আল্লাহ যদি তাকে সাহয্য করে।তাছাড়া আর কেউ নেই সাহায্য করার।
বিয়ের আগের দিন টনি রিয়ার জন্য দামি দামি গা ভর্তি গয়না ,ডিজাইনার লেহেঙ্গা ,আরো কত কিছু যে পাঠিয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
কিন্তু রিয়া তো এভাবে বিয়ে করতে চায়নি।স্বপ্ন দেখেছিলো ফাতেমা আর হেন্সির মতো সুন্নতি তরিকায় বিয়ে করবে।কিন্তু আজ তার স্বপ্ন ভেঙে চুড়মার হয়ে গেলো।
সারা রাত ঘুমায়নি বেচারি।বাসা ভর্তি মেহমান।বেচারি যতটুকু সম্ভব নিজেকে পর্দায় রাখার চেষ্টা করেছে।কাল দুপুরে বিয়ে।কাল সবাই সেন্টারে যাবে।কত আনন্দ ফুর্তি করছে সবাই।গান বাজনা হৈ হুল্লর ।এসব কিছু যেন বিষের মতো লাগছে রিয়ার।চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু সবার সামনে কাদতেও পারছে না। না ঘুমিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিলো।ফজরের নামাযটা পড়ে নিলো রিয়া।
সকাল থেকেই আবার সবার হৈচৈ শুরু।সবাই সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।রিয়া ঘরে বসে কাদছে।হেনা বেগম সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পাচ্ছেন।কারন তিনি নিজেই মেয়ের দুঃখে দুঃখিত।
দুপুর হয়ে গেলো।১২ টা বেজে গেছে ।যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে।রিয়া গোসল করে নামাযটা পড়ে নিলো।কারন জানে এখন নামায না পড়লে তার আজ আর নামায পড়া হবে না।
দুপুরে টনি গাড়ি পাঠিয়ে দিলো রিয়াকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রিয়ার খালাতো বোনেরা এসে বললো রিয়া আপু গাড়ি এসে গেছে ।চলো পার্লারে চলো।আজ আমরাও ইচ্ছা মতো সাজবো তোমার সাথে ।টাকা কিন্তু দুলাভাই দিবে।হাহাহা
আর আমরা আজ গেইটে ১ লাখ টাকা চাইবো।জুতা চুরি করবো ।দুলাভাইয়ের হাত ধুয়াবো।আজ অনেক টাকা আদায় করবো।হিহিহি
রিয়া এসব কিছুই শুনছে না।মনমরা হয়ে রয়েছে।কোন কথায় আজ তার কান পর্যন্ত পৌছচ্ছে না।সব কেমন যেন ধোয়াসা হয়ে গেছে।রিয়ার জীবন যেন ধমকে গেছে।
রিয়ার খালাতো বোনেরা বললো কি হলো এখনো দাড়িয়ে আছো কেন???রেডি হও তাড়াতাড়ি।
রিয়া বোরকা হিজাব আর বাকি জিনিস পড়ে নিলো।হয়তো আজই তার পর্দা করার শেষ দিন।কারন যে পরিবারে তার বিয়ে হতে যাচ্ছে তারা পর্দার প পর্যন্ত জানে না।
রিয়া গাড়িতে গিয়ে উঠলো।সাথে তার খালাতো বোনেরাও উঠলো।গাড়ি তাদেরকে নিয়ে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত পার্লারে নিয়ে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে রিয়া আর ওর বোনেরা ভিতরে গেলো।
টনি নাকি আগে থেকেই রিয়ার কথা পার্লারে বলে রেখেছিলো।রিয়া ভিতরে যেতেই একজন মহিলা তাকে বউ সাজানোর রুমে নিয়ে গেলো।সেখানে তাকে সাজানোর জন্য দুজন মেয়ে ছিলো।
একটা মেয়ে যে রিয়াকে সাজাবে সে রিয়াকে বোরকা খুলে বললো।
-আপু আপনি বোরকাটা খুলুন আপনাকে সাজাতে হবে।আর সাজাতে একটু বেশি সময় লাগবে।আপনার বর বলে দিয়েছে আপনাকে ৩০ হাজার টাকার সাজ সাজাতে।
এ কথা শুনে রিয়া চকমে গেলো।৩০ হাজার টাকার সাজ ??তাও আবার কিছু সময়ের জন্য!!!একজন বেসরকারি কর্মকর্তার বেতন মাসে মনে হয় ৩০ হাজার টাকা।তারা কত কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে।আর টনি নাকি রিয়াকে একজন বেসরকারি কর্মকর্তার ১ মাসের বেতনের সমান টাকা দিয়ে সাজাতে বলেছে।এটা বিলাশিতা ছাড়া আর কিছুই না।কিন্তু রিয়ার কিছু করার নেই।রিয়া যেন একটা পুতুলে পরিনত হয়েছে।তাকে যেভাবে নাচানো হবে সে সেভাবেই নাচবে।
রিয়া বোরকাটা খুলে বসলো।আজ নিজেকে যেন বলির পাঠার মতো মনে হচ্ছে রিয়ার।বলি দেওয়ার আগে যেভাবে পাঠাকে আদর যত্ন করে খাইয়ে সাজানো হয় ঠিক তেমনি রিয়াকেও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তবুও তাকে সাজতে হচ্ছে।হায়রে কপাল!!!
রিয়া রোবটের মতো বসে রইলো আর দুইটা মেয়ে তাকে ইচ্ছা মতো নানা ধরেনের প্রসাধনি দিয়ে কয়েক ঘন্টা পড় সাদা ভুত বানিয়ে দিলো।রিয়া নিজেকে চিনতেই পারছে না।এমন সাজ সাজিয়েছে রিয়াকে তার বয়েসের থেকে আরো ৪,৫ বছর বেশি মনে হচ্ছে।কারন ৩০ হাজার টাকার সাজ তো আর কম না।
রিয়াকে গয়না ,আর লেহেঙ্গা পড়িয়ে সাজানো হলো।যদিও বয়স বেশি লাগছে তবুও রিয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে।
এক পর্যায়ে রিয়া বুকের কষ্ট চেপে না রাখতে পেরে কেদে দিলো।
-আরে আরে আপু কাদবেন না।কাদলে মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে।
রিয়ার সাজ শেষ হলে আর খালাতো বোনেরা নিতে এলো।একেকটা আটা ময়দা মেরে মানে মেকাপ মেরে সাদার ভুত হয়ে গেছে।
একজনকেও ভালো করে চিনা যাচ্ছে না।
– আপু চলো ।আমাদের সাজ শেষ
এবার চলো।
রিয়াকে নিয়ে ওরা গাড়ি করে কমিউনিটি সেন্টারে পৌছালো।রিয়ার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।রিয়ার ভিশন অসস্তি লাগলে।কারন রিয়া পর্দা অবস্থায় নেই এখন।বুকটা ফেটে যাচ্ছে রিয়ার।কিন্তু চুপচাপ সব সহ্য করছে।
রিয়াকে নিয়ে একটা রুমে বসানো হলো।
সেই রুমে মহিলা পুরুষ সবাই দেখতে যাচ্ছে।রিয়ার পর্দার ১২টা বেজে আজ তার বাবার জন্য।
একটু পরে টনির বন্ধুরা এলো রিয়ার কাছে।এসে তারা ছবি তুলে নিয়ে গেলো।
রিয়ার তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
এভাবে সবাই আসছে যাচ্ছে।আর রিয়ার খালাতো বোনেরা তো জামাইয়ের জুতা চুরি করতে ব্যাস্ত,কেউ হাত ধুয়াতে ব্যাস্ত।
রিয়ার কাছে টনির বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা বসে আছে।রিয়া মাথা নুয়িয়ে কান্না করছে।
রিয়া মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।হে আল্লাহ এ তুমি কোন পরিক্ষায় ফেললে।আমি তো আমার পর্দা রক্ষা করতে পারলাম না।আমাকে মাফ করে দিয়ো ।
আল্লাহ তার বান্দার নানা ভাবে পরিক্ষা নিয়ে ইমানের পরিক্ষা করেন।
কিছুক্ষন পর কাজী এলো রিয়ার কাছে।বিয়ের কাগজে শই করানোর জন্য।টনির শই কাজী নিয়ে এসেছেন।
রিয়ার শরীর কাপছে কাগজটা দেখে।শই করার জন্য হাতে কলম নিলো।কিন্তু হাত কাপার কারনে শই করতে পারছে না।
কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
রিয়া এখনো শই করে নি।এর মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির।
পুলিশ– You are under arrest জনাব টনি।আপনাকে মাদক ব্যবসা আর তা অবৈধ ভাবে চালান করার জন্য গ্রেফতার করা হলো।
রায়হান সাহেব কিছুই বুঝতে পারছে না।টনির বাবা পুলিশ দেখে পালিয়ে গেছে।টনির বন্ধুরাও পালিয়ে গেছে।
রায়হান- আপনারা ওকে কেন গ্রেফতার করছেন??
-আপনার এই হবু জামাই মাদক ব্যবসায়ী।তার নামে থানায় আরো অনেক মামলা আছে।তাই আমরা ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
এই বলে পুলিশ টনিকে টানতে টানতে তার আসল শ্বশুড় বাড়ি মানে জেলে নিয়ে গেলো।
এবার রায়হান সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।
– হায় হায় এখন আমার মেয়ের কি হবে???ওকে এখন কে বিয়ে করবে??
হেনা -আমার কথা তো শুনো নি।এবার তোমার জন্য আমার মেয়েটার এ অবস্থা হলো।এক ভাবে ঠিকি হয়েছে বিয়েটা হয় নি।তা না হলে আরো কত কিছুই না আমার মেয়েটাকে সহ্য করতে হতো।
কিন্তু এখন কি হবে???
রিয়া এ খবর শুনে মহা খুশি ।আল্লাহর কাছে সে শুকরিয়া আদায় করলো।
হেনা বেগম সব ঘটনা খাদিজা বেগমকে জানালেন।
হেনা – বোন আপনি কিছু একটা করেন।আমাদের মান সম্মান বাচান।না হলে আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।
খাদিজা- আমি দেখছি কি করা যায়।আপনি চিন্তা করবেন না।
খাদিজা বেগম ফাতেমা ,রফিক সাহেব আর হাসানকে সব জানালো।
রফিক- না ঐ মেয়েকে আমি কিছুতেই হাসানের সাথে বিয়ে দিতে দিবো না।এখন পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে বলে।আমাদের কাছে ফোন করেছে।কিন্তু ঐ দিন তো অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।আজ কোথায় তাদের অহংকার?
ফাতেমা – বাবা এটা তর্ক করার সময় না।রিয়ার জীবনের ব্যাপার।আর রিয়ার তো কোন দোষ ছিলো না।আর ভাইয়া তো রাজি ছিলো বিয়েতে।তাহলে আপত্তি কোথায়।কিরে ভাইয়া তোর কি কোন আপত্তি আছে??
হাসান- তোরা যা ভালো বুঝিস তাই কর।তোরা যা বলবি আমি তাতেই রাজি।
ফাতেমা রফিক সাহেবকে অনেক বুঝানোর পর রফিক সাহেব রাজি হলেন।
ফাতেমা – তাহলে এখন দেরী করা ঠিক হবে না।তাড়াতাড়ি চলো।
যেহেতু ফাতেমা জানে রিয়া বেপর্দায় আছে এখন তাই রিয়ার জন্য ফাতেমা তার একস্ট্রা একটা বোরকা হিজাব আর বাকি সব নিয়ে নিলো।
যেহেতু ফাতেমাদের বাসা থেকে সেন্টার বেশি দুরে না।তাই তারা তাড়াতাড়ি পৌছে গেলো।
রফিক সাহেব দেখলেন রায়হান সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন।
রফিক সাহেব ওনাকে গিয়ে সান্তনা দিলেন।
আজ রায়হান সাহেব খুবি লজ্জিত।
ফাতেমা রিয়ার কাছে গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।রিয়া ফাতেমাকে দেখে কেদে দিলো।ফাতেমা তাড়াতাড়ি রিয়াকে বোরকা হিজাব আর বাকি জিনিস গুলো পড়িয়ে দিলো।
এবার রিয়ার শান্তি লাগছে।
অবশেষে হাসানের সাথে রিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো।
ফাতেমা – জানিস রিয়া আল্লাহ তার প্রিয় বান্দদের নানা কষ্ট দিয়ে তাদের ইমানের পরিক্ষা করেন।তাই সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হয়।
রিয়া ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরলো।তোর মতো বান্ধবি থাকলে যে কারো মনের জোর হাজার গুণ বেড়ে যাবে রে।আমার ভাগ্য অনেক ভালো যে আল্লাহ তোর মতো একটি বান্ধবি দিয়েছেন।
ফাতেমা – আজ থেকে আমি তোর ননদিনি বুঝেছিস ভাবি??হিহিহি
রিয়াও ফাতেমার সাথে হাসলো।অনেক্ষন পর রিয়ার মুখে হাসি ফুটেছে।
এবার বিদায়ের পালা।

চলবে ইনশাআল্লাহ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here