#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_07
#writer_srabon
সকালে আমার তাড়াতাড়ি ঘুম থেলে ওঠার নেই। তার উপরে আবার ক্লান্ত ছিলাম।তাই সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেলে ওঠার কোন প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু সকাল সকালে অনেক শব্দের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল।
আমি চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে অনেক অবাক হই। আর সাথে অনেক রাগ হয়।।
আমার সামনে আমার পরিবারের মোটামুটি সকলেই
দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আম্মুকে দেখতে পাচ্ছি না।
কাল রাতে দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর মুখেও মাস্ক নেই। তাই হয়তো সকলে আমাকে চিনে ফেলেছে।
আর এক সময় না একসময় তো আমাকে সকলের সামনে আসতেই হতো…!
পুরো রুমে কোন শব্দ নেই.. আমি কাউকে কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
ওয়াশরুমে এসে ভাবতে লাগলাম,,,
এখন কি আব্বু আমাকে এই বাড়িতে থাকতে দিবে.?? নাকি এখনো রেগে আছে আমার উপরে..?
জানি না।
কিন্তু আমি আর কখনো এই বাড়িতে থাকব না। এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি শুধু আংকেল আন্টির জন্য।
না হলে কোন দিন আমি এই বাড়িতে ফিরে আসতাম না।
সেই দিন গুলোর কথা আমার এখনো মনে আছে। আর হয়তো কোন দিন আমার মন থেকে ওই দিন গুলো মুছতে পারব না।
ইগো কি শুধু তাদের আছে.? আমার নেই..?
আমার তখন কোন চাকরি ছিল না। না ছিল তেমন কোন সেভিংস এর টাকা। তাহলে তারা কি করে পারল আমাকে বাসা থেকে যেতে দিতে.? কেন আমার রাস্তা কেউ আটকায় নেই..?
এগুলো ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।
কিন্তু এখনো সবাই আমার রুমে দাড়িয়ে আছে। এরা কি করতে চাইতেছে কিছুই বুঝতেছি না।
হটাৎ করেই বড় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,,
— ভাই কেমন আছিস…?(বড় ভাইয়া আরিফ)
—……. (চুপ)
— কিরে কথা বলবি না আমার সাথে..??(আমার কাছে এসে)
—…….. (চুপ)
এইবার ভাইয়া আমার কাধে হাত রেখে বলল,,,
— এখনো রাগ করে আছিস..? দেখ, আগে যা হয়েছে সব কিছু ভুলে যা। এখন নতুন করে সব কিছু শুরু কর..!(ভাইয়া)
আমি ভাইয়ার কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না।
ভাইয়ার হাত আমার কাধ থেকে নামিয়ে দিয়ে বললাম,,,
— ‘ভুল’ মাত্র দুইটা শব্দ। শব্দটা যেমন খুব সহজ, ঠিক তেমনে ভুলে যাওয়াটাও হয়তো অনেক সহজ। তাই না..? কি করে.?? আমার তো তোমাদেরকে দেখলেই সেই দিনটার কথা মনে পরে যায়। যখন আমি এই বাসার সামনে দাড়িয়ে বলেছিলাম,, সমাজ কি বলল, সেইটা আমার দেখার দরকার নেই। আমি শুধু আমার ভালোবাসার মানুষেকে পেলেই খুশি। কিন্তু না,,তোমাদের তো সমাজে একটা ভালো সম্মান আছে। তাহলে কেন শুধু শুধু বাসার ছোট ছেলের জন্য সেই সম্মান মাটিতে মিশতে দিবে..? আমি এত দিন তোমাদের কাছে ছিলাম না। তোমরা তো দিব্যি সুখেই আছ। পরিবারে নতুন সদস্যও এসেছে। তাহলে কেন শুধু শুধু আমাকে এর মাঝে টানতেছ.?? আমি আমার মতোই ভালো আছি। হ্যাঁ খুব ভালো আছি। (আমি)
আমার এমন কথা শুনে আব্বু এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। মুখটা কালো করে মাথা নিচু করে চলে গেল। শিমলার দিকে চেয়ে দেখি চোখে হালকা পানি। কেন সেটা আমার জানা নেই।।
— ভাই,,,আমি জানি আমরা খুব অন্যায় করেছি তোর সাথে। কিন্তু বিশ্বাস কর…..(ভাইয়াকে থামিয়ে)
— থাক আর কিছু বলার দরকার নেই..!(আমি)
— কিন্তু…..
—আমি কিছু শুনতে চাই না। আরে,,ভয় নেই এখানে তোমাদের বাসায় আমি চিরকালের জন্য থাকতে আসি নাই। যাস্ট কিছুদিন থেকেই চলে যাব। (আমি)
— মানে..?? তুই কি বলতে চাইতেছিস.?(সিয়াম ভাইয়া)
— আমি স্পষ্ট ভাবে বলতেছি,,, এখানে আমি থাকতে আসি নাই। শুধু মাত্র স্পর্শির কারনে এসেছি। আর কোন কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না।(আমি)
— না,,তুই কোথাও যেতে পারবি না।। (ভাইয়া)
আমার মাথাটা হটাৎ করেই প্রচুর গরম হয়ে গেল।
আমি কিছু না বলেই আমার ব্যাগের কাছে চলে গেলাম। এরপর আমার বাইরে থাকা শার্ট-প্যান্ট ব্যাগে গুছাতে লাগলাম।।
ঠিক তখনই স্পর্শি আমার কাছে চলে এলো..
— এই কি করতেছিস তুই..?? ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাবি.??(স্পর্শি)
— ঢাকা যাব..! আর এক মুহুর্তের জন্যও এখানে থাকতে পারব না।(আমি)
— ব্যাগ গুছাতে হবে না…! আমরা সবাই নিচে যাচ্ছি। তোকে আর কেউ ডিস্টার্ব করতে আসবে না। এইবার ঠিক আছে..?(স্পর্শি)
— মনে থাকে যেন…?(আমি)
— আচ্ছা….!!!!
এরপর স্পর্শি সকলে নিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি বিছানায় বসে পরলাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা গান চালিয়ে শুনতে লাগলাম। আমার মাথা যখন অনেক বেশি গরম হয়ে যায় তখন গান শুনলে আমার মাথা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে যায়।
————————————
অপরদিকে স্পর্শি সকলকে নিয়ে নিচে চলে আসার পরে,,
— স্পর্শি তুমি আমাদের এখানে নিয়ে এলে কেন..?
— উফফ,,,তোমদের আগেই বলেছিলাম,, ওকে বেশি রাগান্বিত করবে না। সবেমাত্র একদিন হলো এখানে এসেছে। আর এই একদিনেই এত কথা বলার কোন দরকার আছে..?(স্পর্শি)
— হুম,,,বউমা তুমি ঠিক বলেছ..!!ওকে একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। অনেক অভিমান করে আছে আমাদের উপরে। ওর আম্মু যখন ওর সামনে যাবে তখন সব কিছু ভুলে যাবে। (আব্বু)
— হুম,,,বুঝতে পেরেছি..! কিন্তু ও আগে তো এমন ছিল না। (ভাইয়া)
— ছিল না। তোমরা ওকে বদলাতে বাধ্য করেছ। (আম্মু তার রুম থেকে বের হয়ে)
— একি আম্মু,,তুমি রুম থেকে বেরিয়েছ কেন.? তোমার না রাতে শরীরটা খারাপ করেছে। (ভাইয়া)
— আমি কি করে রুমে বসে থাকব..? কত দিন আমার ছেলেটাকে দেখি না। বড় বউমা আমাকে একটু উপরে নিয়ে চল তো..! আমি ওর সাথে কথা বলব। (আম্মু)
— আম্মু,,,শ্রাবন তো অনেক রেগে আছে। এখন যাওয়ার দরকার নেই। (ভাবি)
— সেইটা তোমাদের দেখার দরকার নেই। আমার ছেলেকে আমি চিনি। আমার উপরে ও কখনোই রেগে থাকতে পারবে না। (আম্মু)
— আচ্ছা,,,, চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি…!(ভাবি)
————————————
রুমে বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছি..! আসুন এই ফাকে আমার অতীতের বাকি অংশ টুকু আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেলি…!
#অতীত
আমার আর শিমলা আপুর প্রেম বেশ ভালোই চলতেছিল এই অল্প দিনেই।
কিন্তু মাঝখানে ওই ব্যাটা অনেক ঝামেলা করতেছিল।
মানে যার সাথে আপুর বিয়ে ঠিক করেছিল খালু..!
তাই আমি তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অসীম কে ফোন লাগিয়ে আমার কাছে আসতে বলি।
[অসিম আমার আন্ডারের সব ছেলেপুলেদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল আমার।]
— ভাই,,এত জরুরি তলব কিসের..?(আসীম)
আমার মোবাইল থেকে একটা পিক বের করে আসীমকে দেখাই।।
— ভাই কে এইডা..??(অসীম)
— আমি এতকিছু জানি না। এর সাথে শিমলার বিয়ে ঠিক করেছে খালা,খালু..!(আমি)
— ভাই,,বুঝতে পেরেছি। আপনার কোন চিন্তা করার দরকার নেই৷ ওর ব্যবস্থা আমি করতেছি। এই অসীম থাকতে ভাবিকে এত সহজে কেউ বিয়ে করতে পারবে আপনি ভাবলেন কি করে..?। (অসীম)
— বেশি কিছু করার দরকার নেই৷ শুধু একটু ভিয় দেখালেই হবে..! সালারে দেখেই বোঝা যায় বল একটা..! (আমি)
— আচ্ছা ভাই,,আসি..!
এরপর আসীম চলে গেল। আর আমি খুশিতে খুশিতে বাসায় চলে যাই।।।
এবং শিমলা আপুকে ছাদে আসতে বলি মেসেজ দিয়ে।।
— ওই,,কি হয়েছে..? এই সময়ে ছাদে ডাকলি কেন..(শিমলা)
— আপু,,,ওই ব্যাটার ব্যবস্থা করে এসেছি আমি..! এখন তোমার আর আমার মাঝে কেউ বাধা হয়ে থাকবে না। (আমি)
এরপর আপুকে সবটা খুলে বললাম।।।
— হুম,,,ভালো করেছিস..! তবে বেশি পাওয়ার দেখাবি না। এটা কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ না। আর হ্যাঁ,, এই বছরই কিন্তু শেষ। এরপর আর কোন রাজনীতির ভিতরে যেতে পারবি না তুই৷ (আপু)
— হুম,,,তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সব কিছুই ছেড়ে দিতে পারি..!(আমি)
— ঢং…!!!
এরপর শিমলা নিচে চলে গেল।।।এইভাবে সকাল পেরিয়ে রাত হয়ে যায়।
আমরা সকলে মিলে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। আর মজা করতেছিলাম। তখনই খালুর ফোনে একটা কল আসে। আর মুহুর্তেই বাসাটা নিরব হয়ে গেল৷
আমরা সকলে মিলে খুলনা সি.টি হাসপাতালে চলে গেলাম।
আর সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম ছেলেটার(যার সাথে শিমলার বিয়ে ঠিক হয়েছিল) অবস্থা অনেক খারাপ৷ অনেক জোরে জোরে মেরেছে কেউ। মাথা ফেটে গেছে।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এটা কার কাজ।
আমি আপুকে কিছু বলতে যাব তার আগেই আপু আমার সামনে চলে এলো,,আর এসেই আমার গালে ঠাসসসসস ঠাসসসস করে তিন চারটা থাপ্পড় মেরে দিল।।
আমি মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলাম। ফ্লোরে আমার ঠোঁটের রক্ত পরতেছে। কিন্তু আপু তবুও কিছু বলল না।অন্য কোন সময় হলে আপু শিওর পাগল হয়ে যেত।।
আপু হটাৎ করেই বলতে লাগল,,,
— তোর সাহস তো কম না। তুই একটা লোককে নিজের ক্ষমতার জোরে কুত্তার মতো মেরেছিস। এইটা তোর ভালোবাসা..? আমি তোকে কতবার বলেছিলাম যে এমন কিছু না করতে। আমি তো ভেবেছিলাম যে,,আব্বুকে আজ বা কালকে তোর আর আমার বিষয়ে কথা বলব। কিন্তু তুই তোর আসল রুপ দেখিয়ে দিলি। সকলের কাছে আমাকে হারিয়ে দিলি। আমিও মনে মনে তোকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম। কিন্তু আর না। তুই একটা রাস্তার খারাপ ছেলের থেকেও খারাপ।(শিমলা)
— আপু তুমি বিশ্বাস করো আমি এই ব্যাপারে….(আমাকে থামিয়ে)
— চুপ…! আর একটাও কথা বলবি না তুই। ওই যে দেখতে পাচ্ছিস ছেলেটা বিছানায় অক্সিজেন মাক্স দিয়ে শুয়ে আছে। আমি ওকেই বিয়ে করব..! আর তোকে জানি আমি আমার দুচোখের সামনে না দেখতে পাই৷ (শিমলা)
— আপু,,,তোমাকে না পেলে আমি মরে যাব..! প্লিজ… (আমি)
শিমলা আপু আমার সামনে থেকে চলে গেল।আমি তার পিছে যাব তার আগেই খালু এসে আমার গালে ঠাসসসসস করে একটা চর দিয়ে বসল।
এত সময় খালা-খালু আমাদের কথা সবটা শুনেছে।
আর তাদের বুঝতে বাকি নেই যে আপু কি বলে গেল।
এরপর খালু অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিল।খালা তো একটা কথারও প্রতিবাদ করে নেই। শুধু কান্না করতে করতে শুনেছে। এরপর একসময় খালু আমাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।
আমার কাছে সবটা একটা বাজে সপ্নের মতো লাগতেছিল। কি থেকে কি হয়ে গেল আমি কিছুই বুঝতেছিলাম না। এই সব কিছুর জন্য একমাত্র অসীম দায়ী।
আমার মন ভিষণ খারাপ ছিল৷ তাই অসীমকে আর ফোন দিলাম না।
একটা রিকশা নিয়ে ওই রাতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজালাম।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আব্বু এসে দরজা খুলে দিল।
আমি অনেক অবাক হলাম। কারন প্রতিদিন ভাবি/আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়।কিন্তু আজকে আব্বু।
আমি বাসার ভিতরে প্রবেশ করে আরো অবাক হই।
বাসার সব লোকজন ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
আমি জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই আমার গালে
ঠাসসসস করে একটা চর বসিয়ে দেয়………..
.
.
.
.
#চলবে….???