অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব-২৭

0
830

#অব্যক্ত ভালোবাসা
পর্ব :২৭
🍁
সিলেটের জাফলং প্রকৃতি কন্যা হিসেবে সারাদেশে একনামে পরিচিত।জাফলং এর আকর্ষনই যেন আলাদা।সিলেট ভ্রমনে এসে বা বেড়াতে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।তাই এই অপূর্ণতা কে পূর্ণতা দিতে মেহবিনরা জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে।মেহবিন,মাইজা,রাফিজ,মায়ান, ইলফা,ইরিনা আর সাথে মেহবিনের ছোট খালার মেয়ে কায়া আর বড় খালার ছেলে আশিক যাবে জাফলং ভ্রমণে।ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই গতকাল সবাইকে কল করে আসতে বলা হয়েছে।এমনিতেই বিয়ে উপলক্ষে সবাই সপ্তাহ খানেক বাদে আসতেই হতো।বড়রা ওদের দশ দিন ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছেন।দশদিনের ভেতর যেখানে যেখানে ঘুরার ঘুরে আসতে হবে।আর সব কিছু দেখে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মায়ান আর রাফিজকে।ওরা ওদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

মেহবিনের মন আজকে বেশ ভালো।ওর মনে টান টান উত্তেজনা কাজ করছে।এই প্রথম ও কোথাও ঘুরতে যাবে।তাও আবার সাথে মায়ান আছে।সবাই রুমে বসে রেডি হচ্ছে।একটু পরেই ওরা বের হবে ঘুরতে।মেহবিন আজকে স্কাই ব্লু কালারের লঙ গাউন পড়েছে।বরাবরের মতো চেহারায় কৃত্রিম ছোয়া নেই।মাইজা আজও ব্লাক কালারের টপস পড়েছে।সেও সাজতে পছন্দ করে না।তবে আজকে একটু সাজল।মেহবিন ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে রাখতে মাইজাকে তাড়া দিয়ে বললো-

-”মাজা জলদি কর।দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।

মাইজা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বাইরে গিয়ে গলা উঁচিয়ে রাফিজকে বললো-

-”ভাইয়া আমাদের কি দেরি হয়ে যাচ্ছে?

রাফিজও চিল্লিয়ে বললো যে তাদের যেতে আরো সময় লাগবে।মাইজা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে বললো-

-”দেখলি সময় আছে।আয় আজকে তোকে সাজিয়ে দেই।

মেহবিন কথাটা শুনামাত্রই এক দৌড়ে কায়ার পিছে দাড়িয়ে বললো-

-”না না,আমি সাজবোনা।

মাইজা কায়ার পিছন থেকে মেহবিনের হাত ধরে টানাটানি করতে করতে বললো-

-”প্লিজ মেহু,দেখ আমিও তো সেজেছি।তুইও সাজবি।

মেহবিন হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো-

-”তোকে তো সুন্দর লাগছে,আমাকে তো পুরা পেত্নি লাগবে।

কায়া মেহবিনের কথা শুনে ওরনায় পিন লাগাতে লাগাতে বললো-

-”কে বলেছে তোকে?তোকেও সাজলে একদম পুতুল পুতুল লাগে।

অবশেষে সবার জোরাজুরিতে মাইজা মেহবিনকে সাজাতে সক্ষম হলো।মাইজা আইলাইনারের শেষ লাইনটা টেনে আয়নার সামনে থেকে সরে গেলো।তারপর হেসে বললো-

-”’এবার দেখ।

মেহবিন চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকাল।মেহবিন নিজেই নিজের প্রতিবিম্ব দেখে অবাক হয়ে গেল।মেহবিনকে যে খুব সুন্দর লাগছে।এটা কি শুধু প্রসাধনীর কারিসমা নাকি আল্লাহর দেয়া ওর মায়াবী চেহারার একটু কৃতিত্ব ও আছে।মেহবিন অবাক হয়ে বললো-

-”এটা কি সত্যিই আমি?

মাইজা ভাব মেরে বললো-

-”দেখলি তো আগেই বলেছিলাম সুন্দর লাগবে।

কায়া ও তাতে ফোড়ন কেটে বললো-

-”সুন্দর লাগছে অনেক।

মেহবিন মাইজার দিখে ফিরে বললো-

-”আমার বিয়ের সময় তুই আমাকে সাজিয়ে দিস।

মাইজা অবাক হলো।মেহবিনের যে ওর সাজিয়ে দেওয়া এত পছন্দ করবে আশা করেনি।মাইজা একটু বাজিয়ে দেখতে বললো-

-”এহহ সাজিয়ে দিস পর্যন্তই শেষ।পরে বড় বড় মেকআপ আর্টিস্ট দের পেয়ে কি আর আমাকে ভালো লাগবে।

মেহবিন আশ্বাস দিয়ে বললো-

-”নাহ আমি তোর কাছেই সাজব প্রমিজ।

মেহবিন ও সায় জানাল।

বিকেল চারটার দিকে ওরা বাসা থেকে বের হলো।মায়ান রাফিজ আশিক ওরা আগেই বাইরে ছিলো।রাফিজরা আগেই একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে রেখেছিল।মেহবিনরা বের হতেই রাফিজ ওদের গাড়িতে উঠতে বললো।মেহবিন আড়চোখে এদিক সেদিক তাকাল।তবে মায়ানকে কোথাও দেখলো না।মাইজারা গাড়িতে উঠছিলো।আর মেহবিন উকি দিয়ে মায়ানকে খুজছিলো।হঠাৎই কানে এসে বারি খায় সেই আবেগঘেরা মোলায়েম কন্ঠস্বর-

-”আমাকে খুজছো?

মেহবিন হকচকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ানের দিকে তাকায়।মেহবিন ঘুরতেই মায়ানের হৃদয়ে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলো।মেহবিনকে এই প্রথম সে সাজতে দেখেছে।মায়ান বুকে হাত দিয়ে ছোট করে বললো-

-”মাশাআল্লাহ।

মেহবিন লজ্জা পেলো।এই ছোট্ট কথাটাও তাকে লজ্জা পায়িয়ে দিলো।মেহবিন তড়িঘড়ি করে বাসে উঠতে নিতেই মায়ান পাশে হাত দিয়ে আটকে দিলো।মেহবিন ততক্ষণে আশেপাশে তাকাল।নাহ সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত।মাইজারাও গাড়িতে গিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।মেহবিন মায়ানের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বললো-

-”’যে-যেতে দিন।

মায়ান নেশাভরা চোখে তাকিয়ে বললো-

-”আর কত ভাবে পাগল করবে আমাকে।এখন কি মেরে ফেলতে চাও?

মেহবিন থমকালো।সে আবার কি করলো।সরু চোখে মায়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই মাইজার ডাক পড়ল-

-”ভিতরে এসে বস মেহু।

মেহবিন তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠতে নিতেই মায়ান মেহবিনকে থামিয়ে দিলো।মেহবিন তাকাল মায়ানের দিকে।মায়ান পকেট থেকে একটা মেডিসিন বের করে মেহবিনের হাতে দিয়ে বললো-

-”বমির ঔষধ।গাড়িতে উঠে খেয়ে নেও।তাহলে আর বমি হবে না।

মেহবিন মেডিসিন টা নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।মাইজা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এতক্ষন ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কায়া ব্যাপারটা খেয়াল করল।তারপর মুচকি হেসে নিজের হবু বরের সাথে চেটিং এ ব্যস্ত হলো।

জাফলং সিলেট জেলার গোয়াইনখাট উপজেলায় অবস্থিত।ওরা মাইক্রোবাসে করে একঘন্টার মধ্যে সিলেট গিয়ে পৌছালো।

বাস থেকে নেমেই ইরিনা জিজ্ঞেস করল-

-”আমরা কোন হোটেলে উঠবো?

মায়ান বললো-

-”জাফলং এ থাকার তেমন সুব্যবস্থা নেই।তবে কয়েকটি জেলাপরিষদের নলজুরী রেস্ট হাউস আছে।ওখানে থাকতে হলে আগেই বুকিং দিতে হয়।আর আমি গতকাল রাতেই বুকিং দিয়েছি।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here