কোনো_এক_শ্রাবণে পর্ব-০৭

কোনো_এক_শ্রাবণে
পর্ব-০৭

-শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)

আবরার এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে নারী মূর্তিদের দিকে। তার বুক ধুকপুক করছে এত দ্রুত মনে হচ্ছে এক্ষুনি বের হয়ে আসবে। আবরার কাঁপা হাতে প্রথম নারীর দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও বাড়ালো না। দ্বিতীয় নারীর হাত ধরার আগেই পাশ থেকে হলুদ শাড়ি পরিহীতা লাফ দিয়ে উঠলো,

-ও মাগো ! ভাইজান আমারে মাফ করেন ভাইজান।পিলিজ লাগে আমি পারমু না আমার ডর করতাছে। ও বাবাগো।
আবরার বুঝতেছেনা কি হচ্ছে। নাফি ধমকে উঠলো নসীমাকে।
– চুপ।গাধী দিলিতো ১২টা বাজিয়ে।ধুর।
– আমি পারুম না ভাইজান কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো নসীমা।
নাফির মেজাজ তিরিক্ষে ওর চোখ লাল হতে দেখে দৌড়ে ড্রয়িং রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
——————————

মাহাপারা জুয়েলারি শোরুম থেকে আংটির বাক্স আর ঘড়ির বাক্সটা নিয়ে বের হলো।দেরি হয়ে গিয়েছে তাকে শীঘ্রই বাসায় পৌঁছুতে হবে।
বাবা বসে আছে হয়তো।
মাহাপারা যলদি গাড়িতে উঠে পরে।

ঢাকার জ্যাম মানেই এক বিরক্তিকর ব্যাপার। প্রচুর গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা মাহাপারার।
বাসার সামনে ব্ল্যাক প্রাডো,আরেকটা ব্ল্যাক পাজেরো পার্ক করা গেইটের। মাহাপারা গাড়ি থেকে নেমেই উপরের দিকে রওনা হলো। শীঘ্রই উপরে যেতে হবে।

মাহাপারা পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকলো হাত মুখ ধুয়ে দোলার রুমে গেলো।শাড়িটা চেইঞ্জ করলো।এমারেল্ড গ্রীন কালারের শাড়ি আর এমারেল্ডের ইয়ার রিংস পরলো।লিপ্সটিক দিয়েই ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলো।
—————————-

অবশেষে জাদিদ পৌঁছুতে পেরেছে। ভিতরে অলরেডি তিনটা গাড়ি থাকায় রাস্তার পাশে তার পাজেরোটা পার্ক করলো।ভিতরে আরেকটা পাজেরো আছে।

বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে সে। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।কলিংবেল দিয়ে চোখ বন্ধ করলো সে কল্পনায় তার দোলার হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠলো।হাসলে দোলার চোখে টলমল করে জল।কি দারুণ সে দৃশ্য ! মনে হয় চোখ মুদলেই জল টুব্বুস করে পরে যাবে মুক্তো দানার মতন।
দরজা খুলতে এতো দেরি হচ্ছে কেনো? উফফ।
জাদিদ অধৈর্য হয়ে আরো কয়েকবার বেল বাজালো। অবশেষে নসীমা দরজা খুললো।মাথায় ঘোমটা দেয়া,হলুদ রঙা শাড়ি পরা।দেখে মনে হচ্ছে আজ ওর গায়ে হলুদ।লজ্জায় মুখ দুহাত দিয়ে ঢাকলো নসীমা।জাদিদ হকচকিয়ে গেলো ওর এমন আচরণে।
– ভিতরে যেতে দাও সরে দাড়াও তারা আছে।
জাদিদের ভারী কন্ঠে সরে দাড়ালো নসীমা।

কামাল মিষ্টির প্যাকেট গুলো নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে দেখলো নসীমাকে।তার বুকটা ধরাস করে উঠলো। চোখের পলক না ফেলেই দাড়িয়ে রইলো সে কতক্ষণ। নসীমা আবার লজ্জায় মুখ ঢাকলো হাত দিয়ে। কামাল ধমকে উঠলো নসীমাকে।
– দাড়ায় আছিস কেন? আর এমুন সং সাজছিস কেন? প্যাকেট গুলা ধর ছোট আফায় নিয়া আসছে।যলদি ধর হাত ঝিঝি ধরছে আমার।নসীমা ভেঙচি দিয়ে হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিলো।সামনে এগুতে এগুতে শুনলো কামাল পিছন থেকে গেয়ে উঠছে –
“যদি বউ সাজোগো
আরো সুন্দর লাগবে গো…”
—————————-

শফিক সাহেব বললেন,
– আবরার বাবা তুমি আবার শুরু করো।
অজ্ঞতা আবার শুরু হলো আবরারের পরীক্ষা।
আবরার প্রথমে বেগুনি রঙা শাড়ির দিকে হাত বাড়িয়ে আবার আগের মত ধূসর রঙা শাড়ির মেয়েটার হাত ধরলো।চোখ বন্ধ করে অনুভব করার চেষ্টা করলো।এবং সে বুঝতে পারলো সে তার জন্য সঠিক এবং বাকিদের জন্য ভুল মানুষটার হাত ধরেছে।

জাদিদ হুট করে ভিতরে ঢুকে দোলা বলে চিৎকার করলো।দেখলো দুটো মেয়ে শাড়ি পরে দাড়িয়ে আর একটা ছেলে একজনের হাত ধরে আছে।সবাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাদিদ আবরারে কর্লার ধরে এক ঘুষি দিলো তার নাক বরাবর। উন্মাদের মতো বলতে লাগলো
– দোলার হাত ধরেছিস ক্যান? শালা কানাবাবা।তোর এত বড় সাহস।
আরেকটা ঘুষি দিতে যাবে পেছন থেকে কেউ জাদিদকে টেনে ধরলো। ধরে রাখতে পারছেনা তাকে জেনো জাদিদের শরীরে অসুর ভর করেছে।
নাফি আবরারকে ধরে উঠাতে গেলো।

মাহাপারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েই চিৎকার করে বললো
-সারপ্রাইজ!
সবাই মাহাপারাকে দেখে হতভম্ব আর মাহাপারা হলের সবার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো।
– আমি কি ভুল সময়ে এসেছি?
নাফি আবরারের হাতে চশমা দিলো।
আবরার সামনে তাকিয়ে দেখলো দেখতে মিষ্টিকুমড়ার মত প্রায় ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।এবং তার পাশেই ধূসর শাড়ি পরিহীতা নিপা আর বেগুনি শাড়িতে দোলা দাঁড়িয়ে।চেহারায় এদের সবার প্রায় এক।কিন্তু নিপা লম্বায় বেশি দোলা খাটো সবুজ শাড়ি পরাটা মিডিয়াম।বুঝতে তার বাকি রইলোনা এটাই এ বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যা মাহাপারা।

আবরার নিপার দিকে তাকালো।তাহলে সে ঠিক ধরেছে এবার তার বিয়ে নিপার সাথেই হবে। মারটা ভালো পরেছে তবে মনে তার ডুগডুগি বাজছে জেনো।

এতক্ষণে বেয়াজিদের সাথে পেরে না উঠে জাদিদ ধূসর শাড়ি পরা মেয়েটার দিকে তাকালো তারপরই তার চোখ গেলো দোলার দিকে। সে কোনো রকমে বললো ছাড়ুন আমাকে। বেয়াজিদ ছেড়ে দিলো।

মাহাপারা দেখলো সেই এয়ারপোর্টের লোকটা দাঁড়িয়ে। আরে উনি এখানে কি করে?
——————————

ড্রয়িং রুমে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের দিকে তাকিয়ে একবার ঢোক গিললো। শফিক সাহেবের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে মাথানত করে বললো
– চাচা আমি খুবই দুঃখিত আপনার পারিবারিক অনুষ্ঠান বাঞ্চাল করার জন্য।কিন্তু আপনি দোলার বিয়ে ওই কানাবাবাটার সাথে দিয়েন না।
আমি ওয়াদা করছি আমি আজীবন দোলাকে আগলে রাখবো।হয়তো আপনার মত করে ভালোবাসতে পারবোনা তবে ভালোবাসায় কোনো কমতিও রাখবোনা।আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে কর্মর্দন করেন নাহলে আমার বাম গালে একটা চড় দেন। আমি কথা দিচ্ছি আজীবনে আর দোলার সামনে আসবোনা।

বাকহারা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উপস্থিত সবাই।
শফিক সাহেব জাদিদকে জড়িয়ে ধরলেন।
সকলে তিনি বসতে বললেন।
দোলার চোখ থেকে সেই টলমল করতে থাকা জলটুকু এবার ঝর্ণাধারার মত বইতে শুরু করলো।

নসীমা দূর থেকে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
কামাল ওকে ধাক্কা দিয়ে বললো তুই কানতাছিস কেন গাধী?
আপনি বুঝবেননা কামাল ভাই।
কামাল মুখ ভেঙালো ওকে দেখিয়ে।
————————–

শফিক সাহেব তার দু মেয়েকে দুপাশে বসিয়ে রেখেছেন।মাহাপারা সোফার পিছনে দাড়ানো।
শফিক সাহেব মাহাপারার হাত থেকে গিফটের প্যাকেট গুলো থেকে বক্স গুলো বের করলেন যা তিনি আবরারের জন্য আনিয়েছিলেন।

জাদিদ এবং আবরার পাশাপাশি বসেছে জাদিদ দুবার আবরারকে স্যরিও বলেছে। আবরারও স্যরি বলেছে কেনো বলেছে তা সে নিজেও জানেনা।তবে সে খুশিও হয়েছে, জাদিদের প্রতি তার বিন্দু মাত্র রাগ নেই।

শফিক সাহেব আবরারের জন্য আনা গোল্ডের ঘড়িটা দিয়ে জাদিদকে জামাই হিসেবে বরণ করলে জাদিদ খুশি হয়ে পাশে বসা আবরার কে জড়িয়ে ধরলো। আবরার ভেবাচেকা খেয়ে গেলো ক্ষণিকের জন্য।দোলা কাঁদো মুখ নিয়েই হেসে দিলো।সাথে সবাই। প্লাটিনামের উপর হীরে বসানো আংটিটা সে আবরারের হাতে পরালো।
সহাস্যে তিনি বললেন অল্প সময়ে সবকিছু হওয়ায় জাদিদের জন্য কিছু আনতে পারিনি। আশা করি বেয়াইরা মনে কিছু নিবেন না অবশ্যই আমরা আবরার বাবাকে ভালো কিছু দিয়ে আশীর্বাদ করবো।

আবরারের বাবা বললেন আমরা কিছু মনে করিনি।তাছাড়া আমার ছেলের খুশিই বেশি প্রাধান্য পাবে।সে যে জীবনে কিচ্ছু চায়নি। আজ মুখ ফুটে চেয়েছেন।

নিপা নিশ্চুপ বসে আছে।ঘটনার আকস্মিকতা সে বিন্দু মাত্র শক না।সে আগে থিকেই জানতো সব। যদিও আর কেউ জানতো না।

মাহাপারা দেখলো দু জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
বেয়াজিদ আর তার মা সালেহা।যদিও মাহাপারা তাদের নাম জানেনা।তবে রুবাবা ইশারা করলো সালেহার দিকে।সালেহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

_____________________

বারান্দায় বসে আছে নিপা।তার দৃষ্টি এই মুহূর্তে আকাশের দিকে। আকাশটা আজ মেঘলা তবুও দেখতে আরাম হচ্ছে।নরম পেজা তুলোর মতো মেঘ গুলো সারি ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ জুড়ে।মেঘের সাথে সূর্যের লুকুচুরি খেলা চলছে আকাশ জুড়ে। মেলেসা হেঁটে এসে আস্তে করে শুয়ে পরলো মেঝেতে।উঠে একবার ঘেউ করে আবার শুয়ে পরলো।

-পুচ্চু তোরও কি একা লাগছে নিজেকে?জানিস আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। মাহাপারাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলাম আমার ইউনিভার্সিটি আসার সময় কাটাবন হয়ে আসছিলাম তখনই ও দেখলো সারি সারি পশু পাখি আউয়াজ করছে রিক্সা থামিয়ে একাই দৌড়ে গেলো দোকানে। নতুন তিনটে সাইবেরিয়ান হাস্কি এসেছিলো সেদিন।দুটো বিক্রি হয়ে যায় শুধু তুই কুই কুই করছিলিস।মাহাপারার বড্ড মায়া হলো তোর জন্য।তুই জানিস তোকে যখন প্রথম বাসায় নিয়ে এসেছিলাম আমি আর মাহাপারা মিলে তখন তুই এতটুকুন ছিলিস। মা কতো রাগ হয়েছিলো তোকে আনায়। তারপর তোকে খেতেও দিতে চাইতোনা মা।বয়স আর কতো হবে এখন তোর? মাত্র ৬বছর। মাহাপারা লুকিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসতো। তুই খাবার পেয়ে ওর কোলে ঝাপিয়ে পরতি।দোলাপা তোকে পছন্দ করতো না।এখন যদিও সবাই তোকে আদর করে। যেদিন রাতে বাসায় চোর এসেছিলো আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। নাফি ভাই শুধু স্টাডি রুমে দরজা আটকে কেইস স্টাডি করছিলেন। তুই কি করে জেনো বুঝে গেলি আর ওমনি চোর কে তারা দিলি ঘেউ ঘেউ করলি। তারপর বাসার সবাই উঠে গেলো তোর ওই চোর ধরার কাহিনীর পর থেকেই মাও তোকে আদর করতে শুরু করলো তোর মনে আছে? তোকে সবচেয়ে বেশি কে ভালোবাসে বলতে পারিস?

মেলেসা উফ করে উঠলো।
– ঠিক, মাহাপারা। ও যতোবার এব্রড থেকে ভিডিও কল দিতো সবার আগে তোকে দেখতে চাইতো।তোকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো।পারেনি।তাছাড়া ডর্মে তোকে রাখবে কোথায় বলতো?তারপর স্মরণ ভাইদের বাসায় গিয়েও ও তোকে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু বাবা দেয়নি।
তোর ক্ষুধা পেয়েছে পুচ্চু? চল তোকে খাবার দেই। এ বাড়িতে সবাই মেলেসাকে পুচ্চু ডাকে।শুধু মাহাপারাই পুরো নাম ধরে ডাকে।

নিপার মনটা বিষন্ন।মেলেসার সাথে কথা বলে খিট খিটে ভাবটা দূর করার চেষ্টায় ছিল।তবে তেমন লাভ হলো না। আচ্ছা আবরার কে কি একটা ফোন করবে? উনি কি রাগ করবেন? হয়তো কষ্ট পেয়েছেন।চড় দেয়াটা ঠিক হয় নি একদম। নিপা উঠে গেলো দোলনা থেকে।
মেলেসা তার পিছু পিছু গেলো।

————————————

ঋতুর গত তিনদিন ধরে ব্যথা হচ্ছে পেটে।চিনচিনে ব্যথা। আজ একটু বেশিই হচ্ছে।মনে হয় ডেলিভারির সময় হয়ে এসেছে। যদিও ডাক্তার ডেট দিয়েছে পরশুর। তার এ মুহুর্তে হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ।কিন্তু অর্থ সংকটে যেতে পারছেনা। আজ একসপ্তাহ যাবত সে কাজে যায় না। বাসা পাল্টেছে।তবে লাভ তেমন হয়নি। তাই সে আর বাহিরে বের হয়না। দুদিন আগে তার স্বামী এসেছিলো নতুন বাসায়।প্রথমে তার কাছে মাফ চেয়েছে। তারপর পাতপেরে খেয়েছে তারপর টাকা চেয়েছে।তারপর টাকা দিতে অস্বীকার করলে আবার মেরেছে।এবং ঘরের যাবতীয় জিনিস ভেঙে যত টাকা জমিয়েছিলো সব নিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকে টাকা রয়েছে কিছু। তবে তা উঠাতে গেলে তাকেই ব্যাংকে যেতে হবে।এই মুহূর্তে সে চাইলেও তা করতে পারছেনা।

হাসলো ঋতু। বাবা মায়ের পছন্দের বিদেশি পাত্রের নমুনা দেখে। বিয়ে দিয়েছিলো বিদেশি পাত্র দেখে।না তখন তো বিদেশিই ছিলো। জ্বালি পাসপোর্টের জন্য আর ফ্রড মামলা খেয়ে জেল খেটে দেশে ফিরেছে। একজন দেবর আর দেবরের বউ বাচ্চা সবাই নিজ নিজ আলাদা ঠিকানা করে নিয়েছে। আর তার বিদেশি স্বামী হয়েছে নেশাখোর।বাহ কি ভাগ্য তার। বাবা মায়ের কাছে গিয়ে থাকতে চেয়েছিলো তার অবস্থাসমপন্ন বাবা মাই এখন তার ভাইয়ের ঘাড়ে বসে খায়।বাবা যাবতীয় সম্পত্তি ভাই নিজের নামে করে নিয়েছে।বাহরে দুনিয়া। অসহায় বেচারী ২মাসের সন্তান সম্ভবা। আর কি? তারপর এখানেই জীবন কেটে যাচ্ছে।বেশতো আছে।
নাহ একবার হাসপাতালে না গেলেই নয় তার আগে ব্যাংকে যাওয়া জরুরী। পাশের ঘরে গিয়ে দেখলো তার শাশুড়ি কাশছেন। বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে। তার শাশুড়ির শরীরও ভালো না।ফ্লু হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া এই বাসাটাও খুব যে ভালো তা না। ৭ হাজার টাকায় এরচেয়ে ভালো বাসা পাওয়াও সম্ভব না।ঘিঞ্চি এলাকা, জংলার মতো। বাথরুম ঘরের সাথে না একটু দূরে।চারটা পরিবার থাকে এখানে তবে কেউ তেমন আন্তরিক না।রান্না ঘরটাও বাথরুমের পাশে।যদিও তার এত শুচিবায়ু নেই। অভাবীদের শুচিবায়ু থাকতে নেই।এইসব হবে বড়লোকেদের তার মতোদের না। তার মনে পরে যায় বাবার বাড়িতে থাকতে দিনে দুবার গোসল দিতো আর এখন? ব্র্যান্ডের সাবান ছাড়া ব্যবহার করতে পারতো না। অথচ এখন দশ টাকার ছোট কেয়া সাবানটাও তার কাছে দামী। হাসলো ঋতু। ব্যাগে চেকবইটা ভরে একবোতল পানি নিয়ে শাশুড়িকে সাবধানে থাকতে বলে বের হলো ঋতু।লোহার গেইট দিয়ে বের হয়ে রিক্সার জন্য দাড়ালো ঋতু। কি বিপদ রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছেনা এখন। সামনে হাটা শুরু করলো সে। আজ আকাশে মেঘ করেছে ছাতা আনেনি ঋতু ভুলে রেখে এসেছে। ব্যথায় হাটতে কষ্ট হচ্ছে প্রচুর গা দিয়ে ঘাম ঝরছে। শাড়িটা বার বার পেচিয়ে যাচ্ছে। এইতো আর দশ মিনিটের রাস্তা তারপরেই ব্যাংকটা।
দ্রুত পা চালালো ঋতু। হঠাৎ থেমে গেলো সে তার শাড়ি ভিজে গিয়েছে নিচ থেকে। পায়ের নিচে পানি। মাথা ঘুরছে তার। পেসাব করেছে সে? নাহ। উফ কি অসহ্য ব্যথা। পানি ভেঙে গিয়েছে। আর পারলোনা ঋতু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে দাড়ালো কিছুক্ষণ। তারপর চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো তার। পেটে হাত রেখেই বসে পরলো সে। আর পারছেনা। বাচ্চাটাকে হয়তো বাঁচাতে পারবেনা সে। মনে মনে ঋতু বলে উঠলো
– হে আল্লাহপাক! আমার বাচ্চার যদি কিছু হয় তবে আমাকেও নিয়ে যেও ওর সাথে।

———————–

বিকেল প্রায় ফুরিয়ে আসছে। দোলা মায়ের রুমে।রুবাবার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আজ নিপাও অফিসে যায়নি। মাহাপারা নিজের রুমে। তার রুম থেকে গানের শব্দ ভেসে আসছে।
“মেঘ বলেছে যাবো যাবো….

আজ ২ দিনের মতো হলো মাহাপারা ফিরেছে। এই মুহূর্তে সে তার রুমে নাচের মুদ্রা তুলতে চাচ্ছে। মেলেসা বিনে শুয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে লেজ দুলাচ্ছে। হঠাৎ কোথা থেকে জেনো আরেকটা কুকুরের আওয়াজ ভেসে এলো। মেলেসা কান খাড়া করে শুনলো।তারপর অতি ব্যস্ত হয়ে উফ উফ করে তার স্বরে চিৎকার করতে লাগলো।মাহাপারা বিরক্ত হয়ে রুমের দরজা খুলে বের হলো। হুংকার ছাড়লো সে বাসায় আরেকটা কুকুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মেলেসা দৌড়ে আওয়াজ অনুসরণ করলো নিচে ড্রয়িং রুম থেকে আসছে আওয়াজটা। মাহাপারাও গেলো মেলেসার পিছু পিছু।

-রিউপার্ট স্টপ শাউটিং। ওকেই গুড বয় কাম টু পাপা।
আরেকটা সাইবেরিয়ান হাস্কি। মেলেসাকে দেখে আবার ঘেউ ঘেউ শুরু করলো রুপার্ট। মাহাপারা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো সামনে দাড়ানো লোকটার দিকে। বেয়াজিদ! উফফ মাহাপারা উফফ! এই লোকটা শনির মতো এসে বসেছে তার জীবনে, ঘরে, রুমে, বাথরুমে, ডাইনিংএ তার চেয়ারে উফফ। এ জেনো এক অঘোষিত যুদ্ধ।মাহাপারার সব জেনো তার চাই।

-লে ডাউন রিউপার্ট !
– রিউপার্ট ! এহ শালাটা কতো আমেরিকানের বাচ্চা। মনে মনে গালি দিলো মাহাপারা বেয়াজিদকে।
বেয়াজিদ রুপার্ট আর মেলেসার পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এবং মেলেসা রুপার্টের সাথে মেশার চেষ্টা করছে।ব্যাপারটা মাহাপারার পছন্দ হচ্ছেনা।ভণিতা না করে সরাসরিই বেয়াজিদ কে জিজ্ঞেস করলো সে
-হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?
– নাথিং মাচ। আই যাস্ট ওয়ান্ট টু বি ইউর ফ্রেন্ড। রুপার্ট বেয়াজিদের সাথে কাডেল করা শুরু করলো যা দেখে মেলেসা উফ উফ করে খেলতে লাগলো।এত দিন পর নিজের মত একটা সঙ্গী পেয়ে তারও আনন্দ হচ্ছে।
– চলুন মেলেসা আর রুপার্টের বিয়ে দিয়ে দেই। আমাদেরতো হবেনা। অন্তত ওদের হোক।তারপর ওদের অনেকগুলো বেবি আসুক। আমি তাদের নাম রাখবো।
বিষফোরিতো দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মাহাপারা। তার মানে বেয়াজিদ জানে মাহাপারা বিয়েতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাহলে কেনো পরে আছে সে এই বাড়িতে?

মাহাপারার মাহাপারার সাথে সেদিন সন্ধ্যায় বেয়াজিদের ব্যাপারে কথা বলেন।তবে মাহাপারা রাজি হয়নি।সে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু সালেহা মরক্কো চলে গিয়েছে গতকাল তাই বেয়াজিদ কিছুদিন তাদের বাসায় থাকবে। কারণ ঢাকায় তার তেমন আত্মীয় নেই।মামারা সবাই ভ্যাকেশনে বাহিরে। হোটেলে উঠতে চেয়েছিলো সে রুবাবাই জোর করেছে না যেতে।তবে মাহাপারা ভেবেছিলো হয়তো বেয়াজিদ জানে না।কিন্তু এখন সে বুঝলো এই লোকটা সব জানে।
বেয়াজিদের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো মাহাপারা তারপর চলে এলো সেখান থেকে আর কিছুক্ষণ তাকালে হয়তো কোনো অঘটন ঘটে যতো। এ দৃষ্টি উপেক্ষার ক্ষমতা তার নেই।

চলবে…!

Shahazadi Mahapara’s Inscription

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here