#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো,
–” আজ কোনো ফিমেল সার্ভেন্ট আসেনি। সো, তুমি যদি চাও ফিতে লাগাতে আমি হেল্প করতে পারি। বাট ডোন্ট ওয়ারি, আমার চোখ কাপড় দিয়ে বাধা থাকবে। ”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করলো কিছুক্ষণ। জুভান প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। ঐশীকে কাচুমাচু করতে দেখে জুভান ছোট্ট করে এক নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
–” প্রেশার নিতে হবে না। তুমি না চাইলে দরকার নেই। রেস্ট নাও। আমি আসছি। ”
জুভান মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলে ঐশী পিছন থেকে ডাক দেয়,
–” কালো রুমাল আছে আমার কাছে। ”
জুভান হেসে ফেললো। পিছন ফিরে আবারও এগিয়ে গেলো
ঐশীর দিকে। ঐশীর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
–” রুমাল? ”
ঐশী কোথা থেকে খুঁজে একটা কালো রঙের রুমাল জুভানের হাতে এনে দিলো। জুভান ঐশীর দিকে কেমন করে যেনো তাকালো। সে চাহনি লক্ষ্য করতেই ঐশী বুক কেমন যেনো করে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে আয়নার দিকে তাকালো ও। জুভান নিজের চোখে রুমাল বেধে ঐশীর পিছনে দাড়ালো। ঐশী পিছনের চুলগুলো সামনে এনে স্থির ভাবে দাড়িয়ে রইলো। জুভান চোখ বন্ধ অবস্থায় জামার ফিতে ধরে নিজের দিকে টান দিলো। এতে ঐশী জুভানের দিকে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। তবে এখনো তাদের মধ্যে কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব। জুভান ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে ঐশীর ফিতে আলতো হাতে বেধে দিতে লাগলো। আর ঐশী! সে তো মুগ্ধ চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেটা এত সুন্দর কেনো? তার প্রত্যেক আচরন ঐশীকে ওর দিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। ঐশী জুভানের বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাস ফেললো। বিড়বিড় করে বললো,
–” উফ!এই মির্জাকে সর্ববস্থায়ই মারাত্মক লাগে। ও মেয়ে হয়েও তার মতন এতটা সুন্দর না।”
জুভান ঐশীর ফিতে বাঁধা শেষ হলে চোখ থেকে রুমাল খুলে নেয়। ঐশী ততক্ষণে শরীরে ওড়না জড়িয়েছে। জুভান ঐশীর দিকে রুমালটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
–” তোমার রুমাল। ”
ঐশী রুমাল হাতে নিয়ে বেডের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্যত হলে জুভান পিছন থেকে মাথা উচুঁ করে বলে,
–” কাউকে হেল্প করলে তাকে ভদ্রতাস্বরূপ থ্যাংক্স জানাতে হয়। কেউ হয়তো সেটা ভুলে গেছে। ”
ঐশী মৃদু হাসলো। তবে মুখে কাঠিন্যভাব এনে পিছন ফিরলো। বললো,
–” আমি কিন্তু তাকে হেল্প করতে বলেনি। তাহলে? থ্যাংক্স কিসের জন্যে? ”
জুভান মাথা চুলকিয়ে বললো,
–” তবে সে হেল্প তো করেছে। হেল্প ত হেল্পই হয়। তাইনা? ”
ঐশী ব্যাগ হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। ব্যাগে কি একটা খুঁজতে খুঁজতে বললো,
–” যেচে হেল্প করার জন্যে “ধন্যবাদ” । এবার ঠিক আছে? ”
জুভান মুচকি হাসলো। ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো,
–” ফাইন। ডাইনিং টেবিলে দেখা হচ্ছে। রেস্ট নাও আপাতত। ”
ঐশী সায় দিলো। জুভান রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আড়চোখে একবার ঐশীর দিকে তাকালো। মেয়েটি কি অদ্ভুত! সবসময় নিজের ব্যাক্তিত্ব বজায় রেখে চলবে। ইন্টারেস্টিং!
রুমে বসে আছে প্রায় অনেকক্ষণ হলো। ঐশী বেডে গা এলিয়ে দিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ যা হয়েছে তা একদমই ভালো হয়নি। নেশা না করলে ছেলেগুলো তার শরীর স্পর্শ করা ত দুরের কথা, কাছ পর্যন্ত ঘেঁষতে পারতো না। কিন্তু ও নেশা কখন করলো। একটা কোল্ড ড্রিংকস খেয়েছে। তাতেই এত! ঐশী বুঝতে পারলো সেটা সাধারণ কোনো কোল্ড ড্রিংকস ছিল না। নিশ্চয়ই ওতে কিছু নেশাদ্রব্য মেশানো ছিলো। ঐশী সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, আজ জুভান স্যার ওদের মারতে মারতে কিছু একটা বলেছিল। সে স্পষ্ট শুনতে পায়নি। মাথা ঘুরছিল। কান ভনভন করছিল তখন। একবার মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে সামলে নিয়েছিলো নিজেকে। কিন্তু কি বলেছিলেন জুভান স্যার? ঐশী কোনো উত্তর পেলো না।
একটু পর একজন সার্ভেন্ট এসে ঐশীকে খাবারের জন্যে ডেকে গেলো। ঐশী ওড়না গায়ে দিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো।ঠিক তখন মেসেজ বেজে উঠলো তার ফোনে। ভ্রু কুচকে বালিশের নিচ থেকে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করলো ও। জ্বলজ্বল করে উঠছে একটা নাম্বার। নাম্বারের ঠিক নিচে লেখা,
–” দেখা হচ্ছে কাল। ড্রিমস ক্যাফে। বিকেল পাঁচটায়। ”
ঐশী ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ টাইপ করলো।
–” ওকে। আই উইল বি দেয়ার। ”
ফিরতি বার্তা পাঠিয়ে ঐশী বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। তারপর ফোন আবার বেডের উপর রেখে পা বাড়ালো ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্যে।
________________________
খাবার টেবিলের চারিদিকে কয়েকজন সার্ভেন্ট দাড়িয়ে আছে। তারা খাবার সার্ভ করছে। ঐশী মাথা নিচু করে আনমনে খেয়েই যাচ্ছে। জুভান খাবার খাওয়ার মাঝখানে একবার ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশীর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা চিন্তা করছে ও। কিন্তু জুভান এসব নিয়ে খুব একটা ঘাটালো না ওকে। জুভান খাবার মেখে বললো,
–” রাতে ঐ রুমে ঘুমিয়ে যেও। কোনো দরকার হলে সার্ভেন্টকে কল দিবে। ”
খাবার খাওয়ার মাঝখানে ঐশী মাথা উঠিয়ে বললো,
–” আমি এখন চলে যাবো বাসায়। ”
জুভান হতভম্ব। বিস্ময় নিয়ে বললো,
–” এত রাতে? ”
–” হুম। ”
–” সেদিন রাতে কি হয়েছিল ভুলে গেছো? নাকি মনে করিয়ে দিতে হবে? কোনটা? ”
দাতে দাত চেপে বললো জুভান। ঐশী সেসব হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বললো,
–” আগের আমি আর এখনের ঐশীর মধ্যে অনেক তফাৎ,স্যার। দুটো সত্তাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। ”
জুভান ঘাড় কাত করে ঐশীর দিকে তাকালো। ভীষন জেদী মেয়েটা! কিন্তু জুভান জানে ঐশী নিরাপদেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে। তবুও সে ড্রাইভারকে ডেকে বললো,
–” ওকে বাসায় পৌঁছে দিবে। বাট সেফলি, ওকে? ”
ড্রাইভার মাথা নেড়ে সায় দিলো। ঐশী একথা শুনে তাড়াহুড়ো করে বললো,
— ” না , না। গাড়ি লাগবে না। আমি একাই চলে যেতে পারবো। “.
জুভান ড্রাইভারকে হাত নাড়িয়ে চলে যেতে বলে ঐশীর দিকে তাকালো। তারপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গাত্বক সুরে বললো,
— ” হ্যাঁ। আমি জানি আপনি অনেক সাহসী আর স্বনির্ভর। বাট ইটস ম্যাই অর্ডার। অ্যান্ড ইউ হ্যাভ টু ফলো দিস।” জুভান তীক্ষ্ম চোখে ওর দিকে তাকালো। জুভান রেগে যাচ্ছে। তাই ঐশী আর কথা বাড়ালোনা।
____________________
“ড্রিমস ক্যাফে” জায়গাটা নিচতলায় অনেক ভিড় হলেও ছাদে একদম শুনশান নীরব বলা যায়। ঐশী মুখে মাস্ক পড়ে, চোখে বিরাট সানগ্লাস পরে বসে আছে একটা চেয়ারে। মুখ ঘুরিয়ে বারবার আশপাশটায় তাকাচ্ছে। কোথাও সেই অজ্ঞাত লোকের টিকি-টারও খোজ নেই। একটু পর ঐশীর সামনের চেয়ারে একটা ছেলে হন্তদন্ত হয়ে বসে পড়লো। হাপাতে হাপাতে বললো,
— ” সরি, সরি। খুব জ্যাম ছিল রাস্তায়। তাই দেরি হলো। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি।”
ঐশী ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকালো। বয়সে ঐশীর বড় হবে। এক দেখায় ভালো সুরতের বলা যায়। এই ছেলের ওর মত মেয়ের সাথে কি দরকার থাকতে পারে? ঐশী ভেবে পেল না। ছেলেটা নিজের মনে বকবক করতে করতে বললো,
–” কি নিবে তুমি? টি অর কফি? ওর এনিথিং এলস? ”
ঐশী গম্ভীরচোখে ছেলেটার দিকে তাকালো। ভরাট গলায় বললো,
–” আমরা এখানে খুনের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। খোশ-গল্প করতে নয়। সোজা কাজের কথায় আসো। ”
ছেলেটা কিছুসময় ঐশীর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে হেসে দিলো। ঐশী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো তার দিকে। ছেলেটা হাসি থামিয়ে বললো,
–” ইউ আর সো মিন, ইউ নো। বায় দা ওয়ে, আই অ্যাম অনল। যে অনল মানে আগুন। আমি সেই অনল। ”
ঐশী ছেলেটার এই চাঞ্চল্যে বিরক্ত হলো। বললো,
–” আমার কোনো আগুন-ফাগুনে ইন্টারেস্ট নেই। কি বলতে এসেছো তাই বলো। অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ”
ঐশীর কথা শুনে হুট করেই ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে গেলো। বেশ কিছুসময় নীরব থেকে থমথমে গলায় বললো,
–” কেনো খুন করেছো তন্ময় ভাইকে? ”
#চলবে..
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/197409872303581/?app=fbl