#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৪৮ (সমাপ্ত-পর্ব)
শেষ অংশ-
১২০.
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের ওল্ড টাউনের বাংলো বাড়িটি আজ সুনিপুণ কায়দায় সেজে উঠেছে। এরিস’টক্রেসি ওয়েডিং ভেন্যুকে চাপিয়ে গিয়ে সরুচিপূর্ণ,চমৎকার এক হাউজ ওফ ভেন্যু সুদৃশ্যমান হলো আজ। হলিউড জগতের সবচেয়ে সৌষ্ঠবপূর্ণ প্রিয়মুখ মি. তানজিদ হায়াত এবং জাইমার ওয়োডিং সেরেমনি আজ। সম্পূর্ণ ডেকোরেশন ভীষণ চোখ ধাধানো, মনমাতানো হয়েছে। ফিল্ম তারকারাও আমন্ত্রিত এই অনুষ্ঠানে। তাদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠলো বিয়ের আসর। লোকজন যখন বিয়ের ভরপুর আমেজে মজে আছেন। তানজিদ তখন এসে তেহভীন আর সিলিভিয়ার কামরার দরজায় নক করলো। মূলত কামরাটা তৃতীয় তলায়,একদম নিরিবিলি,নিস্তব্ধ স্থানে। বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ বাংলো সাজানো হলেও,বিয়ের ভেন্যুটা সবুজ দুর্বাঘাসের লনের উপর আয়োজিত। ওয়েডিং কাপলের ড্রেসকোড ডার্ক গোল্ডেন। এবং তাদের সাথে মিলিয়ে ভেন্যুকেও ডেকোরেটররা ডার্ক গোল্ডেন কম্বিনেশনের সংমিশ্রণে সাজিয়ে তুলেছে।
তেহভীন দরজা মেলতেই তানজিদকে পূরানো পোশাকে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো। সিলিভিয়া তখন ওয়াসরুমে ছিলো। ওয়াসরুম থেকেই দরজা খোলার শব্দ সে শুনেছে। তানজিদকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তেহভীন রসিকতাপূর্ণ গমগম স্বরে বলল,
— ডু ইয়্যূ ওয়েন্ট টু গেট মেরেড ইন দ্যিজ ক্লথ?
তানজিদ বুঝলো তেহভীন তার সাথে মজা করছে।
তাই সে হালকা হেসে বলল,
— ইয়েস আই ওয়েন্ট!
তেহভীন সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলল,
— দ্যাট’স গুড। তো এখানে কি প্রয়োজনে এসেছো?
তানজিদ কিছুটা বড় সাইজের কালো রঙের মোটা পারদের বাক্সটা তেহভীনের হাতে দিলো। তেহভীন সেটা হাতে তুলে নিয়ে তানজিদের দিকে চাইলো।
— ছোটবেলা থেকে আমরা একি অভ্যাস,শখ,চাহিদা নিয়ে বড় হয়েছি৷ বিয়ের অনুষ্ঠানটাও আজ একি দিনে করি? যদিও তুমি বিয়েটা আমার আগে করে ফেলেছো।তো এই উপহারটা একসেপ্ট করো।
তেহভীন ভাইয়ের কথার প্রত্যুত্তরে কি দিবে চিন্তায় পড়লো৷ বিয়ের সম্পূর্ণ এ্যারেঞ্জম্যান্ট তানজিদ আর জাইমার জন্য,সেখানে তাদের জয়েন হওয়াটা কেমন দেখাবে?
তেহভীনকে ভাবনায় মত্ত দেখে তানজিদ আলতো।করে তেহভীনের কাঁধে চাপড় মেরে বলল,
— সেইম ডিজাইন। গ্রিসের সবচেয়ে বেস্ট এন্ড এক্সপেন্সিভ ডিজাইনার দিয়ে মেক করা হয়েছে আমাদের ওয়েডিং ড্রেস-স্যুট। আশা করি তোমাদেরও ভালো লাগবে।
তানজিদ চলে যেতেই তেহভীন ডোরলকড করে কামরায় ফিরে বিছানার উপর বাক্সটি রাখলো। বাক্সের উপর ডিজাইনারের নেইম এবং ব্র্যান্ডের নেইম দৃশ্যমান হলো। সিলিভিয়ার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে চুলের অতিরিক্ত ভেজা ভাবটা মুছছিলো। কালো বাক্সটা দেখে সিলিভিয়ার মনটা ভীষণ কৌতুহল হলো।কিন্তু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো তেহভীন কি বলবে সেটা শোনার অপেক্ষায়। তেহভীনকে চুপচাপ দেখে সিলিভিয়া জিজ্ঞেস করলো,
—- কি ভাবছো তেহভীন?
তেহভীন চোখ তুলে সিলিভিয়ার সিক্ত মুখের দিকে তাকালো, ঈষৎ হেসে বলল,
—- ভাবছি আমাদের সেকেন্ড হানিমুন স্যুইটটা
কোথায় বুকড করবো।
সিলিভিয়া ভাবলো তেহভীন হয়তো মজা করছে তার সাথে। তাই মজার ছলে বলল,
—- ফাইন্ড এ ফ্লট মাউন্টেইন!
তেহভীন দারুণ উত্তরটা শুনে হাসলো। তারপর সিলিভিয়াকে জব্দ করতে বলল,
—– কেন? রাগড্ মাউন্টেইনে তুমি কম্পর্ট ফীল করবে না? ইন আওয়ার প্রাইভেট মোমেন্ট?
লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠলো সিলিভিয়ার। তারপরও মুখের ভাব শক্ত-কঠিন রেখে বলল,
— তোমার এই আউট-স্পোকেন অভ্যাসটা কি কখনো যাবে না?
— অবশ্যই যাবে না। এনিওয়েজ, ব্রাদারের গ্র্যান্ড ওয়েডিং চেরেমনি তে ব্রাইড কাপল হিসেবে আমরা জয়েন হচ্ছি। সো বি রেডি।
সিলিভিয়া আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমাদের জয়েন হওয়ার তো কোন দরকার ছিলো না তেহভীন।উই আর অলরেডি ম্যারেড।
— সো,
সিলিভিয়ার মন খারাপ হলো সাথে সাথে। তার ইচ্ছে ছিলো যদি কখনো তার দ্বিতীয় বার বিয়ের অনুষ্ঠান হয় তখন তার মা-বাবা,ভাই-ভাবি এবং তার ভাতিজাও উপস্থিত থাকবে। এতকিছুর মাঝে মন খারাপের রেশটা দূর করবে কিভাবে সেই ভাবনায় পড়ে গেলো।
ডার্ক গোল্ডেন এন্ড হোয়াইট লেহেঙ্গা এবং স্যুট পরিহিত তানজিদ এবং তেহভীন দুজনকে প্রিন্সের মতো লাগছিলো। তাদের পাশে দাঁড়ানো দুই রমণীকে দেখতে লাগছিলো যেনো অপরূপা সুন্দরী রাজকন্যা। রাজ-তাজ হীন রাজ্কন্যা। দুজনে তাদের প্রানপ্রিয়দের হাত আঁকড়ে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।
বিয়ের মতো অনন্দময় অনুষ্ঠানকে দ্বিগুন আনন্দময় করে তুলতে হঠাৎ মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ডেন আগম ঘটলো ভেন্যুতে। তার পাশেই তায়্যিবা এবং তামান্না। চমৎকার ভঙ্গিমায় তাদের আগমন দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো তানজিদ। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দৃষ্টি ছুঁড়লো তেহভীনের দিকে। তানজিদকে দেখে তেহভীন মৃদু হেসে বলল, -” তোমার বিয়ের গিফট ব্রাদার।”
নিজের আনন্দের রেশটা দেখাতে পারলো না তানজিদ। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো পা চলছে না তার। মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড এতদিন পর ছেলেকে দেখে এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। নিঃসৃত করলো বহুদিনের জমিয়ে রাখা রাগ,অভিমান। উপস্থিত সকলে মূল বিষয়টা না বুঝলেও।এ ব্যাপারে অবগত তায়্যিবা,তামান্না, তেহভীন,সিলিভিয়া,জাইমা সকলের ঠোঁটের কোণে এক হাসি ফুটলো।
আনন্দময় প্যাকেজে আবারো আনন্দের জোয়ার উঠলো সিলিভিয়ার মনে।যখন তার মা-বাবা এবং ভাই-ভাবিকে দেখলো। নিজের সামলে রাখা আবেগ,এবং চোখের আঁটকে জলস্রোত হঠাৎ চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো৷ আমোদিত চোখ তুলে যখনি তেহভীনের দিকে তাঁকালো। ঠিক তখনি তেহভীন ইনডেক্স ফিঙ্গার তুলে তার মায়ের দিকে দেখিয়ে দিলো।যার অর্থ, সিলভার তোমার প্যারেন্টদের এখানে আনার কাজটা একমাত্র মমের।সো বি হ্যাপি।
সিলিভিয়া সত্যিই খুশীতে বাকরূদ্ধ। মনের অতৃপ্ত খায়েশটা আজ এভাবে এই দিনে হুট করে মিটবে সেটা তার কল্পনায়ও ছিলো না। সিলিভিয়াকে তার স্থান থেকে নড়তে হয়নি। তার মা-বাবা, সায়মন-জুলিয়া এগিয়ে এসে সিলিভিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। জুলিয়া সিলিভিয়াকে আপাদমস্তক দেখে বলল,
— এটাকে বোধহয় বলে রাজকপাল!
তোমাকে আজ এই রূপে দেখে আমি ভীষণ বিষ্মিত,প্রলুদ্ধ। আল্লাহ তোমার চরণে পৃথিবীর সব সুখ ঢেলে দিক সিলি।
সিলিভিয়া হাসিমুখে চেয়ে থাকলো জুলিয়ার দিকে।
জাইমার ফ্যামিলি থেকে শুধু তার মা এসেছেন।জাইমার বাবার সাথে জাইমার সম্পর্কটা তেমন ভালো নেই। তারজন্য মনটা খারাপ থাকলেও মা-কে দেখে তার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। তারচেয়ে বড় কথা এতো সুন্দর মেন্টালিটির একটা ফ্যামিলি সে পেয়েছে।জীবনে তার আর কি লাগে।
অবশেষে,ব্রাইড কাপলদের বিয়ের রেজিস্ট্রি এবং কালিমা ও তিনকবুলের মাধ্যমে বিয়ের পড়ানো শেষ হয়। সব কিছু তায়্যিবা নিজে উপস্থিত থেকে করিয়েছে।তার বাবার শেষ ইচ্ছে ছিলো।ছেলেদের মুসলিম কন্যাদের সাথে যেনো বিয়ে হয়।আর বিয়ে রিচুয়েলটাও যেনো তাদের ধর্মমতে হয়।তবে তাদের এই অদ্ভুত রীতির বিয়ে দেখে অনেকে প্রশ্ন,কানাঘুঁষা করলেও সম্পূর্ণ ওয়েডিং রিচুয়েল দেখে তারা বুঝতে পারলো তাদের বিয়েটা এমনভাবে হওয়ার কারণ।পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উঠেনি। এমন নয় যে দুনিয়ার সব মানুষকেই এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। দুই’শ মানুষের ভীড়ে ফিল্ম মিডিয়ার ফটোশুট থেকে সিলিভিয়াকে বাঁচাতে তেহভীন সিলিভিয়ার হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের ভাঁজের মধ্যে নিয়ে সবার থেকে আড়ালে চলে গেলো।একদম তৃতীয় তলার রুপটফে গিয়ে উপর থেকে নিচের অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখতে লাগলো। খাওয়া-দাওয়া,ফটোশুট, হাসিতামাশা সব শান্তিপূর্ণ ভাবে হচ্ছে। তখনি তেহভীন সিলিভিয়ার কোমল উদরে নিজের হাতজোড়া চেপে রেখে জড়িয়ে ধরে বলল,
—- নিউজিল্যান্ডে হবিটনে আমাদের সেকেন্ড হানিমুনটা হলে কেমন হয় সিলভার?
সিলিভিয়া দু’দিকে মাথা নেড়ে সায় না জানানোর ভঙ্গিতে বলল,
— নো, ইম্পসিবল!তেহভীন। আমার প্যারেন্ট…
— ইট’স টোটালি পসিবল সুইটহার্ট!
তোমার প্যারেন্ট এখানে একমাস মতো থাকতে পারবে।কিন্তু আমরা আমাদের ওয়ার্ক এন্ড স্ট্যাডি প্লেসে ফিরলে আর কিছুর সম্ভব হবে না।
তেহভীনে শান্ত শীতল কন্ঠস্বর সিলিভিয়ার মনকে রাজি করিয়ে ফেললো।উপরে উপরে না বলতে বলতে অবশেষে রাজি হয়ে গেলো সিলিভিয়া। তেহভীনের করুণ, দুঃখময় চেহারাটা সে দেখতে পারে না।বুক ভাড় হয়ে আসে, মন খারাপ লাগে।
পরিপূর্ণতাঃ
দুজনেরই টুরিস্ট ভিসা এবং এন্ট্রি পেপার রয়েছে।তাই দুইদিন আগে এমার্জেন্সি টিকেটের মাধ্যমে সিলিভিয়াকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের টুরিস্ট এট্টেরাকশন ইন মাটামাটা,’হবিটন ‘- মুভি সেট ট্যুরে চলে আসলো তেহভীন। সবুজের খোলসে আঁটকে থাকা এই হবিটন গ্রাম। পর্বতের ভাঁজে ভাঁজে বিপদ আর রহস্য ওঁতপেতে থাকে। ওপারে দুর্গম আর বিপদসংকুল পাহাড় আর এপারে শায়ার; পাহাড়, নদী আর সবুজে ভরা এক অঞ্চল। শায়ারের ছোট্ট গ্রাম হবিটন। ছিমছাম বলতে যা বোঝায় ঠিক তা-ই। এখানে জীবন বয়ে যায় জীবনের মতোই। নেই কোনো যান্ত্রিকতা কিংবা আধুনিক মানুষের মতো উদ্ভট আর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা। হবিটদের বাস সেখানেই। মাঠের পর মাঠ সবুজ শস্য, গাজর, বাঁধাকপির চাষ। শায়ারের আকাশে বাতাসে তাজা ফসলের ঘ্রাণ। ছোট ছোট নদী, কাঠের ঘ্রাণ, অলস বিকালের তন্দ্রাচ্ছন্নতা সবই হবিটদের রক্তে রক্তে।
হবিটন টুরিস্ট স্পটের প্রধাণ আকর্ষণ কাঠের তৈরি ‘হবিট হোল,অর্থাৎ হবিটদের বাড়ি। যা আঁকারে দেখতে ছোট। হবিট হোলের উপর থেকে নিচ,এবং চারপাশটা সবুজ ঘাস এবং ফুলের বাগান। শুধু ছোটখাটো কাঠের একটা দরজা দৃশ্যমান। একদম ঠাণ্ডা,হিমশীতল বাতাসে শরীরে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তেহভীন এবং সিলিভিয়ার দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমার মুহূর্ত বেশ সুপ্রসন্নভাবে কাটে। দুটো প্রাণ-দেহ মিলেমিশে বেশ শান্তি পায়। আর কি লাগে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটলো মাত্র পাঁচমিনির আগে। তানজিদ এবং জাইমাকে এখানে দেখে তেহভীনের মুখটা গোমড়া হয়ে যায়। তেহভীনের মুখ দেখে সিলিভিয়া এবং তানজিদ-জাইমা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তেহভীম মুখ গোমড়া অবস্থায় রেখে বলল,
— কাজটা ঠিক করোনি তুমি ব্রাদার।
এটা আমার আর সিলভারের হানিমুন ট্যুর ছিলো।
তোমরা কেন এখানে এসেছো?
— তোমরা এসেছো বলে আমরা আসতে পারবো সেটা কোথায় লেখা আছে?
তাছাড়া মম তোমাকে হাতে কাছে পেলে তোমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে। বিয়ের একটা বাকি রিচুয়েল আনকম্পলিট রেখে এখানে চলে এসেছো।
তেহভীন একচোট সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে চিন্তায় গড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা টেনে বলল,
—- ব্রো, এটা একটা এডভেঞ্চারাস ছিলো
আমাদের জন্য। ওয়েডিং রিচুয়েল সব ওয়েডিং হয়।
আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করেছি মাত্র।
তানজিদ একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেলে সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে বাংলায় বলল,
— এমন পাগলকে সামলাও কিভাবে?
বলতে বলতে তানজিদ জায়গা প্রস্থান করলো। জাইমা না বুঝলেও সিলিভিয়া বেশ বুঝলো,সাথে সাথে হাসলো।সিলিভিয়ার হাসি দেখে জাইমাও না বুঝে হাসলো। কিন্তু তেহভীন রেগেমেগে তানজিদের দিকে চেয়ে বলল,
— ইউ টু আর ক্রেজি ব্রাদার।
কি বেবেজো,আম-ই বেংলা বলটে পাড়ি-ই না?
সিলিভিয়া আর না পেরে হাসতে হাসতে তেহভীনের মুখটা চেপে ধরে বলল,
— হ্যাঁ,হ্যাঁ তুমি অনেক বাংলা বলতে পারো।
আর বলে আমাদের ভাষাটার অপমান করিও না তেহভীন।
সিলিভিয়ার কথা শুনে তানজিদ পেছন ফিরে হাসলো। তানজিদের হাসি দেখে তেহভীনের মাথা আরো দ্বিগুন গরম হয়ে গেলো। সে সিলিভিয়ার হাত টেনে নিয়ে চলে গেলো হবিট হোলের ভেতর।মেজাজ খারাপ আছে তার,এই মুহূর্তে শান্ত করতে হবে তার সিলভার কে। তাদের ভালোবাসা মিশ্রিত মুহূর্তে সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট্ট গ্রামটিতে মৃদু মৃদু বৃষ্টির আগমন ঘটলো হঠাৎ করে।
দুই বছর পর,
বার্কলের ইউনিভার্সিটি ওফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাবলিশের মাধ্যমে পি.এইচ.ডি কম্পলিট করলো সিলিভিয়া। সবশেষে অপরিসীম ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো, লজ্জা হীন হয়ে সুপারভাইজারের গালি থেকে অবশেষে মুক্ত হতে পারলো। নিজের অর্জিত জ্ঞান, উচ্চশিক্ষিত হতে পেরে সিলিভিয়া ভীষণ খুশী আজ। তার প্রানপ্রিয় স্বামীর অবধানে আজকে সে একজন সফল উচ্চশিক্ষিত নারী।
সিলিভিয়া তখন পি.এইচ.ডি গ্রেজুয়েশন গাউন আর মাথায় ক্যাপ পরিহিত অবস্থায় সাটার গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো।তার মন বলছিলো আজ হয়তো তেহভীন আসবে।তাকে শুভেচ্ছা জানানোর প্রথম অধিকার তো তেহভীনের-ই। একসাথে দু’টো খুশীর সংবাদ পাওয়া তেহভীনের। সিলিভিয়ার ভাবনাকে সম্পূর্ণ করে দিয়ে হঠাৎ একটা সাদা গাড়ি এসে দাঁড়ালো তার সামনে। পাইলট ক্যাপ্টেইন মি. তেহভীন হায়াত ইজ হিয়ার।
তেহভীনের দিকে তাকালো সিলিভিয়া। তেহভীনকে এগিয়ে আসতে দেখেই সিলিভিয়া দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো তেহভীনের দিকে।নিজের মাথার ক্যাপটা খুলে সিলিভিয়ার গ্রেজুয়েশন ক্যাপটা সরালো তেহভীন।তার ক্যাপটা পড়িয়ে দিলো সিলিভিয়াকে। এবং বলল,
— কনগ্রেচুলেশন মাই প্রিটি লেডি।
তেহভীন যেই সিলিভিয়াকে জড়িয়ে ধরতে যাবে,তার আগেই সিলিভিয়া তেহভীনের হাতটা ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
— গুড’লাক! ইউ আর গোয়িং টু বি এ ফাদার!
— হোয়াট?
চোখ বড়বড় করে তাকালো তেহভীন। হটাৎ চমকপ্রদ কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সিলিভিয়া তাকে কথা দিয়েছিলো।পি.এইচ.ডি এর পর সে এমন একটা গুডনিউজ তাকে অবশ্যই শুনাবে। হলো ও তাই।
খুশীতে আত্মহারা তেহভীন আচমকা সিলিভিয়াকে কোলে তুলে নিলো। এরপর বলল,
— চলো,তোমাকে মমের কাছে দিয়ে আসি।
— হোয়াট,আমি তোমার কাছে থাকবো তেহভীন
প্লিজ, মমের কাছে নয়।
তেহভীন চমৎকার হাসলো।সিলিভিয়াকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে আলতোভাবে সিট বেল্ট পড়িয়ে দিলো।নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো,সিলিভিয়ার দিকে ফিরে বলল,
— ঠিকাছে,আমার সিলভার আমার কাছে
থাকবে। আমি আর আমার বেবি তোমাকে প্রচুর জ্বালাবো।
তেহভীনের কথায় সিলিভিয়া হেসে তেহভীনের ক্লিনসেভ করা শ্বেত গালটা জোরে টেনে ধরলো।
(সমাপ্ত)
সাইলেন্ট রিডার্সদের মন্তব্য আশা করছি আজকের পর্বে।