সিনিয়র খালাতো বোন part-12

0
1386

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_12
#writer_srabon

এরপর অসীমের সাথে কিছু সময় কথা বলে ওকে বিদায় জানিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে চলে এলাম।
বাইরে এসেই দেখি বাসার পাশের আপু আর রনি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শিমলাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
আমি চিন্তা করতে করতে রনির কাছে চলে গেলাম।।

— আপু শিমলা কোথাও…?(আমি)

— কেন..? ও তো তোমাকে ডাকতে সেই কখন কলেজের ভিতরে ঢুকেছে। (আপু)

আমি মনে ভাবলাম এর মানে আমি ওকে বাইরে আসতে বলার পরেও বাইরে আসে নাই। এর মানে ও কি সব শুনে ফেলল নাকি..? না না তা কি করে হবে.? হয়তো অন্যপাশে ছিল। যাই হোক আমার এত কিছু ভেবে লাভ নেই।

— ওই তো ফুপি চলে এসেছে। (রনি)

— আচ্ছা,,শ্রাবন তোরা বাসায় যা। আমার একটা জরুরি কাজ পরে গেছে। আমি পরে বাসায় যাব। (আপু)

— আচ্ছা আপু..

— সময় পেলে আসিস আমাদের বাসায়। তোর ফেবারিট লেবুর চা বানিয়ে খাওয়াবো। (আপু হেসে)

— তৈরি থেকো..!(আমি)

এরপর আপু চলে গেল। আমি রনিকে বললাম,,

— ওই পিচ্চি চল বাসায় যাই। অনেক খেয়েছিস। এত খেতে থাকলে মুটকি হয়ে যাবি। (আমি)

— চাচ্চু খেতে পারাটা হচ্ছে একটা ট্যালেন্ট। যেটা সবার থাকে না। আর আমার আছে তাই আমি শুধু খাই। (রনি)

— শুধু পাকা পাকা কথা..!..

এরপর আমি বাইকে করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। শিমলা বাসায় যাওয়া পর্যন্ত মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বের করে নাই।বিষয়টি আমার কাছে কেমন যেন লাগল। এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বাইক চালিয়ে বাসায় চলে এলাম।।

বাসায় এসে মোবাইলে খেয়াল করে দেখলাম ২ টা বেজে গেছে।
আমি বাইক রেখে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে এলাম।
রুমে এসেই ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
শাওয়ার নিয়ে একটা তোয়ালিয়া পরে বাইরে বের হলাম।
কিন্তু বাইরে বেরিয়ে আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি বেধে গেল।
কারন বাইরে মানে আমার রুমে শিমলা বসে আছে। আমাকে এইভাবে দেখেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বললাম,,,

— কারো রুমে প্রবেশ করলে অনুমতি নিয়ে এরপর ঢুকতে হয়। (আমি)

— সরি,,,আসলে ভাবি তোমাকে খাবার খেতে ডাকতেছে। আমি তো মাত্র এটাই বলতে এসেছিলাম। কিন্তু রুমে এসে দেখি তুমি নেই। তাই তো এখানে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম।। (শিমলা)

— এত কিছু বলার দরকার নেই। নেক্সট টাইম যেন এইরকম ভুল আর না হয়। (আমি)

— হুম …!!!

এইটা বলেই শিমলা আমার রুম থেকে চলে গেল।
আমি শার্ট-প্যান্ট পরে নিচে চলে এলাম।

খাবার টেবিলে এসে দেখি আম্মু,ভাবি,স্পর্শি,শিমলা আর আব্বু একসাথে টেবিলে বসে আছে।

আমাকে দেখেই ভাবি তার চেয়ার থেকে উঠে আমাকে খাবার বেড়ে দিল।
আমি একটা চেয়ারে বসে চুপচাপ খেতে লাগলাম।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে আব্বু বলে উঠল,,

— শ্রাবন আমরা সকলে মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার ভালোর জন্য। (আব্বু)

আব্বুর কথায় আমি কান না দিয়ে খেতে লাগলাম।
আব্বু আবার বলল,,,,

— আমি আমার ভুল বুঝত পেরেছি। তাই আমি চাই যে, খুব তাড়াতাড়ি তোমার আর শিমলার বিয়েটা দিয়ে দিতে। এই ব্যাপারে সমাজের কে কি বলল এটা দেখার সময় আমার নেই। আগে আমার কাছে আমার ছেলে তারপরে বাকি সব। (আব্বু)

আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম,,,

— এখনো আপনার পুরনো স্বভাব পরিবর্তন করতে পারলেন না..? মানে আপনি যেটা ঠিক মনে করবেন সেটাই ঠিক। আর বাকি সকলের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। (আমি)

— আমি বিষয়টি এইভাবে বলতে চাই নি। আমরা সবাই জানি তুমি আর শিমলা দুজন দুজনকে একে অপরকে ভালোবাস। তাই আমরা খুব শীগ্রই তোমাদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই। (আব্বু)

— এত কিছু ভাবার দরকার নেই। আমি আর ৫ দিন পরে ঢাকায় চলে যাব। এই সব বিয়ে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমার কাছে নেই। (আমি)

— মানে কি শ্রাবন..?(ভাবি)

— প্লিজ,,,,এই বিষয়ে আর কিছু না বললে খুশি হব। (আমি)

— দেখ,,বাবা অনেক তো হলো,,এইবার সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে আবার জীবনটাগুছিয়ে নে। (আম্মু)

— হুম,,,শ্রাবন আমিও তাই মনে করি। (আব্বু)

আমি অর্ধেক খাবার প্লেটে রেখেই টেবিল ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসি। এরপর দরজা লক করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরি। মাথাটা পুরো গরম হয়ে আছে। আগে যখন আমি শিমলার থেকে অনেক দূরে ছিলাম তখন কেমন যেন মনের ভিতরে একটা টান অনুভব করতাম। কিন্তু এখন শিমলা যখন আমার এত কাছে। তবুও কোন কিছুই অনুভব করতে পারতেছি। এর মানে কি আমি এখন শিমলাকে ভালোবাসি না.? জানি না আমি কিছুই জানি না। এই গুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।।।

অপরদিকে শ্রাবন খাবার টেবিল থেকে রাগ করে চলে আসার পরে,,,

— এই কথা গুলো এখন না বললেই ভালো হতো। (আম্মু)

— এখন বলব না তো কখন বলব..? তোমার ছেলে তো আমার সাথে দেখাই করে না। কথা তো দূরের ব্যাপার। (আব্বু)

— আব্বু,,আমি বলি কি,, আপনার বড় ছেলে বিকালে আগে বাসায় আসুক। এরপর সকলে মিলে শ্রাবনের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেই কাজ হবে। (ভাবি)

— হুম,,,ঠিক আছে। (আব্বু)

————————————

শান্তিতে নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। তখনই দরজার বাইরের ঠক ঠক আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল।
হালকা চোখ মেলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বিকাল ৫ টা বাজে।
বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেই।

আমি একটু অবাক হলাম। কারন আমার সামনে শিমলা চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আগে যখন আমি শিমলার সাথে জমিয়ে প্রেম করতাম তখন শিমলা আমাকে ঠিক এই সময়েই এক কাপ করে আমার ফেভারিট চা বানিয়ে দিত।
আর আজকে এত বছর পরেও দিল।
এখনো ভুলে নাই, মনে আছে।

শিমলা আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে টেবিলে চা রেখেই চলে গেল।
আমার দিকে ফিরেও তাকালো না। আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময়।
এরপর ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপ নিয়ে ছাদের দিকে রওনা হলাম।
কারন বিকালে এক কাপ চা আর সাথে শান্ত বিকাল। অসাধারণ একটা অনুভূতি।

ছাদে এসে দেখি শিমলা আগে থেকেই ছাদে বসে আছে।।
আমি কিছু না বলে একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পরলাম। এরপর চায়ের কাপে চুমুক দিলাম।
এক কথায় অসাধারণ। আগের মতোই সাধ আছে। একটুও বদলায় নি। আগে এক সময় মনে হতো এই চা এক দিন না খেলেই হয়তো পুরো দিনটা মাটি হিয়ে যাবে। কিন্তু এত দিন পরে আজকে সেই চা খেতে হচ্ছে।

শিমলা আমার কাছে এসে একটা চেয়ারে বসে বলল,,

— আমি জানতাম তুমি চা নিয়ে এখানেই আসবে। তাই আমি আগে থেকেই এখানে বসে ছিলাম। (শিমলা)

— কি করব বলুন..? অনেক দিনের অভ্যাস ছিল যে। তাই বদলাতে পারি নাই। (আমি)

— শ্রাবন তোমাকে আমার কিছু কথা বলার আছে। (শিমলা)

— যদি বলি আমি শুনব না। তাহলে কি আপনি আপনার কথা গুলো আমাকে বলবেন না.?? (আমি)

— তুমি আজকাল অনেক ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতেছ।।(শিমলা)

— ভাল্লাগে এমন করে কথা বলতে..!(আমি)

— আমি কি আমার কথা গুলো বলব..?(শিমলা)

— হুম,,,বলেন শুনতেছি…(আমি)

— আমি জানি তুমি আমার উপরে অনেক রাগ করে আছ। তাই তো আমার সাথে এমন করে কথা বলতেছ। তুমি শুধু আমার সাথেই না। তোমার ফ্যামিলির সকলের সাথেই খারাপ আচরণ করতেছে। প্লিজ শ্রাবন আমার উপরে রাগ করে শুধু শুধু সকলকে এই ভাবে এভয়েড করো না। (শিমলা)

— কে বলেছে আমি আপনার উপরে রাগ করে আছি..?(আমি একটা হাসি দিয়ে)

— আমি জানি,,তুমি সেই দিনের ব্যাবহার নিয়ে এখনো আমার উপরে রেগে আছ। আমি কি করব বলো..? আমার মাথা একবার গরম হয়ে গেলে আমি কি থেকে কি বলে ফেলে সেইটা আমার মাথায় থাকে না। আমি সেই দিন হয়তো রাগের মাথায় হসপিটালে বসে তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলেছি। বিশ্বাস করো ওই গুলো আমার মনের কথা ছিল না। (শিমলা)

— আমি আপনার উপরে একদমই রেগে নেই। (আমি)

— না, আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছ। (শিমলা)

— রাগ তার উপরেই করা যায়, যার প্রতি আমাদের অধিকার আছে। কিন্তু আফসোস সেই অধিকার আজ এখন এই মুহুর্তে আপনার প্রতি আমার নেই। হ্যাঁ একটা সময় হয়তো আপনার প্রতি আমার রাগ করার অধিকারটা ছিল। কিন্তু আপনি নিজেই সেই অধিকারটা আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। (আমি)

আমি শিমলার চোখের কোনে এক ফোটা পানি দেখতে পেলাম। শিমলা একটা হাসি দিয়ে তার ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল,,,

— না,,একদমই না। তোমার এখনো আমার প্রতি সব রকমের অধিকার আছে। আমার ভুল হয়ে গেছে শ্রাবন। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি যে তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারি না। এই কয়েকটা বছর আমি যে কেমন করে কাটিয়েছি সেটা একমাত্র আমি নিজেই জানি। (আমি)

— আপনার হাতের ‘চা’ টা কিন্তু সেই আগের মতোই আছে। আর এই নিন আপনার চায়ের কাপ। (আমি শিমলার হাতে কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললাম)

— শ্রাবন প্লিজ…….. (শিমলা)

— হুম আপনি বলুন। আমি শুনতেছি তো..!(আমি)

— শ্রাবন আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলবা.??(শিমলা)

— হুম বলুন…! (আমি)

— তুমি কি আমাকে এখন আর ভালোবাস না.??(শিমলা)

— হাহাহাহাহাহা…..(আমি)

— একি তুমি হাসতেছ কেন.?(শিমলা)

— প্রশ্নটা তোলা রইল। এর উত্তর অন্য কোন একদিন দিব। এখন আমি আসি। বাইরে একটু কাজ আছে। বায় বায় …! (আমি)

— শ্রাবন আমার কথাটার জ……….(শিমলা)

শিমলাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই আমি ছাদ থেকে নিচে চলে এলাম। আর ওদিকে শিমলা মন খারাপ করে ছাদে একা একা বসে রইল।।।
রুমে এসে রেডি হয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় খেয়াল করলাম ভাইয়া বাসায় চলে এসেছে। আমাকে ডেকেছিল কিন্তু আমি না শুনেই বাইরে চলে এসেছি।

রাস্তায় বের হয়ে অসীমকে ফোন দিলাম।

— হুম ভাই,,বলেন..(অসীম)

— ওই ব্যাটা কই তুই..? তোর না আমাকে বাসা থেকে সন্ধ্যায় পিক করার কথা.??(আমি)

— ভাইয়া আর বইলেন না। এই রেশমীর জন্য আমি….(এইটুকু বলেই থেমে গেল অসীম)

— এই এই ১ মিনিট। রেশমীটা আবার কে রে.??(আমি)

— না ভাই কেউ না..!(অসীম)

— সত্যিটা বলবি নাকি তোকে…(আমি)

— ভাইয়া আপনি একটু ওয়েট করেন আমি আসতেছি। আর এসে আপনাকে সবটা খুলে বলতেছি। (অসীম)

— আচ্ছা আয়..!

এরপর ফোন রেখে দিলাম।।।
ফোন কেটে দিয়ে পকেটে রাখতে যাব তখনই কেউ একজন আমার কাধে হাত রাখল।
আমি পিছনে ঘুরে দেখি একটা ছেলে। আগে কখন দেখেছি বলে তো মনে হয় না। তখনই ছেলেটা বলে উঠল…

— ওই নাম কি তোর..?(ছেলেটা)

আমি তো আকাশ থেকে পরলাম। চেনা নেই জানা নেই হুট করে কোথা থেকে এসেই তুই তুকারি করতেছে।

— কে আপনি..? আর আমাকে তুই করে বলতেছেন কেন.?? আমি কি আপনাকে চিনি.? (আমি)

ছেলেটা কিছু না বলে আমার…………

.
.
.
.
.
#চলবে……???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here