কোনো_এক_শ্রাবণে
পর্ব-০৮
শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)
হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে নাফি। মাথার রগ গুলো ব্যথায় টন টন করছে তার। অপারেশন থিয়েটারের রেড লাইটটা জ্বলছে গত দেড় ঘন্টা ধরে। ডাক্তার বলেছে ঋতুর পানি শুকিয়ে গিয়েছিল, তাই অপারেট করতে হচ্ছে। নাফি বুঝতে পারছেনা কাকে জানাবে। এই মুহূর্তে তার কাউকে খবর দেয়া উচিৎ। হঠাৎ তার সামনে একটা লোক মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এলো। নাফির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে উচ্ছল হাসি হেসে বললো ভাই আমার মেয়ে হয়েছে। মিষ্টির প্যাকেটটা ধরেন। দোয়া করবেন ভাই বাচ্চাটার জন্য। নাফি হালকা হাসি দিলো। লোকটা জিজ্ঞেস করলো ভাবি কি ওটিতে? নাফি মাথা নারলো।লোকটা শ্বান্তনা দিয়ে বললো- চিন্তা করিয়েন না।সব ঠিক হয়ে যাবে। নাফি হেসে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে আবার বসে পরলো সিটে।
পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখলো দোলার ৮টা মিসড কল। কলব্যাক করলো নাফি।
– হ্যালো ভাই
– তুই কি একটু আসতে পারবি একটা জায়গায়?
– তুই কই আছিস? আর কল ধরতেছিলি না কেন? সবাই কত টেনশন করছিলাম।
– আমি তোকে এড্রেস দিচ্ছি চলে আয়।
ফোন কেটে এড্রেস সেন্ড করে নাফি ফোন পকেটে ভরলো। দুহাত মাথার পিছনে দিয়ে হেলান দিলো সিটে।
———————————————————–
নিপা বিছানায় শুয়ে আছে ফোন বেজেই যাচ্ছে, বেজেই যাচ্ছে। একসময় ফোনটা রিসিভ করলো সে।অপর পাশ থেকে নিলয়ের কন্ঠ ভেসে এলো।
– বাহ আমাকে ছেড়ে এখন আরেকটাকে ধরেছিস? ওটার কতো সম্পত্তি আছে?
নিপা শান্ত হয়ে শুনলো তার কথা।
-উত্তর দিচ্ছিস না কেন? নষ্টা মেয়ে।তোরে বাকিদের থেকে আলাদা ভাবছিলাম।তোর বাপ তো ফকির না তাও কেমনে করলি কাজটা?
তোরে কি কম কিছু দিতে চাইছিলাম। এতদিন আমার সাথে ছিলি এখন আরেক ব্যাটার কাছে গেছিস। ভুইলা যাইস না ওইদিনের সব ছবি আমার কাছে আছে।এগুলা তোর শশুর বাড়িতে পাঠাইলে ওই ছেলে তোরে কেমনে বিয়ে করে দেখবানি।হারামজাদি।
ফোন কেটে দিলো নিলয়।
নিপা বিছানায় উঠে বসলো। কতগুলো স্ক্রিনশট আর কতগুলো ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দিলো নিলয়ের হোয়াটসঅ্যাপ এ।তারপর সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক করলো।এবং ফোন নাম্বারে একটা মেসেজ দিলো। তারপর সেখান থেকেও ব্লক।
———————————————————–
দোলা জাদিদ, মাহাপারা, আর বেয়াজিদ কে জানালো নাফির কথা। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেনা হাসপাতালের ঠিকানা কেনো দিলো নাফি। দোলা মাহাপারা আর বেয়াজিদকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আর জাদিদ ও তার বাসা থেকে রওনা হলো।
কামালকে গাড়ি বের করতে বলে দোলা নিজের রুমে গেলো ক্লাচ আনতে। নিজের এটিএম কার্ডটা নিয়ে নিলো।সে জানে সবার কাছেই টাকা আছে কিন্তু তাও সে জানেনা কি হয়েছে সেখানে। তাই আগেই প্রস্তুতি নিয়ে নিলো।
মাহাপারা ফোনটা নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে আর বেয়াজিদ এসে দরজা খুলতে লাগলো মাহাপারা একবার তার দিকে তাকালো। তারপর আবার গাড়ির পিছন দিয়ে ঘুরে পাশের দরজা খুলে উঠে পরলো। বেয়াজিদ দরজা লাগাতে যাবে আর দোলা এসে বললো
– আরে যলদি ওঠো দাঁড়িয়ে থেকো না।
বলতে বলতেই সামনের সিটে গিয়ে বসে সিটবেলট পরে নিলো।বেয়াজিদ একলাফে গাড়িতে উঠে দরজাটা ঠাস করে লাগালো। কামাল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আদ্ব- দীনের দিকে নিলো। বেয়াজিদ কিছুটা চেপে বসলো মাহাপারার দিকে।মগবাজারের জ্যামটা বিরক্তিকর।টেনশনে দোলার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মাহাপারাও বেয়াজিদের দিকে চেপে বসে তার কানে কানে বললো,
– ডু নট ডেয়ার টু ডু ইট এনিমোর। আরেকবার কাছে আসার চেষ্টা করলে খবর আছে।
চোখ গরম করতেই বেয়াজিদ ভয় পাবার ভান করলো তারপর আবার মাহাপারার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। আর চোরা হাসি দিতে লাগলো। চেয়েও মাহাপারা হাত ছাড়াতে পারলো না।সামনে আপা আর কামাল ভাই বসা। হাসপাতালের গলিতে ঢুকতেই রাগ উঠে গেলো মাহাপারার। এ কেমন হাসপাতাল বেইজমেন্ট নেই, পার্কিং জোন নেই উফফ উফফ। পুরো গলি জ্যাম হয়ে আছে।মাহাপারা বিরক্তিতে মুখ তিতকুটে করে ফেললো।
-ইয়া আল্লাহ ! উফ উফফ এ কেমন হাসপাতাল ! আমি আর বসে থাকতে পারবোনা।নামলাম আমি।কামাল ভাই গাড়ি নিয়ে চলে যান।ফোন দিলে চলে আসিয়েন।
– থাক কামাল ভাই। ভাইয়ের গাড়ি এনেছে নিশ্চই। আর জাদিদ ও আসবে আপনার আসতে হবেনা। বলেই দোলা নেমে গেলো।
মাহাপারা আর দোলার পিছন পিছন বেয়াজিদ ও যেতে লাগলো। টোকেন দিয়ে জুতো রাখতে হলো। তারপর দৌড়ে রিসিপশনে গিয়ে ওটির কথা জিজ্ঞেস করতেই ডাইরেকশন বলে দিলো তারা। দোলা ভাবতে পারছেনা ওটিতে কে আছে তাও আবার এই হাসপাতালে !
দৌড়ে উঠলো উপরের দিকে। একজন নার্সকে দোলা জিজ্ঞেস করলো ওটি কোনদিকে তার আগেই বেয়াজিদ দোলা আপা বলে ডেকে উঠলো। করিডোর ধরে যেতেই দেখতে পেলো নাফি বসে আছে।
-ভাই।
পাশ ফিরতেই দেখতে পেলো নাফি তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। পেছন পেছন জাদিদ ও আসছে।
– কি হয়েছে ভাই তুই এখানে কি করছিস? ফোন ধরছিলি না কেনো? আম্মা টেনশন করছিলো।
জাদিদ দোলাকে থামিয়ে দিলো।
– তোরা বস একটু আমি সব বলবো।
———————————————————–
কামাল হালকা নাস্তা কিনে আর দুটা পানির বোতল নিয়ে এলো। দোলার হাতে দিয়ে বললো বড় আপা ভাই নাকি অনেকক্ষণ ধইরা বইসা আছে এখানে ওনার ড্রাইভার কইলো। ওনারতো প্রেসার লো হইয়া যাইবো আবার।
দোলা কামালের দিকে তাকিয়ে ভাবলো এই মানুষটা তাদের আপন কেউ না।কিন্তু অবাক করা ব্যাপার এই মানুষটা তার পরিবারের জন্য কত ভাবে। আজও কি এতো ভালো মানুষ হয়?
গত এক ঘন্টা ধরে তারা বসা এখানে। কি হচ্ছে কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। দোলা নাফির কাছে গিয়ে তার হাতে খাবার গুলো দিয়ে বললো
– ভাই কিছু খেয়ে নে তোর শরীর খারাপ করবে।
নাফি পানির বোতলটা নিয়ে এক ঢোকে অর্ধেক বোতল শেষ করলো।বড্ড তেষ্টা পেয়েছিলো তার। নাফি কিছুই মুখে দিলো না।
ওটির লাইট অফ হতেই নার্স বের হলো।তার হাতে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু। তার স্বরে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে ধরণীতে তার উপস্থিতির। নাফি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। নার্স বাচ্চার বাবা কে জিজ্ঞেস করতেই নাফি এগিয়ে গেলো।পিছনে তার কয়েকজোড়া কৌতূহলী দৃষ্টি চেয়ে আছে। নাফি বাচ্চাকে কোলে নিতেই নার্স বললো ছেলে হয়েছে। নাফি কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো তার হাতের রক্ত মাংসের পুতুলটার দিকে এখনো কাঁদছে বাচ্চাটা। নাফির মুখে নরম হাসি।
জাদিদ নার্সকে জিজ্ঞেস করলো ওয়াশরুমটা কোন দিকে? নার্স দেখিয়ে দিতেই সে দৌড় দিলো। নাফি দোলার দিকে ইশারা করলো। দোলা কাছে যেতেই তার হাতে বাচ্চাটাকে দিয়ে।কাঁপা হাতে মানিব্যাগ বের করে ১০০০ টাকার নোটটা নার্সের হাতে ধরিয়ে দিলো।
আবার কাঁপা হাতে বাচ্চাটাকে কোলে নিলো।
জাদিদ মাথায় রুমাল বেঁধে বাচ্চার কানে আজান দিলো।
নার্স বাচ্চাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ডাক্তার বের হতেই নাফিকে কংগ্রাচুলেশন জানালো। আর জানালো ঋতুর জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। ক্যাবিনে শিফট করে দিবে কিছুক্ষণ পর।
দোলা,জাদিদ,মাহাপারা, বেয়াজিদ,নাফি। ক্যান্টিনে বসে চা পান করছে। নাফি সবাইকে বিস্তারিত সব বলার পর সবার মুখ হা হয়েছিলো।
– এখন কি করবে ভেবেছো?জাদিদ বললো।
– আমি জানিনা। ঋতুকে আমি আর ওই নরকে যেতে দিবোনা এইটুকুই জানি ব্যস।
– এককাজ করলে কেমন হয়? ঋতু আপাকে আমার বান্ধবী বলে নিয়ে যাই আমাদের বাসায়। পরে নাহয় সবাইকে সব বুঝিয়ে বলবো।দোলা বললো।
– কিন্তু আপা মা কি মানতে পারবে? মাহাপারার কথা শুনে সবার মুখটা আবার চুপসে গেলো।
বেরস মুখে আবার চা পানে মনোযোগ দিলো সবাই।
—————————–
রাত ১০টার বেশি বাজছে এখন। বাসার বাচ্চারা সব হুট করে গায়েব।কেউ ফোনও ধরছেনা। টেনশনে মাথা ব্যাথা করে উঠছে রুবাবার।নসীমা রান্নাঘরে খুটখাট করেই যাচ্ছে।কিন্তু এত রাতে রান্না ঘরে কি তার? রুবাবা হাক দিলেন
– ওই নসীমা এত রাতে রান্না ঘরে কি করিস? আমার মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।নাফি দোলারা কই? আর নিপা ও কই? ছোটোকেও দেখছিনা।সব গেলো কই?
– খালাম্মা চিল্লাইয়েন না মাথার বেদনা আরো বাড়বে। আমি আপনার মাথায় তেল দিয়া দিতাছি। ব্যথা কইমা আইবো।একটু দাড়ান।
নসীমা দৌড়ে রান্না ঘরে গেলো একটা কাপড়ের মধ্যে একমুঠো কালোজিরা এনে দিলো রুবাবার হাতে।
– খালাম্মা এটা সুঙ্গেন ব্যথা কমবে।
– রুবাবা হাতে কালোজিরা পোটলা নিয়ে নাকের কাছে ধরে শুকলো।
নসীমা তেল আনতে যেতেই টেলিফোনে রিং হলো।
– হ্যালো! আসসালামালেকুম, কে?
– নসীমা ফোনটা আম্মাকে দাওতো।
-দিতাছি।
– হ্যালো মা আমি দোলা।
– কই তোরা সব সারাদিনে খোঁজ নেই।রাতের কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে? কি করছিস টা কি তোরা?
– মা আমার এক বান্ধবী হাসপাতালে ভর্তি। আমি ওকে আমার বাসায় নিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম।
– কেন? ওর বাসায় কি সমস্যা?
– ওর ফ্যামিলি বলতে কেউ নেই।প্লিজ মা কথা বাড়িয়ো না তুমি পারমিশন দিলেই আমি আনবো নাহয় অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
বিরক্তিতে মুখ বাকালেন রুবাবা।তারপর কি জেনো ভেবে রাজি হয়ে গেলেন।
– আচ্ছা ঠিকাছে নিয়ে আয়।
– আম্মা কাল সকালে ওকে ডিসচার্জ করবে আমরা কাল সকালেই আসবো।
– আমরা মানে? তুই আর তোর বান্ধবী? নাফি আর ছোটোও বাসায় নেই। ফোন ও ধরছে না।
– ওরা আমার সাথেই আছে আম্মা।
– ওরাও কি সকালে আসবে?
– হ্যাঁ আম্মা। চিন্তা করোনা।রাখছি।
দোলা ফোনটা কেটে দিতেই রুবাবা নসীমাকে বললো দোলার পাশের ছোট রুমটা পরিষ্কার করে বিছানায় নতুন চাদর বিছাতে।
– আবার কোন উটকো ঝামেলা এসে জুটবে কে জানে? বাড়িতে জোয়ান ছেলে আছে। আর পারিনা এদের নিয়ে।
————————————————————
মাহাপারা বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত প্রায় ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়? একসময় ঝিমুনি ধরে গেলো। চোখ গুলো আপনা আপনি লেগে এলো। তারপর নিদ্রার কোলে ঢলে পরলো।
জাদিদ কতগুলো খাবারে প্যাকেট এনে দোলাকে কল করে ক্যান্টিনে ডাকলো।
দোলা নাফি নিচে ক্যান্টিনে এলে জাদিদ জিজ্ঞেস করলো বেয়াজিদ আর মাহাপারা কোথায়? নাফি আর দোলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
নাফি বললো
– তুই আমাদের সাথেই বস।ওরা আছে ঋতুর কেবিনের সামনে।
– আচ্ছা।
মাহাপারা হালকা নড়েচড়ে উঠলো।ওকে দেখেই বেয়াজিদ বললো আস্তে ব্যথা পাবেন ঘাড়ে।
তড়িৎ বেগে লাফ দিয়ে উঠল মাহাপারা।
-আপা কোথায়? আমি আপার কাছে যাবো।
বেয়াজিদ ফিক করে হেসে দিলো।
– আচ্ছা ঠিকাছে। আপারা ক্যান্টিনে আছে চলুন।
নিচে নামতে নামতে বেয়াজিদ মাহাপারার দিকে আড় চোখে তাকালো। কি অদ্ভুত ব্যাপার! এই মেয়ে এমন ভাবে আপার কাছে যাবো বলছিলো জেনো বাচ্চারা রাতে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে জেগে যেভাবে বলে আম্মুর কাছে যাবো সেভাবেই বলছিলো। আবার হেসে ফেললো বেয়াজিদ।
মাহাপারা এবার ওর দিকে চাইলো মুহুর্তেই চোখে চোখ পরতেই বেয়াজিদ রসিকতা করে গেয়ে উঠলো –
“পরেনা চোখের পলক
কী তোমার রূপের ঝলক
আমি জ্ঞান হারাবো মরে যাবো বাঁচাতে পারবেনা কেউ !”
মাহাপারা দ্রুত পা চালালো। আড়ালে হাসলো। এই উন্মাদ লোকটার প্রতি তার মায়া বাড়ছে এটা বাড়তে দেয়া যাবেনা, কোনোভাবেই না।
————————————————————
ভোর সাড়ে ৬টা বাজে। সবাই ঋতুর কেবিনেই আছে। নাফি সামনে রাখা টুলে বসে বিছানায় মাথা রেখেই ঘুমাচ্ছে। মাহাপারা আর দোলা সামনের বেডে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। বেয়াজিদ ও ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে ঘুমাচ্ছে। তার থেকে একটু দূরে জাদিদ।
জাদিদের ফোনটা বেজে উঠতেই সবাই জেগে গেলো।
– দুলাভাই আপনার ফোন হয় ধরেন নাহয় বন্ধ করেন আমার ঘুম দরকার।
– হ্যাঁ ধরছি।
ফোনটা বাসা থেকে।তুলতেই রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো
– হ্যালো বাবা? তুমি কখন আসবে? দাদু বলেছে তুমি রাতে আসো নি। আমি কি তোমাকে দেখতে আসবো?
– না মা। আমি চলে আসবো একটু পরে। তুমি এত সকালে উঠেছো যে? রাতে ঘুম হয়নি?
– তুমি না থাকলে ঘুমাতে পারিনা।
– আচ্ছা আমি চলে আসবো।
-দোলা আন্টিও কি আসবে?
– না উনি বাসায় যাবে।
– আচ্ছা।
জাদিদ ফোন রাখতেই দোলা বললো
– ওকে আমাদের বাসায় চলে আসতে বলুন।খালাম্মাকেও আসতে বলে দিন।
– শুধু শুধু ঝামেলা করার কি দরকার?
– আমার মেয়ে ঝামেলা হবে কেনো? ওকে চলে আসতে বলুন।
ওরা কথা বলতে বলতেই ঋতুর জ্ঞান ফিরলো।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলেই সে পেটে হাত দিলো। শরীর ভাড় হয়ে আছে। বহু কষ্টে হাত রাখলো পেটে। কিছু একটা টের পেতেই তার মনে হলো রাস্তায় পরে যাওয়ার ঘটনা। তারপর সে প্রায় চিৎকারের স্বরে বলে উঠলো আমার বাচ্চা কই?
ঋতুর চিৎকারে নাফির ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
ঋতু আশেপাশে তাকেতেই দেখতে পেলো একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।সে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো আমার বাচ্চাটা কি বেঁচে আছে?
নাফি শক্ত করে তার হাতটা ধরলো।
– বাচ্চা সুস্থ আছে। আর কিছুক্ষণ পর নার্স নিয়ে আসবে। আসলে তুমি নিজেই দেখে নিয়ো।
————————————————————
কিছুক্ষণ পর নার্স বাচ্চাকে নিয়ে কেবিনে ঢুকতেই সবার উৎসুক নজর ঋতুর দিকে গেলো।
বাচ্চাকে পাশে শোয়াতেই ঋতু ফুপিয়ে কান্না করে উঠলো। অদ্ভুত সে অনুভূতি। কি আশ্চর্য ব্যাপার তার পাশে শুয়ে থাকা পুতুলটা তার পেটে এতোদিন হামাগুড়ি দিয়েছে। আজ সে তার পাশে। ঋতু চোখ ভরা পানি নিয়ে চাইলো নাফির দিকে।
ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে একরাশ মায়া নিয়ে নাফি বললো
– ছেলে।
– ঋতু আরো একবার ফুপিয়ে উঠলো। মাহাপারা সামনে গিয়ে বললো বাবুর নাম কি রাখবো আমরা? ওকেতো আর বাবু, বাবু বলে ডাকা যাবেনা তাই না?
বেয়াজিদ মাহাপারার মাথায় একটা গাট্টা মারলো।
সবাই হেসে উঠলো।
মাহাপারা কটমট করে চাইলো বেয়াজিদের দিকে। দোলা বললো
– হ্যাঁ ঠিক বলেছিস ওর নাম কি দেয়া যায়?
– আমার কাছে একটা দারুণ নাম আছে।তোমরা চাইলে বলতে পারি। আমি কাল সারারাত ভরে ভেবেছি।
-যাহ কতবড় মিত্থুকরে বাবা! সারা রাত তো ভোস ভোস করে ঘুমাচ্ছিলেন আপনি। কি করে ভাবলেন এত? বেয়াজিদের কথায় সবাই আরেক দফা হেসে ফেললো।
মাহাপারা ভ্যাংচি দিয়ে বললো আমি ঘুমের মাঝেও চিন্তা করতে পারি।
ঋতু বললো বেশ তবে আপনিই নাম রাখুন।
-নিরভান।ওর নাম হবে নিরভান। আগুনের মতো উজ্জ্বল হবে সে। আলোর মতো সকলকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেবে। নিরভান মাহমুদ হবে ওর নাম।
ঋতু বললো ওর ডাকনাম হবে ঋজু। শান্ত,মোহনীয়, নিষ্পাপ।
নাফি বলে উঠলো – নিরভান মাহমুদ ঋজু। ঋতুর ছেলে।
আমার বাসায় যদি একটা ফোন করে আমার শাশুড়ি কে জানাতেন তবে খুব উপকার হতো। আম্মা হয়তো চিন্তা করছেন। নাফি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
———————————-
নষ্টা মহিলা টাকা সব নিয়ে ভাগছে দেখো।তুমিতো আমার কথা বিশ্বাসই করতে চাইতা না আম্মা দেখো গিয়া ওই পেটের বাচ্চাও মনে হয় আমার না কার সাথে ক্যালেঙ্কারি কইরা এখন ভাগছে।
বিছানার এককোণে বসে কাদঁছেন মোমেনা। আল্লাহ জানেন মেয়েটা কি অবস্থায় কোথায় আছে?
ফোনটা বেজে উঠতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন কে?
– চাচী আমি নাফি বলছিলাম। আপনার নাতি হয়েছে। ঋতু ভালো আছে সে হাসপাতালে।
– তুমি ওরে নিয়া এখানে আর আইসো না বাপ।
– চাচী!
– কে ফোন দিছে আম্মা দেখি।
– মোমেনা বেগমের হাত থেকে ফোন কেরে নিয়ে কানে দিতেই বুঝলো কেটে দিছে ফোন। রাগে বিছানায় ফোন ছুড়ে ফেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো জাফর।
– মোমেনা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তার নাতি অবশেষে নিজের উপস্থিতি বহু সংগ্রামের পর এ পৃথিবীতে জানান দিয়েছে। পরওয়ারদিগার জেনো তাকে সুস্থ রাখেন সেই দোয়াই তিনি করলেন।
চলবে…!
Shahazadi Mahapara
Shahazadi Mahapara’s Inscription