অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-১০

0
932

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :১০

মিসেস রুনাদের ফ্ল্যাটে সবাই বেশ তাড়াহুড়ো তে আছে। কখন বের হবে বাসা থেকে তা নিয়ে সবাই বেশ তারাতারি কাজ করছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় অনেকক্ষণ যাবত বসে আছে মেহবিন।রান্নাঘরে বড়রা সবাই কি যেন করছে।মেহবিনের চোখের সামনে সব হলেও তার মাথায় আপাতত কিছু ঢুকছে না।সে অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। যখন সে শুনল যে মায়ানের জন্য মেয়ে দেখা হবে তখন সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার ভিতর কোনোরকম অনুভূতি কাজ করছিল না।সে তখন কোনোমতে মায়ের দেওয়া সেই জলপাই রঙের থ্রি পিস টা পরে রেডি হয়ে এসে পরেছে।মাইজা মোবাইল পার্সে নিয়ে সবেই ঘর থেকে বেরিয়েছে। ড্রয়িং রুমে গিয়ে মাইজার চোখ পরে মেহবিনের উপর। মেহবিনের শুকনো মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে সে রান্নাঘরে দিকে পা বারাল। যেতে যেতে মনে মনে বলল-

-”’আমি নাহয় না পেলাম মায়ান ভাইকে। কিন্তু তুই ও এবার বুঝবি মেহবিন ভালোবাসার মানুষকে অন্য একজনের হতে দেখলে ঠিক কেমন লাগে।

মাইজা ধীরে সুস্থে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়াল। সবাই কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। মাইজা গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করল-

-”’আম্মু কখন বেরুবো আমার?চারটা বেজে গেছে। আর এখনো আমরা রওনা হলাম না।

মিসেস তনয়ার যেন চোখে আটকে গেল মাইজার উপর।মাইজা কালো রঙের একটা থ্রি পিস পরেছে।ফর্সা গায়ে কালো রঙ টা যেন ফুটে উঠেছে। মিসেস তনয়া বললেন-

-”এই তো মা, রাফিজ আর মায়ান বাইরে গেছে। ওরা চলে আসলেই বেরুবো।আর মেয়ের বাড়ি তো বেশি দূরে না। কাছেই আছে,সমস্যা হবে না।

মাইজা ভ্রু কুঁচকালো। কাছেই আবার কোন মেয়ে দেখবেন।সারে চারটার দিকে মায়ান আর রাফিজ এসে বাসায় উপস্থিত হলো।মায়ান বাসায় ঢুকতেই মেহবিন তাকাল মায়ানের দিকে। সে আর দেখবে না এই মানুষটাকে,,মেহবিনের করা এই পন ভেঙে ফেলতে হল তাকে। সত্যি কি মায়ান অন্য কারো হয়ে যাবে। মেহবিন আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। সে চোখ ফিরিয়ে নিল মায়ানের দিক থেকে। মায়ান আর রাফিজ আসতেই মিসেস রুনা তাড়া দিয়ে বললেন-

-”’চলুন আপা,এবার যাওয়া যাক।

মিসেস তনয়া মুচকি হেসে সোফায় গিয়ে বসলেন।মিসেস রুকাইয়া অবাক হয়ে বললেন-

-”কি হলো আপা বসলেন যে মেয়ে দেখতে যাবেন না?

মিসেস তনয়া হাসিমুখে বললেন-
-”কে বলেছে মেয়ে দেখতে যাবনা?তবে মেয়ে দেখতে বাইরে যেতে হবেনা।আরে আপনারা দাড়িয়ে আছেন কেন, আপনারা বসুন সবাই।

সবাই চিন্তিত মুখে বসে পরলেন।মিসেস তনয়া মাইজার দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় কাছে এসে বসতে বললেন-

-”’এদিকে এস মা।

মাইজা বিস্মিত হয়ে মিসেস তনয়ার পাশে গিয়ে বসে পরে।মিসেস তনয়া মাইজার দিকে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন-

-”’এমন একটা মিস্টি মেয়ে ঘরে থাকতে মেয়ে দেখতে বাইরে যেতে হবে কেন বলুন তো?মায়ানের জন্য আমার মাইজাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। মাইজা কে আমার ঘরে বউ করতে চাই।

সবাই বিষ্ফোরিত চোখে তাকাল মিসেস তনয়ার দিকে।মাইজা যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারছেনা। সে কি কিছু ভুল শুনল।এদিকে মেহবিন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে।ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছে যে মায়ানের জন্য মাইজাকে পছন্দ করা হয়েছে।মেহবিন থমথমে মুখে তাকাল মায়ানের দিকে।মায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এখানে কি হচ্ছে তা সে জানেই না।মিসেস তনয়া সবার দিকে তাকিয়ে মিসেস রুনা কে বললেন-

-”’আপা আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?

মিসেস রুনা এমন হুট করে করা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল।তিনি আমতা আমতাকরে বললেন-

-”’ আপা আসলে মেয়ে তো আমার নিতান্তই ছোট মানুষ। সবে কলেজে পরছে। এখনি বিয়ে নিয়ে–

মিসেস তনয়া তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন-

-”’আরে আপা আমরা তো মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ করছি না।মেয়ে যত খুশি পড়াশুনা করবে। চাইলে চাকরি ও করতে পারে।আমাদের কোনো আপত্তিনেই। তাছাড়া মায়ানের সাথে আমার কথা হয়েছে।মায়ান ও রাজি আছে। এখন শুধু আপনারা রাজি হলেই হলো।রাফিজ আর মাইজা দু জনেই অবাক চোখে তাকায় মায়ানের দিকে।মায়ান এখনও নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন এখন চোখ তুলে উপরের দিকে তাকালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না।মাইজার যেন হুট করেই সব ভালো লাগছে। তবে কি মায়ান তাকে মেনে নিল। তার করা মায়ানের প্রতি ছোটো ছোটো পাগলামি গুলোর মায়ায় জরিয়ে গেল।মিসেস তনয়া এবার রাফিজ কে বললেন-

-”’রাফিজ বাবা ,তুমি তো এখন মাইজার গার্ডিয়ান।তো তুমি বল রাজি কি না।

রাফিজ শুধু তাকিয়ে আছে মায়ানের দিকে। মায়ানের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না সে।রাফিজ চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে একপলক তাকাল মেহবিনের দিকে। মেহবিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ানের দিকে। তারপর চোখ ঘুরিয়ে তাকাল মাইজার খুশিতে ঝলমল করা চেহারার দিকে।রাফিজ একটু চুপ করে থেকে বলল-

-”’মাইজা আর মায়ান যদি রাজি থাকে তবে আমিও রাজি।

মিসেস তনয়া উত্তেজিত হয়ে তাকালেন মাইজার দিকে। মাইজা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন-

-”’তুমি রাজি তো মা?

মাইজা যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। সে মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। মাইজার চুপ করে থাকাটাই যেন সবাইকে ওর উত্তর জানিয়ে দিয়েছে। মিসেস তনয়া হাসিমুখে বললেন-

-”’চুপ থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষন। তবে আমরা উত্তর হ্যা ই ধরে নিলাম।

মাইজা শুধু খানিকটা হাসল। তবে কি তার ভালোবাসার পূর্ণতা পেতে চলেছে। তার ফেইরিটেলের রাজপুত্র কি তার হবে সারাজীবন এর জন্য। মাইজা তৃপ্তির হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

চলবে…
(পরের পর্ব থেকে অতীতেরসব কিছু ক্লিয়ার করা হবে। সবাই জানাবেন কেমন হয়েছে। আর মায়ানের সাথে কাকে মিল দিয়ে দিব? মাইজা নাকি মেহবিন?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here