তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৩০ ৩১

0
902

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:30

আজ রাতে রওনা দিবে অপলারা।ওদের ইচ্ছে ট্রেনে যাবে।তাই রাতের টিকিট এর arrangement করেছে হিশাম আহমেদ।ওরা সন্ধ্যার পর বের হবে।সব গোছানো শেষ। যার যা যা নেয়ার সব প্যাকিংও হয়েছে।অপলা ওর মায়ের ওষুধ সব মিলিয়ে দেখে গুছিয়ে নিয়েছে।লাস্ট টাইমে এসে হিশাম আহমেদই যেতে পারছেন না।ব্যবসায় এর কাজে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন।অপলাদের ট্রেনে তুলে দিয়ে আজ রাতের ফ্লাইটেই যাবেন আর দেশে ফিরেই রাজশাহী যাবেন।

সকাল থেকে মাহিম কিছুক্ষণ পর পর কল করেই যাচ্ছে।কখন বের হবে ওরা?কখন আসবে?অপলা বারবার বলছে রাতের ট্রেনে আসবো। কে শুনে কার কথা।মাহিমের ব্যাপারটা এমন যেনো ও কল করতে থাকলেই অপলারা চলে আসবে।অপলা মনে মনে হাসল।ছেলেটা আসলেই অদ্ভুদ।তবে অপলাও খুব excited, যেনো কোনো পিছুটান ওকে খুব আশ্চর্য্যজনক ভাবে টানছে।সেটা কি শুধুই মাহিমের জন্য?মাহিমের সাথেতো কতবার দেখা হলো।তখনতো এমন অনুভূতি হয়নি।আজকের এই অনুভূতি সম্পূর্ণ অন্যরকম।কেনো টানছে আমাকে এইভাবে?কি জন্য টানছে?

ট্রেনে উঠার আগে হিশাম আহমেদ বন্ধুকে জানিয়ে দিয়েছেন তারা যেনো ঠিক সময়ে স্টেশন থেকে ওদের নিয়ে যায়।উনি যাচ্ছেন না বলেই টেনশন একটু বেশিই হচ্ছে।উনারও কিছু করার ছিল না লাস্ট টাইমে এসে কাজ পরে গেলো।তবু এহসান ছিল বলে শান্তি পাচ্ছে কিছুটা।

অপলা ট্রেনে উঠেই মাহিমকে মেসেজ করেছে।ওরা এই প্রথমবার ট্রেনে যাচ্ছে।খুব এনজয় করছে ওরা এই জার্নিটা।রেহনুমা আহমেদ এরও খুব ভালো লাগছে তার মেয়েদের আনন্দ যেনো তার ভালো লাগার মাত্রাটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।শরীর মন ভালো করে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু উনি চান না।

মাহিমও খুব খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা তারপরই দেখা মিলবে তার স্বপ্নচারিণীর।এই কয়েক ঘন্টাও যেনো তার কাছে কয়েক যুগ মনে হচ্ছে।এত অপেক্ষা কেনো করতে হয় বুঝে পায়না মাহিম।অপেক্ষা নামক শব্দটি না থাকলেই বোধ হয় ভালো হতো।তবে অপেক্ষা নামক শব্দটি না থাকলে প্রাপ্তির স্বাদ পাওয়া যেত না।তাই হয়তো অপেক্ষার ফল মধুর হয়।মাহিম নিজেকে নিজে বুঝালো।তার যে আর মন মানছে না।কতক্ষণে সে তার স্বপ্নচারিণীকে দেখবে!!

ওরা রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছেছে তখন প্রায় রাত 3.45 হবে। মাহিমরা এখনো কেউ আসেনি ওদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশে পাশে অনেক ভীড়।সবাই ট্রেন থেকে নেমেই ছুটছে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কেউ বা অপেক্ষা করছে প্রিয়জনের।কেও কেও চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে এই বুঝি প্রিয়জন এলো।এত ভিড়ের মাঝে না হারিয়ে ফেলে।কত মানুষ স্টেশনের পাশে ঘুমিয়ে আছে।খুব খারাপ লাগছে অপলার।মানুষের জীবন কত কঠিন,কত কষ্টের হয়।তবে ওর কাছে বড্ড চেনা লাগছে সবকিছু।কোথাও যেনো দেখেছে।কিন্তু কোথায় মনে করতে পারছে না।

আস্তে আস্তে ভীড় কমে আসছে।কিন্তু ওদের নিতে আসেনি কেও। ফোনে কল যাচ্ছে না।নেটওয়ার্ক প্রবলেম এর জন্য।রেহনুমা আহমেদ এর খুব চিন্তা হচ্ছে।প্রায় ঘন্টাখানিক হতে চললো কিন্তু কেউতো এল না এখনো।তার সাথে তিনটা যুবতী মেয়ে সাথে দুটো বাচ্চা।তিনি নিজেও অসুস্থ বিপদ আপদের হাত নেই।স্টেশনের অভিজ্ঞ্তাও তার বিশেষ ভালো না।তিনি এইখানে বেশিক্ষণ থাকতে চান না।তিনি বার বার সবাইকে নিজের কাছে দাড় করিয়ে বলছে আল্লাহ আল্লাহ করতে।আর অপলাকে তিনি যেনো চোখে হারাচ্ছেন।যেনো চোখ সরালেই উবে যাবে।মেয়েটাকে তিনি স্থির করে তার কাছে বসাতে পারছেন না।এমনতো কখনো করেনা।তবে আজ কি হলো?কি এত দেখছে আশেপাশে?খুব ভাবাচ্ছে তাকে।তার ভয় হচ্ছে খুব।অপলার চোখের ভাষা তাকে কষ্ট দিচ্ছে।কি দেখছে এইভাবে?

অপলার হটাৎ চোখ গেলো তার মায়ের দিকে।এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুব অবাক হল।এগিয়ে গেলো মায়ের দিকে।পিছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে বললো,মা এইভাবে আমাকে দেখছো কেনো?দেখবনা তোকে?অচেনা জায়গা যদি হারিয়ে যাস?মা আমি কি এখনো বাচ্চা নাকি হারিয়ে যাবো?আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।সে তুই সবার কাছে বড় হতে পারিস আমার কাছে না।অপলা হাসলো।আচ্ছা মা এইখানে তো আমাদের একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে,তাইনা?রেহনুমা আহমেদ এর ভেতরটা কেপে উঠল।তিনি এই ব্যাপারে কথা বলতে চান না।কি বলতে কি বলে ফেলবেন।তাড়াতাড়ি অন্যকিছু বলে এড়িয়ে যেতে হবে।তাই ছোট করে বললেন আছে তো সে বিষয়ে আমি বিশেষ জানিনা তোর বাবা জানে।অপলা কিছু বলার আগেই রেহনুমা আহমেদ বললেন,এহসান ভাইদের বাসায় ফোন করে দেখ না ওরা আসবে কিনা?নাকি আমরা অন্য গাড়ি ব্যবস্থা করে রওনা হব।কথা শেষ হবার আগেই ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে।
চলবে…

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:31

আস্সালামুআলাইকুম আণ্টি, sorry আসলে রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় লেট হলো।রেহনুমা আহমেদ সালামের জবাব দিয়ে চুপ করে দেখছেন।তিনি চিনতে পারছেন না ছেলেটাকে।মাহিমের আসার কথা।ওকে তো চিনতে পারছেন না তিনি।আণ্টি গাড়িতে উঠুন।এবার রেহনুমা আহমেদ বললেন,বাবা তোমাকেতো চিনলাম না?একদমই ভুলে গেছি পরিচয় দিতে।আণ্টি আমি মোহন।এহসান চৌধুরীর বড় ছেলে।ওহ তুমি এহসান ভাইয়ের ছেলে,কত বড় হয়ে গেছো,অনেক ছোট থাকতে দেখেছিতো খেয়াল করতে পারিনি।সমস্যা নেই আণ্টি, গাড়িতে বসে আমরা কথা বলি? হ্যা,অবশ্যই চলো।

অপলার খারাপ লাগছে মাহিম এলো না কেনো?খুবতো পেম্পার করছিলো কখন আসবো আর এখনই তার খবর নেই?সবার সাথে অপলাও গাড়িতে উঠলো।রেহনুমা আহমেদ কিছু বলতে যাবে তার আগে মোহনই বললো,মাহিমই আসতো আপনাদের নেওয়ার জন্য।কিন্তু তখন হঠাৎই ওর সব ফ্রেন্ডরা বাড়িতে আসে।সারারাত আড্ডা দেয়ার জন্য।মাহিম ওদের রেখেই আসতে চেয়েছিল।তখন আম্মুই বারণ করলো,ফ্রেন্ডরা এতদিন পর একসাথে হয়েছে ওদের রেখে যাওয়াটা ঠিক হবেনা।তাই আমাকেই পাঠালো।সে ভাবী ঠিকই করেছেন।কতদিন পর মাহিম বাড়ি গেছে সবার সাথে সময় কাটানোটা ওর এখন দরকার।জি আণ্টি তাই আর আম্মু দিল না।তার মধ্যে আমার গাড়িটা মাঝ রাস্তায় এসে খারাপ হয়ে গেল।এই জন্য আরো লেট হয়ে গেল।সেটা সমস্যা না বাবা।সাবধানে যেও রাতের বেলা তো।জি আণ্টি সেসব ভাববেন না,আমি ড্রাইভার হিসেবে খুব একটা খারাপ না।দুইজনই হেসে উঠলো।

অপলা সবার কথা শুনছে। ও এইবার বুঝলো মাহিম কেনো এলো না।না হয় মাহিম যা নাছোড় বান্দা ওকে আটকে রাখা যায় নাকি।পাগল একটা ।মনে মনে ভাবছে আর হাসছে অপলা।তবে ওর কিছুটা অভিমানও হচ্ছে মাহিমের উপর। ও তো ওর ফ্রেন্ডদের আগেই বারণ করতে পারত। সেতো আগেই জানতো ওরা আসবে।আর ওতো এসেছে আরও একদিন আগে।বেছে বেছে আজকেই ফ্রেন্ডরা আসলো?তাহলে কি ওরও খুব একটা ইচ্ছে ছিল না আমাদের নিতে আসার??না এইসব একদম ভাবতে ইচ্ছে করছে না।মাহিম অবশ্যই আসত।হয়তো ও জানতো না ওর ফ্রেন্ডরা আজই আসবে।কিন্তু এইখানের সব আমাকে খুব টানছে।কেনো টানছে?কি আছে এইখানে?মনে হচ্ছে এইখানকার সব আমার চেনা।বড্ড চেনা।খুব আপন।না না কি সব ভাবছি।প্রথমবার যাচ্ছি আমি মাহিমদের বাড়ি।তাহলে আমার চেনা হয় কি করে?এইসব ভাবনা মাথায় রাখা যাবেনা।এইখানে যে কয়দিন থাকব খুব এনজয় করবো।কোনো মন খারাপ না ।সবাই একসাথে খুব বলো সময় কাটাবো কয়েকটা দিন।

রুনু ঝুনু ওরা কোলে বসেছে।বাইরে অন্ধকার তার মধ্যে গাড়ি ছুটে চলেছে দেখতে ওদের খুব ভালো লাগছে।মাঝে মাঝে গাছের ডাল এর সাথে গাড়ির গায়ে ঘষা লাগছে।এটা দেখতেও ওদের খুব ভালো লাগছে।এই মুহূর্তে ওদের দুজনেরই গান গাইতে ইচ্ছে করছে।স্কুলের নতুন মেম শিখিয়েছে।কিন্তু ওরা খুব ভালো পারেনা।এখন কি গাইবে ওরা?দুইজন গুজগুজ করে এইসব বলছে দেখে লুবনা বলল,দুজন কি এত গুঁজগুজ করছ আমিও একটু শুনি।আপু তেমন কিছু না।আমাদের না গান গাইতে ইচ্ছে করছে।তাই?তাহলে গাও আমরা সবাই শুনি।আমাদের নতুন মেম শিখিয়েছে।খুব ভালো পারিনা।সমস্যা নেই সোনা তোমরা যেভাবে যতটুকু পরো গাও আমরা তাই শুনবো,অপলা বললো ।লুবনাও বলল, হ্যা হ্যা আমরা তাই শুনবো।রুনু ঝুনু মনে সাহস এনে গান ধরলো,

একদিন ছুটি হবে
অনেক দূরে যাবো,
নিল আকাশে,সবুজ ঘাসে
খুশিতে হারাবো।

ওরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে গেল।গাড়ির হর্ন শুনতেই দারোয়ান এগিয়ে গিয়ে গেট খুলে দিল।ওরা গাড়ি থেকে নামতেই মোমেনা চৌধুরী এগিয়ে এলেন।কতদিন পর দেখা বলে রেহনুমা আহমেদকে জড়িয়ে ধরলেন।একে একে সবার সাথে কথা হলো।মোহন ভাইয়ার বউ লিপি।বেশ হাসিখুশি বুঝাই যাচ্ছে। সবার সাথে কি সুন্দর কথা বলছে ।সবাইকে নিয়ে ভিতরে যাচ্ছে।অপলার এদের সবাইকে খুব ভালো লাগছে।কিন্তু মাহিম কই?কতদিন দেখা হয়না। তারতো কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না।রাতে না হয় বন্ধুরা ছিল কিন্তু এখন সে কই? অপলার চোখ দুটো যে শুধুই মাহিমকে খুঁজছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here