ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part-9

0
1290

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে
part ঃ 9
Writer ঃ humayra khan

আবিরঃ সত্যি চারু তুমি বানিয়ে দিবে??
দিশাঃ কোন দরকার নেই চারু এ-ই শয়তানটার জন্য ক্ষির বানানোর।
আবিরঃ এই তুমি বানাবে না মানলাম।চারু বানাতে চাচ্ছে ওকে মানা করছো কেন???
তুমার সম্যসাটা কি???
আহানঃ আবার শুরু হয়ে গেল দুই জনে।
চারু তুমি রান্না কর তো।
দিশাঃ কি দরকার ভাই রান্না করার। উনি যা বলবে তাই করতে হবে নাকি। এতোই খেতে ইচ্ছে হলে সেই রান্না করে খেয়ে নিক।
আহানঃ উফফ ভাবি আমি ভাইয়ার জন্য বলছিনা আমি আমার নিজের জন্য বলেছি।আমারও ক্ষির খেতে ইচ্ছে করছে অনেক।
দিশাঃ আচ্ছা ভাইয়া তাহলে আমিই বানিয়ে দিচ্ছি।
আবিরঃ এই তোমার রান্না করতে হবেনা ক্ষির। আল্লাহই জানে খাবারের সাথে যদি বিষ মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেল।আমি এতো পিচ্চি বয়সে মরতে চাইনা।
দিশা ঃওয়াট আপনি পিচ্চি। নাইস জোক
আবিরঃ আমি পিচ্চি নয় তো কি। তুমার মতো বুড্ডি নাকি???
আবির এর কথায় শুনে বেশ রেগে মেগে যায় দিশা
রাগে ঠেলায় আবিরকে কিছু বলতে যাবে চারু চেচিয়ে বলে উঠে —
চারু ঃ ভাবি তোমার রান্না করতে হবেনা।আমিই রান্না করব।
আবিরঃ হ্যা চারু তুমি রান্না করো আমার জন্য।
তাছাড়া তোমার হাতের খাবারের সাথে কারো তুলনা হয়না।
দিশাঃ তোকে তো আমি এমন উচিত শিক্ষা দিব আজ।
যে তুই এই দিন জীবনেও ভুলবিনা।(আবির এর দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকিয়ে)।আনমনে
আচ্ছা চারু তুমিই রান্না কর তাহলে।
তারপর চারু রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে শুরু করে।
আহান রান্না ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে ওর মোবাইল বের করে একটা গান প্লে করে…….
hume tumse pyar kitna…
Ye hum nehi jante…..
Magar ji nehi sakte….
Tumha re Bina aaa….
সেই গানের তালে তালে আহান ও জোরে জোরে গাইতে থাকে।।
দিশাঃ কি ভাইয়া কারও প্রেমে টেমে পরলে নাকি(হেসে)
দিশার কথা শুনে আহান পিছনে ঘুরে তাকায়।
আহানঃ উফফ কি লজ্জা ভাবি আমার পিছনে ছিল আর আমি বোকার মতো খেয়াল ও করিনি।আনমনে।
আহানঃ কি যে বলো না ভাবি।আমি তো এমনি গাইছিলাম।
আচ্ছা ভাবি তুমি চারুকে গিয়ে হেল্প কর আমি ভাইয়ার কাছে যাই।
কথাটি বলে চলে আসে আহান সে খান থেকে।
রুমে ভিতরে ডুকে-
ভাইয়া ভাইয়া…..
আহানঃ এই ভাইয়া কোথায় গেল??।
আচ্ছা ভাইয়া নেই রুমে আমি না হয় এখন ই ওই টেক টিক টা কাজে লাগাতে পারি।দেখি কোন কাজ হয় কিনা???
কথাটি বলে আহান পকেট থেকে কাজলের কৌটাটা বের করে।
কৌটা টা যখনি খুলতে যাবে-
আহানঃ এই সব বাচ্চামি করা কি ঠিক হবে আমার?
কিন্তু আমি তো চারুকে অনেক ভালোবাসি আর ওর জন্য সব পাগলামি করতে রাজি।এইটা তো কিছুই না
চারুর জন্য এ-র চেয়েও বেশি পাগলামি করতে রাজি আছি আমি।কথাটি বলে কৌটা টা খুলতে যাবে-
আহানঃ কিন্তু আমি তো চাই আমি যেমন আছি চারু আমাকে সেই ভাবেই এক্রচেপট করুক। আমার এই ফেস টাকেই ভালো বাসুক। আর আমার বিশ্বাস সেই দিন খুব জলদিই আসবে আমার জীবন এ।
কথাটি বলে আহান কাজলের কৌটা টা ডাস্টবিন এ ফেলতে যাবে সেই মুহূর্তে ওর মোবাইলে কারও ফোন আসলে আহান ভুলক্রমে কৌটা টা ড্রেসিংটেবিল এর উপর ই রেখে চলে যায় রুম থেকে বের হয়ে।
আহানকে ডাকতে দিশা রুমে আসলে খেয়াল করে আহান আবির কেউ রুমে নেই।
তাই দিশা রুম থেকে চলে যেতে নিলে হঠাৎ ড্রেসিং টেবিল এর উপর চোখ পরে ওর।ড্রেসিং টেবিলে কাজলের কৌটা টা হাতে নিয়ে-
দিশাঃ বাচ্চা দের দেওয়া কাজলের কৌটা টা এ-ই খানে আসল কিভাবে কে নিয়ে আসছে???
উফফ যেই নিয়ে আসুক তাতে আমার কি।
কথাটি বলে দিশা রুম থেকে চলে যেতে নিলে।
দিশাঃ ওয়েট দিশা ওয়েট এই কাজল টা তোর কাজে আসতে পারে।আর হয়ত এইটা কারো এখন লাগবেনা তাই এই ভাবে ফেলে রেখেছে এই খানে।
কথাটি বলে চারু কাজলের কৌটা টা নিয়ে চলে যায় রুম থেকে।
দিশা রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে আসলে-
দিশাঃ কি চারু ক্ষির রান্না করা হয়ে গেছে তোমার??
চারু ঃ জ্বি ভাবি। এখন শুধু সবাইকে বেরে দেওয়া বাকি।
দিশাঃ ওও। তাহলে সেইটা আমি করে নিব নে চারু
এমনিও তুমি রান্না করতে করতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছো তাই তোমাকে আর কিছু করতে হবেনা।তুমি যাও আমি ক্ষির টা নিয়ে আসছি সবার জন্য।
চারু ঃ না ভাবি আমি ক্লান্ত হই নি সত্যি বলছি।
দিশাঃ চারু। ভাবির কথা শুনবেনা?(কোমড়ে হাত রেখে)
চারু ঃ হ্যা গো আমার আদরের ভাবি শুনব তোমার কথা।তুমি নিয়ে আসো তাহলে আমি যাচ্ছি।
তারপর চারু চলে আসে রান্না ঘর থেকে.
চারু রান্না ঘর থেকে চলে আসলে।
দিশাঃ আজ মিঃআবির আমাকে অনেক বেশি জ্বালিয়েছে তার পাওনা তো তাকে দেয়াই লাগবে।
কথাটি বলে দিশা একটা ক্ষির এর বাটির উপর এক চামচ মরিচের গুড়া মিশিয়ে দেয়।
হি হি আজ অনেক মজা হবে বলেছিলাম না কাদিয়ে ছারব আজ।
কথাটি বলে দিশা ক্ষির নিয়ে বের হয়ে পরে রান্না ঘর থেকে।
দিশাঃ ক্ষির রেডি……..
আবিরঃ ইসস যেমন করে বলছে মনে হচ্ছে ক্ষির টা নিজেই বানিয়ে আনছে সবার জন্য (মুখ বাকা করে)।
দিশাঃ আমি না বানালে কি হয়েছে আমি আমার প্রিয় স্বামী কে আজ আমার নিজ হাতে খাইয়ে দিব।
কথাটি বলে দিশা মরিচের গুড়া মিশানো ক্ষির এর বাটিটা নিয়ে আবির এর সামনে গিয়ে আবির কে নিজ হাত দিয়ে খাওয়াতে যাবে –
আবিরঃ না বাবা না। তোমার হাতের কোন কিছুই খাবনা আমি।আল্লাহই জানে কি মিশিয়ে নিয়ে আসছো।
দিশাঃ আপনি কি পাগল আমি কি মিশাব ক্ষির তো চারুই রান্না করছে।
আবিরঃ জানি।কিন্তু আমি অন্য বাটির ক্ষির খাব।তোমার হাতের টা না।
কথাটি বলে আবির অন্য একটা ক্ষির এর বাটি নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
একটু পর আহান ডায়নিক টেবিলে আসলে —
আহানঃ কি অবস্থা?? সবাই দেখি আমাকে রেখেই ক্ষির খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। থিস ইস নট ফের।
দিশাঃ সবাই না ভাইয়া শুধু তোমার এই রাক্ষস ভাইটা।
আজ আমি বললাম আমি নিজ হাতে খাইয়ে দেই আপনাকে ক্ষির। সে আমাকে কতো গুলা কথা শুনিয়ে দিল(কান্নার মুখ করে)
আবিরঃ ইসস কি ভালোবাসা।নিশ্চয়ই এই ভালোবাসার পিছনে কোন ঘটলা আছে।
আহানঃ আরে ভাবি ভাইয়া তোমরা ঝগড়া করো আর আমিই মজা করে ক্ষির খাই।
কথাটি বলে আহান তাড়াতাড়ি করে দিশার হাত থেকে ক্ষির এর বাটি টা নিয়ে টেবিলে বসে পরে।
দিশাঃ আল্লাহ।। বাটিটা আহান ভাইয়া নিয়ে নিল।
এই মরিচ মিক্স করা ক্ষির খেলে তো তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
ভাইয়া………..
বেচারি দিশা আহানকে থামানোর আগেই ক্ষির মুখে দিয়ে দেয় আহান
ক্ষির মুখে দিয়ে –
আহানঃ আল্লাহ আমার এমন লাগছে কেন?? মনে হচ্ছে চিনির বদলে মরিচের গুড়া মিক্স করা ক্ষির এ….
চারু আহানের মুখের আজব রিয়েকশন দেখে–
চারু ঃভাইয়া আপনি ক্ষির খেয়ে এমন রিয়েকশন দিচ্ছেন কেন??
ক্ষির কি মজা হয়নি? ( মন খারাপ করে)
আহানঃ ভাইয়া তো স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষিরটা খাচ্ছে তাহলে আমার এমন লাগছে কেন??
উফফ গলা পুরো জ্বলে যাচ্ছে আমার।
কিন্তু চারুকে যদি বলি কিছু ও কষ্ট পাবে অনেক।
তার চেয়ে ভালো ক্ষির টা খেয়েই নেই।
আহান তোকে পারতেই হবে।এইটা তোর ভালোবাসার পরিক্ষা।আর তোকে জয়ী হতেই হবে। আনমনে।
আহানঃ কে বলেছে ক্ষির মজা হয়নি ক্ষির তো অনেক বেশিই মজা হয়েছে যা তুলনার বাইরে। (হাসি মুখে)
দিশাঃ ইস বেচারা ভাইয়া।।।হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিও আমার জন্য আমার আদরের দেবরটা কষ্ট পাচ্ছে।চারু মন খারাপ হয়ে যাবে বলে কিছু বলছেনা কারো সামনে।। ভাইয়া কতো ভালো।
চারু ঃ তাহলে ভাইয়া ক্ষির খান। থেমে গেলেন কেন??
আহানঃ হ্যা হ্যা খাচ্ছি।।।
কথাটি বলে আহান ক্ষির খাওয়া শুরু করে।
যতই ক্ষির খাচ্ছে ততই ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।।।
আবিরঃ কিরে তুই ক্ষির খেয়ে কান্না করছিস কেন এমন বাচ্চাদের মতো। আর তোর ফেশ টা এমন টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে কেন???
আহানঃ খুশি কান্না ভাই খুশির কান্না।এতো টেস্টি ক্ষির আমি জীবনেও খাইনি।তাই খুশির ঠেলায় কান্না আসছে আমার।
তারপর আহান ক্ষির খাওয়া শেষ করে
তোমরা বসো আমিই একটু আসছি রান্না ঘর থেকে বাটি টা রেখে।
কথাটি বলে আহান তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘর এর দিক এ দৌড় দেয়।
রান্না ঘরে গিয়ে-
আহান গলা কাটা মুরগীর মতো ধাপড়াতে থাকে ব্যথার জ্বালায়
গলায় হাত-
আহানঃ উফফ এই চিনি কোথায়। এই মুহূর্তে চিনি না খেলে আমি যে ঝালে মরে যাব।
দিশা রান্না ঘরে ডুকে মধু বের করে আহানের সামনে এগিয়ে দেয়।
দিশাঃ নেন ভাইয়া এইটা খেয়ে নেন জলদি করে।
গলার জ্বালা পোড়া কিছুটা কমবে।
আহানঃ তুমি কি রে বুঝলে???
দিশাঃ আসলে ভাইয়া আমিই একটা ক্ষির এর বাটিতে
মরিচের গুড়া মিক্স করে তোমার ভাইকে….
আহানঃ হয়েছে ভাবি হয়েছে আর বলতে হবেনা।
তোমরা যে কি বাচ্চাদের মতো এই ভাবে ঝগড়া করো মাঝখান দিয়ে আমি ফেশে গেলাম।
দিশাঃ সরি ভাইয়া।এই রকম কাজ আর কখনো হবেনা(কানে হাত দিয়ে)।
আহানঃ আচ্ছা ভাবি।তোমাকে সরি বলতে হবেনা।
কথাটি বলে আহান দিশার হাত থেকে মধুর কৌটা টা নিয়ে মধু বের করে খেয়ে নেয়।
আহানঃ উফফ এখন কিছুটা শান্তি পেলাম
ভাইয়া ক্ষির টা খেলে কিন্তু মন্দ হতো না কি বল ভাবি?(হেসে)
দিশাঃ হ্যা এক বারে ঠিক বলেছো।(হেসে)
আবিরঃ আমাকে কি খাওয়ানোর……….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here