তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৫২ ৫৩

0
1338

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:52

অপলা পাগলের মতো আগুনের দিকে ছুটে যাচ্ছে।যেনো আগুনে হাতরেই সে গোটা ডাইরিটা সুরক্ষিতভাবে পেয়ে যাবে।বখশী সাহেব ওকে আটকালো।অপলাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে তিনি বারান্দার দিকে গেলেন।বিবেকের কাছে হার মানলেন বখশী সাহেব।হাতে কাপড়ে জড়ানো কিছু একটা নিয়ে ফিরে এলেন।তিনি অপলার হাতে জিনিসটা দিয়ে বলল,এইটাই রোমানা আমাকে দিয়েছিল তোমাকে দেওয়ার জন্য।আমার দায়িত্ব শেষ এখন এইটা তোমার।অপলা দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরলো জিনিসটা।চোখ দুটো বন্ধ করে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।বখশী সাহেব অপলার মাথায় হাত রেখে বলল,কেঁদো না মা।অপলা চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,আংকেল কি এমন ঘটেছিল যার জন্য আমি আমার মায়ের থেকে দূরে ছিলাম?আমি তেমন কিছু জানিনা মা।আপনি যেটুকু জানেন তাই বলুন।বখশী সাহেব চোখ বন্ধ করলেন।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে খানিক ইতস্ত করে কোনো ভূমিকা ছাড়াই বললেন।

১৬বছর আগে এক রাতে স্যার আর ম্যাডাম মানে তোমার মা বাবা রোমান আর তোমাকে নিয়ে আসেন এইখানে।তুমি তখন খুব ছোট দেড় কি দুই বছর বয়স।তুমি তোমার মায়ের কোলে ছিলে।তোমাদের অবস্থা খুব করুন ছিল।মনে হচ্ছিল কারো তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছো।বখশী সাহেব থামলেন।কিছুক্ষণ পর আবার বলতে শুরু করলেন।আমাকে স্যার বলেন রোমানার আর তোমার থাকার একটা ব্যবস্থা করতে।রোমানা আজ থেকে এই হোম এই থাকবে।আর এইখানে ওকে কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা করেতে।আমি স্যারের কথা মত তাই করলাম।আমি তোমার আর তোমার মায়ের থাকার ব্যবস্থা করি।কিন্তু রোমানা বলল,তুমি যদি ওর সাথে থাকো তাহলে তোমার জীবনের ঝুঁকি হতে পারে।স্যারও সেরকমই আশঙ্কা করছিলেন।তখন তোমার মা মানে ম্যাডাম তোমাকে রোমানার কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে বলেন,ও আজ থেকে আমার কাছে থাকবে আমার মেয়ে হয়ে।স্যারও সেদিন ম্যাডামের কথা মেনে নেন।কারণ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তারা ছিলেন নিঃসন্তান।সেদিন রোমানাও সেচ্ছায় তোমাকে তাদের কাছে দিয়ে দেয় তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে।সেই থেকে তুমি হয়ে গেলে হিশাম আহমেদ এর মেয়ে অপলা আহমেদ।আর সে পরিচয়ে তুমি বড় হয়েছ।তোমার রানু নামের অস্তিত্বের বিলীন হয় সেদিন।

অপলা মন দিয়ে সবটা শুনলো।চোখের পানি মুছে বলল,আংকেল সেদিন কি ঘটেছিল যার জন্য আমার জীবনের ঝুঁকি ছিল?সেটাতো মা আমি জানি না।তোমার মা বাবা আর রোমানাই সেটা জানতো।অপলা মাথা নিচু করে আছে।ওকে খুব ভাবাচ্ছে কি এমন ঘটেছিল যার জন্য তাকে তার মা নিজের কাছে রাখতে পারেনি।বখশী সাহেব থেমে গিয়ে অপলার হাতের দিকে ইশারা করে আবার বললেন,হয়তো এইটার মধ্যে কিছু জানতে পারবে,তাই হয়তো তোমার মা তোমাকে দিতে বলেছে।অপলা ডাইরিটা একবার বুকের সাথে চেপে ধরে পার্সের ভিতর রেখে দিল যাতে কেউ না জানে এইটা ওর কাছে আছে।

রোমানাকে কবর দেয়া হয়ে গেছে।এইবার সবাই যে যার গন্তব্যে ফিরে যাবে।কিন্তু সারাদিন কারো কিছু খাওয়া হয়নি তাই মাহিমের বন্ধুরা খাবার ব্যবস্থা করলো।বাজার সব করাই ছিল আজকের জন্য।কিন্তু হঠাৎই সব এলোমেলো হয়ে গেল।সবাইকে জোর করে অল্প খাওয়ানো হলো।কিন্তু অপলা এক ফোঁটা পানিও মুখে তুললো না।অনেক চেষ্টা করেছে ওকে খাওয়ানোর কিন্তু ও খায়নি।এখন আর কাদছেও না।কেমন যেন থম দিয়ে আছে।যেনো কোনো কিছুতেই কিছু আসে যায় না।

ওদের ফিরতে রাত হয়ে গেছে।যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।সবার মধ্যে একটা থমথমে ভাব।সবারই এই অনাকাক্ষিত ঘটনার জন্য খারাপ লাগছে।কিন্তু এতেতো কারো হাত ছিল না সবটাই আল্লাহর ইচ্ছা।সবাই ড্রয়িং রুমে থাকলেও অপলা নেই।ওর ঘরের লাইট অফ করে শুয়ে আছে,হয়তো কাদঁছে।এই ভেবে লিপি আপু আর লুবনা একসাথে অপলার ঘরে যাচ্ছে বুঝাতে।ওদের দুইজনের মধ্যে সকালে কিছু একটা হয়েছে সেটা ওরা দুজনেই ভুলে গেছে এই ঘটনার জন্য হয়তো।ওরা দুজনে মিলে অপলাকে অনেক কিছু বুঝলো।কিন্তু অপলা কারো কথা শুনলো কিনা বুঝা যাচ্ছে না।ও নির্বিকার।রুনু ঝুনুও কাদঁছে।ওরা অপলার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না।দুবোন দুইদিক থেকে অপলাকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।অপাপূ প্লিজ তুমি কেঁদোনা।তুমি কাদলে আমাদেরও কষ্ট হয় আপু।অপলা নির্বিকার।মাহিমের মা বাবাও অনেক করে বুঝিয়েছে কিন্তু অপলা কিছু বলেনি।মনে হচ্ছে কেউ যেন ওর কন্ঠনালী চেপে ধরে আছে।সবাই একসময় ব্যর্থ হয়ে যে যার ঘরে চলে গেল।

অপলা অপেক্ষা করছে কখন লুবনা ঘুমাবে।লুবনা ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা অপলা বুঝতে পারছে না।কিন্তু অনেক রাত হয়েছে এতক্ষণতো জেগে থাকবে না।অপলা খুব সাবধানে আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসলো।বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করে সময়টা দেখল।2.23বাজছে ঘড়িতে।আস্তে আস্তে রুমের লকটা ভালো করে লাগিয়ে দিল।তারপর মোবাইলের আলোতে পার্সের ভিতর থেকে কাপড়ে মোড়ানো ডাইরিটা বের করে নিয়ে বারান্দায় গেলো।আজ হয়তো পূর্ণিমা বাইরে কি ঝকঝকে চাঁদের আলো।অপলা খুব যত্ন করে কাপড়টা সরালো।খুব সাধারণ একটা ডাইরি কালো রঙের এটা কাভার।কিন্তু অপলার কাছে এইটা খুব অসাধারণ।ওর মায়ের স্মৃতি।শেষ এবং একমাত্র স্মৃতি।অপলা আলতো হাতে ডাইরিটা খুলল।প্রথম পাতায় ওর মায়ের নাম লিখা রোমানা হাসান।তারপর অপলা পাতা উল্টাতে থাকলো।প্রথম দিকের পাতাগুলো ফাঁকা।মাঝের দিকে গোটা গোটা অক্ষরে কিছু লিখা আছে।অপলা চাঁদের আলোয় ডাইরিটা পড়তে শুরু করলো।

চলবে……….

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:53

ডাইরির মাঝের দিকে লিখাগুলোয় একবার হাত বুলিয়ে অপলা পড়তে শুরু করল।

ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষের সাথে বাড়ি ছেড়েছিলাম সেদিন।গ্রামের মেয়ে ওতো কিছু বুঝি না।মানুষটাকে খুব ভালোবাসতাম।মেট্রিক পরীক্ষার আর কিছুদিন বাকি।গ্রামে এইটা অনেক বিশাল ব্যাপার ছিল মেয়ে মেট্রিক দিবে।বেশ চলছিল দিনগুলো।হঠাৎই একদিন মানুষটার আগমন ঘটে আমার জীবনে।মানুষটার মধ্যে কিছু একটা ছিল তাই ভালো না বেসে থাকতে পারিনি।একদিন স্কুল ছুটির পর দেখি মানুষটা দাড়িয়ে আছে।আমার খুব ভালো লাগে তাকে দেখে আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে।আমি একপ্রকার দৌড়ে তার সামনে যাই।কাছে যেতেই বুকটা হাহাকার করে উঠে।সদাহাস্য মানুষটার আজ কি হলো তার মুখে বিষাদের ছায়া কেনো।আমি তার সামনে গিয়ে দাড়াতেই সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,রোমানা আমি চলে যাচ্ছি আজ রাতে।আমার বুকটা ছেদ করে উঠলো সে চলে যাবে মানতে পারছিলাম না।খুব কান্না পাচ্ছিল।কেঁদেই ফেললাম আমি।সে আরো শক্ত করে আমার হাতটা চেপে ধরে।তুমি আমার সাথে যাবে?আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।সত্যি বলতে আমার মন চাইছিল এখনই চলে যাই কিন্তু আমার মা বাবার কথা ভেবে কিছু বলতে পারছিলাম না।আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আবার বললো,তোমাকে না দেখে আমি একদিনও থাকতে পারবো না তুমিও চলো না আমার সাথে ঢাকায়,সেখানে আমরা দুজন বিয়ে করে সংসার পাতব।আমার পরীক্ষার আর বেশিদিন বাকি নেই এইসময়…পরীক্ষা আগামী বছর দিবে,আমার থেকে তোমার কাছে পরীক্ষা বড় হলো?না না কি বলো তুমি,কিন্তু মা বাবাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে?দেখো মা বাবা কখনো সন্তানকে ফেলে দিতে পারেনা দেখবে কয়েকদিন পর ঠিক মেনে নিবে আমাদের।সেদিন ওর কথা ফেলতে পারি নি।ওর হাত ধরে সেদিন রাতে বাড়ি ছাড়ি।ট্রেন ছুটে চলেছে তার আপন গতিতে।আর অজানা অধ্যায় এর শুরু হয় আমার সেদিন থেকে এক অজানা শহরে।

সেদিন মানুষটাকে আমাকে নিয়ে একটা জায়গায় উঠে।তখনো রাতের আঁধার কাটেনি।এত রাতেও প্রায় সবকটা ঘরে আলো জ্বলছে।কিছুটা অবাক হলেও ভাবলাম একেক জায়গায় হয়তো একেক নিয়ম।আমাদের দেখে একটা মহিলা এগিয়ে এলো।খুব বাজেভাবে শাড়ি পরে আছে না পড়ার মতো।একটা বিদঘুটে হাসি দিল মহিলাটা।তারপর দুজনে চোখের ইশারায় কিছু একটা বললো।তখন মহিলাটির মুখের হাসি আরও প্রশস্ত হলো।আমাদের দুজনকে একটা ঘর দেখিয়ে দিল।আমাকে ভিতরে গিয়ে হাতমুখ ধুতে বলল।আমিও তাই করলাম।যখন বের হলাম তখন দেখি মানুষটা ভিতরে নেই।এগিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দেখি সেই মহিলার সাথে কথা বলছে দুজনের মুখেই বিদঘুটে লালসাময়ী হাসি ছিল।সেদিন বুঝিনি হাসিটার মানে।কিছুক্ষণ পর মানুষটা ভিতরে আসে।আমাকে বলে সারারাত ট্রেনে ঘুমাওনি এখন একটু ঘুমিয়ে নেও আমি বাইরে আছি।বাইরে কোথায় যাচ্ছো?আমার খুব ভয় করছে ওই মহিলাটিকে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না।মানুষটা হেসে বলল,নতুন জায়গাতো তাই এমন মনে হচ্ছে তোমার,তুমি ঘুমাও।না না তুমি কোথাও যাবে না।মানুষটা তখন বলল,আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি একঘরে কি করে থাকি বলতো!!সে মুহূর্তে মানুষটার জন্য আমার খুব ভালো লাগা কাজ করছিল।আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।যখন আমার ঘুম ভাঙ্গল তখন বাইরে ঝলমলে দিনের আলো।বুঝা যাচ্ছে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে।হটাৎ মা বাবার কথা মনে পড়লো তারা এতক্ষণে আমাকে খুঁজে না পেয়ে না জানি কি অবস্থায় আছে।তখনই দরজায় টোকার আওয়াজ পেলাম।খুলতেই দেখি সেই মহিলা।হাতে খাবার প্লেট।আমার দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে খেতে বলল।আমাকে সেভাবেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে জোর করে প্লেটটা হাতে দিল।আমি শুধু বললাম,উনি কোথায়?মহিলা বিদঘুটে সেই হাসি দিয়ে বলল,সে কেনো আসবে তার পাওনা নিয়ে সেই কখন চলে গেছে।আমি উনার কথা বুঝতে পারছিলাম না।কিসের পাওনা কি বলছেন?মহিলার কথা শুনে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।আমাকে নাকি বিক্রি করে দিয়েছে।আমার ভালোবাসার মানুষটা যাকে ভরসা করে সব ছেড়ে এসেছিলাম সে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে ভাবতেও পারছিলাম না কিছু।পরে জানতে পারি এইটাই তার পেশা।মেয়েদের ভালোবাসার নাম করে এইখানে বিক্রি করে দেয়।সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিল।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।সেদিন ভেবেছিলাম পালাবো কিন্তু আমার কাছে কোনো সুযোগ ছিল।খুব কড়া নজরে রাখা হত।ওইদিন রাত থেকে নেমে আসে আমার জীবনের এক কালরাত।শুরু হয় আমার জীবনের এক কালো অধ্যায়ের।সেদিন থেকে প্রতিরাতে আমার উপর চলত অমানবিক নির্যাতন।তারপর একদিন জানতে পারি আমি অন্তঃসত্বা।ভেবেছিলাম এখন হয়তো আমি মুক্তি পাবো।কিন্তু না অমানুষগুলো তখনো আমাকে ভোগ করে গেছে।কত নামধারী ভদ্র মানুষ রাতের আঁধার এখানে আসে।এদের যে কত রূপ।রাতে এক দিনে আরেক।তারপর আমার কোলে আলো করে একটা মেয়ের জন্ম হয়।ওর নাম রাখলাম রানু।হয়তো আমি জানি না আমার সন্তানের বাবা কে,কিন্তু সেতো আমার সন্তান।বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছিলাম।ওকে নিয়েই বাঁচবো বলে।আমার মত জীবন ওর হোক সেটা আমি চাইনি।

ভেবেছিলাম আমার উপর না হোক এইটুকু বাচ্চা মেয়ের উপর তাদের মায়া হবে।কিন্তু না তাদের মায়া হয়নি।মেয়েটার তখন ২১মাস বয়স।কি সুন্দর করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কথা বলে।আমাকে মা মা বলে ডাকে।মাঝে মাঝে আপনমনে কি সব বলে যার কোনো মানেই বুঝতাম না।খুব ভালো লাগতো যতক্ষণ মেয়েটার কাছে থাকতাম।সেরকমই একদিন আমি মেয়েটাকে নিয়ে খেলছিলাম।তখন brothel’s এর সর্দার মহিলা আমার পাশে বসে ছিল।মেয়েকে আদর করে পাশে বসলো।রোমানা মেয়েকে যত পারছ আদর সোহাগ কর,কয়দিন পর তো তোর মেয়েরে পরপুরুষে আদর সোহাগ করব তখনতো আর তোর সোহাগ মজা লাগব না।সেদিন খুব ঘৃনা হচ্ছিল নিজের উপর।আর রাগ হচ্ছিল সেই মহিলার উপর।একজন মহিলা কি করে এইটুকু দুধের বাচ্চাকে নিয়ে এইসব ভাবতে পারে?ইচ্ছে করছিল তার মাথাটা ফাটিয়ে সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাই।তখন আমি কিছু করতে পারিনি নিরবে শুনে গেছি।এরপর থেকে সুযোগ খুঁজতে লাগলাম কি করে এইখান থেকে বের হওয়া যায়।আমার মেয়েটার জীবন আমার মত হোক তা আমি কোনোভাবেই হতে দিতে পারি না।

একদিন সুযোগ পেয়েও যাই।সর্দার মহিলা খুব অসুস্থ।সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত।আর ঠিক সেদিন রাতেই সেই সুযোগে আমি সেখান থেকে পালাই।রাস্তা কিছুই চিনি না,সাথে টাকাও নেই তারমধ্যে কোলে ছোট বাচ্চা।যেদিন এইখানে এসেছিলাম সেদিন আসার পথে যেটুকু দেখেছিলাম তাতে চিনে স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া খুব কষ্ট।এ কয়েকবছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে।তবুও অনুমান করে এগুতে থাকি।কিন্তু কিছুদূর যেতেই বুঝতে পারি আমি ধরা পড়ে গেছি।ঐখানে পাহারা দেয় কয়েকটা ছেলে তাদের দুজন আমাকে দেখে ফেলে।আমি প্রাণপণে ছুটতে থাকি।কিন্তু আমি ওদের নাগালের মধ্যে চলে আসি।কি করবো বুঝতে পারছিলাম।হাতের কাছে একটা ইট কুড়িয়ে নিয়ে একজনের মাথা বরাবর আঘাত করি।আরেকজন কিছুটা পিছিয়ে যেতেই আমি আবার ছুটতে থাকি উদ্দেশ্য স্টেশন।বুঝতে পারি সবাই আমার পালানোর কথা জেনে গেছে এখন আমাকে খুঁজতে অনেকেই পাঠাবে সর্দারনী।বহুকষ্টে স্টেশনে পৌঁছাতে পারলেও ট্রেন আসতে অনেক সময় বাকি।প্রায় ঘন্টাখানিক অপেক্ষা করতে হবে।এতক্ষণ সেখানে থাকলে ওরা আমাকে খুঁজে বের করতে পারবে।আমার তখন দিশেহারা অবস্থা।আমি আমাকে না তোকে নিয়ে ভাবছিলাম।তোকে কোনোভাবেই ওই অন্ধকার গলিতে রাখা যাবেনা।তোর জন্যে হলেও আমাকে কিছু একটা করতে হবে।তখনই দুজন মানুষের দেখা মিলে।স্বামী স্ত্রী মনে হচ্ছিল।পোশাক আশাকে বড়লোক মনে হলেও চেহারায় একটা মলিনভাব ছিল।সেদিন আমাকে ছুটতে দেখে উনারা দুজনেই এগিয়ে এসেছিলেন।তারা আর কেউ না।হিশাম আহমেদ ও তার স্ত্রী।তারাই সেদিন আমাকে নতুন এক জীবন এর পথ দেখান।

চলবে…………

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here