#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :২৪
🍁
মেহবিনদের নানুবাড়িটি বেশ পুরানো।তিনতলার উপরের অংশ একদম ভাঙাচোরা বললেই চলে।ঐ তিনতলায় কেউ থাকে না।তিনতলায় শুধু দুইটা ঘর, যেখানে মেহবিনের নানা নানী থাকতেন।আর আরেকটা ঘরে মিসেস রুকাইয়ারা তিনবোন থাকতেন।এখন ঐ উপরের ঘরগুলো খালিই পরে আছে।দুইতালা তে চারটা রুম সেখানে এক ঘরে মেহবিনের মামা মামী,আরেক ঘরে মেহবিনের মামাতো বোন ইলফা,আর ইরিনা থাকে।ইলফা আর ইরিনা মেহবিনের সমবয়সী।ওরা দুজনেই একি ক্লাস এ পড়ে।আর তিনতলার বাকি ঘরগুলো বন্ধ।তবে নোংরা নয়।ঐ ঘরগুলো মেহবিনের মামী পরিষ্কার করে রাখেন।আর নিচতলায়, একসাথে ড্রয়িং রুম,ডাইনিং রুম আর কিচেন।আর মেহবিনরা বর্তমানে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে।মেহবিনের মামী ইশিতা বেগম মেহবিনদের নাস্তার আয়োজন করছে।আর মেহবিনের বাবা আর মামা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন।মিসেস রুকাইয়া আর মিসেস রুনা ইশিতা বেগমের সাথে নাস্তার আয়োজনে হাত লাগাচ্ছেন।আর রাফিজ, মায়ান,মেহবিন,মাইজা সোফায় বসে আছে।মেহবিন মাইজার কাধে মাথা রেখে আড়চোখে মায়ানকে দেখছে।মাইজা মোবাইল নিয়ে কি জানি করছে।আর মায়ান আর রাফিজ কি নিয়ে যেন অনেক সিরিয়াস কথা বলছে।মেহবিন বসে বসে সবাইকে পরোখ করে নিল।মেহবিনের মাথাটা এখনও ব্যথা করছে।সে চোখ টা বন্ধ করবে তার আগেই কেউ জোরে চিল্লিয়ে উঠে-
-”মেহুহুহুহু।।।
মেহবিন হকচকিয়ে সামনে তাকাবে তার আগেই ইলফা আর ইরিনা এসে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরল।মেহবিন বুঝতে পারল যে এইটা তার দুই বাদড় বোন ইলফা আর ইরিনা।মেহবিনো হেসে ওদের জড়িয়ে ধরে।মেহবিনকে ছেড়ে ইলফা বলে উঠে-
-”কেমন আছিস মেহু?কতদিন পর দেখলাম তোকে।এতদিন পর আসতে ইচ্ছে হলো আমাদের কাছে।
মেহবিন বলল-
-”তোরাও তো আমাদের ওখানে যাস না।আমি তো এতদিন পর হলেও এসেছি।
ইরিনা মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে-
-”আমরা যাই আর না যাই তুই তো আসতেই পারিস।আমরা না গেলে কি তুই ও আসবিনা।
ওদের কথার মাঝে মাইজা ফোড়ন কেটে বলে-
-”মেহু ছাড়াও এখানে আরেকজনো কিন্তু অনেকদিন পর এসেছে এই বাড়িতে।
ইলফা আর ইরিনার নজর এবার মাইজার দিকে যায়।ওরা মাইজাকেও জড়িড়ে ধরে।তারপর ছেড়ে এসে ইরিনা বলে-
-”মাইজা দিন দিন খালি সুন্দর হচ্ছিস,কাহিনী কি বলতো?তোর রূপের রহস্য কি?
মাইজা সব দাত বের করে বলে-
-”লাক্স সাবান😅
ওরা সবাই হেসে দেয়।সন্ধ্যার নাস্তার পর যে যার রুমে চলে যায়।মেহবিন আর মাইজা ইলফা আর ইরিনার সাথে থাকবে।ওদের রুম আর বেডটা বেশ বড়।রাফিজ আর মায়ান থাকবে একঘরে।রাতে ডিনারের সময় সবাই নিচে ডাইনিং এ উপস্থিত হয়।ডিনারের সময় সবাই টুকিটাকি কথা বলছে।ইলফা ইরিনা মেহবিন আর মাইজার সাথে কথা বলছে।ইলফা কথার ফাকে আড়চোখে মায়ানকে দেখে নিয়ে মেহবিনের কানে কানে বলল-
-”ঐ রাফিজ ভাইয়ার এই বন্ধু কি এখানে আমাদের সাথে এখানে থাকবেন।
-”হ্যা কেনো বলতো?
ইলফা মুখ টিপে হেসে বললো-
-”অনেক সুন্দর।আমার সাথে একটু সেট করায় দিবি মেহু?
মেহবিন ফুসে উঠে।সে রাগি চোখে ইলফার দিকে তাকাল।ইলফার সেখানে খেয়াল কই।ও তো মায়ানকে দেখতে ব্যস্ত।মেহবিন এবার তেজি চোখে মায়ানের দিকে তাকাল।মায়ান এই ঘরের মধ্যে বসেও সুন্দর জ্যাকেট ট্যাকেট পড়ে একদম সং সেজে বসে আছে।কে বলেছে এতো সেজেগুজে থাকতে।সব মেয়ে পটানোর ধান্দা। মেহবিন খাওয়া বন্ধ করে ভাত নাড়াচাড়া করছে আর মায়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।মায়ান মুখে ভাত একটু নিয়ে মেহবিনের দিকে তাকাল।মেহবিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়ান চোখ টিপ মেরে দিল মেহবিনকে।মেহবিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।মায়ান ঠোট চেপে হাসল।মেহবিন চোখ সরিয়ে ভাত খাওয়ায় মনোযোগী হয়ে বিরবিরিয়ে বলল-
-”খবিশ একটা।
———-
মেহবিন খেয়ে দেয়ে সোফায় সবার সাথে গিয়ে বসে।বাকিরা আগেই সেখানে ছিল।মেহবিন বসতেই ইলফা আবার কোথা থেকে যেন লাফ দিয়ে ওর পাশে বসে ফিসফিস করে বলল-
-”এই মেহু তোর কাছে মায়ান ভাইয়ের নম্বর আছে?থাকলে দে না।
মেহবিন রেগে তাকায় ইলফার দিকে।তারপর কিড়মিড়িয়ে বললো-
-”তুই ওনার নম্বর দিয়ে কি করবি?
ইলফা মুচকি হাসতে হাসতে বলল-
-”আমার পছন্দ হইছে।তাই ভাবলাম একটু লাইন মেরে দেখি।আছে তোর কাছে নম্বর?
মেহবিন দাতে দাত পিষে রাগ নিবারণ করার চেষ্টা করে বলল-
-”নাহ নেইই।
ইলফা আবার কিছুবলতে গেলে মেহবিন উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।তারপর গটগট করে হেটে চলে যায়।ইলফা মেহবিন কে একবার ডাক দিলেও মেহবিন না তাকিয়েই চলে যায়।পরে হতাশ হয়ে ইলফা যায় মাইজার কাছে মায়ানের নম্বর চাইতে।ফলস্বরূপ এর বদলে ইলফা কে কয়টা চড় থাপ্পর খেতে হয়।
ছাদের রেলিং ঘেষে মেহবিন দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশে গা ছমছম করা পরিবেশ।সবাই এই সময়ে ঘুমে কাতর।কেমন ভয়ানক নিস্তব্ধতা।তবে মেহবিনের ভয় লাগছে না।তার এখন ভীষণ রাগ লাগছে।কোনো ইলফা মায়ানের দিকে নজর দিবে।আর মায়ান ও কেমন ছেলে।এত সুন্দর হতে হবে কেনো উনাকে।এমনি সব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা করে মেহবিন রাগে ফুসছে।
-”’মন খারাপ?
মায়ানের কন্ঠস্বর শুনে মেহবিন চমকে যায়।তারপর পিছ ফিরে মায়ানের দিকে তাকায়।মায়ান মুচকি হেসে আছে।রাতের অন্ধকারে বাইরে থেকে আসা টিমটিম আলোতে কি সুন্দর লাগছে মায়ানকে।মায়ানকে সুন্দর লাগছে এটা ভাবতেই ইলফার কথা মনে পড়ে যায়। মেহবিনের আবারো রাগ চড়ে গেল।সে আর কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে আবার সামনে নজর দেয়।
চলবে…..
(বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা অনেক ছোট হয়েছে।তাই রাতে আরেকটা পর্ব দিবো।আমার কলেজ,পড়াশুনা সব মিলিয়ে একটু ব্যস্ত।তাই প্লিজ কেউ বড় করে দিতে বলবেন না।দরকার হলে আমি সময় করে একদিনে দুই পর্ব দিব ছোট ছোট করে।কিন্তু তাও দিবো।আশা করি বুঝবেন।ধন্যবাদ ❤ )