ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part- 28

0
1162

ছায়া হয়ে থাকব পাশে
Part ঃ 28
writer ঃ humayra khan

রিয়া ঃ ইউ ব্লাডি হেল….কি করলে এইটা আমার উপরই পুরো চা ফেলে দিলে……..
কথাটা বলার সাথে সাথেই রিয়া চারুর গালে থাপ্পড় মারতে নিলে—-
আহান সাথে সাথে রিয়ার হাত টা ধরে ফেলে……
আহানঃ তোমার সাহস কি করে হয়?? ওর উপর হাত উঠানোর?????
রিয়াঃ আহান তুমি দেখলেনা এই ফকিন্নিটা আমার উপর চা ফেলে দিলো…..
চারু রিয়ার বলা কথা শুনে কান্না করতে করতে চলে যায় সেই খান থেকে…….
আহান চারুকে থামাতে নিলে–
রিয়াঃ ওও আহান বেবি তুমি কোথায় যাচ্ছো….
আহান রিয়ার দিক এ রাগি দৃশটি তে তাকিয়ে কিছু না বলেই ওর গাল এ কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে বসলো
থাপ্পড় টা এতো জোড়ে ছিলো যে রিয়া তাল সামলাতে না পেরে ওর মায়ের গা এর উপর পরে…
সাথে সাথে নিজের মেয়েকে সামলে নেয় মায়া-
সাবিনাঃ আহান এইটা কোন ধরনের বেয়াদবি???
আহানঃ বেয়াদবি তো রিয়া করেছে মা চারুর সাথে…
রিয়ার দিক এ আঙুল তুলে –
দিতৃীয় বার ওর উপর হাত তুলার আগে এই থাপ্পড়টার কথা ভেবে নিবে….
কথাটি বলে আহান চলে যায় সেই খান থেকে……
চারুর রুমে গিয়ে ওকে না পেলে—
আহানঃ আমি জানি তুমি কোথায় থাকতে পারো…..
আহান তাড়াতাড়ি করে ছাদে চলে যায়……
ছাদে উঠে দেখে চারু ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বাচ্চাদের মতো আওয়াজ করে কান্না করছে……..
আহান চারুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে……
আহানঃ কি হলো আমার চড়ই পাখি টা এই ভাবে কান্না করছে কেন??? অই রিয়াকে তো উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি ওর কৃতকর্মের জন্য….
চারু ঃ মানে……..
আহানঃ ওকে কষিয়ে একটা চড় মেরে দিয়েছে আমার চড়ই পাখিটার উপর হাত তুলার সাহস করার জন্য…..
চারু ঃ আমি সে জন্য কাদছিনা…… আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওই রিয়া বাচ্চা আপনাকে আমার থেকে চুরি করে ফেলবে….
আহানঃ চারুর থেকে আহানকে আলাদা করার কারো সাধ্য আছে নাকি…….
চারু ঃ সত্যি তো কখনিই আমাকে একা করে চলে যাবেন না…
আহানঃ হুম সত্যি বাবা….
হঠাৎ কেউ বলে উঠলো —
ওওওও তলে তলে এই সব চলছে……..
আহান আর চারু পিছনে ঘুরিয়ে দেখে দিশা আর আবির দাঁড়িয়ে আছে,………
আবির আর দিশা ওদের সামনে এসে—-
দিশাঃ ওও ভালোই তলে তলে টেম্পো চালানো হচ্ছিলো……
আহানঃ শুধু টেম্পো না ভাবি সাইকেল গাড়ি রিকশা ও চালিয়েছি..( হেসে)
চারু তো কিছু বলতেই পারছেনা…লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে আছে……..
দিশাঃ কি হলো এখন কেন লজ্জা পাচ্ছো চারু সুন্দরী…
এতো দিন তো ভালোই আমাদের পিছনে পিছনে জমিয়ে প্রেম করছিলে—
আর আমাদের একটু বলার দরকারই মনে করো নি..
চারু ঃ আসলে ভাবি…..
আবিরঃ তোর ভাগ্য কত ভালো আহান তোর কপালে এতো সুন্দর মেয়ে জুটেছে…. আর আমার……
দিশাঃ কি বলতে চান?? আমি সুন্দর না(রেগে)
আবিরঃ হুম সুন্দর তো.. আটা ময়দা সুজি মেখে…
আহানঃ আবারও শুরু করে দিলে দুই জনে মিলে….
আবিরঃ আহান আমার মনে হয় মাকে সব বলে দেওয়া উচিৎ….
আহানঃ না ভাইয়া এখন মা রাজি হবেনা….উল্টো চারুর উপর তার ঘৃনা টা আরও বেড়ে যাবে তাই আগে মার মনে চারুর জন্য জায়গা করতে হবে তারপর মাকে আমার আর চারুর কথা বলবো….এই কাজে তোমাকে আর ভাবিকে হেল্প করতে হবে আমার….
আর কাল থেকে আমি কাজে চলে যাব… তাই চারুকেও দেখে রাখতে হবে আমার অনুপস্থিতে…,
অন্যদিক এ…….
মায়াঃ দেখলে আপু আহান কেমন বদলে গেছে সামান্য একটা মেয়ের জন্য আমার ফুলের মতো মেয়েটির গা এ হাত তুললো.
সাবিনাঃ দাড়া আমি আহানের রুমে গিয়ে ওর সাথে কথা বলছি….
মায়াঃ না থাক আপু এখন ওর সাথে কথা বলতে হবেনা,… কিন্তু আহানকে অই চাকরানি থেকে দূরে দূরে রেখো.. আজ ওর জন্য মায়া দেখাচ্ছে কাল যদি অই মেয়েটার প্রেমেই পরে যায় তাহলে আমার সব প্লেন বেস্তে যাবে,…….
সাবিনা তার বোনের বলা কথা শুনে অবাক চোখ এ তাকালে….
মায়াঃ মানে আপু আমি চেয়েছিলাম কি আমার রিয়ার সাথে আহানের বিয়েটা দিতে…….তুমি তো জানো..
আমার মেয়ে দেখতেও যেমন সুন্দর তেমনি স্বভাব আচরন চরিএ টাও সুন্দর…….
সাবিনাঃ আগে আমি আহানের সাথে কথা বলে নেই সুযোগ বুঝে…তাছাড়া আমার বোনের মেয়ে আমার ছেলের বউ হবে এইটাতো খুশির কথা….
কথাটি বলে সাথে সাথে চলে যায় মিসেস সাবিনা…..
ডায়নিং টেবিলে বসে সবাই লাঞ্চ করতে নিলে—
হঠাৎ রিয়া খাবারের মাঝ খান থেকে উঠতে নিলে–
সাবিনাঃ কি রে রিয়া খাবারের মাঝ খান থেকে উঠে যাচ্ছিস কেন????
রিয়া ঃ আসলে খালামনি… বেশি খেলে আমি মোটা হয়ে যাব তাই…..
সাবিনাঃ কিন্তু প্লেট এ-র খাবার টা তো শেষ কর…..
মায়াঃ থাক আপু ওকে যেত দাও… ওও এমনি তেও বেশি খেতে পারেনা…
রিয়া তাড়াতাড়ি করে ডায়নিং টেবিল ছেরে চলে যায় নিজের রুমে…
চারু ঃ ভালোই হয়েছে শাকচুন্নি টা গেছে এই খান থেকে……
বিকালে………
চারু রিয়ার রুমের পাশ থেকে যেতে নিলে ওর কানে গিটার এর আওয়াজ ভেসে উঠে…….
কৌতুহল নিয়ে রিয়ার রুমে প্রবেশ করলে দেখে রিয়া গিটার হাতে নিয়ে গান গাইছে……
চারু রিয়ার গান শুনে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগে..
রিয়া ওর চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে চারু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হেসে যাচ্ছে….
রিয়াঃ এই মিডেল ক্লাস মেয়ে এই ভাবে হাসছো কেন??
চারু ঃ এতো ভয়ংকর গান শুনে কার না হাসি পাবে…আনমনে
চারু ঃ আপু .আসলে আপনার সুর ঠিক হচ্ছেনা….
রিয়া ঃ এই মেয়ে তোমার সাহস কত বড় আমাকে বলতে এসেছো আমার সুর ঠিক হয়নি…
গানের এ বি সি ডি ও জানো নাকি??? এতো গলা ফাটিয়ে বলছো ……
এই নাও গিটার দেখি কত পারো তুমি…
চারু ঃ না আপু আমি গান গাইতে পারব না….
রিয়া ঃ নিশ্চয়ই গান পারেনা তাই না না করছে….
দাড়া দেখাচ্ছি মজা….. আনমনে
তোমার মতো ক্ষেত পারবে কিভাবে শুধু তো কথাই বলতে জানো…
চারু রেগে মেগে রিয়ার হাত থেকে গিটার টা নিয়ে গিটার টা বাজাতে শুরু করলে ওর হাত কাঁপতে থাকে..
হঠাৎ আহান রিয়ার রুমে আসলে বেশ অবাক হয় চারুর হাতে গিটার দেখে—
আহানঃ চারু তুমি গান গাইতে পারো.?…..
রিয়াঃ আরে গান গাইতে পারলে কি গিটার হাতে নিয়ে কাপাকাপি করতো.
হঠাৎ চারু গিটার বাজিয়ে আহানের চোখ এ চোখ রেখে গাইতে শুরু করে–
tu aata hei seene me..
Jab jab sansein barti hu
Teri dil ki galiyon se
Mai har Roze gucharti hu
Hawa ke jaise chalta hai tu
Mai ret jaise udti hu
Kaun tuje u pyar karega jaise mei u karri hu..
Haaaaa aaaa haaaaaaa…..

আহান চারুর গান শুনে পুরাই শকড…
রিয়াও মুখ হা করে বসে আছে………
আহানঃ আল্লাহ তুমি এতো সুন্দর গান পারো….
চারু আহানের কথার কোন উত্তর না দিয়ে চলে আসে রিয়ার রুম থেকে….
চারু এই ভাবে চলে যাওয়ায় আহানও ওর পিছনে পিছনে চলে যায়…
রিয়া ঃ উফফ কেন যে বলতে গেলাম গান গাইতে..
ভেবেছিলাম ও গান গাইতে না পারলে ওকে ইনসালট করবো বাট কিছুই হলোনা তেমন…( মুখ গোমড়া করে)
আহান চারুর রুমে এসে দেখে চারু ওর বিছানায় বসে কান্না করছে…….
আহান চারু পাশে গিয়ে চারুর চোখ এর পানি গুলো মুছে দিয়ে,—-
আহানঃ উফফ আমার চড়ই পাখিটা এতো সুন্দর গান গাইতে পারে আর আমি এখন জানতে পারলাম..
থিস ইস নট ফের…
চারু ঃ জানেন আহান বাবা অনেক সুন্দর গান গাইতে পারতো বাবার থেকেই শিখা গান গাওয়া টা..
কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর গান গাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি… কারন গান গাওয়ার কথা ভাবলে বাবার কথা খুব বেশি মনে পরে….
আহান চারু কথা শুনে কিছু না বলে শক্ত করে. নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো চারুকে……,
আহানঃ তোমার এই টেলেনট আমি ওয়েস্ট হতে দিব না চারু……(আনমনে)
কাল…………..
আহান হসপিটালে চলে যাওয়ার পর থেকে চারু রুমে মধ্যে বসে পায় চারি করছে….
চারু ঃ উফফ কবে রাত হবে আর কবে সে বাসায় ফিরবে।।।।।।।। বাট রাত পর্যন্ত যে আমি অপেক্ষা করতে পারবো না….
কিছু একটা ভেবে চারু নিজের রুম থেকে বের হয়ে পরে……
সবার থেকে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হতে নিলে–
সাবিনাঃ কোথায় যাচ্ছিস চারু….?????.
চারু ঃ আসলে কাকিমা……..,
দিশাঃ মা আমার প্র‍্য়োজনীয় কিছু জিনিস লাগবে তাই চারুকে বলেছিলাম যেয়ে নিয়ে আসতে….
সাবিনাঃ ওও আচ্ছা…
দিশাঃ চারু তাড়াতাড়ি যাও…..
চারু ঃ জ্বি ভাবি…
দিশার দিক এ তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে যায় চারু….
দিশাঃ আমি জানি তুমি কোথায় যাচ্ছো।।।।(আনমনে)
আহান ওর কেবিনে বসে পেশেন্ট এর সাথে কথা বলছিল
হঠাৎ কেউ জোড়ে চিৎকার দিয়ে
সারপ্রাইজ…..
আহান আর পেশেন্ট বেশ অবাক হয়ে পরে…
দরজার সামনে তাকিয়ে দেখে —
চারু…….
আহানঃ চড়ই পাখি তুমি এই খানে,??
আহানের কথা শুনে পেশেন্টটি মুচকি মুচকি হাসতে থাকে…..
পেশেন্ট ঃ আচ্ছা ডাক্তার আহান আমি না হয় একটু পরে আসি…..
কথাটি বলে চেয়ার থেকে উঠে পরে মহিলাটি
মহিলাটা যাওয়ার সময় চারুর দিক এ মুচকি হেসে বের হয়ে পরে কেবিন থেকে……
আহানঃ তুমি এই খানে???? আমার কথা মনে পরছিলো বুঝি……
চারু আহানের কাছে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে..
চারু ঃ হুম অনেক বেশি মিস করছিলাম আপনাকে তাই তো ছুটে আসলাম আপনার কাছে….
হঠাৎ কেউ আহানের কেবিনে প্রবেশ করে–
ডাক্তার আহান…..
আহান আর চারু তাড়াতাড়ি সরে দাড়ায় একের অপরের থেকে…
আহানঃ ডাক্তার মেহেদী.. কিছু কাজ ছিল..
মেহেদী ঃ হ্যা ছিল তো কিন্তু আমি পরে আসব নে..
ছেলেটি চারু আর আহানের দিক এ একপলক তাকিয়ে চলে যায় কেবিন থেকে…..
চারু ঃ ইসস কি ভাববে আমাদের এইভাবে দেখে..
আহানঃ যা ভাবার ভাবুক তাতে আমার কি..
চারু ঃ আচ্ছা আমি চলে যাই না হলে বেশি দেরি হলে কাকিমা রাগ করবে…..
আহানঃ চলো আমি দিয়ে আসি তোমাকে…..
চারু ঃনা আমি চলে যেতে পারবো….
আহানঃ চুপ… আমি নিজে গিয়েই দিয়ে আসবো তো আসব…
চারু ঃ আচ্ছা চলেন….
তারপর আহান নিজেই গাড়ি করে চারুকে বাসার সামনে এগিয়ে দিয়ে চলে যায় হসপিটালে…..
চারু বাসার কলিং বেল বাজালে দিশা দরজা খুলে দেয়
চারু বাসার মধ্যে ঢুকলে–
সাবিনা চারুকে দেখে—
সাবিনাঃ কি রে চারু তুই বলে কি জানি কিনতে গিয়েছিলি দিশার জন্য???
চারু ঃ……..

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here