অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-৪৬

0
3161

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৪৬

পুরো বালতির পানি উপুড় করে ঢালা হলো মেহেরিন’র উপর। জ্ঞান ফিরল তার। চোখ মেলতে সময় লাগলেও সামনে থাকা লোকদের দেখে রেগে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। রাফি তার দিকেই হেসে তাকিয়ে আছে। রিতা তো রীতিমতো তেড়ে আসতে চাইছে তাকে মারবার জন্য।রাফি তাকে সামলিয়ে বলে, কুল বেবী কুল। এতো তাড়াহুড়োর কি আছে।

“ছাড়বো না এই মেয়েটা কে আমি। কতো বড় সাহস ওর আমাকে মারতে আসে‌। কি করে হয় এতো বড় সাহস ওর। তুমি ওকে কেন ছেড়ে রেখেছ মেরে ফেলছো না কেন। যাস্ট সহ্য করতে পারছি না ওকে আমি।

“আরেকটু সহ্য করো বেবী। শিকার তো যেচে এসেছে আমার কাছে। জালে ধরাও পড়েছে। একটূ তো আমারও দায়িত্ব থাকে তাই না।

কুৎসিত ভাবে হেসে কথা গুলো বলল রাফি। রিতা রাগে ফুসফুস করতে করতে চেয়ারে বসল। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফির দিকেই। রাফি একটা চেয়ার পেতে সামনে এসে বসল তার। বলে উঠল,
“তা কি ভাবছো রাফি!

“কতোটা যন্ত্রণা দিয়ে মারা যায় তোকে!

“ছিঃ! বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে বুঝি শালিকা, তোমার দুলাভাই হইয়া না আমি!

“তোকে মানুষ বলতেই ঘৃণা হয় আমার

“আহ! ( মেহেরিন’র মাথায় হাত বুলিয়ে ) খুব ছোট্ট তুমি, তাই একটা সুযোগ দিচ্ছি।

মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রাফি বাঁকা হাসল। অতঃপর বলল, তোমার সব সম্পত্তি আমার নামে করে দাও। তার পরিবর্তে বেঁচে যাবে তুমি। ডিল টা কিন্তু খারাপ না বল।‌

মেহেরিন হেসে বলল, পায়ের ধুলো কিন্তু মাটিতেই মানায়!

“কিচ্ছু বুঝতে চাও না তুমি। একটু বুদ্ধি নেই তোমার। একবার ভেবেছ তুমি এখানে আর তোমার অর্ণব! সে কিন্তু এখন একা, বাসায়। কেউ নেই তার সাথে।

দাঁতে দাঁত চেপে ধরল মেহেরিন। রাফি আবারো হাসল।
“এখন আমার কথা শুনে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও নাহলে..

“নাহলে কি, মেরে ফেলবে আমায়। যেভাবে আমার দি কে খু*ন করেছিলে!

রাফি হেসে উঠে গেল। রিতা রেগে দাঁড়িয়ে বলল, বাজে কথা বলা বন্ধ কর মেহেরিন। তোমার দি কে কেউ মারে নি। সে স্বেচ্ছায় আত্ম*হত্যা করেছে।

মুখ সরিয়ে আনল রিতার থেকে। রাফির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, সত্যি’ই কি তাই!

“নাহ! বিশ্বাস করো আমি কিছু করি না। শুধু আলতো ভাবে তার গলার উড়নাটা চে*পে ধরেছিলাম। বেচারি পেরে উঠেনি আমার সাথে। ছটফট করতে করতে ম*রে গেল আমার সামনে, ব্যস!

মেহেরিন রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে ধরল।ঘৃণা লাগছে সামনের মানুষটিকে দেখে। চোখ সরিয়ে ফেলল তার থেকে। রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। রিতা এসব শুনে আঁতকে উঠল। রাফির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এএএসব কি বলছো তুমি! বেবী..

“বেবী! এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। আমি আছি না তোমার সাথে।

অতঃপর যেই না ধরতে যাবে রিতা কে অমনি রিতা এক পা সরে গেল। রাফি হেসে বলল, “কি হয়েছে ভয় পেলে নাকি।

“তুমি একটা মানুষ কে খু*ন করেছ!

“বেবী, একটু আগেই তো তুমি বললে ওকে মে*রে ফেলতে আর এখন এই নাটক করেছ। ইস নট ফেয়ার

“রাফি! আমি পুরোটা রেগে বলেছি। এর মানে এই না আমি মানুষ কে খুন* করবো। একটা মানুষ হয়ে কিভাবে পারো তুমি এটা করতে।

রাফি রিতার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে আনে। কানে চুল গুলো গুঁজে দিয়ে বলে, কি করবো বলো, অনেক ভালোবাসতাম তোমায় আমি।

“আমি বলেছিলাম তুমি নিরু কে ডির্ভোস দিয়ে দাও। এরপরও তো আমরা থাকতে পারতাম একসাথে তাই না বলো।

“এই একটা সমস্যা তোমাদের। আমি নিরু কে কিভাবে ডির্ভোস দিতাম বলো, তাহলে যে আমার নামে সম্পত্তি ছিল তা পেতাম না। উল্টো আমার ভাগের যেই সম্পত্তি ওর নামে ছিল সেটাও চলে যেত।

“যেতো যেত! আমি তো থাকতাম তোমার সাথে। আর যাই হোক কাউকে খু*ন করার দরকার ছিল না তো তোমার।

“এতো ভালো মানুষী কেন দেখাচ্ছ তুমি। মানুষ কে ঠেকানোর আগে তো একবার ভাবো না, আর আজ এতো।

“রাফি!

“চেঁচিয়ো না! ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে থিতুনিতে হাত রেখে) যা করেছি, তোমার আর আমার জন্য করেছি। বুঝতে পেরেছ।

রিতার চোখ ভিজে উঠল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো এরকম একটা মানুষ কে কিভাবে ভালোবাসে সে। মানুষ কে খু*ন করার আগে একবার বুক কাঁপল না তার। রাফি তাকে ছেড়ে দিয়ে মেহেরিন’র কাছে এলো। চোখ তুলে তাকাল মেহেরিন। রাফি হেসে বলল, তো এতো বছর যা জানার জন্য পাগল হয়ে ছিলে তা জানা হয়ে গেছে তোমার। এখন! এখন কি করবে। তবে তোমাকে আরেকটা সারপ্রাইজ দেই আমি। জানতে চাও সেটা!

মেহেরিন ভ্রূ কুঁচকালো। রাফি মেহেরিন’র কাছে গেল। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, তোমার বাবার মৃ*ত্যুর পিছনে কিন্তু আমার একটু হলেও হাত আছে।

মেহেরিন চমকে উঠল। রিতা আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে রইল। ধপাস করে পড়ে গেল মেঝেতে। রাফি বিরক্ত হয়ে গার্ডদের বলল রিতা কে এখান থেকে নিয়ে যাতে। রিতা নিশ্চুপ ভাবে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল শুধু রাফির দিকে। এ কেমন মানুষ কে ভালোবাসলো সে!

রাফি শব্দ করে শ্বাস ফেলল। এগিয়ে আসল মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন রীতিমতো মতো ছটফট করছে ছোটার জন্য। চেয়ারের সাথে তার হাতটা খুব শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে। রাফি হেসে বলল, আহ রাগ করো না। আমি কিন্তু সত্যি’ই শশুড় মশাই কে মা*রতে চাই নি। আমি তো শুধু তাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আসলে কি বলো তো। উনি গোয়েন্দা রেখে আমার খোঁজ চালাচ্ছিলেন। তাই তাকে ছোট একটা সারপ্রাইজ দিলাম আর বেচারা তা সহ্য করতে না পেরে উপড়ে চলে গেল!

বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো। মেহেরিন’র বুকে তীরের মতো বিঁধছে প্রত্যেকটা কথা। তার চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে। রাফি হাসতে হাসতে বলল,
“জানতে চাও, কি সেই সারপ্রাইজ।

মেহেরিন চেঁচিয়ে বলল, আমার দি কে তুই মেরে*ছিলি আর সেটাই বলেছিলি আমার বাবা কে তাই না।

“আর বুড়ো টা হা*র্ট অ্যাটাক করে নিল। ইশ তোমাকে বলার সময় হয়তো পায় নি। কি করবে বলো খুব তাড়া ছিল নিজের মেয়ের কাছে যাবার

“আমি ছাড়বো না তোকে,‌শেষ করে দেবো তোকে। কি করম মানুষ তুই,‌ আমার নিরীহ দি কে মা*রার সময় একবারও হাত কাঁপল না তোর। নিজের ছেলের কথা একবারও ভাবলি না তুই। কেমন বাবা রে তুই। একবার বুক কাঁপল না তোর। সে তো তোর নিজের ছেলে ছিল!

“হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক বলেছ কিন্তু এই প্রতিবন্ধী ছেলে কে নিয়ে আমার কি লাভ হতো বলো। আমি তো চেয়েছিলাম এই আগাছা কে উপড়ে দিতে।

মেহেরিন বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল।
“আরে হ্যাঁ সত্যি বলছি, এই ছেলে কে বাঁচিয়ে রাখার কোন ইচ্ছে ছিল না। তোর মরা দি কে ফ্যানের সাথে ঝোলানোর পর ঘুমন্ত এই শয়তান টা কে উঠিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাথটাবে রেখে কল ছেড়ে দেবো। কিন্তু তখন’ই বাইরে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। দেখি তোর গাড়ি। আর সময় না দেখে তাকে মেঝেতে রেখেই চলে এলাম।

মেহেরিন’র ঘৃণা ধরে গেল। আর কথা বলতেই ইচ্ছে করল না তার। বাইরে দাঁড়িয়ে সমস্ত টা শুনতে রিতা। শরীর বার বার শিউরে উঠছে তার। এতোটা নির্মম কিভাবে হয় মানুষ। একটা বাচ্চা কেও শেষ করতে চাইলো সে। মুখে হাত রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো সে।

রাফি হেসে বলল, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় এই ছেলে আমার না। তোর দি’র তো অভাব ছিল না। জানি না কার না কার সন্তান। কার সাথে শুনিয়েছিল !

“চুপ! একদম চুপ। আমার দি’র নামে আর একটা বাজে কথা বলবি না তুই। নাহলে তোকে শেষ করে দেবো আমি।

“বাহ ভয় পেয়ে গেলাম আমি! তেজ যায় না, নাহ। বসে আছিস মৃ*ত্যুর সামনে আর এখন বলছিস এসব কথা। এখন তো তোকে বাঁ*চিয়ে রেখে কোন লাভ নেই আমার। সবটা জানিস তুই। আমি জানি তোর সব সম্পত্তি তুই অর্ণবের নামেই করে যাবি। আর তুই ম*রে গেলে অর্ণব কে নিজের কাছে এনে রাখতে সময় লাগবে না আমার। তাহলে আর চিন্তা কি?হামম কিভাবে মারবো বল তো তোকে। যেভাবে তোর দি কে মেরেছিলাম সেভাবে। আগামীকাল খবরের কাগজে বড় বড় করে ছাপা হবে, খান কোম্পানির ওনার মেহেরিন বর্ষা খান আর বেঁচে নেই। গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্ন*হত্যা করেছেন তিনি। কারণ তার বর তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

বলেই কুৎসিত ভাবে পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো রাফি। মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল, এই কাজটা তোর!

“সেটা তো তুই জানিস। আমি ইচ্ছে করেই জানালাম তোকে। কি বলতো, প্রথমে ভেবেছিলাম তোকেই মে*রে দিই পরে ভাবলাম না, এতো সহজে মারবো না তোকে। ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে মারবো। তাই তোর দুর্বল জায়গায় হাত দিলাম। তবে যাই বলিস, রাস্তার মাঝে তোকে কাঁদতে দেখে কিন্তু বেশ লাগছিল আমার!

দীর্ঘশ্বাস ফেলল মেহেরিন। রাফি হেসে বলল, শেষ ইচ্ছা কিন্তু থাকলে বল!
বলেই একটা উড়না পেঁচিয়ে মেহেরিন’র কাছে আসতে নিল।‌ মেহেরিন স্বাভাবিক ভাবে রাফির দিকে তাকিয়ে বলল, ম*রার সময় কতোটা ছটফট করিস তুই তা দেখার খুব শখ আমার!

রাফি রেগে উড়না টা মেহেরিন’র গলায় চেপে ধরল। মেহেরিন হাসতে লাগলো। থমকে গেল রাফি। মেহেরিন আবারো হাসতে লাগলো। রাফি উড়না টা আরো শক্ত করে চেপে ধরল। মেহেরিন’র দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। চোখ মুখ সব লাল হয়ে যাচ্ছে তার। হঠাৎ করেই বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পেলো রাফি। থমকে গেল সে। সরে গেল তার থেকে। আশপাশ কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে সে। রিতা কান্না বন্ধ করে আশপাশ তাকিয়ে রইল। কি হচ্ছে এসব। রাফি জানালা দিয়ে বাইরে দেখল। পুলিশের গাড়ি বাইরে দেখে আঁতকে উঠল সে। মেহেরিন ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে হেসে বলল, আমার ইচ্ছে পূরণের সময় হয়ে গেছে।

“মানে!

“মানে এটাই, আগামীকাল খবরের কাগজে বড় বড় করে এটাই ছাপবে, দ্যা গ্রেট রাফি মল্লিক তার শালিকা মেহেরিন বর্ষা খান কে খু/ন করার চেষ্টা করেছে, কিংবা রাফি মল্লিক তার প্রেমিকার জন্য নিজের স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে কিংবা… সম্পত্তি’র লোভে নিরীহ দুই মানুষ কে খু/ন করেছে!

“মেহেরিন!

মেহেরিন শব্দ করে হেসে দিল। অতঃপর দম ফেলে বলল,”আমাকে এতোটা বোকা হয় তোর! কি কর ভাবলি এতোটা বোকামো করবো আমি। তোর কি মনে তোর জালে পা দিয়েছি আমি। না রাফি না আমার জালে পা দিয়েছিস তুই। সবকিছুই একটা নাটক ছিল যাতে তোর সত্যি টা তুই নিজের মুখেই স্বীকার করিস। কি বলতো এই কোর্ট কাছারি তে জড়ানোর কোন ইচ্ছা নেই আমার। এক টিলেই পাখি কে মেরে ফেলেছি আমি। রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফটের সুযোগ দেই নি।

রাফি রেগে এসে মেহেরিন’র চুলের মুঠি ধরে ককর্শ গলায় বলল, ঠিক করিস নি তুই, ঠিক করিস নি। এর ফল দিতে হবে তোকে!

বলেই আবারো উড়না পেঁচিয়ে ধরে সে। মেহেরিন হাসতে থাকে। একে একে পুলিশের লোক ঢুকে পড়ে। নিরব দৌড়ে এসে দেখে রাফি মেহু কে মা*রার চেষ্টা করছে। সে দ্রুত রাফি কে সরানোর চেষ্টা করে। রিতা কে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ কনস্টেবল। নিরবের হাত থেকে ছোটার চেষ্টা করে রাফি। পুলিশের লোক এসে ধরে ফেলে তাকে। নিরব এসে মেহেরিন কে ছাড়াই। কাশতে থাকে মেহেরিন। গলায় ছাপ করে পড়ে গেছে তার। হাতের ও একই অবস্থা। গলা বেয়ে রক্ত পড়তে পড়তে জমাট বেঁধে গেছে। নিরব এক হাত দিয়ে হাগ করে বলে, “ঠিক আছিস তুই!

মেহেরিন হেসে বলে, “একদম!

অতঃপর পকেট থেকে চিপ বের করে পুলিশের হাতে দিয়ে বলে, এই যে প্রমাণ!

“তুমি নিশ্চিত থাকো মেহেরিন, ওর শাস্তি এবার হবেই। আমরা সবকিছুই শুনেছি তবে বেশ ভয় পেয়ে গেছি। এতো বড় রিস্ক নেওয়া উচিত হয় নি তোমার।

“আমি ঠিক আছি!

“ওদের নিয়ে যাও নিচে!

পুলিশের লোক রাফি আর রিতা কে নিয়ে গেল গাড়ির কাছে। মেহেরিন অনেকটা ভেঙে পড়ে। নিরব তাকে সামলিয়ে রাখে, এর সাথে পুলিশের বড় কর্মকর্তা!

রাফি কে গাড়িতে উঠানো হচ্ছে। তার সাথে রিতাও। মেহেরিন গাড়ির কাছে এসে রিতার দিকে উদ্দেশ্য করে বলে, ঠিক বুঝতে পারছি না কি করব তোমার সাথে। ছেড়ে দেবো তোমায়!

নিরব মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রাখে। রিতা মাথা নিচু করে ফেলে। রাফি রাগে ফুসফুস করতে থাকে। মেহেরিন তার দিকে হেসে বলে, “অবশেষে তোমার খেলা শেষ হলো! এবার শাস্তি পাবে তুমি। আমার বোনের আত্নাও শান্তি পাবে। পুরো দুনিয়া জানতো আমার বোন আত্ন*হত্যা করেছে এখন তারা জানবে কিভাবে একজন নির্মম স্বামী হ*ত্যা করেছে আমার দি কে।

নিরব মেহেরিন কে ধরে নিয়ে আসে গাড়ির কাছে। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে রাফি। মেহেরিন এখন ক্লান্ত, অনেক ক্লান্ত। মনে হচ্ছে আজকের পর অনেকটা শান্তিতে ঘুমাতে পারবে সে। আর কোন অস্থিরতা থাকবে না তার। রাফি রাগের বসে পুলিশের কাছ থেকে পিস্তল টা ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর গুলি তাক করে মেহেরিন’র দিকে। সবাই ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়। মেহেরিন সামনে ফিরে। নিরব হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। কি করবে বুঝতে পারে না সে। মেহেরিন’র কাছে আসতে নিলে মেহেরিন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বলে উঠে, না,অনেক করেছিস! রাফি বলে উঠে, “না আমার খেলা এখনো শেষ হয় নি। তখন শেষ হবে যখন আমি তোকে মারবো!

বলেই গুলি তাক করে। অতঃপর বিকট এক শব্দ। নিরব নির্বাক হয়ে যায়! চোখ বন্ধ করে ফেলে মেহেরিন! শেষ ডাক দিয়ে নিরব দৌড়ে আসে মেহেরিন’র কাছে!

—–

গাড়ির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় নির্ঝরের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪ টা বাজে। অর্ণব তার কোলে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। নির্ঝর তাকে খুব সাবধানে বিছনায় রাখে। অতঃপর উঠে এসে বেলকনির কাছে। খানিকক্ষণ পরেই ভোর হয়ে যাবে। নিচে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় নির্ঝর! ভ্রু কুঁচকে যায় তার। এই ছেলেটা ( নিরব ) এতো রাতে মেহেরিন’র সাথে। কিভাবে? মেহেরিন কি তবে এই ছেলেটার সাথেই ছিল। এতো রাত অবদি! রাত কেন বলছি, ভোর হলো বলে। তবে কি পুরো রাত’ই ছিল। কিন্তু কেন?

নিরব মেহুর মাথায় হাত বুলিয়ে চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। আবার হাতে হাত রেখে হাতও বোলাল। নির্ঝর রেগে বেলকনির গ্রিল চেপে ধরল। বের হয়ে গেল সেখান থেকে।

“তুই জানিস না আমি কতোটা ভয় পেয়েছি!

মেহেরিন হেসে নিরবের গাল টেনে বলল, এখন আমার জন্য ভাবা ছেড়ে দে। অনেক ভেবেছিস। নিজের জন্য কিছু ভাব।

“আমাকে দূরে ফেলে দিলি ‌!

“আমার জীবনে তুই একমাত্র যে কি না এখন অবদি আমার সাথেই আছিস। নাহলে অনেকে এসেছে আবার অনেকে থেকেও নেই। কিন্তু একটা কথা জানিস তুই কেন এখনো আছিস? কারণ তুই আমার ভালো বন্ধু। আমি জীবনে আর কিছু করি না কেন কিন্তু কখনো তোর মতো একজন ভালো বন্ধু পাই নি। একজন বন্ধু হিসেবে তুই অতুলনীয় নিরব!

নিরব মুচকি হাসল। মেহুর ঠোঁটেও হাসির রেখা দেখা গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিরব। আজ মনে হচ্ছিল একটুর জন্য মেহু কে হারিয়ে ফেলবে সে। সেই সময়, সেই পরিস্থিতি আর সেই গুলি। হ্যাঁ গুলি তখন ঠিক’ই চলেছে তবে রাফির না রিতা’র। রিতা গুলি চালিয়েছিল রাফির উপর। এটা দেখামাত্র সবাই নির্বাক হয়ে যায়। কি হলো কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারে না। শুধু দেখে রাফির রক্তা*ক্ত দেহ মাটিতে পড়ে আছে। পুরোপুরি মাথায় এসে লাগে গুলি টা। র*ক্তে ভিজে উঠেছিল মাটি! রিতা পুরো থরথর করে কাঁপছিল। কি হয়েছে সেটা হয়তো এখনো তার ধারণার বাইরে। তবে যা করেছিল ভেবে চিন্তেই করেছিল সে। নিজের মাথায় অবদি গুলি তাক করে সে। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সবাই অবাক চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার হাতের পিস্তল কাঁপছে! না! রিতা পারে নি আত্ন*হত্যা করতে। কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। রাফির নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সে। বাতাসে সেই কান্নার ধ্বনি মিশে যাচ্ছিল! চারদিক নিশ্চুপ নিস্তব্ধ শুধু কানে ভেসে আসছে এক প্রেমিকার বেদনার চিৎকার! এটা বোধহয় হবার কথা ছিল না। যে কি না তাকে পাবার জন্য এতো কিছু করল শেষে কি না নিজ হাতের খু/না করল তাকে। তবে যে এই খু*নের বোঝা নিতে পারছিল না সে।

রিতা কে এসে কনস্টেবল উঠে উঠায়। অশ্রুভেজা চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন অবাক চোখে তাকেই দেখছে। কি করে গেল এটা রিতা? ঋণী! তবে এই ঋণের শোধ কি করে দেবে সে!

নিরব এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, যা হয় ভালোর জন্যই হয় মেহু। আজ থেকে একদম নিশ্চিত তুই!

“পুরোপুরি না রে!

“নির্ঝর কে নিয়ে ভাবিস না, দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে!

“ভোর হয়ে যাচ্ছে, এবার চলে যা তুই!

“হুম!

“সাবধানে যাবি কেমন!

অতঃপর নিরব গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহেরিন কাছে এসে কলিং বেল বাজানোর আগেই দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সামনের মানুষের দিকে। প্রিয় মানুষটা কি তবে তার জন্য’ই জেগে ছিল!

চোখ মুখ শক্ত করে গম্ভীর ভাবে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে নির্ঝর। মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে বলল,
“ঘুমোন নি নির্ঝর!

ছেলে টি কে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে দেখছে সে। কিছু না বলেই ঘরের ভিতর চলে গেল। আফসোস! রাগের চোটে মেহেরিন’র ক্ষ*ত দেখতে পায় নি সে। মেহেরিন বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। বাড়িতে আবছা আবছা আলো জ্বলছে। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে মেহেরিন’র। নির্ঝর এগিয়ে যাচ্ছিল সোফার কাছে। ধারণা ছিল মেহেরিন হয়তো সেখানেই আসবে। তবে পেছন ফিরে দেখল সে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে। নির্ঝর পা বাড়াল সেখানে।

ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে চুমুক দিয়ে সামনে ফিরল মেহেরিন। নির্ঝর কে দেখে থমকে গেল। আলোতে চোখ পড়ল, মেহেরিন’র গলার কাছে ব্যান্ডেজ করা। কি হয়েছিল কি? নির্ঝর জিজ্ঞাস করল, তবে মেহেরিন জবাব দিতে উৎসাহ পেলো না। কি বলবে সে? যেই ট্রাক তাকে ধাক্কা মেরেছিল তার পিছনে কে ছিল তাকে ধরতে গিয়ে এই হাল। বিশ্বাস করবে? নাকি বলবে নতুন এক গল্প বানাচ্ছি আমি! কিছুই বলা যায়। মুচকি হেসে বলল, চোট পেয়েছি!

পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল।কথা ঘুরানোর জন্য বলল, এতো ভোরে উঠে পড়লেন যে, ঘুম হয়নি আপনার! খারাপ লাগছিল নাকি!

পেছন ফিরতেই চোখ পড়ল হাতের উপর। রশির দাগ এগুলো। এর মানে কি? বেঁধে রাখা হয়েছিল নাকি মেহেরিন কে।‌ বাহু টেনে ধরল সে। মুখে গম্ভীরতা নিয়ে বলল, আটকে রেখেছিল কেউ তোমায়, মারধর করেছিল!

“কার এতো সাহস শুনি।

“তবে এগুলো কিসের দাগ!

“নিজ থেকেই গিয়েছিলাম।

“কেন?

“মর*বার খুব সাধ হয়েছিল!

শুকনো ঢোক গিলল নির্ঝর। মেহেরিন হেসে তাকিয়ে রইল বাহুর দিকে। জ্ঞান ফিরার পর এই প্রথম নির্ঝর ছুঁয়ে দেখল তাকে। মুহূর্তেই হাত খানা ছেড়ে দিল। বিচলিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। বাহু ধরে টান দেওয়াটা মোটেও উচিত হয় নি।‌ মুখেই বলা যেত সবটা। মেহেরিন’র মুখে এখনো হাসি। এটাই আশা করেছিল সে। পা বাড়িয়ে দেবার আগেই কানে ভেসে এলো,

“তবে ম*রলে না যে!

বোতল মুখে দিয়ে পানি খেল। পেছন ফিরে বলল, আমার জীবন তো এখানেই রেখে গিয়েছিলাম। তাকে রেখে ম*রে গেলে তার কি হবে শুনি। তাই চলে এলাম।

আর পিছন ফিরল না। কটাক্ষ করল নির্ঝর কে। এতো সাহস হয় কি করে? জানি না কোথায় ছিল সারারাত। এতোই যখন চিন্তা তবে তাকে ফেলে কেন চলে গেল।

মানসিক চাপ আর নিতে পারছে না মেহেরিন। খুব ঘুম পাচ্ছে তার।‌ ঘরে এসে অর্ণব কে না দেখতে পেয়ে নির্ঝরের ঘরের দিকে এগুলো। অর্ণব শুয়ে আছে বিছানার কোনে। চারদিক চোখ বুলাল না নির্ঝর নেই। অর্ণব কে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে মৃদু হাসল সে। নির্ঝরের স্মৃতি হারিয়ে গেছে তবে অভ্যাস বদলায় নি ‌ আগের মতো এখনো অর্ণবের বিছানার কাছে বালিশ দিয়ে গেছে সে, যাতে অর্ণব ঘুমের ঘোরে নিচে না পড়ে যায়!বিছানার কাছে এসে চুমু খেলো অর্ণবের কপালে। ক্লান্ত শরীর টা মুহূর্তে নিস্তেজ হয়ে গেল। ঢেলে পড়ল বিছানায়। কেন জানি মনে হচ্ছে ঘুম শান্তির ঘুম ঘুমাবে আজ! রেগে নিজের ঘরে ঢুকল নির্ঝর। বিছানায় দেখতে পেলো মেহেরিন কে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল তার দিকে। অতঃপর…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here