মায়াবতীর_প্রণয়ে পর্বঃ৫
#মম_সাহা
মিষ্টি পিছে ঘুরে নিবিড়কে দেখে অবাক হয়ে যায়। বিষ্ময়ে বলে উঠে
-“আপনি!”
নিবিড় পকেটে হাত গুঁজে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে। মিষ্টিও ততক্ষণে উঠে দাঁড়ায়। নিবিড় নিজের চুল গুলো পিছে ঠেলে।সুখদাতা মানে আলীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-“জ্বি মেম আমি।চিনতে পারেন নি আমাকে?”
নিবিড়কে দেখে মিষ্টির সেদিনের রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।কিন্তু আলীর সামনে সে রুড বিহেব করতে চায় নি।তাই সে আলীর হাতে খুচরো টাকা দিয়ে চলে যেতে বলে সোজা হাঁটা ধরল।
নিবিড়ের মিষ্টির আচরণ বুঝতে সময় লাগে নি।সেও মিষ্টির পিছে পিছে হাঁটছে আর বলছে
-“সরি বৃষ্টিকন্যা আই মিন মিষ্টি সেদিনের আমার মায়ের আচরণের জন্য আমি মন থেকে লজ্জিত ও দুঃখিত।”
মিষ্টির জেনো সেদিনের কথা আরও মনে পড়ে শরীর জ্বলে উঠল।সে হাঁটা থামিয়ে শক্ত চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-“হাউ ফানি না! মা একজনকে অপমান করবে,ছেলে তার কাছে ক্ষমা চাইবে।বাহ্ অসাধারণ। মানে জুতা মেরে গরু দান আপনারা ভালোই পারেন।ট্রেনিং প্রাপ্ত পরিবার।বাহ্।”
মিষ্টির কথায় নিবিড় বেশ লজ্জিত বোধ করল।কিন্তু সে হাসি মুখেই বলল
-“আমি সত্যিই জানতাম না আম্মু নিচু দেখানোর জন্য এমন কিছু করবে আমি সত্যিই দুঃখিত মেডাম।”
নিবিড়ের ব্যবহার মিষ্টির রাগের মধ্যে পানি ঢেলে দেওয়ার কাজ করল।মিষ্টির রাগ নেমে আসলো।শান্ত স্বরে বলল
-“দেখুন যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি এ ব্যাপারে আর একটাও কথা বলতে চাচ্ছি না।আর সব থেকে বড় ব্যাপার আপনাদের কারো সাথে এসব কথা বলতে চাচ্ছি না।এসব দূরে থাক কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না।আসছি।”
নিবিড় বুঝতে পেরেছে মিষ্টির ব্যাক্তিত্বের প্রখরতা অনেক। নিবিড় মনে মনে তো ভেবেই নিয়েছে এ মেয়ের রাগ সে ভাঙাবে।নিবিড় আবার এগিয়ে এসে বলল
-“আমার মায়ের জন্য আপনি আমার সাথেও কথা বলবেন না? এটা অন্যায় হয়ে গেলো না এই বাচ্চাটার উপর?”
নিবিড়ের এমন অদ্ভুত কথা শুনে মিষ্টি ফিক করে হেসে উঠে।হাসতে হাসতেই বলে
-“আপনি বাচ্চা? সিরিয়াসলি ডাক্তার সাহেব আপনি বাচ্চা? আপনি বাচ্চা হলে বুড়ো কে?”
কথা শেষ করে মিষ্টি খিলখিল করে হেসে উঠলো। নিবিড় মুগ্ধ হয়ে দেখছে সেই হাসি।নিবিড় মিছে মিছি রাগী ভাব করে বলল
-“আমাকে বুড়ো মনে হলো আপনার? আমি বুড়ো? জানেন কত মেয়ে পাগল আমার জন্য।”
মিষ্টি হাসতে হাসতেই বলল
-“না আপনি বুড়া না ছোঁড়া। আর পাগলের পিছনে তো পাগলই ঘুরবে স্বাভাবিক। ”
মিষ্টি আবার হো হো করে হেসে উঠলো।এতক্ষণে নিবিড় আর মিষ্টি বেশ মিশে গেছে।নানা কথার মাঝে হঠাৎ মিষ্টি বলে উঠল
-“আচ্ছা আলীকে আপনি কাঠগোলাপ কেনো দিয়েছেন?”
নিবিড়ও এবার হাসি থামিয়ে আমতা-আমতা করে বলল
-“আসলে আপনি তো এই দু’দিন আসেন নি তাই আমি আপনার হয়ে দিয়ে দিলাম।আমার শাস্তি বেচারা কেনো পাবে?”
মিষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে
-“আপনি কীভাবে জানেন আমি ওদের কাঠগোলাপ দেই?তার মানে আপনি আমাকে আগে থেকেই চেনেন?”
নিবিড় হাসি দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
-“জ্বি মেডাম আগে থেকেই চিনি।”
মিষ্টি বিষ্মময় মাখা কন্ঠ নিয়ে বলল
-“আগে থেকে কীভাবে?কবে থেকে?”
নিবিড় পকেটে হাত দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল
-“বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃষ্টিকন্যাকে যেদিন থেকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছিলাম।সেদিন থেকেই।তারপর প্রায়ই সেই বৃষ্টিকন্যার পিছু নিতাম।বিয়ে বাড়িতে সেই কন্যাকে দেখে তো আরেকবার থমকে গিয়েছিলাম। তারপরই আম্মুকে বলেছি।কিন্তু আম্মু যে এমন কান্ড করবে ভাবি নি।”
মিষ্টি এবার বুঝতে পেরেছে কবে দেখেছে।সেদিন বিকেলে কলেজ থেকে আসার সময় ভিজছিলো সেদিনই দেখেছে।
“মেম স্যার আপনাকে ডাকছে,চলুন আমার সাথে।” হঠাৎ নীড়ের কথায় চমকে উঠে মিষ্টি।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
-“কোন স্যার ডাকছে?”
নীড় জেনো থতমত খেয়ে যায়। নীড়ের স্যার কে সেটা তো মিষ্টি ভালো করেই জানে তবে আবার কেনো জিজ্ঞেস করল।এখন সে কীভাবে উত্তর দিবে কা নিয়ে পরে গেলো মহা জ্বালায়।নীড়কে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে দেখে নিবিড় জিজ্ঞেস করল
-“মিষ্টি কে উনি?”
মিষ্টি নীড়ের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমার পারিচিতই।আমার দরকারী কাজ আছে ওনার সাথে। আজ তাহলে আসি ভালো থাকবেন।”
নিবিড়ও মাথা নাড়িয়ে নিজের পথে গেলো।আর মিষ্টি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল নিজের চোখমুখ শক্ত করে।নীড় পড়ে গেলো বিপাকে। মেমকে যদি নিয়ে যেতে না পারে তাহলে তো স্যার রাগারাগি করবে তার উপরই। নিবিড় আবারও অনুনয়ের সুরে বলল
-“মেম চলুন না স্যার দাঁড়িয়ে আছে। আপনাকে না নিয়ে গেলে আমাকে বকবে।”
মিষ্টি চোখ ছোট ছোট করে নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলে
-“আমাকে নিয়ে যাবেন কেমনে? কোলে করে নাকি কাঁধে করে? আমি কি ছোট বাঁচ্চা যে আমাকে নিয়ে যেতে হবে।”
মিষ্টির কথায় আরও বিড়ম্বনাতে পড়ল নীড়।সে এখন স্যারকে গিয়ে কি বলবে সেটা ভাবতে ভাবতেই পিছন থেকে একটা গমগমে স্বর ভেসে আসল
-“নীড় তোমাকে পাঠিয়ে ছিলাম তোমার মেমকে ডাকতে।কতক্ষণ হয়েছে বলো তো?”
নীড় দুজনের ঝাড়ি খেয়ে চেপ্টা হবার জোগাড়। আমতা-আমতা করে বলল
-“স্যার আমি তো মেমকে বলেছিলাম।কিন্তু মেমই যেতে চাচ্ছে না।”
এবার আদ্র দৃষ্টি ঘুরিয়ে মিষ্টির দিকে তাকাল।মিষ্টি আদ্রের চোখে কিছু রাগের আভা পেয়েছে।মনে মনে মিষ্টি ভাবছে রাগ তো আমার করার কথা আর উনি রাগ দেখাচ্ছে।আজ দেখবে একটা কথাও বলবো না।
আদ্র মুখে কাঠিন্য ভাব বজায় রেখে গম্ভীর কন্ঠে মিষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“এটা রাস্তা,আশাকরি কোনো সিনক্রিয়েট করা ছাড়া আপনি গাড়িতে উঠবেন।গো মিষ্টি।”
মিষ্টির এবার রাগ নেমে সেটা অভিমানে রুপান্তরিত হলো।আজ তিনদিন যাবত সে রাগ করে আছে কই তাকে সুন্দর ভাবে বুঝাবে তা না করে রাগ দেখাচ্ছে।সে যাবে না গাড়িতে। কেনো যাবে সে।মিষ্টি আদ্রের কথা পাত্তা না দিয়ে নিজের মতন গটগট করে হেঁটে মেইন রাস্তার দিকে চলে গেছে।সে দ্রুত সম্ভব রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছাবে।
আদ্র মিষ্টির এমন আচরণের কারল বুঝতেই পেরেছে।সেও নীড়কে গাড়ির চাবি দিয়ে হাঁটা ধরলো মিষ্টির পিছে।
মিষ্টি একটা রিক্সা পেয়েও গেলো।সে রিক্সায় বসতে বসতে তার পাশের সিটে ধপ করে কেউ বসে পড়ল মনে হলো।সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে আদ্র।আদ্রকে দেখে সে নেমে যেতে নিলেই আদ্র খপ করে তার হাতটা ধরে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা চালাতে বলল।
মিষ্টি বেশ খানিকটা সময় আদ্রের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল।অবশেষে না পেরে সে চুপ করে বসে থাকল।
আদ্র মিষ্টির হাত আগের ন্যায় ধরে রেখে সামনের দিকে তাকিয়েই বলল
-“ঐ ছেলেটার সাথে এত কিসের কথা আপনার? ওর মা আপনাকে বাড়ি ভরা মানুষের সামনে অপমান করে গেলো আর আপনি ওর সাথেই হেসে হেসে কথা বলছেন কেনো?”
মিষ্টি আড় চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“আপনি আমাকে ফলো করছিলেন কেনো?”
আদ্র এবার মুসিবতে পড়ে গেলো কি বলবে ভেবে।তারপর কিছু একটা ভেবে বলল
-“আমি আপনাকে ফলো করি নি।গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে এমন কথা বলতে দেখেই থেমে ছিলাম।”
মিষ্টি আর কোনো উত্তর দিলো না।শুধু চুপ করে রইল।আদ্র আবার প্রশ্ন করল
-“আপনি আমার কল ধরেন নি কেনো?বাসার বাইরে আসেন নি কেনো?আর ছেলের সাথে এত কথাও বা বলেছেন কেনো?”
মিষ্টির আবার রাগটা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠল।সে বেশ রেগেই বলল
-“আপনাকে এত কৈফিয়ত দেবো কেনো?হু আর ইউ ম্যান? আপনি কে আমার? কেউ না,কিছু না।”
মিষ্টির কথায় জেনো হাজার ছুড়ি আঘাতের মতন যন্ত্রণা পেলো আদ্র।কতক্ষণ চুপ থেকে রিক্সাচালাককে রিক্সা থামাতে বলল।আদ্রের নিরবতায় মিষ্টিও চুপ করে গেলো।রিক্সা থামানোর সাথে সাথে আদ্র রিক্সা থেকে নেমে গেলো।আর তেজি কন্ঠে বলল
-“আমি কে তাই না? ওয়েট এন্ড ওয়াচ আমি কে তোমাকে হারে হারে বুঝিয়ে দেবো।বি রেডি।”
তারপর রিক্সা চালকের উদ্দেশ্যে বলল
-“ভালোভাবে সাবধানে ওনাকে পৌঁছে দিবেন।”
মিষ্টি আর টু শব্দও করে নি।কি হবে এবার?
চলবে,,