অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-২১

0
3144

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২১

মেহেরিন সবে মিটিং রুমে প্রবেশ করল। সমস্ত ক্লাইন্ট তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন এসে চেয়ারে বসল। তার পাশের চেয়ারটাতে নিরব বসল। মেহেরিন সামনে তাকিয়ে দেখল তার বিপরীত চেয়ার টা খালি। কপালে ভাঁজ পড়ল তার। মেহেরিন তার পাশে দাঁড়ানো পিএ’র দিকে তাকাল।

“জ্বি ম্যাম!

“আর কারো আসার কথা?

বলেই তার বিপরীত চেয়ারের দিকে তাকাল। পিএ চেয়ার টার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি খোঁজ নিচ্ছি ম্যাম!

মেহেরিন মাথা নাড়ল। নিরব মিটিং শুরু করার কথা বললে মেহেরিন তাকে ৫ মিনিট পর শুরু করার কথা বলল। ৫ মিটিং পর’ই মেহেরিন’র পিএ ফেরত এলো। মেহেরিন পেছনে ফিরে দেখল পিএ’র সাথে সাথে জন ও এসেছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁনচিত করে হেসে দিল। তখন প্রবেশ ঘটল নির্ঝরের! তাকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল মেহেরিন বাদে। নিরব দাঁড়িয়ে অবাক চোখে নির্ঝর কে দেখতে লাগল। তার পরনে কালো রঙের সুট! ভেতরে সাদা শার্টের মাঝে কালো টাই টা দেখা যাচ্ছে। নির্ঝর প্যান্টের প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে হালকা কেশে বলল,

“সবাইকে অপেক্ষা করানোর জন্য আমি বিশেষ ভাবে দুঃখিত!

ক্লাইন্টের মাঝে একজন বলে উঠল,

“ইট’স ওকে স্যার! আপনি আমাদের সাথে মিটিং অ্যান্টেড করছেন এতে আমরা সকলে অনেক খুশি!

“ধন্যবাদ!

মেহেরিন হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“অফিসের প্রথম দিনের প্রথম মিটিং’এ ৫ মিনিট লেট আপনি!

মেহেরিন’র কথায় নির্ঝর বাঁকা হাসল। নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল,

“সরি জান!

মেহেরিন খানিকটা অবাক হলো। উপস্থিত সবাই মুখ টিপে হাসল। নির্ঝর নিজের চেয়ারের সামনে এসে সবাইকে বসতে বলল। অতঃপর নিজে চেয়ারে বসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,

“জ্যামের কারণে আটকে ছিলাম!

মেহেরিন ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
“মিটিং শুরু করা যাক!

অতঃপর মিটিং শুরু হলো। মিটিংয়ের পুরো সময়টাই নির্ঝর মেহেরিন কে দেখছিল। সেই খবর মেহেরিন’র না থাকলেও নিরবের চোখ থেকে তা আড়াল হয় নি। নিরব বেশ বুঝতে পারছে নির্ঝর তাকে দেখানোর জন্য’ই এসব করছে। কি করতে চাইছে সে? তাকে চ্যালেঞ্জ করছে, যে মেহেরিন কে তার থেকে কেড়ে নিবে!

মিটিং শেষ হবার পর সবাই নির্ঝর কে অভিনন্দন জানাল। নির্ঝর বাইরে বের হতেই পেছন থেকে মেহেরিন ডেকে উঠল,

“মিঃ নির্ঝর চৌধুরী মেঘ!

নির্ঝর মুখ টিপে হেসে পেছনে ফিরল। মেহেরিন হেঁটে তার সামনে এলো। নির্ঝর বলে উঠল,

“এভাবে নাম ধরে ডাকলে মানুষ ভাববে দুদিন পর’ই আমাদের ডির্ভোস হয়ে যাবে।

“আপনি যেভাবে আজ মিটিং এ আমাকে ডাকলেন এর জন্য এই ভাবনা টা মানুষের ব্রেইনে প্রভাব ফেলবে না।

নির্ঝর মুখ খুলে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“বাসায় মম আছে, অর্ণব তার কাছে!

মেহেরিন হেসে বলল,
“তা আমি জানি তবে আমি সেই কারণে আপনাকে ডাকি নি।

“তাহলে?

মেহেরিন নির্ঝরের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকাল। বলে উঠল,

“মনে হচ্ছে এটার প্লাস্টার খোলার সময় হয়ে আছে।

নির্ঝর উঠিয়ে নিজে দেখে বলল,

“আহ, এটার কথা তো ভুলেই গেছিলাম!

“তো যাওয়া যাক হসপিটালে!

“হুম!

মেহেরিন আর নির্ঝর পা বাড়াল। পেছন থেকে নিরব সবটা দেখল। নির্ঝর পেছনে তাকিয়ে নিরব কে দেখে হেসে মেহেরিন’র একটু পাশে এসে হাঁটতে লাগল।

বাইরে এসে জন থেকে গাড়ির চাবি চাইল নির্ঝর। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর গাড়ির দরজা মেহেরিন’র জন্য খুলে দিয়ে বলে উঠল,

“আমার হাত এখন ঠিক আছে,‌ড্রাইভ করতে পারবো!

মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে গাড়ির বসল। নির্ঝর এসে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। খানিকক্ষণ বাদেই মেহেরিন বলে উঠে,

“এতো ফরমালিটি পূরণ করার কোন দরকার নেই?

“মানে..

“এই যে সবার সামনে… ( বাকি কথা না বলে হেসে বলল ) সবাইকে দেখানোর কোন দরকার নেই আপনার আর আমার ভালোবাসার মাঝে কোন খামতি নেই!

নির্ঝর কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলল না। কোথাও যেন কথা আটকে গেল তার!

—–

হসপিটালে এসে নির্ঝরের প্লাস্টার খোলা হল। নির্ঝর দাঁড়িয়ে ডাক্তার’র সাথে কথা বলে সামনে হাঁটা ধরল। তাকিয়ে দেখল মেহেরিন কোন ডাক্তারের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর এসে মেহেরিন’র পাশে দাঁড়াল। বলে উঠল,

“ডঃ ফাহান হোসেন! সাইক্রেটিস, ( মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে.. ) তোমার কি তাকে দরকার ?

মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সবার প্রয়োজন একদিন ফুরিয়ে যায় নির্ঝর!

বলেই সামনের দিকে হাটা ধরল মেহেরিন। নির্ঝর কেবিনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে মেহেরিন’র সাথে সাথে হাটা ধরল!

—–

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে মেহেরিন বিছানা ঠিক করছে। আশপাশ তাকিয়ে অর্ণব কে খুঁজছে। নিশ্চিত নির্ঝরের ঘরে। আজও কি সেখানে ঘুমাবে। মেহেরিন এসে ইজি চেয়ারে বসল। তার হাতে একটা বই! তবে পড়তে ইচ্ছে করছে না। ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে অর্ণবের অপেক্ষা করতে লাগল। খানিকক্ষণ বাদেই পায়ের আওয়াজ এলো কানে। মেহেরিন প্রথমে ভাবল অর্ণব আসছে। কিন্তু তার সাথে আরেকজন ও আসছে। মেহেরিন তার পায়ের আওয়াজ ও পাচ্ছে। কে আসছে নির্ঝর! মেহেরিন চোখ মেলে দরজার দিকে তাকাল। নির্ঝরের হাত ধরে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে দরজার দিকে। মেহেরিন অর্ণব কে দেখে হাসার চেষ্টা করলেও হাসির রেখা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। কারণ নির্ঝরের হাতে বালিশ!

অর্ণব দৌড়ে এসে বিছানার মাঝখানে উঠে বসল। এক হাত দিয়ে এপাশে বলল,

“ড্যাডি!

আর ওপাশে হাত দিয়ে বলল,

“মাম্মি!

মেহেরিন অবাক চোখে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর মাথা চুলকিয়ে হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,

“মেহু! আসলে আমি বলেছিলাম কিন্তু..

কথা শেষ হবার আগেই অর্ণব দৌড়ে এসে নির্ঝর হাত ধরে বিছানায় এনে বসাল। অতঃপর এলো মেহেরিন’র কাছে। একগাল হেসে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“অর্ণব মাম্মি আর ড্যাডি, একসাথে ঘুমাবে তাই তো!

অর্ণব হেসে জোরে জোরে মাথা নাড়ল। মেহেরিন হেসে বলল,

“ঠিক আছে ঘুমাবে কিন্তু তার আগে ওখানে থাকা দুধের গ্লাস টা শেষ করো। যাও যাও জলদি!

অর্ণব খুশিতে দৌড়ে এসে দুধের গ্লাস টা খেতে শুরু করল। পুরো গ্লাস শেষ করল। তার ঠোঁটর উপরে খানিকটা দুধ লেগে গেলো। নির্ঝর আর মেহেরিন তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

পানির পিপাসা হওয়াতে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল নির্ঝরের। অর্ণব তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। ঘরে শুধু ল্যাম্পশেডের বাতিটা জ্বলছে! নির্ঝর ধীরে অর্ণব কে সরিয়ে বিছানায় উঠে বসল। গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে সামনে তাকাতেই তার ভ্রু কুনচিত হলো। নির্ঝর পানির গ্লাস রেখে ফোনের আলো জ্বালিয়ে সামনে ধরল। ইজি চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে মেহেরিন! নির্ঝর বিছানার ওপাশে তাকাল। একটা কোলবালিশ রাখা সেখানে। নির্ঝরের মনে আছে ঘুমানোর আগে মেহেরিন এসে বিছানায় শুয়ে ছিল। তাহলে কি তাদের ঘুমানোর পর’ই উঠে গেল সে।

নির্ঝর বিছানা ছেড়ে উঠলো। ফোনের আলো জ্বালিয়ে চেয়ারের সামনে এলো। ফোনের আলোয় মেহেরিন’র মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে! তার কোলের কাছে খোলা বই রাখা। নির্ঝর বইটা বন্ধ করে টেবিলে রাখল। একটা চাদর এনে মেহেরিন’র গায়ে দিল। তার মুখের কাছে আসা চুল গুলো কানে গুঁজে দিতেই খানিকটা নড়েচড়ে উঠলো সে। নির্ঝর দ্রুত হাত সরিয়ে নিল।

কিন্তু মেহেরিন’র ঘুমের এই মুগ্ধতা আকৃষ্ট করল তাকে। খুব লোভ হল একটু ছুঁয়ে দেখতে। সে হাঁটু গেড়ে বসে মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। মেহেরিন এবারও নড়েচড়ে উঠল। তবে জাগল না। নির্ঝর কিঞ্চিত হাসল। সে হেসে উঠে যেতেই তার কানে মেহেরিন’র আওয়াজ ভাসল। সে আবারো মেহেরিন’র সামনে দাঁড়াল। ঘুমের ঘোরে কিছু বলছে সে। তার ঠোঁট জোড়া নড়ছে। নির্ঝর কান রাখল মেহেরিন’র ঠোঁটের কাছে। কাঁপা কাঁপা কিছু শব্দ এসে বাজল তার কানে। মেহেরিন বলছে,

“ছছছেড়ে যেও না আমায়। প্লিজজ ছেড়ে যেও ননা!

নির্ঝরের মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। সে মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাল। মেহেরিন চুপ হয়ে গেল। নির্ঝর বিছানার কাছে না এসে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। মেহেরিন কাকে ছেড়ে না যাবার কথা বলছিল। কে সে? বার বার তার মনে উঁকি দিতে লাগল সেই কথা। রাতের অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকাতেই আর্ধেক পুড়া সেই ছবি ভেসে উঠলো। চোখ মেলে তাকিয়ে মুখ খুলে শ্বাস নিল সে!

বরাবরের মতো অ্যালার্মের শব্দে মেহেরিন’র ঘুম’ই আগে ভাঙল। অ্যালার্ম বন্ধ করে অর্ণবের দিকে তাকাল সে। উল্টো হয়ে শুয়ে আছে সে। মেহেরিন অর্ণব কে ঠিক করে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিল। তার কপালে চুমু খেয়ে সামনে তাকাল। নির্ঝরের ঘুমিয়ে থাকা মুখখানা চোখে পড়ল তার। নিজের ঘুম ঘুম চোখে দেখতে লাগল তাকে। অতঃপর সেখান থেকে উঠে দাঁড়াল সে। তার ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি। শাওয়ার নেবার জন্য বাথরুমে’র দিকে পা বাড়াল সে!

মেহেরিন বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখল। ঘুমে ঢলছে সে। ঘাড় ব্যাথা করছে। ঘাড়ে হাত রেখে চোখ বন্ধ করল সে। গায়ের জামা টা খোলার উদ্দেশ্য জামার পেছনের চেইন খুলল। অতঃপর জামার হাতা খুলে দরজার দিকে তাকাল সে। সামনে নির্ঝর কে দেখতে পেয়ে তার ঘুমের ঘোর মুহূর্তে কেটে গেল। নির্ঝর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

নির্ঝর মাথা ঝাঁকিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো। জামায় হাত রেখে তার চিৎকারের সাথে তাল মিলালো মেহেরিন। নির্ঝর ধপাস করে দরজা বন্ধ করে হুট করে মেঝেতে বসে পড়ল। এদিকে মেহেরিন মাথায় হাত রেখে ফ্লোরে বসে পড়ল। আতঙ্কিত পরিবেশ মুহুর্তেই শান্ত হয়ে গেল। নির্ঝর মেঝেতে বসে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। বিছানার কাছ থেকে আওয়াজ ভেসে আসল,

“ডড্যাডি!

নির্ঝর ঢোক গিলে আতঙ্কিত চোখে অর্ণবের দিকে তাকাল। অতঃপর…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here