#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_২১
#মিদহাদ_আহমদ
সকাল সাতটা নাগাদ দিনের সূর্যের তাজা আলো আসিফের চোখেমুখে লাগতেই সে ঘুম থেকে জেগে উঠে। আমি পাশে বসেই তাকে বাতাস করছিলাম। আসিফ উঠেই চোখমুখ না খুলে বলে বসে,
‘উফ! এসি অফ করেছো কেন? অদ্ভুত!’
এর প্রায় সেকেন্ড তিনেকের মাথায় আসিফ বললো,
‘অহ সরি সরি সরি।’
আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় উঠে বসলো সে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হাতের এমন ভঙ্গিমা করে বুঝাতে গিয়ে বললো,
‘একচুয়ালি অভ্যাস হয়ে উঠেছে তো! তাই আরকি। কিছু মনে করো না আবার।’
‘আচ্ছা তুমি উঠে হাতমুখ ধূয়ে নাও এখন। আমি নাস্তা এনে দিচ্ছি।’
আসিফ উঠে গেলো। যেই আসিফের ঘুম সকাল এগারোটা বারোটা ছাড়া ভাঙ্গে না, সেই আসিফ সকাল সাতটার রোদ ঝলমলানি আলোতে উঠে গেলো ঘুম থেকে! মানুষটার কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই?
আসিফ কলের ধারে গেলো। আমি তার পিছুপিছু যাওয়ার সময়ে পথ আটকিয়ে মা বললো,
‘আশেপাশের লোকজন কোনকিছু বলার আগেই যেনো এখান থেকে চলে যাস তোরা। বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছি মান সম্মান দেখে চলার জন্য। এখন তো দেখছি আমাদের মান সম্মান তুই আরও ডুবিয়ে ছাড়বি’
আসিফ এদিকে কল থেকে আমাকে ডাক দিচ্ছিলো গলা ছেড়ে। নুপুর, নুপুর, নুপুর…
আমি একটা টাওয়াল নিয়ে আসিফের গায়ে জড়িয়ে দিলাম। আসিফ বললো,
‘কী? এই গরমে টাওয়াল কেন?’
‘না আসলে এইটা গ্রাম তো তাই…’
‘অহ আচ্ছা। তুমি তাহলে কলে জাতা দাও। আমি মুখ ধূয়ে নেই।’
খালি গা আর টু কোয়ার্টার প্যান্ট পরা আসিফের গায়ে যখন সকালের ঝলমলানি রোদ এসে লাগছিলো, তখন কী এক অদ্ভুত মোহমায়ায় আমি আবিষ্টমন হয়ে যাচ্ছিলাম। এক অদ্ভুত অনুভূতি। মানুষটাকে এমন রোদের ঝলমল আলোতে এর আগে দেখার সুযোগ আমার হয়নি। মুখ মুছতে মুছতে রুমে এসে বসলো আসিফ। মা সেমাই আর পরোটা দিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ মেয়ে জামাইর সাথে বসে খোশগল্প করলেন। আমি আরও অবাক হলাম, মায়ের সাথে আসিফও খোশমেজাজে গল্প করছে বসে! গল্প শেষে মা উঠে যাবার সময়ে আমার দিকে বাকা নজরে তাকালের একবার। এই নজরের ভাষা হলো আমি যেনো এখানে আর বেশিক্ষণ না থাকি। মাকে কিছু বলতেও পারছিলাম না। এই মানুষটাকে আমি নিজে ভরসা দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছিলাম আর এখানে? মনের ভেতর যেনো তোলপাড় হয়ে যাচ্ছিলো আমাত নিজের উপর ঘৃণা এবং লজ্জায়। আসিফ পরোটায় সেমাই তুলে আমার মুখের সামনে তুলে ধরে বললো,
‘খাও।’
আমি কয়েক মুহূর্ত আসিফের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসিফ চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো,
‘খাও’
আমি হা করে আসিফের দেয়া সেমাই মাখা পরোটা মুখে নিলাম। আজ প্রথমবারের মতো মানুষটা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আজকাল সবকিছু আমার জীবনে প্রথমবার হচ্ছে। এই প্রথমবার হওয়ার অনুভূতি কি আসলেই ভিন্ন হয়? নাকি আমার জীবনে এই অনুভূতি গুলো প্রাপ্য ছিলো বলেই এমন?
আমার এই ভাবনায় থাকার মাঝে আসিফ আঙুলে চুটকি বাজালো দুইটা চোখের সামনে এনে। বললো,
‘কী? বাতাস করবা না? গরম লাগছে তো।’
আমি পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলাম। আসিফ এক মনোযোগী হয়ে সেমাই খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে তারিফ করছে। মাকে ডেকে বলছে,
‘আপনার রান্নার হাত অনেক ভালো মা। খুব মজাদার হয়েছে৷ একেবারর পাক্কা রাধুনি। ‘
মা রান্নাঘর থেকে উঠে এসে বাটি নিয়ে বললেন,
‘আমি আরও এনে দিচ্ছি বাবা। খাও।’
আসিফও সায় দিলো। আমার শুধু মন বলছিলো তাকে বলবো যে, এই খাওয়ানোর মধ্যে মন থেকে খাওয়ানোর কোন লেশমাত্র ভালোবাসা নেই। এর মাঝে বাস করা কপটতা আমার মধ্যে ঘৃণার সঞ্চার করছিলো। বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না আসিফকে। কী বলবো? নিজের মায়ের কথাই? যে মা চাচ্ছেন না আমরা এখানে থাকি? অথচ এই মুহূর্তে আমাদের যাওয়ার জায়গাও নেই। যেনো দুনিয়া একেবারে পাষাণ হয়ে উঠেছে আমাদের জন্য। আমার মুখে চিন্তার আবেশ দেখে আসিফ বললো,
‘কী হয়েছে? কী নিয়ে চিন্তা করছো?’
এর জবাব দেয়ার আগেই দেখলাম একটা সিএনজি এসে হর্ণ দিচ্ছে আমাদের উঠানে৷ আসিফ বললো,
‘গাড়ি চলে এসেছে। তুমি বিদায় নিয়ে নাও মা বাবার থেকে।’
‘গাড়ি?’
‘হুম’
‘কেন?’
‘আমাদের জন্য। আমরা সিলেট শহরে যাচ্ছি এখন।’
‘বাসায়?’
‘না’
‘তাহলে?’
‘এতকিছু জানার প্রয়োজন আপাতত আছে বলে আমি মনে করছি না। শুধু যেটুকু বলছি ততটুকু করো।’
মানুষটাকে আমি ভয় পাই৷ কথা আর বাড়ালাম না। প্রশ্নের শেষে প্রশ্ন জুড়ে দিলাম না। শুধু একবার বললাম,
‘এখানে থেকে গেলে কি…’
প্রশ্ন শেষ হওয়াও আগেই আসিফ বললো,
‘এইটা আমার শ্বশুরবাড়ি। তোমার বাপের বাড়ি। এখানে তুমি এসে থাকতে পারো৷ যেমনটা তানিয়া আপা এসে থাকে আমাদের বাসায়। দুলাভাই এসে থাকেন কি? থাকেন না। সো, তোমাকে নিয়ে আমি এখানে থাকতে পারবো না ‘
কথাগুলো কীভাবে জানি আমার বাবা শুনে ফেললেন। এসে বললেন,
‘কী হয়েছে বাবা? আমরা গরীব মানুষ আমাদের যত্ন খাতিরে কি কোন কমতি হয়েছে বাবা?’
আসিফ মুখে একটা সুন্দর হাসি আনলো। মাথায় হাত দিয়ে চুল একপাশে নিয়ে আমার বাবাকে বললো,
‘না বাবা। কী বলেন আপনি? বাবা কখনো তার ছেলের যত্নে কম করে নাকি? আর আমি আপনার ছেলেই তো তাইনা?’
‘তাহলে বাবা এই সকাল বেলা কিছু না বলে কাওকে যে…’
‘না আসলে আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম বাবা।’
আমার মাও এসে সাথেসাথে যুক্ত করলেন,
‘বাবা কী হলো তোমার? মাত্র আসলা কাল রাতে আর আজ চলে যাচ্ছো? বিষয়টা কেমন না? লোকে কী বলবে?’
‘না মা৷ লোকে কী বলবে আবার বলেন? বরং আমি এখানে থাকলে লোকে কানাঘুষা শুরু করবে৷ আমরা চলে যাচ্ছি।’
আসিফের ভেতরের চাপা অভিমান আর বের হলো না৷ খেয়াল করলাম সে অবলীলায় মুখে মিষ্টি হাসি এনে কথাগুলো সুন্দর করে বলে চলছে। মা সাথেসাথে আমাদের একটু সময় অপেক্ষা করতে বললেন৷ আধা ঘন্টার ভেতরে এক টিফিন বক্সে মা মোরগ রান্না করে এনে দিলেন৷ আমি মাকে বললাম,
‘এগুলো লাগবে না মা।’
মা বললেন,
‘আরে তোর না লাগুক। আমি আমার জামাইকে দিচ্ছি রান্না করে৷ জামাই বাবাজি আসলো, কিছু খেলো না, আবার চলেও যাচ্ছে!’
আমি অবাক হলাম মানুষের এই পরিবর্তন দেখে। আমার নিজের মায়ের এই পরিবর্তন দেখে৷ শুধুমাত্র সম্মানের খাতিরে কোনকিছু বললাম না। সিএনজি ড্রাইভার কাল রাতের উনিই। আমরা দুজন বিদায় নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলাম। সিএনজি ছাড়ার আগেই শুনতে পেলাম মা পাশের ঘরের চাচিকে বলছেন,
‘কী যে বলবো বলেন! বড়লোক মানুষের এই বড়লোকি শখ। কাল মধ্যরাতে এসে হাজির, তাও কোটি টাকার গাড়ি রেখে ভাড়ায় সিএনজি নিয়ে। আবার আজ সকাল হতে না হতেই বিদায় নিয়ে নিচ্ছে। এসব সিএনজি একশোটা কেনার তাদের ক্ষমতা আছে। এই উদ্ভট শখ থাকলে একটা কিনে নিলেই তো হতো। আর ভাবি জানো, আজ দেখলাম নুপুরের আঙুলে ডায়মন্ড না কী জানি, ওমন সাদা চকচকে একটা আংটি। জিজ্ঞেস করার সময় ই হয়নাই। কাল রাতে যখন অন্ধকার ছিলো ঘর, মোমের আলোতে ওই আংটিটা জ্বলজ্বল করছিলো।’
সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি স্টার্ট দিলো৷ লুকিং গ্লাসে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত দেখলাম মা ওই চাচির সাথে গল্প করছেন৷ না জানি আমার কত সুখের গল্প আওড়াচ্ছেন! আমি আমার আঙুলের দিকে তাকালাম৷ দেখলাম ডায়মন্ডের আংটি আঙুলেই আছে। আসিফকে দেখিয়ে বললাম,
‘এই আংটিটা…’
‘এইটা কে দিয়েছে?’
‘তানিয়া আপা দিয়েছিলো। ডায়মন্ডের।’
‘ফিরিয়ে দিয়ে এসো।’
গম্ভীর গলায় বললো আসিফ। তারপর ড্রাইভারের থেকে সিগারেট চেয়ে নিয়ে, সিগারেট ধরালো। মুখটা আলতো করে জানালার দিকে নিয়ে নিলো।ধূয়া সব সাবধানে বাইরের দিকে ছাড়ছে আসিফ। আমার খেয়াল ঠিকই হলো। সে ঠিকই আমার কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে। বাড়িতে থাকতে এক বেলাও সে সিগারেট ধরায়নি! আসিফের এহেন পরিবর্তন আমাকে আশা দেখাচ্ছে। আমাকে বাঁচতে শেখাচ্ছে যেনো!
আসিফ সিগারেট শেষ করে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো,
‘বাসার ভাড়া কত বলেছে?’
‘ছয় হাজার টাকা। রুম একটা। সাথে রান্নাঘর আছে। টাইলস করা। তবে ছাদের উপর। আপনার সমস্যা হইবো কিন্তু’
‘হুম। আর কম ভাড়ায় কি বাসা নাই?’
‘আছে তয় আপনার জন্যি নাই৷ আপনি বস্তি বাড়িতে গিয়া উঠবেন ভাবি সমতে?’
আসিফ জবাব দিলো না। আমি আসিফকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কই যাচ্ছি আমরা?’
‘আমি বাসা দেখেছি৷ আমরা সেই বাসায় যাচ্ছি৷ সেখানেই থাকবো।’
‘আর ভাড়া?’
‘সময় আসুক৷ দেখা যাবে।’
আসিফ আবার এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো। তার গুনগুন করে গাওয়া গান শুনে আমি মোহিত হয়ে গেলাম যেনো। তাকে বললাম,
‘একটু শব্দ করে গাওয়া যাবে কি?’
একটা মিষ্টি হাসি দিলো আসিফ। গালের টোল পড়া হাসির ছেলে মুখ আমি এর আগে দেখিনি৷ তারপর গলা ছেড়ে গাইতে লাগলো,
‘সরল তুমি শান্ত তুমি নূরের পুতুলা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
যেদিন তোমারে প্রথম নয়নে হেরি
সেদিন হতে তোমার কথা ভাবনা করি
পাগল বেশে ঘুরিফিরি বাজাই বেহালা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
শুইলে স্বপনে সদা তোমারে দেখি
ঘুম ভাঙ্গিলে মনে হয় সকলি ফাঁকি
আমি তোমার ছবি আঁকি বসে নিরালা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
আমার হয়ে তুমি আমার কাছে আসিলে
আদর করিয়া তোমায় লইয়া কূলে
সুভাশিত বনফুলে পরাবো মালা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
আমি তোমারে কি আর বলিবো প্রিয়া
মনে রেখো গো তুমি আপন জানিয়া
করিমের খবর নিও থাকিতে বেলা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা
সরল তুমি শান্ত তুমি নূরের পুতুলা
সরল জানিয়া নাম রাখি সরলা।’
গানটা গেয়ে আসিফ আমার দিকে তাকালো। তার মুগ্ধতা ভরা চোখ নিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন হয়েছে?’
আমি আসিফের গানের যে দরদ সেই দরদে যেনো ডুব দিয়ে আছি। বললাম,
‘অনেক ভালো হয়েছে।’
গাড়ির ড্রাইভার বলে উঠলো,
‘জানেন স্যার, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম তাঁর স্ত্রীকে অনেক ভালো বাসতেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিলো নাইওরজান বিবি৷ আর এই গানে যে সরলা, সেই সরলা নামটা তিনি দিয়েছিলেন। বাউল সম্রাট কত গান যে লিখেছেন তার স্ত্রীকে নিয়ে!’
আসিফ বললো,
‘এককালে লোকসংগীত ছাড়া আমার মন ই বসতো না। কোথাও বসে আছি, আর সময় আছে, কিন্তু গান হয়নি এমন হয়নি।’
‘স্যার আপনে গান করা শুরু করেন৷ দেখবেন আপনার অনেক নামডাক হবে। অনেক’
‘কী যে বলো!’
আসিফ একটা হাসি দিলো। বরাবর তার হাসিতে আমি মুগ্ধতা খুঁজ করছি। এক অপার নির্ভরতা পাচ্ছি যেনো তার হাসিতে। আসিফের মাটিমাখা গানের গলা যে কাওকে মোহিত করে ফেলবে অনায়াসে।
ঘন্টা দেড়েকের মাথায় আমরা শহরে এসে পৌঁছালাম। ড্রাইভার সিলেট শহরের মিরাবাজার এলাকায় একটা বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো। তারপর কার সাথে যেনো আসিফকে কথা বলিয়ে নিয়ে এসে আমাকে করে আসিফ উপরে উঠলো৷ চার তলা বাসার ছাদের উপর এক রুম, এক কিচেন আর একটা খাবার ঘর। ছোট একটা বাথরুমও আছে। আসিফ বললো,
‘আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো।’
আমি এসেই আমার ফোন চার্জে লাগালাম। বাড়িতে কারেন্ট ছিলো না। এখানে কারেন্ট আছে৷ বাড়ি ওয়ালা এসে দেখে গেলো। আর বললো,
‘এডভান্স ছয় হাজার টাকা কি এখন দিয়ে দিবেন আপনারা?’
আসিফ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
‘ব্যাংক থেকে তুলে আনতে হবে। আমি আগামীকাল দেই?’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
বাড়ি ওয়ালা চলে গেলো। আসিফ আমাকে বললো,
‘বলে তো দিলাম আগামীকাল দিবো। কোথা থেকে দিবো বলো?’
আমি আসিফের হাত ধরে বললাম,
‘আল্লাহ সব ম্যানেজ করে দিবেন।’
ফোন চার্জে লাগাতেই অন হয়ে গেলো। তারপর এসে ঢুকতে শুরু করলো একের পর এক কল সবগুলাই তানিয়া আপার। আমি আসিফকে দেখালাম তানিয়া আপার নাম্বার থেকে কল এসস ঢুকেছে যে। আফিসকে দেখানোর সাথে সাথে দুলাভাইয়ের নাম্বার থেকেও কল এসে ঢুকলো। আসিফের দিকে তাকালাম আমি। আসিফ বললো,
‘কল ধরো।’
আমি কল রিসিভ করলা। ওপাশ থেকে হুলস্থুল হয়ে তানিয়া আপা জিজ্ঞেস করলো,
‘কী হয়েছে? কোথায় তোমরা? আসিফ কই? খেয়েছে কিছু? আমি কাল থেকে কল করে পাচ্ছি না। আসিফ কোথায়? কোথায় আমার ভাই?’
‘পাশেই আছে আপা।’
‘কিছু খেয়েছো তোমরা?’
আপার কথার জবাব দেয়ার আগেই আসিফ আমার থেকে মোবাইল কেড়ে নিলো। কানে মোবাইল নিয়ে বললো,
‘আমরা মিরাবাজার, ২৬ নাম্বার বাসায় আছি। তুমি চলে এসো। তারপর বলছি সব কথা।’
আমি মনেমনে ভাবলাম, আসিফ তাহলে কি সবকিছু মিটমাট করতে যাচ্ছে? বাসায় চলে যাওয়ার চিন্তা করছে?
বিরবির করে আসিফ বলতে লাগলো,
‘শালার কাল থেকে মদ খেতে পারিনি। লাইফটা হেল হয়ে গেলো।’
আমি বুঝতে পারলাম, নেশা পিপাসায় আসিফ কাতর হয়ে উঠেছে।
(চলবে)