#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৭
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“যা অর্ণবের ড্যাডির পছন্দ না তা অর্ণবের মাম্মির বেশ পছন্দ!
অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল! অতঃপর নির্ঝর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
“চলো দেখে আসি, এই নিলব আবার কি করে?
অর্ণবও সাথে সাথে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। নির্ঝর অর্ণবের হাত ধরে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। বসার ঘরের কাছে এসে দেখতে পায় না কাউকে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
“নিলব টা গেল কোথায়?
অর্ণব নির্ঝরের শার্ট ধরে টান দেয়। অতঃপর হাত দিয়ে ইশারা করে মেহেরিন’র বেড রুম দেখায়। নির্ঝর অবাক চোখে বলে,
“সোজা বেড রুমে চলে এসেছে!
গম্ভীর মুখে আগায় মেহেরিন’র বেড রুমের দিকে। ভেতর থেকে কথা বলার আওয়াজ আসছে। দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে নির্ঝর তার বেশ শুনতে পারছে। নির্ঝর দরজায় আড়ি পাতল। নির্ঝরের দেখা দেখি অর্ণবও আড়ি পাতল।ভেতর থেকে নিরবের কথা শোনা যাচ্ছে,
“এমন একটা ডিসেশন নেওয়া কি ঠিক হয়েছে তোর!
মেহেরিন বলছে,
“তাহলে তুই বলছিস সারাজীবন কেঁদে ভাসিয়ে দিতাম।
নির্ঝর ভাবতে লাগল কার কথা বলছে। কার জন্য কাঁদবে মেহু!
“আমি তা বলি নি মেহু!
নির্ঝর চোখ দুটো ছোট ছোট করে নিম্ন স্বরে বলে,
“মেহু বলল!
মেহেরিন বলে উঠে,
“তা হলে কি?
“ছেলে টা কে বেশ সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। অর্ণবের কথা কিছু ভেবেছিস। কিভাবে মানিয়ে নিবে ওর সাথে!
নিরবের কথায় নির্ঝর মুখ ভেংচি কাটল। অর্ণব মাথা তুলে নির্ঝর কে দেখতে লাগল। মেহেরিন বলে উঠে,
“অর্ণবের জন্য’ই এই বিয়ে করা। নির্ঝরের সাথে অর্ণব বেশ ভালো করে মানিয়ে নিচ্ছে।
“সারাজীবন থাকবি বলে ভেবে নিয়েছিস!
“না শুধু এক বছরের জন্য’ই। একবছরে অর্ণব ইনপ্রুভ করলে চলে যাবো ওকে নিয়ে। আচ্ছা তুই বল, এতোদিন তো কানাডায় ছিল। সেখানকার খবর কিছু..
নির্ঝর মুখ ঘুরিয়ে অর্ণবের দিকে তাকাল। মেহেরিন আর নিরবের কথা তেমন শুনতে পারে নি সে। তবুও নির্ঝরের সাথে তাল মিলিয়ে ছিল সে। নির্ঝর অর্ণবের হাত ধরে সরে যায় দরজার সামনে থেকে। অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে তাকে।
দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। মেহেরিন আর নিরব বের হলো। অর্ণব মেহেরিন কে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেল। মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” মাম্মি অফিসের কাজে একটু বাইরে যাচ্ছি অর্ণব। তুমি ড্যাডি’র সাথে থাকো!
নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর কিঞ্চিত হাসল। মেহেরিন কে আজ অন্যরকম লাগছে। স্যুট’টা তার হাতে ঝোলানো। নির্ঝর চোখ ঘুরিয়ে তাকাল নিরবের দিকে। নিরব তাকেই দেখছিল। হুট করেই মৃদু হাসল সে। অতঃপর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি গাড়ি বের করছি!
মেহেরিন মাথা নাড়ল। অর্ণব কে নিয়ে নির্ঝরের কাছে এলো। নির্ঝরের হাতের কথা জিজ্ঞেস করল। অর্ণব কে বলে গেলো নির্ঝর কে জেনো না জ্বালাতন করে।
অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় মেহেরিন। খুব অদ্ভুত ভাবেই নির্ঝর জিজ্ঞেস করে বসে,
“কখন ফিরবে মেহু!
মেহেরিন খানিকটা চমকে পেছনে ফিরল। তবুও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“রাত হবে তবে বেশি না। নিজের খেয়াল রাখবেন!
মাঝখানে অর্ণব বলে উঠে,
“টাটা মাম্মি!
দু’জনের কথার অবশান ঘটল। মেহেরিন হাত নাড়িয়ে বেরিয়ে গেল। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দু’জনকে এক গাড়িতে করে বেরিয়ে যেতে দেখল নির্ঝর!
——
নির্ঝরের ঘরে বিছানায় বসে ছবি একে চলেছে অর্ণব। নির্ঝর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ঘড়ির কাঁটা ৮ দিকের ছুঁই ছুঁই। ৮ টা হয়তো বেজে যাবে। ঘরটার চারদিকে চোখ বুলিয়ে হেসে দিল নির্ঝর। পুরোটা ঘর অগোছালো। এখন তার নিশ্চিত মনে হচ্ছে এটা তার’ই ঘর। পুরোটা ঘর জুড়ে খানিকক্ষণ আগেই দু বাপ ছেলে মিলে নেচেছিল!
সন্ধ্যার সময় বেলী ফুল গাছে পানি দেবার কথাটা ভুলে গেল নির্ঝর। চট করেই তা মনে পড়ল। বিছানা ছেড়ে উঠে গেল বেলকনির দিকে। আলো না জ্বালানোর কারনে সবটা অন্ধকার! নির্ঝর আলো জ্বালিয়ে এক মনে গাছে পানি দিচ্ছে। ফুলের গন্ধে চারদিক মো মো করছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সে ঘ্রাণ নিচ্ছে।
গাড়ি বাড়ির ভেতর ঢুকল। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে অর্ণব চট করে বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিল। নির্ঝর ও চলল তার পিছু পিছু! মেহেরিন সবে বাড়িতে ঢুকল। তৎক্ষণাৎ কানে ভেসে আসলো মিষ্টি সেই গলায় আওয়াজ,
“মাম্মি, মাম্মি!
এক গাল হেসে জরিয়ে ধরে অর্ণব কে। তার ছোট কপালে চুমু খেয়ে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর মৃদু হাসল!
খাবার টেবিলে তিন জন বসে আছে। খাবার টেবিল টা অনেক বড়। তার এক কোণায় এই তিনজন দখল করে আছে। মিস মারিয়া খাবার পরিবেশন করে চলে গেছে। মেহেরিন একটু পর পর অর্ণবের মুখে খাবার দিচ্ছে আবার নিজেও খাচ্ছে। নির্ঝর আড়চোখে সবটা দেখছে। দেখতে অবশ্য ভালোই লাগছে।
“দিন কেমন কাটলো তোমার?
“ভালো!
আর কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। ফোনটা তখন’ই বেজে উঠলো। স্ক্রিনে মা নামটা ভেসে উঠলো। নির্ঝর টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল। এই নিয়ে ৫ বার ফোন করেছে নীলিমা! ঘরের ছেলে দূরে থাকায় তার ঘরটা যেন শ্মশান ঘাট বলে মনে হচ্ছে। নির্ঝরের গলার আওয়াজে নীলিমা যেন প্রাণ ফিরে পেল!
“কি করছিস? খেয়েছিস!
“খেতেই বসে ছিলাম।
“ওহ তাহলে খেয়ে নে পড়া কথা বলবো।
“না আমার খাওয়া প্রায় শেষ! তুমি কি করছো বলো!
“কিছু না।
“না না তা কি করে হয়, তুমি নিশ্চিত কিছু করছিল
“হাম, তো কি করছিলাম আমি।
“আমাকে মিস! আর কি? হুহ!
“তুই বাড়ি থেকে যাবার পর বাড়িটা পুরো শান্ত এখন জানিস।
“হাম একটু বেশিই শান্ত, তাই একদিন যেতে না যেতে ৫ বার ফোন করলে।
“আমি ফোন করি বলে তুই বিরক্ত হচ্ছিস।
“ওহ মম! তুমিও না।
নীলিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নির্ঝর ওপাশ থেকে বলে উঠে,
“ড্যাড এসেছে!
“না এখনো আসে নি।
“পুরো বাড়িতে তুমি একা কি?
“নাহ মানুষ জন তো আছে। কেন?
“থাকুক বাড়ির আসল লোক তো নেই। বাড়ির পেছনের দিক একদম যাবে না বুঝলে।
“কেন?
“আহ সেখানে একটা আম গাছ আছে।
“তো?
“আম গাছের পেত্নী তোমাকে নিয়ে যাবে আর সে আমার মম হয়ে আমার ড্যাডের সাথে সংসার করবে। একথা জানো না তুমি!
“নির্ঝর!
নির্ঝর জোরে জোরে হাসতে লাগলো! নীলিমা বুঝতে পারল ছেলে তার মন ভালো করার চেষ্টা করছে। একটা মাত্র’ই ছেলে তার। খুব আদরের ! আর যে কখনো সন্তান নেবার চেষ্টা করেনি তা না। কিন্তু সে আর মা হতে পারবে না। তো কি? এই একটা ছেলে নিয়ে কি জীবন পার করতে পারবে না।
—–
অর্ণব ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। নির্ঝরের ঘরেই ঘুমিয়েছে তাকে জড়িয়ে ধরে। নির্ঝর একটা গল্পের বই শুনিয়েছিল তাকে। তাই শুনতে শুনতে’ই ঘুম! দরজায় কড়া নাড়ল মেহেরিন। নির্ঝর উঠে বসল। অর্ণব কে কোলে করে নিয়ে গেল নিজের ঘরে। নির্ঝর অবশ্য চেয়েছিল এখানেই থাক কিন্তু মুখে বলতে পারল না।
মেহেরিন যেতেই নির্ঝর বিছানার পাশ থেকে বিয়ারের বোতল টা বের করল। বিয়ারের বোতল টা মুখে দিতেই দরজা এবার নক ছাড়াই সরাসরি খুলে গেল। নির্ঝর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়ারের বোতল টা নামিয়ে পেছনে নিল। ভাগ্যিস মেহেরিন ফোন টিপতে টিপতে ঢুকল। তাই নির্ঝর কে খেয়াল ও করি নি।
নির্ঝর হেসে বলে উঠে,
“আরে মেহু যে!
মেহেরিন এবার নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর পা বাড়িয়ে রুমে ঢুকল। নির্ঝর ধপ করেই বিছানায় বসে পড়ল। মেহেরিন ফোন ফোন টিপতে টিপতে সোফার কাছে এসে বসল। নির্ঝর বিয়ারের বোতল টা যেভাবে হোক লুকিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। ঠিক তৎক্ষণাৎ মেহেরিন ও তাকাল তার দিকে। নির্ঝর নিজের হাত ধরে বলে উঠে,
“অ্যাআ আহ!
“কি হয়েছে?
“হাত টা ব্যাথা করছে খুব।
মেহেরিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“হঠাৎ..
“হঠা..হঠা.. হঠাৎ.. না হঠাৎ না তো।
“তাহলে এতোক্ষণ তো ব্যাথা ছিল না। আপনার তো হাতে নাড়াচাড়া বারণ। কি করতে যাচ্ছিলেন
নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন’র নির্ঝরের কাছেই আসতে লাগল। নির্ঝর চট করে উঠে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে নির্ঝরের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ব্যাথা কি খুব বেশি, ডাক্তার কে ফোন করব।
“না না এতো বেশি না।
“আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন!
“হ্যাঁ হ্যাঁ বসছি!
নির্ঝর গিয়ে সোফায় বসল। মেহেরিন বলে উঠে,
“সোফায় বসছেন কেন? বিছানায় আরাম করে বসুন।
“না আম.. আমি এখানে ঠিক আছি।
নির্ঝর এসে মেহেরিন’র পাশে বসল। চুল গুলো কানে গুঁজে নির্ঝরের হাত ধরল। নির্ঝর অভিনয় করে চেঁচিয়ে বলল,
“আস্তে আস্তে!
“কেন নড়াচড়া করতে গেলেন বলুন।
“দরকার ছিল তাই।
“কিসের এতো দরকার। আমি ছিলাম আমাকে বলতে পারতেন।
“না তোমাকে বলা যাবে না।
“কেন বলা যাবে না।
“আমম এমনেই।
“মানে।
“কিছু না
“কি লুকাচ্ছেন আপনি।
মেহেরিন’র কথা শুনে নির্ঝরের মনে হলো গলা শুকিয়ে গেল। সে শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“এভাবে বলবে না।
“আপনি এমন করছেন কেন? কি এমন জিজ্ঞেস করলাম আমি।
নির্ঝর মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাতে গেলো সে আবারো মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। কারণ সে ভয় পাচ্ছ। মেহেরিন বিছানার কাছে গেলে বিয়ারের বোতল দেখলেই সর্বনাশ! না এই ভাঙা হাতেই তাকে ঘর বের করে দেয়।
মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। বলে উঠে,
“আপনি বসুন, আমি ঔষধ নিয়ে আসছি। ঔষধের সময় হয়ে গেছে।
নির্ঝর সাথে সাথে মেহেরিন’র দিকে ঘুরল। অতঃপর তাকাল বিছানার দিকে। ঔষধ বাক্সের পেছনেই বিয়ারের বোতল। এখন মেহেরিন সেখানে গেলে তো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে। নির্ঝর চট করে উঠে দাড়িয়ে বলে,
“আমি তো ঔষধ খেয়ে নিয়েছি
“ঔষধ খেয়েছেন!
“হ্যাঁ আমি খেয়ে নিয়েছি!
“ওহ আচ্ছা! তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন ঠিক আছে! আর যন্ত্রণা কি এখনো করছে না কমেছে
“না না যন্ত্রণা কমে গেছে, তুমি বরং চলে যাও। আমি এখন ঘুমাবো, খুব ঘুম পাচ্ছে আমার!
“হ্যাঁ আমি…
বলার আগেই নির্ঝর মেহেরিন কে টেনে ঘর থেকে বের করে দেয়। অতঃপর জলদি বিয়ারের বোতল টা সরিয়ে আলমারি তে রেখে দেয়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ইশ কতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে সে।
নির্ঝর চেঞ্জ করার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড় একবার ডানে নেয় আরেকবার বামে। আলমারির কাছে গিয়ে নাইট ড্রেস বের করে। অতঃপর ধীরে ধীরে গায়ের শার্টের বোতাম খোলে। শার্টের আর্ধেক শরীর থেকে আলাদা করার বাকি আর্ধেক আলাদা করতে পারে না সে। হাতের ব্যাথার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। এরকম আর্ধেক শার্ট পরেই বসে থাকে বিছানায়। বাড়িতে থাকতে ড্যাড সাহায্য করতো কিন্তু এখন কাকে বলবে সে! এসব ভেবেই নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
দরজা খোলার শব্দ আবারো পায় নির্ঝর। দাঁড়িয়ে দেখে মেহেরিন! মেহেরিন নির্ঝর কে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। নির্ঝর খানিকক্ষণ মেহেরিন’র দিকে তাকানোর পর বুঝতে পেরে সাথে সাথে ঘুরে যায়। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে বলে উঠে,
“কি শুরু করেছ কি মেহু! একটু পর পরই..
“আমার ফোন নিতে এসেছিলাম। আমাকে বের করে দিয়েছেন কিন্তু ফোন তো নিতে দেন নি!
বলেই মেহেরিন সোফার কাছ থেকে ফোন টা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা আপনার এই অবস্থা কেন? এভাবে আর্ধেক শার্ট পড়ে বসে আছেন যে।
নির্ঝর বিরক্ত হয়ে ঘুরে বলে,
“আর্ধেক শার্ট পড়ে বসে থাকি নি। খোলার চেষ্টা করছি আর এতোটুকুই সফল হয়েছি।
“কেন?
“এই! আমার হাতের কারণে। বাসায় থাকতে ড্যাড সাহায্য করতো কিন্তু এখন..
“আমি হেল্প করবো!
নির্ঝর এক পা পিছিয়ে পা জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে বলে,
“না না!
মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে এগিয়ে নির্ঝরের কাছে আসতে থাকে। নির্ঝর পিছুতে পিছুতে ধপাস করে পড়ে যায় বিছানায়। মেহেরিন নির্ঝর সামনে দাড়িয়ে মুখ ভেংচি কেটে নির্ঝর হাত ধরিয়ে উঠে বসায়। অতঃপর নির্ঝরের আর্ধেক পড়া থাকা শার্ট টা খুলার চেষ্টা করে। নির্ঝর নড়াচড়া শুরু করে দেয় আর বলতে থাকে..
“মেহু ধীরে.. আমার হাত কিন্তু ব্যাথা পাবো।
“এই চুপ করুন তো। উঠে দাঁড়ান!
নির্ঝর উঠে দাঁড়ায়। মেহেরিন নির্ঝরের শার্ট টা খুলে দিয়ে আরেকটা শার্ট তার গায়ে পড়িয়ে বোতাম লাগাতে থাকে। নির্ঝর অদ্ভুত চাহনিতে দেখতে থাকে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর মুখ সরিয়ে নেয়। মেহেরিন শক্ত গলায় বলে উঠে,
“এতো রিয়েক্ট করার কিছু হয় নি, আপনি এতোও হট নন ঠিক আছে।
“কি? কি বললে তুমি আমায়!
“যা শুনেছেন তা!
বলেই মেহেরিন ফোন নিয়ে বের হয়ে গেল। যাবার আগে ধপাস করে দরজাও লাগিয়ে দিয়ে গেল। নির্ঝর মিন মিন করে বলল,
“আমি হট না দেখতে!
বলেই আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। নিজেকে দেখতে লাগাল। একবার এপাশ একবার ওপাশ। ঘুরেও দেখলো খানিকক্ষণ। অতঃপর বলে উঠে,
“কোন দিক দিয়ে হট নই আমি। এই মেয়ে কি বলে গেল। চোখ নেই ওর নাকি। আজ পর্যন্ত এই কথা আমাকে কেউ বলে নি আর ও…
নিজের চুল নিজে টেনে ধপাস করে নিচে বসে পড়ল নির্ঝর। চুল এলোমেলো করে ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরল। মেহুর এই কথা তার মোটেও পছন্দ হয় নি। কিভাবে বলতে পারল সে। উঠে গিয়ে বিয়ারের বোতল টা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিয়ার খেতে লাগল সে। হুট করেই মনে পড়ল একটি কথা। নিরব আর মেহেরিন কারো সম্পর্কে কথা বলছিল। কিন্তু কে সে? মেহেরিন’র অতীত…
#চলবে….