স্বর্ণাভ সুখানুভূতি। পর্ব-৬

0
2224

#স্বর্নাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব- ৬)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

কলিগ মিরাজের স্ত্রীকে রক্ত দিতে হাসপাতালে এসেছে জাওয়াদ। ইতঃপূর্বে কখনো কাউকে রক্ত দেয়নি ও। এসব মানবতার কাজ সচারাচর করা হয়না। স্ত্রীর ডেলিভারির সময় রক্তের প্রয়োজন হলে মিরাজ হন্য হয়ে রক্ত খুঁজে, ব্লাড ব্যাংকে রক্ত নেই। দিশেহারা মিরাজের হঠাৎ মনে পড়ল জাওয়াদের কথা। জাওয়াদের রক্তের গ্রুপ মিলে তার স্ত্রীর সাথে। তড়িৎ কল দিয়ে অনুরোধের ঝুলি খুলে বসল। এত অনুরোধ ফেলতে পারল না জাওয়াদ। বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে হাসপাতালের জন্য রওনা হলো। হাসপাতালে পৌঁছে রিসেপশন পেরিয়ে যাওয়ার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত একটা মুখ চোখে পড়ল। নাজমুল সাহেব! উনি এখানে! কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে নিজেই কথা বলল। নাজমুল সাহেব জানালেন, ভাগ্নি নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। ভাগ্নি! কোন ভাগ্নি! রাফা নয়তো!

কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল জাওয়াদের। খানিক পরে আবার ভাবল, রাফা কদিন আগেই বাবার বাসায় ফিরে গেছে, এখানে কিভাবে আসবে! হয়তো অন্য কোন ভাগ্নি হবে। মনকে কোনরকম বুঝ দিয়ে সামনে পা বাড়াল। কিন্তু দু’কদমেই মনটা অবুঝ হলো, যুক্তিরা হার মানল। যাচাই না করে শান্তি মিলবে না ঢের বুঝতে পারল। ততক্ষণে নাজমুল সাহেব হাটা ধরেছেন। জাওয়াদ চুপিসারে পিছু নিল তার। নিদিষ্ট কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালেন নাজমুল সাহেব। দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলেন। দরজার পর্দা সরে গেল। দৃশ্যমান হলো অপ্রত্যাশিত মুখ। সন্দেহরা ঠিক উপাধি পেল। দূরে দাঁড়িয়ে জাওয়াদ দেখল প্রেয়সীর রুগ্ন চেহারা। হাতে ক্যানলা লাগানো, স্যালাইন চলছে। আধশোয়া হয়ে বসে আছে মুশরাফা। চোখ বন্ধ, প্রথমদিন দেখা সেই লাজুক চেহারাটায় অসুস্থতার চাপ।

দরজা বন্ধ হলো, পর্দাও আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল। ভেতরকার দৃশ্য আর দেখা গেল না। জাওয়াদ স্থবির দাঁড়িয়ে রইল বাইরে। উৎফুল্ল মনে এসেছিল হাসপাতালে। প্রেয়সীর পাণ্ডুবর্ণ মুখ দেখে উৎফুল্লতা বিলীন হলো। কপালে গাঢ় চিন্তার ভাজ পড়ল, চোখে ভেসে উঠল উদ্ধিগ্নতা, মনটায় ছুঁলো একরাশ অস্থিরতা। হলো কী মেয়েটার? এই অবস্থা কেন? চেহারা দেখে মনে হচ্ছে একটু বেশি অসুস্থ, কঠিন রোগ হলো না তো! বুক কাঁপল জাওয়াদের। এমন কিছু না হোক। অদ্ভুত টান অনুভব করল সে। কদম বাড়াল সে, কোন বাহানা দিয়ে নাজমুল সাহেব থেকে খোঁজ নিবে। হঠাৎ কোথাথেকে মিরাজ এসে হাজির হলো। তার স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর, এখনি রক্ত দেয়া প্রয়োজন। প্রেয়সীর খোঁজ নেয়ার সুযোগ ছিনিয়ে নিয়ে জাওয়াদকে দেখে মাত্রই টেনে নিয়ে গেল রক্ত দেয়ার জন্য।
যেতে যেতে উদ্ভ্রান্ত চোখে একবার চাইল সেই কেবিনটার দিকে। ভেবে রাখল, রক্ত দিয়ে ফিরে এসে খবর নিবে প্রেয়সীর।

মিরাজের স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন। বেশ ভেঙে পড়েছে মিরাজ। কলিগের অবস্থা দেখে জাওয়াদ রক্ত দিয়ে সরে আসতে পারল না। মিরাজকে সঙ্গ দিল, সান্ত্বনা দিল। ঘন্টা তিনেক পরে ডাক্তার যখন অবস্থা বিপদমুক্ত জানালেন, তখন সে কলিগ থেকে বিদায় নিল। দ্রুত বেগে এগিয়ে এল মুশরাফা থাকা কেবিনে। দরজাটা খোলাই পেল। কিন্তু ভেতরে কারো দেখা পেল না, রোগীর সিটটাও খালি। নার্সকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, রিলিজ দেয়া হয়ে তাদের। বাড়ি ফিরে গেছে।

অস্থিরতা বাড়ল। তৃষ্ণার্ত মনটা ব্যাকুল হলো, একবার প্রেয়সীকে দেখার, অবস্থা সম্পর্কে জানার। বাইরে এসে খুঁজল, দেখা পাওয়া যায় কি না। নাহ, সিড়ি, গ্রাউন্ড, গেইটে খুঁজে ও দেখা মিলল না। চলে গেছে।
রক্ত যাবার কালে দুর্বলতা ছুঁড়ে গেছে। প্রেয়সীর অস্থিরতায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও নেয় নি। রক্ত দিয়েই হাটা ধরেছে। এখন শরীরটা নেতিয়ে আসছে। একটু বিশ্রাম না করলেই নয়। জাওয়াদ হতাশায় গা মাড়িয়ে বাসায় ফিরল। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই বুঝতে পারল, শরীরের দূর্বলতার মতো মনের দূর্বলতা সমান তালে বাড়ছে। এত টান আসছে কোথা থেকে! মাত্র দু’বার দেখা হয়েছে। না প্রেম, না আলাপ! নিজের মনের অবস্থায় নিজেরই অবাক লাগল জাওয়াদের। সইতে না পেরে অনিককে ডেকে আনল বাসায়।

অনিক এসে বন্ধুকে দেখে হেসে বলল,
‘একটু রক্ত দিয়েই ফিট! শালা তুই ভীতু।’

বন্ধুর কৌতুকে গা মাড়াল না জাওয়াদ। চিন্তিত মনে জিজ্ঞেস করল,
‘রাফা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কী হয়েছে ওর? তুই কি জানিস কিছু?’

অনিক বিস্ময়ের সুরে বলল,
‘বলিস কী! আমি জানি না। নাজমুল আংকেলের সাথে তিন দিন আগে দেখা হয়ছিল। আর দেখা হয়নি। তুই জানলি কিভাবে?’

জাওয়াদ বিস্তারিত জানাল বন্ধুকে। তারপর অনুরোধের সুরে বলল,
‘ তোর সাথে তো রাফার মামার সাথে বেশ সখ্যতা আছে। তুই একটু খোঁজ নিয়ে দে। ভীষণ অসুস্থ দেখাচ্ছিল ওকে। আমার চিন্তা হচ্ছে।’

বাস্তবিকভাবে জাওয়াদের চোখে মুখে চিন্তার পসরা বসেছে। এত চিন্তা ওর কোন গার্লফ্রেন্ডের প্রতি ছিল? উত্তরটা নেতিবাচক। জাওয়াদ প্রতি রিলেশনশীপে ছিল দায়সারা। মেয়েরা বেশি এক্টিভ ছিল। অনিকের মনে আছে, একবার জাওয়াদের একটা গার্লফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হলো। আইসিইউতে রাখা হলো তাকে। বাঁচা-মরা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাওয়াদ মেয়েটার বান্ধবীর কাছে একবার কল দিয়ে খবর নিয়েছে, তারপর নাকে তেল দিয়ে বাসায় পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে। তখন ও অনিক ওর মুখে এমন চিন্তা দেখেনি। এবার বোধহয় সত্যি সিরিয়াস সে। অনিক হাসল মুখ চেপে। কৌতুকের সুরে বলল,

‘মামা, তুই তো একবারেই ডুবছোস।’

জাওয়াদ করুণ সুরে বলল, ‘ দেখা হলো মাত্র দু’বার। প্রেম ও হলো না। তবু ও এত টান আসছে কোথা থেকে আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা। ‘

অনিক শব্দযোগে হেসে ফেলল। জাওয়াদ গম্ভীর হলো। বলল,
‘তুই এখন বাসায় যা। রাফার মামার সাথে কথা বলে আমাকে জানাবি। ‘

‘তোর মামা শ্বশুর, তুই গিয়ে কথা বল। আমি এর মাঝে নেই।’ বিছানায় গা এলিয়ে দিল অনিক। জাওয়াদ বিরক্তভরে বলল,
‘আমি যেতে পারলে তোকে বলতাম না। তুই যা। বন্ধুর জন্য একটা কাজ করতে পারবি না? বন্ধু নামে কলঙ্ক তুই।’

‘আমার লাভ কী এতে?’ দায়সারা হয়ে বলল অনিক। ওর উঠে যাওয়ার কোন লক্ষন দেখল না জাওয়াদ। রেগে বলল,
‘আগামী এক মাসে তোর চায়ের বিল আমার। এবার অন্তত যা!’

অনিক হেসে উঠে দাঁড়াল, ‘এমন ইনফরমেশনের সুযোগ প্রতি মাসে এলে মন্দ হয় না। চায়ের টাকা দিয়ে আমি বাড়ি করে ফেলতে পারব বছরখানেকেই। ‘

‘তুই যাবি?’ আকস্মিক রেগে গেল জাওয়াদ। দরজার দিকে পা বাড়াল অনিক। যেতে যেতে বলল,

‘যাচ্ছি। তুই বেটা স্বার্থপর। নিজের কাজে ডেকে এনেছিস, এক কাপ পানি ও দিস নি।’

দরজা অবধি গিয়ে থেমে গেল ও। পিছন ফিরে বলল,

‘ শুধু ভাবি খোঁজ নিব? না কি ফ্রিতে তাজা তাজা সমন্ধ পরিবেশন করব?’

জাওয়াদ ভাবল খানিক। তারপর বলল,
‘নাহ, এখন বিয়ে কথা বলিস না। রাফা অসুস্থ, প্রেশার পড়বে ওর উপর। সপ্তাহখানেক ওয়েট কর। ও সুস্থ হোক। তারপর বলা যাবে ।’

অনিক আবার হাসল। কৌতুকের সুরে বলল,
‘ভাবির প্রেমে পড়ে তুই মানুষ হতে শুরু করেছিস।’

বহু কসরত করে অনিক মুশরাফার খবর জানতে পারল। নাজমুল সাহেব বিস্তারিত জানালেন না। শুধু জানালেন টাইফয়েড হয়েছে। বন্ধুকে ফোনে জানাতেই অপাশ থেকে অস্থির নিঃশ্বাস, আতঙ্কিত স্বর ভেসে এলো। অনিক চাপা হাসল। যত দ্রুত সম্ভব এ যুগলকে এক করতে হবে। জাওয়াদের অনুভূতির উত্তপ্ততা কতক্ষণ স্থায়ী থাকে তার নিশ্চয়তা নেই। এই এলো, এই গেলো ধরণের। অনুভূতি প্রখর থাকতেই বিয়ে দিতে হবে। আকস্মিক বেঁকে গেলে সমস্যা।

ভাবনা মাফিক সপ্তাহ খানেক বাদেই নাজমুল সাহেবকে ছাদে ডেকে নম্রতার সাথে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করল। নাজমুল সাহেব শুনেই গম্ভীর হলেন । ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। অনিক জানাল। তারপর নাজমুল সাহেব নিজ ভাগ্নির পর্দার ব্যাপার উপস্থাপন করলেন। তিনি জানালেন, তিনি রাফার ভাগ্নির জন্য এমন কাউকে চান যে রাফাকে আগলে রাখবে, তার দ্বীনি ব্যাপারে বাধা দিবে না বরং সাহায্য করবে, উৎসাহ দিবে। সম্মান করবে, সুখে রাখবে।

অনিক আশ্বাস দিল, তার বন্ধুটি রাফাকে কোন প্রকার অসুবিধা ভোগ করতে দিবে না, সর্বাবস্থায় আগলে রাখবে। রাফা জাওয়াদের কাছে ভালো থাকবে। নাজমুল সাহেব পাত্রের সাথে দেখা করতে চাইলেন। সময়ক্ষণ ঠিক করে অনিক দুজনকে সাক্ষাৎ করার এক রেস্টুরেন্টে। পাত্রের স্থানে জাওয়াদকে দেখে চমকালেন নাজমুল সাহেব। তাকে ছাতা দেয়া সেই অমায়িক ছেলেটা পাত্র! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আরে তুমি!’

বিস্ময়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না। জাওয়াদ ও না চেনার ভান করল, ‘আংকেল আপনি!’

অনিক ও মুখে সন্দেহের পসরা সাজিয়ে বলল, ‘আপনারা একে অপরের পরিচিত? ‘

নাজমুল সাহেব হেসে বললেন, ‘দু’বার দেখা হয়েছে।’ পাত্র হিসেবে জাওয়াদকে বেশ কিছুক্ষণ জেরা করলেন নাজমুল সাহেব। নানা রকম প্রশ্ন করলেন। জাওয়াদ বিনম্র স্বরে জাবাব দিল।

নাজমুল সাহেব বললেন,
‘আমার ভাগ্নিটা ধার্মিক। ধর্মের বিধিনিষেধ মেনে চলতে পছন্দ করে। পর্দায় থাকে সবসময়। তুমি কি ওর এই জীবনধরণ সমর্থন করবে? কোন প্রকার অসম্মান বা বাধা দিবে না তো! তেমন একটা পরিবেশ গড়ে দিতে পারবে?’

জাওয়াদ আত্মবিশ্বাসের সাথে আশ্বাস দিল,
‘আমার বাসায় ওর কোন সমস্যা হবে না। আমি ওর খেয়াল রাখব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনার কানে কোন অভিযোগ আসবে না।’

ছেলেটার সাথে এই নিয়ে তিনবার দেখা। কী অমায়িক ব্যবহার! ভদ্রতা নজরকাড়া। পাত্র হিসেবে মন্দ নয় ছেলেটা। রাফাকে ভালো রাখবে, সম্মান দিবে। আর যাই হোক কষ্ট দিবে না। মনে একটা বিশ্বাস জন্ম নিল নাজমুল সাহেবের মনে। তিনি তৎক্ষনাৎ কিছু বললেন না। শুধু বললেন,
‘আমি রাফার মতামত নিয়ে জানাব।’

কথার ইতি টেনে বাসায় ফিরলেন। বোন, ভগ্নিপতির উপর বেজায় রাগ নাজমুল সাহেবের। মুশরাফাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরদিন বোনকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন। মেয়ের এহেন অবস্থা শুনে ও দিল ঘামল না লায়লার। গম্ভীরমুখে বললেন,
‘ যে মেয়ে বাবা মার মান সম্মান ডুবিয়ে মারে । তেমন মেয়ের বেঁচে থাকা উচিত না। মরুক , আপদ বিদায় হবে।’ তড়িৎ কল কেটে দিলেন। না কেউ দেখতে এলেন, আর না কেউ কল দিয়ে খবর নিলেন। মুশরাফাকে তাদের পরিবার থেকে ছাটাই করে দিয়েছে যেন। সেই থেকে বোনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন নাজমুল সাহেব। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাফাকে নিজে দেখে সুপাত্রের হাতে তুলে দিবেন। বিয়ে ঠিক করে বোনকে একটা কল দিয়ে জানাবেন, আসলে আসবে , না আসলে একাই বিয়ে দিবেন। রাফার জন্য তার বাবা মার আর দরকার নেই। তিনি আজীবন খেয়াল রাখবেন। রাগটা এখনো আছে। তাই সমন্ধের কথা বোনকে জানালেন না। আগে রাফার সাথে কথা বলার মনস্থির করলেন।

মুশরাফা সবে রাতের খাবার খেয়ে রুমে ফিরেছে। নাজমুল সাহেব দরজায় দাঁড়ালেন। নক করে অনুমতি চাইলেন। মুশরাফা সাদরে আমন্ত্রণ জানাল। নাজমুল সাহেব নিজে খাটে বসলেন। ভাগ্নিকে ও পাশে বসালেন। আলতো স্বরে বললেন,
‘তোর বিয়ের দায়িত্বটা যদি আমি নিই, তবে তোর আপত্তি থাকবে?’

মুশরাফা বিস্ময়ের সাথে তাকাল। তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল না। খানিক ভেবে বলল,
‘ আপত্তি থাকবে না। আমার বিশ্বাস তুমি ভালো কাউকে আমার জন্য বেছে নিবে। ‘

নাজমুল সাহেব হাসলেন। অনিকের দেয়া প্রস্তাব উপস্থাপন করলেন,
‘আমার কাছে একটা সমন্ধ এসেছে। ছেলে চাকরিজীবী। দেখতে শুনতে ভালোই। ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলেছি ওর সাথে। ভদ্র, নম্র, অমায়িক ব্যবহার। তোর জীবনধরণ ও ওকে জানিয়েছে। ওর আপত্তি নেই। বরং আশ্বাস দিয়েছে, ওখানে তোর কোন প্রকার সমস্যা হবে না। এই প্রস্তাব সম্পর্কে তোর মতামত কী?’

মুশরাফা স্পষ্ট জানাল, ‘ দেখতে কেমন সেটা মূখ্য নয়, তার ব্যক্তিত্ব কেমন সেটা মূখ্য বিষয়। সে যদি উত্তম চরিত্রের হয়। আমাকে উত্তম পরিবেশ, এবং উত্তম জীবন পরিচালনার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে আমার আপত্তি নেই। তুমি আগাতে পারো।’

নাজমুল সাহেব প্রসন্ন হাসলেন। বললেন,
‘আমার কেন যেন মনে হলো, জাওয়াদের কাছে তুই ভালো থাকবি। আমি কি ওদের আসতে বলব? তুই বিয়ের আগে দেখা করবি?’

মুশরাফা ভেবে দেখল, পাত্রের সাথে দেখাদেখি পর্ব সম্পর্ক ইসলাম কী বলে? পাত্রপক্ষের ছেলেদের মধ্যে শুধুমাত্র পাত্রের সাথে দেখা দেয়া জায়েজ। সেজেগুজে ও নিজেকে উপস্থাপন করা যাবে, কেউ একজনকে মাঝে রেখে আলাপ সারাও যাবে। মন্দ নয়, পাত্র সম্পর্কে কিছু ধারণা ও দরকার। মুশরাফা বলল,
‘ছেলেদের মধ্যে শুধুমাত্র পাত্রের সাথে দেখা করতে পারব। আর কোন ছেলে না। মহিলাদের সমস্যা নেই। এগুলো মাথায় রেখে আসতে বলো। ‘

নাজমুল সাহেব খুশি হলেন। উঠে দাঁড়িয়ে ভাগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বললেন,
‘আমি আগামী শুক্রবার আসতে বলব ওদের। তুই মানসিক ভাবে প্রস্তুত হ।’

আনন্দিত মুখে স্ত্রীর সাথে আলাপ করলেন। তারপর অনিককে পাত্রী দেখার আমন্ত্রন জানালেন তার বাসায়। সেই সাথে মুশরাফার বলা শর্তের কথাও জানালেন। অনিক আশ্বাস দিল, অন্যথায় হবে না। খবরটা জাওয়াদের কানে যেতেই চাপা আনন্দ কাজ করল তার মাঝে। অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল শুক্রবারের। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এলো শুক্রবার। পাত্রপক্ষ এসে হাজির হলো নাজমুল সাহেবের বাসায়। মুরুব্বিরা পাত্রী দেখার পর পাত্র পাত্রীর আলাদা কথা বলতে দেয়া হলো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here