#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা– Umma Hurayra Jahan
পর্ব-৪৮
রফিক- কোন কিন্তু না ।আমি যা বলছি তাই হবে।
ফাতেমা – কিন্তু বাবা আমি এটা কোনদিন মেনে নিতে পারবো না।আমি অন্য কাউকে আর বিয়ে করতে পারবো না।সারা জীবন যদি এভাবে একা থাকতে হয় তবুও আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
রফিক- আমি তোর ভালোটা তোর থেকে বেশি বুঝি।তাই আমার কথাটা শুন।
ফাতেমা – না বাবা মরে গেলেও আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।
এই বলে ফাতেমা ছুটতে ছুটতে নিজের রুমে চলে গেলো।
রফিক- ফাতেমা…ফাতেমা….শুন
রফিক সাহেব ফাতেমার প্রতি একটু রেগে গেলেন।
-এ মেয়ে এক লাইন বেশি বুঝে।আমার কথাটা শুনলো না।
খাদিজা- ঐদিন তোমার কথা শুনেছিলো বলেই তো আজ এ অবস্থা।
রফিক- সেই জন্যেই তো আমার ভুল আমি শুধরানোর কথা বলছি।
হাসান- কিন্তু সেটাও তো আরো বড় ভুুলে পরিনত হতে পারে।
রফিক- তাহলে এখন কি আমার কথার কোন মূল্য নেই??
এই বলে রফিক সাহেব সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন।
ফাতেমা নিজের ঘরে গিয়ে গিয়ে নফল নামাযে দাড়ালো।আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য নামায ছাড়া আর কোন ভালো পন্থা আছে বলে মনে হয় না।একমাত্র সমাধান নামাযেই রয়েছে।
-হে আল্লাহ এবার তুমি এ কোন পরিক্ষায় ফেললে??আমি যে উনাকে ছাড়া আর কাউকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।হে আল্লাহ রক্ষা করো।তুমি আমার বাবার মন থেকে এমন চিন্তা উঠিয়ে নাও মাবুদ উঠিয়ে নাও।
নামাযের মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ফাতেমা আল্লাহর কাছে এ ফরিয়াদ জানালো।বেচারি পড়েছে নদীর মাঝখানে।না যেতে পারছে ঐ কূলে না আসতে পারছে এ কূলে।
রফিক সাহেব ফাতেমার রুমে এলেন। ফাতেমা জায়নামাজে বসে কাদছিলো।রফিক সাহেব ফাতেমার কাছে গিয়ে বসলেন।মাথায় হাত রেখে বললেন
–দেখ মা আমি তোর বাবা।তোর কষ্ট যে আমার আর সহ্য হয় না।জানি তুই মুখ ফুটে কিছু না বললেও তোর মুখে মনের কষ্টের ছাপ ফুটে ওঠে।তাই তোর হাসি মুখ দেখার জন্য এবার আমি তোকে এক ভালো পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে চাই।
ফাতেমা -তুমি আমার হাসি মুখ দেখতে চাও তো??
রফিক- হুম রে মা।
ফাতেমা – তাহলে আমাকে আবার বিয়ের কথা বলো না।আমি এভাবেই খুশি আছি।যদিও উনি এখনো আমাকে নিতে আসেননি।তবুও আমি আশায় থাকবো।অপেক্ষায় থাকবো উনার জন্য।যদি সারা জীবন অপেক্ষা করতে হয় তাতেও আমি রাজি আছি।
কিন্তু প্লিজ বাবা আমাকে বিয়ের কথা আর বলো না।প্লিজ বাবা প্লিজ।
রফিক- ঠিক আছে এতেই যদি তুই খুশি থাকিস তাহলে আমি আর তোর বিয়ের কথা কোন দিন মুখে আনবো না।কিন্তু মাহিন যদি কোন দিন না আসে???
ফাতেমা – তাহলে বাকি জীবনটা দ্বীনের রাস্তায় ,দাওয়ার কাজে কাটিয়ে দেবো।এতেও আমি খুশি থাকবো।
রফিক- তোর মতো মেয়ে যাতে আল্লাহ প্রত্যেকটা বাবা মাকে দান করেন।আমরা খুব ভাগ্যবান রে।আমাদের মতো অধমের ঘরে আল্লাহ এমন একটা জান্নাতের টুকরা দান করেছেন।
-রফিক সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।
ফাতেমা – এভাবে ছোটদের মতো কান্না করছো কেন বাবা??
রফিক- এটা সুখের কান্না রে মা।তোর মতো মেয়ে দিয়েছেন আল্লাহ।এর থেকে সুখের কি হতে পারে??
ফাতেমা – আচ্ছা কান্না করতে হবে না।একটু পর এশার নামায পড়বে ।তুমি আর ভাইয়া নামায পড়ে এসো মসজিদ থেকে।
রফিক- হুম রে মা যাচ্ছি।তোর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি।আল্লাহ যেন মাহিনকে তাড়াতাড়ি তোর কাছে ফিরিয়ে দেন।
রফিক সাহেব চলে গেলেন।
একটু পর আজান পড়ে গেলো ফাতেমা নামাযটা পড়ে নিলো।
নামায শেষে আবিদা ফাতেমার রুমে এলো সালাম দিয়ে।
ফাতেমা রুম গুছাচ্ছিলো।
ফাতেমা – ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
আবিদা- কিরে ঘর গুছাচ্ছিলি??
ফাতেমা – হুম রে ।নামায পড়েছিস??
আবিদা- হুম।তোকে একটা কথা বলতে এসেছি।
ফাতেমা- কি কথা??
আবিদা- সারা দিন তো ঘরে মনমরা হয়ে বসে থাকিস।তাই আমি আর তোর ভাইয়া ভেবেছি তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো কালকে।
ফাতেমা – আমি যাবো না রে।
আবিদা- যাবো না বললেই হবে নাকি??যেতে হবে।কালকে আমরা তিনজন পার্কে যাবো।মনে থাকে যেন।
ফাতেমা – একটা কথা বলবো??
আবিদা–একটা কেন হাজারটা বল।
ফাতেমা — ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে তাই না??
আবিদা– সে আর বলতে।আমি জীবনেও ভাবিনি এমন একজন কাউকে স্বামী হিসেবে পাবো।জানিস যখন হেদায়েত পাইনি তখন ভাবতাম আমি বড়লোক কাউকে বিয়ে করবো।বিয়ের পর সব দামি দামি জিনিস কিনবো।নিজের সব সখ পূরন করবো।স্বামীর সাথে সেজেগুজে বের হবো।ছবি তুলে ফেসবুকে দেবো।মানুষ রিয়েক্ট দিবে।নাইস ,জোস এসব বলে কমেন্ট করবে।প্রতি সপ্তাহে রেস্টুরেন্টে যাবো,এখানে যাবো ওখানে যাবো আরো কতো কি!!!কিন্তু জানিস এসব কিছুর মধ্যেই প্রকৃত সুখ নেই।প্রকৃত সুখ কি এখন আমি বুঝতে পেরেছি।
তোর ভাইয়ার সাথে যখন একসাথে তাহাজ্জত পড়ি তখন মনে হয় আমি দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি।যখন তোর ভাইয়া ফজরের সময় মসজিদে যাওয়ার সময় কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে যায় তখন মনে হয় আমি প্রকৃত সুখি।যখন দুজনে কুরআন পড়তে বসি আর আমি না পাড়লে তোর ভাইয়া সুন্দর করে ভালোবেসে বুঝিয়ে দেয় তখন মনে হয় আমি প্রকৃত সুখি।আর তোর ভাইয়ার সাথে বাইরে গেলে যখন পর্দা করে বের হই তখন মনে হয় আমি প্রকৃত সুখি।আর তোর ভাইয়া বাইরে থেকে আসার সময় যখন আমার জন্য আমার প্রিয় চকলেটটা নিয়ে আসে তখন মনে হয় আমি প্রকৃত সুখি।
তোর ভাইয়ার ভালোবাসা পেয়ে আমি প্রকৃত সুখি।
কথাগুলো বলে আবিদার চোখে সুখের অশ্রু এসে গেলো।
আর ফাতেমা মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে।
ফাতেমা – আমাদের ইসলাম ধর্মটা কতো সুন্দর তাই না??যেখানে আমলের দ্বারাই মানুষ প্রকৃত সুখি হতে পারে।সুখের জন্য এতো টাকা লাগে না।
অাবিদা – হুম ঠিক বলেছিস।
ও ননদিনি মনে থাকে যেন কালকে আমরা ঘুরতে যাবো।রেডি হয়ে থাকিস।
ফাতেমা – ঠিক আছে মহানানী থুক্কু মহারানী ।হিহিহি
আবিদা- আমি যাই এখন রাতের খাবারটা টেবিলে বাড়তে হতে।আর হে খাবার খেতে আয়।
ফাতেমা – যা আসছি।
অাবিদা চলে গেলো ।ফাতেমা রুমের লাইটা অফ করে বেলকনিতে গেলো।অন্ধকার ফাতেমার বড্ড ভালো লাগে।তাই রুম অন্ধকার করে ফাতেমা বেলকনিতে গেলো।
বাইরে হিমেল হাওয়া বইছে।বেলকনির ছোট ছোট গাছগুলো হাওয়ায় দুলছে।
ফাতেমা চোখ বন্ধ করে দু হাত ছড়িয়ে হিলেম হাওয়া অনুভব করার চেষ্টা করছে।হারিয়ে গেছে এক অদ্ভুত কল্পনার রাজ্যে।যেখানে এক আলোর ঝলকানি এসে পড়লো তার চোখে।দুরে যেন কে একজন জুব্বা ,টুপি পড়ে দাড়িয়ে আছে।তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। শুধু অবয়ব বুঝা যাচ্ছে।ফাতেমা চোখ বন্ধ করেই অনুভব করার চেষ্টা করলো।আচ্ছা এটা কি ফাতেমার মাহিন।যার জন্য ফাতেমার এতো অপেক্ষার প্রহন গুনতে হচ্ছে।
খাদিজা- ফাতেমা …….
মায়ের আওয়াজে কল্পনার রাজ্যের ঘোর কাটলো ফাতেমার।চোখ খুলে দেখে কেউ নেই তার সামনে।
ফাতেমার হঠাৎ মনে হলো “সে তো কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেছিলো।
ফাতেমা খেতে চলে গেলো।
ওদিকে ও বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।মাহিনও ঘুমিয়ে পড়েছে।
মাহিন স্বপ্নে দেখলো এক সুন্দর রমনী সাদা শাড়ি পড়ে এক ঝাক আলোর ভিতর থেকে তার কাছে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।তার লম্বা কেশ হাওয়ায় উড়ছে ।মাহিন চিনতে পারছে না তাকে।কে সে??মাহিন তার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে ।যখন দুজন কাছে এলো তখন মাহিন দেখলো এই সুন্দর রমনী তো তার হুর পরী ফাতেমা।মাহিন ফাতেমাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো।
মাহিন স্বপনে ফাতেমাকে দেখে বললো “ও আমার হুর পরী তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি।আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দেবো না।আমাকে মাফ করে দাও ।এ কথা শুনে সেই সুন্দর রমনী একটা মুচকি হাসি দিলো।যখন মাহিন ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরতে গেলো তখন ফাতেমা হাওয়ায় মিশে গেলো।চোখের পলকে মাহিনের কাছ থেকে চলে গেলো।
মাহিন ফাতেমা বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো।
সারা শরীর কাপছে মাহিনের ।ঘেমে গেছে মাহিন।বুক ধকধক করছে।
তাড়াতাড়ি মাহিন ঠকঠক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
তারপর ফাতেমার কথা মনে করে কাদতে লাগলো।
মাহিন– হে আল্লাহ এ আমি কি স্বপ্ন দেখলাম।আমি আমার ফাতেমার কাছে গিয়েও তাকে ছুতে পর্যন্ত পারলাম না।তার আগেই সে আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলো।হে মাবুদ এটা কিসের সংকেত ??হে মাবুদ আমার ফাতেমাকে তুমি ভালো রেখো।ওকে আর কষ্ট দিয়ো না।এমনিতেই বেচারি আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে।
মাহিন এবার হাউমাউ করে কাদতে লাগলো।খুব ইচ্ছে করছে ফাতেমাকে একবার দেখার জন্য।কিন্তু পারছে না।আজ মাহিনের কষ্টটা চরম সীমায় পৌছেছে।
মানসিক কষ্ট কাকে বলে আজ মাহিন হারে হারে টের পাচ্ছে।আপনজনকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট কি সে তা বুঝতে পারছে।
কিন্তু অপেক্ষা তো করতেই হবে।
মাহিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ফজরের টাইম হয়ে গেছে।মাহিন ঘুম থেকে উঠে ওযু করে বাবার সাথে মসজিদে চলে গেলো নামাযের জন্য।
এখন ৫ ওয়াক্ত নামায মাহিন মসজিদেই পড়ে।হাজার কাজ থাকলেও এখন তার নামায মিস হয় না।
ওদিকে দুপুর নামাযের পর ফাতেমা ,অবিদা ,আর হাসান পার্কে ঘুরতে গেলো।সেখানে অনেক ছোট ছোট বাচ্চা খেলা করছিলো।ফাতেমাও ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলায় যোগ দিলো।কারন ফাতেমা ছোট বাচ্চা দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।নিজেও ছোট হয়ে যায়।আর ছোটদের সাথে ভালোই ভাব জমাতে পারে ফাতেমা।
ফাতেমা আপাদমস্তক ঢাকা থাকায় প্রথমে বাচ্চারা একটু ভয় পেয়েছিলো।কিন্তু পরে ফাতেমা তাদের সাথে এমন ভাব জমালো আশে পাশের সব বাচ্চা ছুটে ফাতেমার কাছে চলে এলো।ফাতেমা বেশ ভালো সময় কাটালো তাদের সাথে।
হাসান আর আবিদাও খুব খুশি হলো ফাতেমার খুশি দেখে।অনেকদিন পর ফাতেমা এমন আনন্দ করছে।মনের সব কষ্ট যেন ফাতেমা কিছু সময়ের জন্য একদম ভুলে গেলো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।এবার বাড়ি যাওয়ার পালা ।
বাড়ি যাওয়ার সময় ঘটলো এক অঘটন। রাস্তা পাড় হওয়ার সময় এক মটর সাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে বেচারি ফাতেমা পড়ে গেলো।
মোটর সাইকেল ওয়ালা পালিয়ে গেছে।
আবিদা ফাতেমাকে টেনে তুললো।
আবিদা – ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।হে আল্লাহ !!উঠ ফাতেমা উঠ রে বোন উঠ।
ফাতেমা – ও আল্লাহ …!!!আমার হাত নাড়াতে পারছি না গো।ইশ মনে হয় হাতটা ভেঙে গেছে।
হাসান- হে আল্লাহ এটা কি হলো??চল চল তোকে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
হাসান আর আবিদা ফাতেমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।কাছেই এক ক্লিনিক ছিলো।ওরা ফাতেমাকে ওখানেই নিয়ে গেলো।
ভাগ্যিস ওখানে মহিলা ডাক্তার ছিলো।তাই ফাতেমা সেই মহিলা ডাক্তারের কাছেই গেলো।
মহিলা ডাক্তার ফাতেমার হাত দেখে বললো হাতে বেশ চোট লেগেছে ।সারতে কয়েকদিন টাইম লাগবে।ডাক্তার হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো।
-আপনি কয়েকদিন সাবধানে থাকবেন।আর এই জায়গায় পানি লাগাবেন না।আমি কয়েকটা ওষুধ লিখে দিচ্ছি।এগুলো ঠিকমতো খাবেন ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-আবিদা– হে আল্লাহ পানি না লাগালে ওযু করবে কি করে??আর ওযু না করলে তো নামায হবে না।
ফাতেমা – আরে তুই চিন্তা করিস না।তায়াম্মুম করে নিবো।এটা পানি দ্বারা ওযু করার বিকল্প পদ্বতি।
তায়াম্মুমের. নির্দেশ. খোদ আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন।তিনি বলেন““যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো কিংবা তোমাদের মধ্যে কেউ পায়খানা করে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সংগম করো অতপর পানি না পাও ,তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও ;তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতকে মাটি দ্বারা মাসাহ্ করো—-[।কুরআন মাজিদ ৫/৬]
ডাক্তার এ কথা শুনে বললেন
-বাহ্ চকৎকার কথা বললেন তো।আমি আগে জানতাম শুধু পানি না পেলেই তায়াম্মুম করা যায়।কিন্তু আপনার কাছ থেকে নতুন বিষয় জানতে পারলাম আজ।ধন্যবাদ আপনাকে।
ফাতেমা – আপনাকেও ধন্যবাদ।জাযাকিল্লাহু খইরান।
ডাক্তার ফাতেমা সাবধানে থাকতে বলেছে।
ফাতেমাকে নিয়ে হাসান আর অাবিদা বাড়ি চলে এলো।
ফাতেমার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তো খাদিজা বেগম অস্থির হয়ে গেলো।
খাদিজা-হে আল্লাহ।!!!!এটা কি করে হলো ??কিভাবে ব্যাথা পেলো ফাতেমা??
হাসান সব ঘটনা মাকে বললো।
খাদিজা বেগম তো কান্না শুরু করে দিলেন।
-সব দুঃখ আল্লাহ আমার মেয়েটার কপালেই রেখেছেন।দুনিয়ার যত সব দুঃখ আমার মেয়ের কপালেই কেন??
ফাতেমা – আরে মা এসব তুমি কি বলছো।এসব কথা বলো না।কারন
““আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বেশি বোঝা কখনো দেন না।প্রত্যেকেই যা ভালো করে তার পুস্কার পায় আর যা খারাপ করেছে তার পরিনাম ভোগ করে।{সুরা আল বাকারা,আয়াত:২৮৬}}
আর আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসেন তাকে বেশি কষ্ট দেন।
হাদিসে রাসুল সাঃ বলেছেন “যদি কারো উপর কোন কষ্ট আসে, আল্লাহ এর কারনে তার গুনাহসমুহ ঝড়িয়ে দেন;যেমন ভাবে গাছ থেকে পাতা ঝড়ে পড়ে।{বুখারি হাদিস নং:৫৬৮৪}}
মানুষের প্রতিটা কষ্টের সাথে সুখ মিশে আছে।আর যারা ধৈর্যশীল তারা সেই সুখের অপেক্ষা করে।
তাই আমার কপালেই আল্লাহ সব কষ্ট দিয়েছে এসব বলতে নেই মা।
আর আমি সুস্থ আছি।ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন।এটা খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
রাতে মহিমা ফাতেমাকে ফোন দিলো।
ফাতেমা তার হাতের ব্যাথা পাওয়ার কথা বলায় মহিমা তো অস্থির হয়ে গেলো।
মহিমা বাসার সবাইকে জানালো ।সবাই ফাতেমাকে ফোন দিয়ে খবর নিলো।
শুধু মাহিন ছাড়া।কারন বাসার কেউ এখনো তাকে ফাতেমার নাম্বার দেয় নি।
কিন্তু মাহিন তো অস্থির হয়ে গেলো আরো বেশি।কি করবে বুঝতে পারছে না।
মাহিন তাই ছটফট করেই সারাটা রাত কাটালো।ঘুমাতেও পারছে না।তাই আজ জীবনের প্রথম মাহিন তাহাজ্জতের নামাযে বসলো।
নামাযের মোনাজাতে সে কেঁদে কেঁদে ফাতেমার জন্য।দোয়া করলো।
মাহিন তাহাজ্জতের নামায শেষ করে কেমন জানি এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো মনে।
মাহিন- তাহাজ্জতের নামায পড়ে এতো শান্তি লাগলো কেন??
তাহলে কি রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জতের নামাযে এমন প্রশান্তি আছে বলেই ফাতেমা প্রতিদিন তাহাজ্জতের নামায পড়তো??
এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম আমি।
মাহিন এখন তাহাজ্জতের নামাযের মাঝেও শান্তি খুজে পেলো।তাই এ শান্তি সে হাতছাড়া করতে চায় না।
এর পর থেকে সে প্রতিদিন তাহাজ্জতের নামায পড়াও শুরু করলো।
প্রতি দিন সে নিজের হেদায়েত কামনা করে।আর ফাতেমার জন্য দোয়া করে।
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো।
দেখতে পার হয়ে গেলো তিন তিনটা মাস।
চলবে ইনশাআল্লাহ……….