তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৬ ৭

0
1790

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:6

মাহিম অপলা পাশাপাশি হাঁটছে।অপলা অনেকটা বিব্রত ক্ষণিক বিরক্তও।মাহিম ক্ষণিক প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু অপলার বিরক্তি ভাব দেখেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে।

এমন সময় দূর থেকে মাইকের আওয়াজ শুনা গেল।বুঝা যাচ্ছে ওরা রিসোর্টের কাছে চলে আসছে।অপলা তো মহা খুশি।তবে মাহিমের মনে নেমে এলো একরাশ কালো মেঘ।সে যে আবার হারিয়ে ফেলবে তার স্বপ্নচারিণী কে।ওরা বাংলোর ভিতরে গেলো।Teacher দের সাথে কথা বলে অপলা কে রেখে মাহিম চলে আসার সময় সবাই ওকে অনেক ধন্যবাদ দিল।অপলা এক চিলতে হাসি দিয়ে thanks বলবো।এই যেনো মাহিম এর অপার পাওয়া।

দেখেতে দেখতে দিন চলে যায়।আজ তিন দিন হলো পিকনিক থেকে ফেরার।এই তিন দিনে কেনো যেনো না চাইতেই ওই ছেলেটির কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে।ছেলেটি চলে যাওয়ার সময় কি অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে ছিল।কি গভীর সে দৃষ্টি।কত না বলা কথা জমে আছে।অথচ এই টা ছিল প্রথমবার দেখা।হয়তো শেষবার।আবার দেখা হতেও পারে।কিসব এলোমেলো চিন্তা ভাবনা যে ঘুরছে মাথায় অপলা নিজেও বুঝেনা।

মাহিম এখন রাত দিন সর্বক্ষণ ই স্বপ্নচারিণী কে ভাবে।তার স্বপ্নচারিণী র নামটা ভারী অদ্ভুদ,অপলা।তবে মিষ্টি নাম টা।ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছে নাম্বার টা কি তার স্বপ্নচারিণীর বন্ধুবির?আচ্ছা ওর বন্ধুবিকে বললে কি আমাকে স্বপ্নচারিণীর সাথে কথা বলিয়ে দিবে?নাকি দিবে না?আর কেনো ই বা অচেনা এক জনের সাথে কথা বলিয়ে দিবে।এসব ভাবনার মাঝে ই কল দিল মাহিম।

অপলা বড্ড আনমনা হয়ে পড়ছে। পড়ায় যে তার মন নেই।তবু চেষ্টা করছে।হটাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।unknown number, ধরবে কি ধরবেনা ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল।তাই আবার পড়ায় মন বসাতে চেষ্টা করছে। এর মাঝেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো।এইবার ভাবলো আবার যখন কল দিচ্ছে হয়তো দরকারেই।অপলা ফোনটা রিসিভ করল

-আস্সালামুআলাইকুম!
-(কণ্ঠ শুনে তো অবাক)ওয়ালাইকুমুসসালাম!
-(চেনা চেনা লাগছে কন্ঠটা)জি কে বলছেন?
-মাহিম,ওই যে রাজশাহীতে!
-(অদ্ভুদ feel হচ্ছে,এতক্ষণ যেনো এই কলটার অপেক্ষায় ছিলাম)hmm, জি বুঝলাম।কিন্তু আপনি ফোন number কোথায় পেলেন?আর কেনওই বা কল করলেন?
-কোনটার answer দিবো আগে?
-নাম্বার কোথায় পেলেন?
-সেদিন আমার ফোন থেকে আপনি এই নাম্বারএ কল করছিলেন।সেখান থেকেই পেয়েছি।
-বুঝলাম।কেনো কল করছেন?
-কল করে কি বিরক্ত করলাম?আপনারা পৌঁছেছেন কিনা খোজ নেই।sorry, বিরক্ত করে থাকলে।
-it’s ok, আমি বিরক্তি হচ্ছিনা।তবে একটা কথা ভাবছি!
-কি ভাবছেন?
-না ভাবছি আপনার ফোন থেকে যদি অন্য কেউ কল করতো বা আপনি হেল্প করতেন তাহলে কি তাদের সবার খোজ ই কি নিতেন?
-খোঁজ নেওয়ার মতো সুযোগ থাকে অবশ্যই নিতাম।
-শুনে খুশি হলাম। আমরা ঠিকভাবে সঠিক সময়ে সুস্থভাবে পৌঁছেছি।
-শুনে খুশি হলাম।
-thanks.
-for what?
-সেদিন আপনি না থাকলে হয়তো জামেলায় পড়ে যেতাম।
-আপনার সাথে আমার দেখা হতোই আজ না হয় কাল।
-বুঝলাম না।
-কিছুনা। আল্লাহ হয়তো চেয়েছে আমদের দেখা হোক।ঘটনাটা উছিলা মাত্র।
-তাতো অবশ্যই।
-কেমন আছেন তাইতো বললেন না?
-আলহামদুলিল্লাহ,আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ।আপনি কোন ক্লাসে পড়ছেন?
-আমি এইবার ইন্টামিডিয়েট এক্সাম দিবো।
-আচ্ছা,তাহলেতো এখন পড়ার অনেক চাপ?
-তাতো থাকবেই।আপনি কি করেন?
-বিএসসি 3rd year.
-রাজশাহীতে?
-হা, তবে next week ঢাকায় ট্রান্সফার হব।
-ও,আচ্ছা।
-আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
-কেনো?
-না এই যে এতক্ষণ কথা বলছি………
-আপনি কি আরও অনেকক্ষণ কথা বলতে চাচ্ছেন?
-আপনার কি ভালো লাগছেনা?
-আসলে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।পড়াশুনা আছে।ঘুমাতে হবে,বুঝতেই তো পারছেন…
-অবশ্যই।আজ তবে রাখছি।
-hmm.
-আর হ্যা,খুব শীঘ্রই আমদের আবার দেখা হবে।

বলেই কেটে দিল।অপলা কিছুই বুঝলোনা।

অপলার কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করছে।মাথাটা হালকা লাগছে। পড়তেও ভালো লাগছে,যেনো সব খারাপ লাগা হারিয়ে গেছে।

মাহিমের আনন্দ আর ধরেনা।ভাগ্য যে তার অনুকূলে।না চাইতেই কি যে হচ্ছে সব স্বপ্নের মতো লাগছে।আজ সে তার স্বপ্নচারিণীর সাথে আবার কথা বলল। স্বপ্নে নয় বাস্তবে।তার যে খুশিরা আজ সব একসাথে জড়ো হচ্ছে।এখন শুধু ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় যাওয়ার অপেক্ষা।একবার যখন সে তার স্বপ্নচারিণীর খোঁজ পেয়েছে আর হারাতে দিবেনা।তার মনের কথা সব বলবে।যা কিছু এতদিন মনের মধ্যে ছিল তার সবটাই বলবে। যত ভালবাসা, অনুভূতিরা জমে আছে তার সবটা দিয়ে ভরিয়ে দিবে তার স্বপ্নচারিণী কে।খুব খুব ভালোবাসি তোমায় স্বপ্নচারিণী। হ্যাঁ, তুমিই আমার স্বপ্নচারিণী।

চলবে……..

 

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী

উম্মে হাবিবা তনু

Part:7

অপলার বাবা ব্যাবসায়ের কাজে সিংগাপুর যাচ্ছে।ওর মাও যাচ্ছে ডক্টর দেখাবে বলে।অপলার এক্সাম এর বেশিদিন বাকি নেই,অনেক পড়াশুনার চাপ।রুনু ঝুনু থাকলে খুব জ্বালাতন করবে অপলাকে।সে জন্য রুনু ঝুনু কেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে।ওরা যখন থেকে শুনেছে ওরাও সিংগাপুর যাবে ওরা যেনো অস্থির হয়ে পড়ছে কখন যাবে।আবার মনও খারাপ হচ্ছে অপাপু (ভালোবেসে অপাপু ডাকে)রেখে যেতে।অপলা ওদের বুঝালো নেক্সটবার ও যাবে।কয়কদিনেরই তো ব্যাপার।পরেরবার যখন সবাই একসাথে যাবে তখন অনেক দিন থাকবে আর অনেক আনন্দ করবে।ওরা মেনেও নিল।

অপলার এক্সামের আর মাসখানিক সময় আছে।তাই ও যাচ্ছেনা।যদিও এক্সাম না থাকলেও যেত না।অনেক পড়া জমে আছে।কোনো subject ই ভালোভাবে শেষ হয় নি।বড্ড বেশি বেখেয়ালি হয়ে গেছে।কেনো যে ওর এমন হচ্ছে……

অপলার মা বাবা যাওয়ার আগে ওর ফুপুর মেয়েকে নিয়ে এলো অপলার সাথে থাকার জন্য।অপলা অনেকবার মানা করেছে।সে একা থাকতে পারবে।কিন্তু ওর মা বাবা কোনো কথা শুনেনি।মেয়েকে একা রেখে যাবেন না।বাড়িতে কাজের লোক আছে তাতে কি?তাদের উপর খুব একটা ভরসা করা যায় না।তাছাড়া এমনিতেও লুবনাকে এইখানে নিয়ে আসতেন।এইখানে রেখেই পড়বে বলে ঠিক করছেন।

লুবনা হলো অপলার ফুপাতো বোন।অপলার বয়সী।কিন্তু SSC র পর আর পড়েনি।ওর ফুপু ভেবেছিল বিয়ে দিয়ে দিবে।মেয়ে মানুষ এত পড়ে কি করবে?কিন্তু অপলার বাবা তা হতে দেয়নি।ঠিক করছেন এইখানে নিয়ে এসে কলেজে ভর্তি করে দিবেন।

লুবনা গ্রামে বড় হলেও খুব চটপটে।কথা, ব্যবহার, চাল- চলনে কেউ বলবেনা ও গ্রামে বড় হয়েছে।চোখে মুখে শান্ত ভাব বিরাজ করে।মেয়েটার অনেক গুণ।যেকোনো অবস্থায় মানিয়ে নিতে পারে। যেটা অপলাকে খুব মুগ্ধ করে।আর এমনিতেও লুবনাকে ওর খুব ভালো লাগে।ভালো লাগলেও খুব একটা কথা বলেনা।মেয়েটা সেটাও বুঝে।নিজের মতো করে থাকে।তবে মেয়েটা অপলাকে ছাড়া খায়না। যতক্ষণ পর্যন্ত অপলা খেতে না বসে ততক্ষণ খায়না।নিজের হাতে রান্না করে অপেক্ষা করে অপলার জন্য।রান্নার হাতও অসাধারণ।

মাহিম ট্রান্সফার এর সব রকম ফর্মালিটিস শেষ করেছে এক সপ্তাহের ভিতর।সবাই খুব অবাক কি হল হটাৎ ওর?হুট করে ঢাকায় যেতে চাচ্ছে?কিছু বলেনা ও।খুব জোরাজুরি করায় বলল, ঢাকায় ভালো ফ্যাসিলিটিস আছে যেটা এইখানে নেই।যেটা শুনে সবাই আরও অবাক।যেখানে ঢাকা থেকে এইখানে পড়তে আসে সেখানে ও বলছে এইখানে ফ্যাসিলিটিস নেই?

ওর ভাবী আর ফ্রেন্ডসরা খুব বেশি হয়রান করছে।কত ভাবে যে ওকে ক্ষেপাচ্ছে….কিন্তু ওর কোনো রিয়াকশন নেই।যেনো ও এইখানেই নেই,কিছু শুনছেই না।যেটা সবাইকেই অবাক করছে।হটাৎ এত পরিবর্তন এর কারণ খুঁজে পায় না কেউ। ও নির্বিকার।চোখে মুখে উচ্ছাস উপচে পড়ছে।কিছু একটা তো ঘটেছে। তা সবাই বুঝতে পারছে।তবে মাহিমের মা এর খুব মন খারাপ।ছোট ছেলে একটু বেশি আগলে আগলে রাখতেন।এখন এতদূর যাবে মানতেই পারছেন না তিনি।ঢাকায় যাওয়া মেনে নিলেও হোস্টেল এ তিনি থাকতে দিবেন না কোনোভাবে।অহনার বাড়িতে থেকেই পড়তে হবে।এতে মাহিমের কোনো সমস্যা নেই।ওর তো ঢাকায় আসতে পারলেই হলো। সেতো তার স্বপ্নচারিণী কে খুঁজবে।অহনা আপুর বাড়ি থেকে ওর স্বপ্নচারিণীর কলেজ খুব একটা দূর না।সে তার স্বপ্নচারিণী কে হারাতে দিবে না কোনোভাবেই না।

অপলার পড়াশুনায় একদমই মন নেই ।সারাক্ষণ অদ্ভুদ অদ্ভুদ চিন্তা মাথায় আসে। যার কিছুই ও বুঝেনা।কোনোভাবেই ভাবনাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেনা।যত ভাবে ভাববে না ততই ভাবনারা জেকে বসে।এলোমেলো সব ভাবনা।তাও আবার সেই অদ্ভুদ ছেলেটাকে নিয়ে।অপলার কেনো যেনো সেই অদ্ভুদ ছেলেটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয়।কোনো মানে হয় এমন ইচ্ছার?ভেবে পায়না অপলা। ও তো এমন না।ওর তো ভালোই লাগে না কারো সাথে কথা বলতে!তাও একটা অচেনা অজানা ছেলের সাথে ওর কথা বলতে ইচ্ছা হয়!কেনো?একদিনের পরিচয়েই কারো জন্যে এমন অস্থির কারো কি লাগতে পারে,লাগা কি উচিত?ভেবে পায়না অপলা।সত্যিই কি হচ্ছে ওর সাথে।

মনের ইচ্ছার কাছে হার মেনে ও কল করলো সেই অদ্ভুদ ছেলেটিকে…….

চলবে….

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here