শেষ রাত পর্ব-২০

0
1639

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২০
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘আমি তোকে কখনো মোহনার থেকে আলাদা মনে করিনি অনু৷ তোর জন্মের পর দিনের বেশির ভাগটা সময় তুই আমার কাছে আর মোহনার কাছেই ছিলি। যদিও বা ধ্রুবর আব্বুর বিজনেসের জন্য আমরা সপরিবারে সিলেট চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোর আম্মুর কাছে প্রায়ই তোর খোঁজ নিতাম। তুই হয়তো জানিস না মোহনা বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। তবে বিয়ের পর সেই ভালোবাসা আর বেশিদিন ছিল না। শ্বশুর বাড়ির নানান ঝামেলায় আমার মেয়েটা মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছিল। তাই হয়তো তুলতুলকে জন্ম দেওয়ার সময় বেঁচে থাকার জন্য মানসিক শক্তিটুকু পায়নি। হাঁপিয়ে উঠেছিল নিজের জীবন নিয়ে। তাই হয়তো হার মেনে নিয়েছে।’

মনি মা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। খানিক্ষন চুপ থেকে আবারও বলতে লাগলেন-

‘তোকে আমি সেদিন পার্কে দেখা মাত্রই চিনে ফেলেছিলাম। তোর ওভাবে ভেঙে পরা দেখে মনে হচ্ছিল আমি মোহনাকেই দেখছি। ভীষণ কষ্ট হয়েছিল সেদিন। কিন্তু তুলতুলের জন্য তোকেই নিজের ছেলের বউ করে নিয়ে আসতে হবে সেটা ভাবিনি। তুই যখন ছোট ছিলি তখন নিছকই মজার ছলে তোর মাকে বলেছিলাম তোর সাথে ধ্রুবর বিয়ে দিবো। কথাটা সত্যি হয়েছে। মনি আন্টি থেকে মনি মা হয়েছি। তবে তোকে কখনোই আমি ছেলের বউ হিসেবে দেখিনি। সব সময় নিজের মেয়ে মনে করেছি। তাই আমি তোর বিষয়ে কোনো হেয়ালি করতে চাই না। মোহনার খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কিন্তু বিয়ের পর এত ঝামেলা আর মানসিক চাপের জন্য তা আর হয়নি। এই জন্যই আমি চাই না তোর বেলাও সেরকম কিছু হোক। আমি চাই তুই তোর পড়াশোনা ঠিক মতো চালিয়ে যা। তারপর না-হয় সংসারে মন দিস তখন আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। আশাকরি তুই আমাকে ভুল বুঝবি না।’

আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম মনি মা’র দিকে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন তিনি। বরাবরের মতোই লুকানোর চেষ্টা করলেন তার সকল কষ্ট। সকল ব্যথা। সব সময় সবাইকে ধমকের উপরে রাখা এই সাহসী নারীরও কষ্ট আছে। চোখ ভিজে আসার মতো বিষন্নতায় ঘেরা কিছু আবেগ আছে। মেয়ে হারানোর কষ্টে কাতর হয়েও সবার মুখের দিকে চেয়ে নিজেকে শক্ত রাখার দারুণ ক্ষমতা আছে। এক যুগ পর দেখা হলেও ঠিক সেই আগের মতোই মমতায় জড়িয়ে নেওয়ার মতো অসীম ভালোবাসা আছে তার বুকে। এই মানুষটা শুধুই ভালোবাসার৷ যাকে শুধু এবং শুধুই ভালোবাসা যায় কখনও ভুল বুঝা যায় না।

আমি নিঃশব্দে তুলতুলকে মনি মা’র কোল থাকে নামিয়ে আমি নিজেই মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। তুলতুল হামাগুড়ি দিয়ে এসে আমার বুকের সাথে মিশে শুয়ে রইলো। আমি জড়িয়ে ধরলাম তাকে। মনি মাও আমার মাথায় রাখলেন। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আমি নিশ্চুপ থেকেই উপলব্ধি করলাম মনি মা’র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর আমার বুকের সাথে জড়িয়ে রাখা তুলতুলের প্রতি নিজের দূর্বলতা৷ এই মানুষ গুলো ছাড়া আমি অচল। তাদের ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছু নেই।

‘ ডাইনিং টেবিলে আমাদের সামনে গম্ভীর গম্ভীর কথা বলার পর এখানে এসে এত ভালোবাসা আসলো কিভাবে? তা তোমার সব রাগী রাগী ভাব কি শুধু আমার সামনেই দেখাও না-কি মনি?’

আব্বুর কথায় মনি মা তীক্ষ্ণ চোখে ওনার দিকে তাকালেন। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন-

‘আপনারা বাপ ছেলে যেমন আপনাদের সাথে তেমন করেই কথা বলি বুঝলেন!’

আব্বু কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম-

‘থামো তোমরা। আমি এখান থেকে যেয়ে নেই তারপর আবার শুরু করো কেমন!’

আমি মনি মা’র কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসতেই খেয়াল করলাম তুলতুল ঘুমিয়ে পরেছে। আমি খুব সাবধানে তুলতুলকে কোলে নিয়ে বেড রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। পেছন থেকে মনি মা আর আব্বুর ঝগড়া শোনা গেল। আব্বুও পারে বটে। সারাক্ষণ মনি মা’কে না ক্ষেপালে তার হয়তো ভালোই লাগে না। ইচ্ছে করে মনি মা’কে রাগায়। আর মনি মা সবটা জেনেও কৃত্রিম রাগ নিয়ে আব্বুর সাথে ঝগড়া করে। এটাই হয়তো তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এভাবে ঝগড়া করেই হয়তো কাটিয়ে দিবে সারাজীবন।

চোখের পলকের শেষ হয়ে এলো দু’দিন। ধ্রুব নিজেই আমার সকল বই খাতা আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাড়িতে নিয়ে রাখছেন। তার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়নি দু’দিনে। আমার চলে যাওয়া নিয়ে আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি। পুরোটা সময় ছিল স্বাভাবিক। আমি চলে যাওয়াতে কি তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই?? উনি কি এমনটাই চেয়েছিলেন! এতেই কি খুশি! না-কি অন্য কিছু!! আমিই বুঝতে ভুল করছি!

‘চলো তুলতুলের আম্মু। গাড়িতে সব কিছু রাখা হয়ে গেছে।’

ধ্রুবর কথায় আমি আহত দৃষ্টিতে একঝলক তার মুখপানে তাকালাম। দৃষ্টি সরিয়ে স্থির করলাম মনি মা’র দিকে। ঠোঁট প্রসারিত করে মলিন হাসলেন মনি মা। আমি তৎক্ষনাৎ ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সবাইকে ছেড়ে যেতে। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। মনি মা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

‘ধুর বোকা মেয়ে। এভাবে মন খারাপ করছিস কেন? মনে হচ্ছে আমি একেবারের জন্য তোকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মাত্র তো কয়েকদিনের ব্যাপার। আর তা ছাড়া তোর বন্ধের দিন আমি তো যাবোই তুলতুলকে নিয়ে। আর আমি যেতে না পারলেও ধ্রুব তোকে নিয়ে আসবে। তারপর পরিক্ষা শেষ হলে একেবারেই নিয়ে আসবো। মন খারাপ করিস না।’

আমি মাথা নাড়িয়ে জোরালো কন্ঠে বললাম-

‘নিজের খেয়াল রেখো মনি মা। আর তুলতুলকেও দেখে রেখো।’

আমি মনি মা’কে ছেড়ে তুলতুলকে কোলে নিলাম। তুলতুল হাসছে। মেয়েটা সব সময়ই হাসি খুশি থাকে। আচ্ছা আমাকে না পেলে কি কান্না করবে? এতগুলো দিন আমাকে না দেখে ভুলে যাবে না তো!!
তুলতুল আমার গালে তার ঠোঁট ঘষছে। আস্তে আস্তে করে কামড় দিচ্ছে আমার গালে। আমি হাল্কা হেসে তুলতুলের গালে চুমু দিয়ে বললাম-

‘মাম্মা খুব তাড়াতাড়ি এসে পরবে তুলতুল। একদম কান্না করবে না ঠিক আছে?’

তুলতুলে হাত তালি দিয়ে থেমে থেমে অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করলো-

‘মাম্মা ঘুরে.. যাবো।’

ধ্রুব তাড়া দিতেই মনি মা তুলতুলকে আমার কোল থেকে নিতে চাইলো। তবে তুলতুল যাচ্ছে না। শক্ত করে ঝাপটে ধরে আছে আমাকে। মনি মা বেশ কয়েক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। তুলতুল কিছুতেই আমাকে ছাড়তে রাজি না। আর কোনো উপায় না পেয়ে জোর করে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিলো তুলতুলকে। সাথে সাথেই তুলতুলের কান্না শুরু হলো। চেচিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো- ‘মাম্মা ঘুরে যাবো। মাম্মা ঘুরে যাবো।’

আমার মন খারাপ হলো ভীষণ৷ মেয়েটা হয়তো ভেবেছিলো আমি তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। মনি মা তুলতুলের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললেন-

‘তোরা যা আমি ওকে সামলাচ্ছি। আর অনু তোর তুলতুলকে নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না। ওর কান্না একটু পরেই থেমে যাবে।’

আমি কিছুই বললাম না। পুরোটা সময় চেয়ে থাকলাম তুলতুলের দিকে। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করছে তুলতুল৷ আমার কাছে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। জেদ দেখাচ্ছে। চোখের জলে সারা মুখ লেপ্টে গেছে। সাথে সাথেই মুখ লাল হয়ে গেছে তার। আমি এগিয়ে যেতে নিলেই ধ্রুব আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলেন। আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিতে দিতে বললেন-

‘সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তুলতুলের আম্মু। তাড়াতাড়ি বসুন তো। আমাকে আবার রাতে একবার অফিসে যেতে হবে।’

আমি বসলাম। গাড়ি ছাড়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলাম বাড়ির দিকে। দূরত্ব বাড়ছে সেই সাথে চোখের আড়াল হচ্ছে সব কিছু। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। না চাইতেও চোখে জল আসলো। অনিচ্ছাতেই সেই জল গড়িয়ে পারল গাল বেয়ে।

‘আমার জানা মতে মেয়েরা বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কান্না করে। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে সেটা উল্টো হচ্ছে কেন? বাপের বাড়ি যাচ্ছেন ভেবে তো আপনার খুশিতে নাচানাচি করার কথা। তা না করে ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করছেন। এটা কেমন কথা?’

আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালাম ধ্রুবর দিকে। নির্বিকার ভঙ্গিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। কান্নার মাঝেও ক্ষীণ রাগ এসে ঝাপটে ধরলো আমাকে। বিরক্তিতে কপাল কুচকে এলো আমার। কান্না থামিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। ধ্রুব আমার চাহনি বুঝতে পেরে আড় চোখে পর পর কয়েকবার তাকালেন। গলা পরিষ্কার করে মিনমিনিয়ে বললেন-

‘আমি কি করলাম? আমাকে রাগ দেখাচ্ছেন কেন? চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই আমাকে ঝলসে দিবেন। আপনার দৃষ্টিতে পুড়ে ছারখার করে দিবেন আমাকে।’

‘আপনি কি থামবেন তুলতুলের আব্বু? আমাকে না রাগালে আপনার ভালো লাগে না তা-ই না?’

আমার কঠিন বাক্য ধ্রুবকে তেমন একটা প্রভাবিত করলো না। তিনি তার মতোই স্বাভাবিক। কোনো হেলদোল হলো না তার মাঝে। আমি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে রইলাম। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল৷ ধ্রুব বেশিক্ষণ থাকলেন না। সবার সাথে কুশল বিনিময় কিরেই আবারও বেরিয়ে পরছেন যাওয়ার জন্য। আম্মু’র কথা মতো আমিও ধ্রুবর পেছন পেছন গেইট পর্যন্ত আসলাম তাকে বিদায় জানাতে। হঠাৎ করেই ধ্রুব আমার দিকে ফিরে তাকালেন। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে শীতল কন্ঠে বললেন-

‘আসুন আমাকে একটা টাইট হাগ দিন।’

আমি বিস্ফোরিত চোখে ওনার দিকে চাইলাম। রাত বাতির নিয়ন আলোয় তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো ঝলঝল করছে সোডিয়ামের আলোয়। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। আমি সহসা অবাক করা কন্ঠে প্রশ্ন করলাম-

‘মানে কি বলছেন?’

ধ্রুব হাসলেন। বরাবরের মতোই শান্ত গলায় বললেন-

‘তাড়াতাড়ি আসুন আমাকে একটা হাগ দিয়ে দিন। আমি চলে যাচ্ছি৷ তুলতুলকে কাঁদিয়ে এসেছেন। আমি গেলেই তো মেয়েটা জিজ্ঞেস করবে তার মাম্মার কথা। তখন আমি না হয় আপনার পক্ষ থেকে একটা টাইট হাগ দিয়ে দিবো। কিন্তু আমার কাছে তো মায়েদের মতো অসাধারণ মমতা আর তার গায়ের গন্ধ নেই। তাই আপনার কাছ থেকে একটু মমতা আর গায়ের গন্ধ নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।’

আমি হতবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম। বাকরুদ্ধ অবস্থা আমার। কি বলবো ওনাকে! জড়িয়ে ধরবো কি-না সেটাও বুঝতে পারলাম না। আমার দুর্বল মস্তিষ্ককে আর কষ্ট করে কিছু ভাবতে হয়নি। তার আগেই ধ্রুব আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। নিঃশব্দে মুখ গুজে দিলেন আমার ঘাড়ে। আমি থমকে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। চোখ বড় বড় করে দেখতে লাগলাম রাস্তার আশেপাশে কেউ আছে কি-না। ভাগ্য সহায় হলো। রাস্তায় একটি মানুষও দেখা গেল না। পুরো ফাঁকা নির্জন রাস্তা। আমি স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে ধ্রুবর পিঠে আলতো করে হাত রাখলাম। ধ্রুবর নেড়েচেড়ে উঠলেন। আমার ঘাড়ের কাছে থাকা তার ওষ্ঠদ্বয় যুগল নাড়িয়ে অত্যন্ত নরম গলায় বললেন-

‘একটা কথা মনে রেখো সানসাইন, দূরত্ব সব সময় শুধু কষ্টদায়ক হয় না। কিছু কিছু দূরত্ব কষ্টের ফল হিসেবে অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয়। ভালোর জন্যেও মাঝে মাঝে দূরত্বের প্রয়োজন হয়।’

ধ্রুব তার কথা শেষেই আলতো করে তার ওষ্ঠদ্বয় আমার ঘাড়ে ছুঁয়ে দিলেন। আমি কেঁপে উঠলাম। পুরোপুরি ঘটনা বুঝে মস্তিষ্ক সচল হয়ে ওঠার আগেই গাড়ি চলে যাওয়ার শব্দ পেলাম। ধ্রুব চলে গেছে। তার গাড়ি দৃষ্টির আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি তাকিয়ে থাকলাম। শূন্য রাস্তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে যন্ত্রের মতো পা ফেলে ফিরে আসলাম বাসায়।

কেটে গেল আরও দু’দিন। পড়াশোনায় নিজেকে সারাক্ষণ ডুবিয়ে রাখলাম। সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে শুধুই বই পড়ালাম। পরিক্ষার প্রস্তুতি নিলাম। এত এত ব্যস্ততার মাঝেও কিছু কিছু জিনিসের অনুপস্থিতি আমার দীর্ঘ শ্বাসের কারণ হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে খালি বিছানায় দেখে বুক চিড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়েছে। খাবার টেবিলে বসে মনি মা, তুলতুল আর আব্বুকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়েছে। বারান্দায় এসে ধ্রুবর বেলি গাছ না দেখে বুকে তীব্র হাহাকার অনুভব করেছি। সারা বাড়ি জুড়ে তুলতুলের ছুটোছুটি করা আর মাম্মা ডাক শোনা ভীষণ মিস করেছি। মনি মা আর তুলতুলের সঙ্গে দু’দিন কথা হলেও ধ্রুবর সঙ্গে কথা হয়নি। ধ্রুবর দেওয়া ফোন দিয়েই কথা বলেছি মনি মা’র সাথে। তবে ধ্রুবকে কল দেওয়ার সাহস আর কারণ কোনোটাই খুঁজে পাইনি।
কলিং বেলের শব্দ পেলাম তবুই গেলাম না। আম্মু আছে, ভাইয়া আছে তারাই খুলবে। আমি আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলাম ফাঁকা বারান্দায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশ। কালো মেঘে ঢেকে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই বৃষ্টি নামবে বোধহয়।

মিনিট পাঁচেক পর কেউ একজন দরজা ঠেলে রুমে আসলো। শব্দ পেলেও আমি তবুও পেছন ফিরে তাকালাম। ভাবলাম আম্মু হয়তো এসেছে পড়াশোনার খোঁজ নিতে। কিন্তু আমার ধারনা ভুল হলো। পুরুষালি কন্ঠে কেউ একজন ডাকলো আমায়-

‘তুলতুলের আম্মু?’

আমি চমকে গেলাম। দ্রুত রুমে এসে দেখলাম ধ্রুব বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে ক্লান্ত ভঙ্গিতে। আমাকে দেখা মাত্রই বুকে হাত দিয়ে অস্ফুটস্বরে থেমে থেমে বললেন-

‘আমার বুকে ভীষণ ব্যথা করছে তুলতুলের আম্মু। কিছুটা হয়েছে আমার বুকে। আমি টের পাচ্ছি সেই জিনিসটার উপস্থিতি। মাঝেমধ্যে ভীষণ ভারী হয়ে যায় বুক তখন তীব্র যন্ত্রণা করে। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমার খুব ভয়ংকর কিছু হয়েছে আমি বুঝতে পারছি তুলতুলের আম্মু।’

ধ্রুব কথা গুলো বলেই হাঁপাতে শুরু করলেন। বুকে হাত দিয়ে বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।

চলবে…

[অনেক বড় পর্ব দিয়েছি আজ। কেমন হলো জানাবেন। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here