#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড়চোখে ইরিনার দিকে তাকাল সাঈদ। ইরিনা আপেল কাটছে বসে। আপেল কাটতে কাটতে ইরিনা সাঈদের দিকে তাকাতেই সাঈদ চোখ সরিয়ে ফেলল।
“তোমার তো বিয়ে ঠিক ছিল অস্ট্রেলিয়ায় এক মেয়ের সাথে। ইর্তেজা বলল তুমি বাংলাদেশে এসে পরেছো সবসময়ের জন্য।”
“জি, মেয়েটা অলরেডি অন্য কারোর সাথে রিলেশনে ছিল। আর এমনিতেও আমার তাকে পছন্দ ছিল না। ভাবলাম নিজ দেশের মেয়েকেই বিয়ে করবো।”
“তোমার এই ডিসিশনটাই ভালো৷”
ইরিনা মুচকি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আপেলগুলো ধুয়ে নিয়ে আসো। আর ইর্তেজাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো ও কোথায়।”
“জি আপা”
ঝর্ণা চলে গেল। সাঈদ চায়ের কাপ ট্রের উপর রেখে ইরিনার দিকে তাকাল। ইরিনা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সাঈদ একবার কেশে বলল-
“কি ভাবছেন?”
ইরিনা সাঈদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল-
“কিছু না, সময় খুব তারাতাড়ি চলে যায় সেটাই দেখলাম। আচ্ছা তোমার কাজ কর্ম কেমন যাচ্ছে?”
“এখন কাজ বন্ধ৷ অস্ট্রেলিয়া আর ফিরে যাব না। ভাবছি এইখানে নিজের একটা কাজ শুরু করবো। ইর্তেজা একবার বলেছিল সে না-কি পাঞ্জাবির ব্যবসা করতে চায়৷ ভাবলাম ওর সাথে কাজ করবো।”
“হ্যাঁ, ও তো বলেছিল। কিন্তু এখন না-কি অন্য একটা কাজ পেয়েছে। কিন্তু কী কাজ পেয়েছে সেটা জিজ্ঞেস করায় বলেনি।”
“আজ হয়তো ওর সাথে দেখা হবে না। আমি নাহয় আর একদিন আসবো নি।”
“আর কিছুক্ষণ বসো, দুপুরের খাবার খেয়ে যেও।”
“না না, মা অপেক্ষা করছে আমার।”
তখনই ঝর্ণা আসলো আপেল নিয়ে। ইরিনা বলল-
“আপেল খেয়ে যাও।”
“আমি আসার পর থেকে খেয়েই যাচ্ছি। আর একটু খেলে ফেটে যাব।”
সাঈদের কথা শুনে ইরিনা খিলখিল করে হেসে উঠলো৷ সাঈদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইরিনার দিকে। ইরিনা হাসতে হাসতেই বলল- “তুমি আর পরিবর্তন হলে না সাঈদ।”
সাঈদ হেসে মাথা নিচু করলো।
.
.
পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজলো। প্রত্যেক ক্লাস থেকে পরীক্ষার্থীরা বের হচ্ছে। ইর্তেজা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ সবার সাথে সাগরিকাও বের হলো তার বান্ধবীদের সাথে। ইর্তেজা তাকে দেখে গাড়ির দরজা খুলে সোজা হয়ে দাঁড়াল। সাগরিকা সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ইর্তেজা ড্রাইভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বাঁধছিল তখনই সাগরিকা বলল-
“পাশে একটা কফিশপ আছে না? সেখানে চলো।”
ইর্তেজা আয়না দিকে সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। ইর্তেজা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কফিশপ গেল। সাগরিকা গাড়ি থেকে বের হয়ে হনহন করে ভেতরে গেল। ইর্তেজা তার পেছনে আসতেই সাগরিকা ঘুরে তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ইর্তেজা শান্ত কন্ঠে বলল- “আমি আমার ডিউটি পালন করছি।”
“বাহিরে যাও”
“না”
“আমি চিৎকার করে মানুষজন ডাকালে তোমার কী অবস্থা করবে তারা তুমি জানো?”
“হুম জানি”
“তো বাহিরে যাও আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি।”
বলেই সাগরিকা এগিয়ে গেল। ইর্তেজাও গেল তার পেছনে। ইর্তেজা তার পেছনে আসছে বুঝতে পেরে সাগরিকা দাঁড়াল। তার মনে হচ্ছে কেও তার মাথায় গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। রাগে শরীর জ্বলছে তার। ঘুরে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা এখনো শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাগরিকা নিচু কন্ঠে বলল-
“আমি সিন ক্রিয়েট করতে চাই না। প্লিজ যাও বাহিরে।”
“কার সাথে দেখা করতে আসছেন আপনি?”
“নন অফ ইওর বিজনেস। গেট আউট রাইট নাও।”
ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা হাত মুঠো শক্ত করে রেখেছে রাগে। ইর্তেজা তার পাঞ্জাবি পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল-
“ম্যাম, আমি আপনার রক্ষক। আপনার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। খবর পেয়েছি আপনি আমার বসের সাথে প্রতারণা করছেন। আমি তার টাকায় নিজের ঘর চালাচ্ছি৷ আমি উনার কথার বিরুদ্ধে যেতে পারবো না।”
বলেই ইর্তেজা চোখের ইশারায় সাগরিকাকে নিচে তাকাতে বলল। সাগরিকা চোখ ঘুরিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে ইর্তেজা তার পকেট থেকে রিভলবার বের করে সাগরিকাকে দেখিয়ে আবার রেখে দিলো। সাগরিকা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“আমি যার সাথে সংসার করছি সে তোমার থেকেও ভয়ংকর মানুষ। তাকেই আমি ভয় পাই না তোমাকে কেন পাব? হুমকি অন্য কাওকে গিয়ে দাও আমাকে না।”
“আমি আপনাকে মারার হুমকি দিচ্ছি না। যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তার কলিজায় ভরে দেবো সব গুলি।”
সাগরিকা চমকে উঠলো। ইর্তেজার কথা শুনে তার রাগ ভয়ে পরিনত হয়েছে। ইর্তেজা মুচকি হেসে বলল-
“ম্যাম, বাসায় যাবেন না?”
সাগরিকা ঢোক গিলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইর্তেজা সরে দাঁড়িয়ে সাগরিকাকে হাতের ইশারায় বলল যেতে। সাগরিকা ঘাড় ঘুরিয়ে এক নজর সেই মানুষটাকে দেখে ঘুরে দ্রুত হাঁটা ধরলো। ইর্তেজাও চলল তার পেছনে।
.
.
“ইর্তেজার তরফ থেকে আমি মাফ চাচ্ছি সাঈদ। তাকে এতবার কল করেও পেলাম না।”
“সমস্যা নেই, নতুন কাজ শুরু করেছে ব্যস্ত থাকা স্বাভাবিক। আমি আর একদিন আসবো নি। আসি তাহলে আল্লাহ হাফেজ।”
“এরপর আসলে দুপুরে না খাইয়ে যেতে দেবো না বলে দিলাম।”
সাঈদ ইরিনার কথা শুনে জবাবে মুচকি হেসে চলে গেল। ইরিনা সাঈদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। ঝর্ণা দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইরিনার ঘরে আসলো। ট্রে-তে কাঁচের গ্লাস তুলতে তুলতে বলল-
“আপা, ইনি কে? আগে তো কহনো দেহিনি।”
“কয়বার বলবো? সাঈদ আর ইর্তেজা ছোটোবেলার বন্ধু৷ সে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিল তাই কখনো দেখোনি তুমি।”
“একটা কথা কই?”
“বলো”
“ছ্যারার নজর ভালা না। কেমনে জানি তাকায় আপনের দিকে।”
ইরিনা চমকে উঠল। থতমত খেয়ে বলল-
“আস্তাগফিরুল্লাহ ঝর্ণা, পাগল হয়ে গেলে তুমি? যা মুখে আসছে বলছো। তুমি জানো ও আমার থেকে ছোটো। সে সবসময় আমাকে বড়ো বোনের মতো সম্মান করে।”
“মনে লয়েন না আপা। আমার ক্যা জানি ছ্যারার নজর ভালা লাগে নি।”
“তুমি তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও। দেখবে সবার নজর ভালো লাগতে শুরু করবে।”
ঝর্ণা আর কিছু বলল না। ট্রে নিয়ে হাঁটা ধরলো। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
“আপা, মানলাম ছ্যারা আপনেরে বড়ো বোইনের মতো দেহে৷ কিন্তু একবারো তো আপনেরে আপু বইলা ডাকলো না। ব্যাপারটা আজব।”
ইরিনা ধমকের স্বরে বলল-
“অন্যের ব্যাপারে নাক না গলিয়ে নিজের সংসার সামলাও। যাও এখান থেকে এখন। কাজ করো গিয়ে।”
ঝর্ণা মাথা নিচু করে চলে গেল। ইরিনা রাগে ফুঁসছে। কিন্তু ঝর্ণার কথাটা গভীরভাবে ভাবতেই সে এলোমেলো হয়ে গেল।
.
.
সাগরিকা নিজের ঘরে এসে কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে ছুঁড়ে মারলো খাটের উপর। রাগে সে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে৷ খাটে বসে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে শ্রাবণকে কল করলো৷ শ্রাবণ কল রিসিভ করতেই সাগরিকা গর্জে উঠলো-
“আপনি কী চান আমি মরে যাই?”
“নাউজুবিল্লাহ্ সাগরিকা, কী বলছো তুমি এসব?”
“আপনি ওই বডিগার্ডকে বের করবেন না-কি আমি আত্মহত্যা করবো, কোনটা?”
“এই সামান্য বিষয়ে কেও আত্মহত্যা করে?”
“এটা সামান্য বিষয় না। সে লোকটা আমার পার্সোনাল কাজে ইন্টারফের করছে।”
“কারণ আমি তাকে বলেছি।”
“শ্রাবণ, আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না। আপনি প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন।”
শ্রাবণ সাগরিকার কথার জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে কল কেটে দিলো। সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলে মোবাইল রেখে কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো। কলিজা ছিঁড়ে কান্না আসছে তার। চোখ বন্ধ করতেই চিরচেনা এক চেহারা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। মানুষটা বলছে- “চলে যাচ্ছো যাও। তোমাকে থামানোর ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু মনে রেখো, যেদিন ক্ষমতায় আসবো তোমাকে ওর চোখের সামনে থেকে নিয়ে আসবো সে কিছু করতে পারবে না।”
রাতেরবেলা…..
ইর্তেজা খাবার গরম করছে বোনের জন্য৷ ইরিনা হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরাতে ঘুরাতে রান্নাঘরের দরজার সামনে আসলো। বোন এসেছে টের পেয়ে ইর্তেজা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল-
“তুমি আসলে কেন? ঘরে যাও আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
“আগামীকাল গিয়ে সাঈদের সাথে দেখা করে আসিস। ছেলেটা তোর সাথে কাজ শুরু করতে চেয়েছে।”
“আপু আমি অলরেডি একটা কাজ করছি। কিভাবে আর একটা কাজ করি বলো।”
“কী কাজ ইর্তেজা?”
ইর্তেজা ঘাড় ঘুরিয়ে চুলা বন্ধ করে বলল-
“আপু তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো। আমি কোনো অবৈধ কাজ করছি না।”
“তাহলে নিজের কাজের সম্পর্কে বলিস না কেন তুই?”
“সময় আসলে তারপর বলবো। এখন ঘরে যাও আমি আসছি।”
ইরিনা আর কথা বাড়ালো না। সে চলে গেল নিজের ঘরে। ইর্তেজা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্লেটে খাবার বেড়ে ঘরে গেল। ইরিনা ড্রয়ার থেকে ফটো এলবাম বের করছে। ইর্তেজা মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে খাটের উপর প্লেট রাখলো। ইরিনা হুইলচেয়ার নিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে আসলো। সে এলবাম বের করে আগের ছবি গুলো দেখতে লাগলো। ইর্তেজা খাটে বসে ভাত মাখিয়ে বোনের মুখে তুলে দিলো। সারাদিনে একবার হলেও ভাইয়ের হাতে না খেলে ইরিনার ঘুম আসে না। চুপচাপ ভাইয়ের হাতে খেয়ে নিচ্ছে। কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর ইর্তেজা বলল-
“আপু, তুমি কিছুদিন পর পর এই একই এলবাম বার বার দেখো। কেন বলো তো?”
ইরিনা ছবির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল- “কারণ ছবিগুলো দেখলে মনে হয় আব্বু আম্মু আমার সাথেই আছে।”
“উনারা কখনো ফিরবে না এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে।”
“আমি অস্বীকার করছি না। আমাকে কাঁদতে দেখিস উনাদের মনে করে?”
“কী জানি? আমি তো সারাদিন বাসায় থাকি না। কাঁদলেও দেখবো না।”
“ঝর্ণাকে জিজ্ঞেস করিস।”
ইর্তেজা হাসলো। ইরিনাও হেসে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইরিনা বলল- “ভাই, একটা কথা বলি?”
“বলো”
“বিয়ে করে নে, একা থাকতে আমার ভালো লাগে না।”
ইর্তেজার মুখের হাসি উড়ে গেল। চোখ ঘুরিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল- “তুমি চাও তোমার আগে আমি বিয়ে করি?”
“হুম, এতে সমস্যা কোথায়?”
“না, আগে তোমার বিয়ে তারপর আমার বিয়ে।”
“আমাকে কে বিয়ে করবে শুনি?”
ইর্তেজা বোনের দিকে ঝুঁকে মুচকি হেসে বলল- “আমার রাজকন্যার জন্য রাজপুত্র নিয়ে আসবো আমি।”
“প্যারালাইজড রাজকন্যা”
ইরিনা বলেই হাসা শুরু করলো। ইর্তেজা কিছু বলল না। সে জানে তার বোনও মনে কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে যা তার সামনে প্রকাশ করে না।
.
.
গালে হাত দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে সাঈদ। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভাসছে ইর্তেজা, ইরিনা ও তার ছবি। ছবিটা সাঈদের বড়ো ভাইয়ের বিয়েতে তুলেছিল তারা৷ তখন ইরিনা একদম সুস্থ ছিলো। আর তার বাবা মা-ও জীবিত ছিলেন। সাঈদ চিত হয়ে শুয়ে ল্যাপটপ পেটের উপর রাখলো। আগের দিনগুলো ফিরে পেলে কতই না ভালো হতো। ইর্তেজার বাবা মা খুব ভালো ছিলেন। সাঈদ ইরিনার ছবির উপর হাত বুলালো। ভাবছে সেদিন যদি এক্সিডেন্টে ইরিনার কিছু হয়ে যেত? সাঈদ কখনো এমনটা মেনে নিতে পারবে না। বড্ড ভালোবাসে সে ইরিনাকে। ছোটোবেলায় সে যতবার ইরিনাকে দেখতো ভীষণ লজ্জা পেত। ধীরে ধীরে বড়ো হতে হতে সে ভাবে ইরিনার প্রতি তার শুধুই মোহ। কিন্তু না সময়ের সাথে সাথে তার অনুভূতিও পরিবর্তন হয়েছে ইরিনার প্রতি। কিন্তু তার বলতে ভয় করে। প্রথমত ইরিনা কখনো মানবে না আর দ্বিতীয় ইর্তেজা তার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে ফেলবে। তখন তো ইরিনাকে চোখের দেখাও সে দেখতে পাবে না। সাঈদ উঠে বসলো। ভালোবাসা কী বয়স দেখে হয়? হ্যাঁ সে ইরিনার থেকে ৩ বছর ছোটো। তাই বলে কী মেয়েটার সাথে সারাজীবন কাটানো যাবে না? সাঈদ লম্বা নিশ্বাস ফেলে খাট থেকে নামলো। মা তাকে ডেকেছিল। ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের ঘরে গেল। মা বাবা দুজনই টিভি দেখছে।
“মা ডেকেছিলে আমাকে?”
“তোর বাবা ডেকেছে।”
সাঈদ বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বাবাকে সে ভীষণ ভয় পায়। বাবা যা বলে সে মাথা পেতে মেনে নেয়। বাবা সাঈদের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলল-
“তুমি বাংলাদেশে আসার আগে বলেছিলে ব্যবসা শুরু করবে। ১ মাস হয়ে আসছে। কোনো কাজ করার ইচ্ছে আছে না-কি নেই?”
সাঈদ মাথা নিচু রেখেই বলল-
“জি বাবা আছে, আমি ভাবছি পাঞ্জাবির ব্যবসা শুরু করবো। ইর্তেজার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু তার সাথে দেখা হয়নি।”
“১ সপ্তাহ সময় দিলাম৷ যা করার দ্রুত করো।”
“জি বাবা”
“যাও গিয়ে ঘুমাও।”
সাঈদ মাথা নিচু করেই নিজের ঘরে এসে পরলো। কাজ তো তার করতেই হবে৷ ইরিনাকে বিয়ে করতে হলে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে সর্বপ্রথম। মাকে কোনো মতো মানাতে পারলেও বাবাকে মানাতে তার ভীষণ কষ্ট করতে হবে। সাঈদ ল্যাপটপের দিকে তাকাল। ইরিনার ছবি ভাসছে৷ সাঈদ মুচকি হাসলো।
.
.
পরেরদিন…..
সাগরিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াচ্ছে। গতকালের কথা ভাবলেই তার রাগ হয়। শ্রাবণ বাথরুম থেকে বের হয়ে সাগরিকার দিকে এগিয়ে গেল। সাগরিকা আয়নায় এক নজর শ্রাবণকে দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। শ্রাবণ মুচকি হেসে সাগরিকাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সাগরিকার রাগ হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না।
“মন চাচ্ছে তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসি।”
“আমার এক্সাম আছে এখন সম্ভব না।”
সাগরিকা নিজেকে ছাড়িয়ে খাটে দিকে এগিয়ে গেল। ব্যাগ গুছিয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। শ্রাবণ সাগরিকার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল-
“এক্সাম শেষ হলে আমরা কোথাও ঘুরতে যাব। কোথায় যেতে চাও ভেবে আমাকে জানিও।”
“আমার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই।”
শ্রাবণ সাগরিকার হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। সাগরিকা বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকাল। শ্রাবণ মন খারাপ করে বলল-
“আমি কী অনেক খারাপ?”
“আমি কিছু বলেছি তোমাকে?”
“আমাকে ভালোবাসা যায় না?”
“ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আগে ভালো মানুষ হতে হয় জানো না?”
“আমি যা করেছি তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি।”
“পেয়ে তো গিয়েছো। আর কী চাও আমার থেকে? আমার জীবন, দেহ সবই তো তোমার।”
“তুমি আমাকে বাধ্য করেছো খারাপ হতে। কী এমন হতো জোর করার আগেই বিয়ের জন্য রাজি হলে?”
সাগরিকা শ্রাবণকে দূরে ঠেলে দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল-
“তোমার কী এমন ক্ষতি হতো আমাকে মুক্ত করে দিলে? তোমার কারণে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। কিছু নেই এখন আমার কাছে কিছু না।”
“আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। আর তুমিও আমার পাশে থাকবে চিরকাল।”
সাগরিকা শ্রাবণের দিকে কিছুক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে ইর্তেজাকে কল করলো। ইর্তেজা কল রিসিভ করতেই শ্রাবণ বলল- “তাকে নিয়ে ভার্সিটি যাও৷ আর হ্যাঁ আজ সে যার সাথে দেখা করতে চায় যেতে দিও। মানুষটা কে আমার জানতেই হবে। তার ডিটেইলস আমি চাই।”
কল কেটে শ্রাবণ খাটে বসে লম্বা নিশ্বাস ফেলে বাঁকা হাসি দিলো।
চলবে……