#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৪
মেহেরিন দরজায় একবার টোকা দিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকাতেই থমকে গেল। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। কথা নির্ঝরের অনেক কাছে তার কলার হাতে দাঁড়িয়ে আছে আর নির্ঝরের হাত কথার হাতে। মেহেরিন কে দেখে নির্ঝর হতবাক হয়ে গেল। নির্ঝর মেহু কে কিছু বলবে তার আগেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর যেন স্থির হয়ে গেল। এদিকে কথা আবারো রাজ্যের কান্না জুড়ে দিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে নির্ঝরের অনেকটা কাছে চলে এলো সে।
নির্ঝর কে অবাক করে দিয়ে মেহেরিন আবারো এলো। এসেই হাত দিয়ে পুরো দরজা খুলল। নির্ঝর আর কথা তাকিয়ে দেখছে মেহেরিন কে। মেহেরিন মুখে কিঞ্চিত হেসে বলে উঠে,
“আপাতত আর ৩ ঘন্টা, এরপর উনি আমার সম্পত্তি? তখন চাইলেও হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারবে না তাই এখন দেখে নিতেই পারো কিন্তু.. যদি তোমাদের প্রেম বিরহ শেষ হয়ে থাকে তাহলে বের হয়ে যেতে পারো। নিজের হবু বরের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর অধিকার আমারও আছে কিন্তু!
কথা অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর কথার হাত টা ছেড়ে দিল। মেহেরিন দরজার সাথে হেলান দিয়ে বলে,
“হাত টা ছাড়ো!
কথা ধীরে ধীরে হাত ছাড়ল। মেহেরিন দরজা ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করল। কথা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর সরে দাঁড়াল। কথা চোখের পানি মুছতে মুছতে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। মেহেরিন ঘরে ঢুকতেই নির্ঝর বলে উঠে,
“মেহু, আসলে..
“আমার কিছু জানার ইচ্ছে নেই। একটু আগেও বলেছি ৩ ঘন্টা পর আপনি আমার সম্পত্তি। উপভোগ করুন এতোটুকু সময় কেননা এরপর কিছু করার আগেও আপনাকে একশবার ভাবতে হবে। প্রত্যেকটা কাজের কৈফিয়ত দিতে হবে আমায়!
বলেই মেহেরিন দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। অতঃপর বলে উঠে,
“কাউকে কখনো কষ্ট দিয়ে নিজে সুখে থাকা যায় না নির্ঝর! অন্য কে ঠিক যতটা নিবেন নিজেও ততোটা ফেরত পাবেন। হোক সেটা দুঃখ বা ভালোবাসা!
নির্ঝর মলিন ভাবে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন চলে গেল। এই প্রথমবার তার খারাপ লাগছে কথার জন্য। ঠিক তো কথার কোন দোষ ছিল না। সে তো শুধু ভালোই বেসেছিল তাকে। নির্ঝর কিছুক্ষণ বসে রইল চুপ করে। অস্বস্তি লাগতে শুরু করল তার। দাঁড়িয়ে গেল নির্ঝর, অতঃপর চলে গেল বাইরের দিকে।
কথা ততোক্ষণে গাড়ির কাছে চলে এলো। নির্ঝর দৌড়ে কথার গাড়ির কাছে গেল। কথা গাড়ির দরজা খুলতেই নির্ঝর পেছন থেকে কথা কে ডাক দিল। নির্ঝরের আওয়াজে কথার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। গাড়ির দরজা বন্ধ করে নির্ঝরের কাছে ছুটে এলো সে। নির্ঝর কে দেখে তার মুখের হাসি যেন শেষ’ই হচ্ছিল না।
নির্ঝর হাঁপাতে লাগল। কথা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“ততুমি আমার কাছে এসেছ নির্ঝর!
নির্ঝর দম নিয়ে বলে,
“হ্যাঁ তোমার সাথে কথা ছিল আমার।
“বলো, কি বলতে চাও তুমি! তোমার কথা শোনার জন্য’ই তো এতোদিন পাগল হয়ে ছিলাম আমি।
“কথা!
নির্ঝরের গলার স্বরে কথা থমকে গেল। কি বলতে চায় নির্ঝর তাকে। নির্ঝর শীতল গলায় বলে উঠে,
“সরি!
“সসরি! শুধু সরি!
“হ্যাঁ কথা মানে, এটা আমার আরো আগে বলা উচিত ছিল। আমি জানি নিরপরাধ হয়েও শাস্তি পাচ্ছো তুমি। তুমি আমাকে ভালোবেসেছিলে কিন্তু…
কথা গলা ততোক্ষণে ভারী হয়ে আসছিল। চোখের শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু যেন আবারো জেগে উঠলো। ভারী গলায় বলে উঠে,
“তুমি আমাকে ভালোবাসো না নির্ঝর!
নির্ঝর কথার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা এখন আবার কাঁদবে। সে এসেছিল সরি বলতে কিন্তু এখন যদি সে আবারো কাঁদে তাহলে তো কিছুই হবে না। নির্ঝর চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ বন্ধ করে উষ্ণ গলায় বলে উঠে,
“না!
কথা এরকম কিছু শোনার ইচ্ছা না করলেও তার মন বলছিল এমন কিছুই হবে। নির্ঝরের কথার সাথে সাথে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল তার। নির্ঝর শীতল গলায় বলে উঠে,
“প্লিজ কেঁদো না কথা। আমি চাই নি তুমি কাঁদো!
কথা মুহূর্তে’ই চোখের জল মুছে ফেলল। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে উঠে,
“তাহলে কাকে ভালোবাসতে, মেহেরিন কে!
বলেই উপরে তাকাল কথা। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল হোটেলে’র বেলকনিতে থেকে দেখা যাচ্ছে মেহেরিন কে। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেখানে। কথা বলে উঠে,
“কনগ্রেচুলেশন তোমায়!
বলেই কথা চলে গেল। নির্ঝর আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। সে মুখ ফিরিয়ে তাকাল উপরের দিকে। মেহেরিন চলে গেছে। পেছন থেকে কারো দৌড়ানোর আওয়াজ আসছে। ফরহাদ ওরা সবাই আসছে। আরিফ এসে বলে উঠে,
“কিরে নির্ঝর, তুই এখানে? আর আমরা পুরো দুনিয়া খুঁজছি। চল দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। তৈরি হতে হবে তোকে!
বলেই টেনে নিয়ে গেল তিনজন!
.
লেহেঙ্গা টা নির্ঝর পছন্দ করলেও মেহেরিন কে যে তার পছন্দে এতোটা মানাবে সে ভাবে নি। খুব সুন্দর লাগছে মেহেরিন কে। তারচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে তার হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসা অর্ণব কে। কালো রঙের স্যুট পড়ে তাকে অসাধারণ লাগছে। নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। তার এক হাত ব্যান্ডেজ করা। তবুও সাদা রঙের শেরোয়ানি তে চমৎকার লাগছে তাকে। শেরোয়ানি’র মাঝে সোনালি রঙের কারুকাজ করা।
সামনে এগিয়ে এসে হাত ধরল মেহেরিন’র। তাকে বসাল তার পাশে। অর্ণব এসে বসল নির্ঝরের কোলে। নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
“ড্যাডি!
নির্ঝর হেসে তার কপালে চুমু খেল। নীলিমা আর রিদুয়ান এসে অভিনন্দন জানাল তাকে। অতঃপর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে পড়ানো হলো। বিয়ে পড়ানোর পর সব কাপল এসে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল। ফরহাদ, আরিফ, ঈশান সবাই মিলে নাচতে লাগল। নীলিমা আর রিদুয়ান ও নাচছে গানের তালে।
চারদিক ডিম লাইট জ্বালানো। বর কনে বাদে বাকি সবাই নাচছে। অর্ণব নির্ঝরের কোলে বসে আশপাশ দেখছে। তার পাশে বসে আছে মেহেরিন। হুট করেই দরজা খোলার শব্দ এলো। কেউ এসেছে এই সময়। কিন্তু কে এলো এই সময়ে। দরজার আওয়াজে সবাই তাকাল দরজার দিকে। লাইটের আলো জ্বললো তার উপর। সুদর্শন একজন পুরুষ! সবাই অবাক হলো তাকে দেখে।মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল তাকে দেখে। নির্ঝর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে।
মেহেরিন নিম্ন স্বরে বলে উঠে,
“নিরব!
নিরবের নাম শুনে নির্ঝর ফিরে তাকায় তার দিকে। সে হেটে এখানেই আসছে। তার হাতে একটা ফুলের তোরা। মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়াল সে। ফুলের তোরা টা এগিয়ে দিলো মেহেরিন’র সামনে। সমস্ত লাইট জ্বলে উঠলো। নির্ঝর এবার উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন হেসে তোরা টা হাতে নিল। সাদা রঙের গোলাপে ভর্তি তোরা টা। নির্ঝর তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র হাসির দিকে। হাসি টা অন্য কারোর জন্য দেখে ভালো লাগছে না তার। নিরব হেসে বলল,
“দেরি করে ফেললাম নাকি আমি!
“না ঠিক সময়ে এসেছিস! ( নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে.. ) নির্ঝর চৌধুরী মেঘ! আমার হাসবেন্ড!
নিরব নির্ঝরের দিকে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। নির্ঝরের কাছে এই ভঙ্গির কারণ জানা নেই। অতঃপর নিরব হেসে হাত বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর ও হাত বাড়িয়ে দিল তার। দুজনেই হ্যান্ডশেক করল। নিরব হেসে বলল,
“কনগ্রেচুলেশন!
“ধন্যবাদ!
অতঃপর নিরব অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণবের মাথায় হাত রাখল। অর্ণব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। নিরব বলে উঠে,
“ভালো আছো অর্ণব!
অর্ণব মাথা নাড়ল!
মেহেরিন নির্ঝরকে বলল,
“ও নিরব! আমার খুব পুরনো বন্ধু আর বিজনেস অ্যাডভাইজার!
“ওহ!
.
ফরহাদ এসে মেহেরিন আর নির্ঝর কে টেনে নিয়ে গেল নাচার জন্য। নিরব অর্ণব’র হাত ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর এক হাত মেহেরিন’র কোমরে রাখল। মেহেরিন দু হাত রেখেছে নির্ঝরের কাঁধে। Janam Janam Janam Sath col na yahi… গানটা বাজছে। দুজন নাচছে গানের তালে।
নির্ঝর এক হাত দিয়ে মেহেরিন কে ঘুরিয়ে নিল। উল্টো করে জরিয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন’র কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“তোমার বন্ধুর হয়তো আমাকে পছন্দ হয় নি।
“তাই নাকি!
“হ্যাঁ, কিন্তু কেন বলোতো?
“আমি কিভাবে বলবো?
“বাহ রে তোমার বন্ধু তুমি জানবে না।
“কিন্তু অপছন্দ তো আপনাকে করে। তাই আপনার’ই জানা উচিত কেন? তাই নয় কি!
নির্ঝর আর কথা বাড়াল না। শুধু মনে মনে ঠিক করে নিল সে জেনে ছাড়বে।
অর্ণব নিরবের হাত ছেড়ে দৌড়ে এলো নির্ঝরের কাছে। হেসে বলল,
“ড্যাডি, ম্যামি!
দুজনেই হেসে সরে দাঁড়াল। গানের টিউন চেঞ্জ হলো। অর্ণব লাফিয়ে নামতে লাগল। মেহেরিন আর নির্ঝর হেসে তার চারদিক ঘুরতে লাগল!
#চলবে….