#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_৩৬
#মিদহাদ_আহমদ
*গ্রুপ প্রাইভেট করে ফেলা হবে শীঘ্রই। যারা জয়েন না হয়ে গল্প পড়ছেন, আপনারা আর পড়তে পারবেন না। আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম। জয়েন হয়ে নিন**
সন্ধ্যার পর তামান্নার হবু শাশুরি আর খালা শাশুড়িরা চলে গেলেন৷ তামান্না আর ননাস মিলে মার্কেট করতে চলে গিয়েছে। শাশুড়ি তার রুমে বসে সিরিয়াল দেখছেন। শ্বশুরও শাশুড়ির পাশে বসা ছিলেন। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে আমি উঠে গেলাম। উপর থেকে দেখলাম, কাজের মেয়ে দরজা খুলে দিলো। দুলাভাই এসে ঢুকলেন। আমি তড়িঘড়ি করে দুলাভাইর সামনে গেলাম। দুলাভাইকে বললাম, ওনার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে। দুলাভাই প্রথমে না করলেও শেষে বললেন কী বলার সরাসরি বলতে। ওনাকে ড্রইংরুমে বসতে বললাম। কাজের মেয়েকে চা করে আনতে বললাম। দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘সেই মেয়ে কে ছিলো?’
দুলাভাই হাঁক ছেড়ে উঠলেন। অপ্রস্তুত আর রাগ দুটোকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তেড়ে বললেন,
‘কোন মেয়ে? কীসের মেয়ে? কার কথা বলছো?’
‘দুলাভাই আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?’
‘তোমার এত বড় সাহস, তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলছো? আমি এই বাড়ির জামাই হই। মা, কোথায় আপনি? কোথায় আছেন? এদিকে আসেন। দেখে যান আপনার একমাত্র পুত্রবধূ আমার সাথে কেমন আচরণ করছে।’
চিল্লাচিল্লি করে পুরো ঘর দুলাভাই মাথায় তুলে নিলো একেবারে। উপর থেকে শ্বশুর শাশুড়ি নেমে এলেন। শ্বশুর জিজ্ঞেস করলেন,
‘কী হয়েছে বাবা?’
‘দেখেন বাবা আমার মুখেও আনতে লজ্জা হচ্ছে। আর নুপুর কিনা আজ সরাসরি আমার চরিত্রের উপর আঘাত করলো? সে বলল, আমাকে নাকি একটা মেয়ের সাথে দেখেছে গাড়িতে উঠতে? এই কথা কি সে বলতে পারে? আপনি বলেন?’
শাশুড়ি আমার দিকে চেয়ে বললেন,
‘কী নুপুর? কী শুনছি এসব? তুমি কেন জামাইকে এসব বললা?’
আমি জবাব দিলাম না। দুলাভাই বললেন,
‘গ্রামের মেয়েদের এই একটা স্বভাব। এরা ম্যানার জানে না। কার সাথে কেমন বিহেইভ করতে হবে এইটা জানে না। জানে না কখন কোথায় কী বলা লাগে। তার উপর এখন আমাকে ব্লেইম দিচ্ছেন! হাউ সেকুলাস!
দুলাভাইয়ের এসব কথা বলতে বলতে বাসায় এসে আমার ননাস আর ননদ ঢুকলো। ননদ ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললো,
‘ভাবি আমার ওড়নাটা সাথে নেইনাই। ওইযে কাল যেটা আনিয়েছিলাম, ওইটার লেইস কিনবো। মেহেদিতে পরবো যেইটা। ওটা সাথে করে না নিলে লেইস মিলাবে কীভাবে বলো? তুমি একটু আমার ওয়ারড্রব থেকে এনে দাও না।’
তামান্না এই মহলের পরিস্থিতি বুঝতে পারেনাই। ননাস দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলো,
‘কী হয়েছে? সবাই এখানে চুপচাপ…’
‘কী আর হবে? তোমার ভাইয়ের বউ আমার উপর এফেয়ারের মামলা দায়ের করেছে। আমাকে বলছে, আমায় নাকি সে একটা মেয়ের সাথে দেখেছে৷ আমি এই ঘরে তোমার সাথে এসে থাকছি, শুধুমাত্র তামান্নার বিয়ের জন্য। আর এখানে আমাকে সর্বক্ষণ এভাবে অপমান করা হচ্ছে? মিথ্যা ব্লেইম দেয়া হচ্ছে আমার নামে?’
আমি দাঁড়িয়ে শুনলাম সবকিছু। কোন জবাব দিলাম না। ননাস তেড়ে আসলো। ছোটলোকের বাচ্চা, গরীব ঘরের মেয়ে, নিজের সংসার সামাল দেবার মুরোদ নেই সহ আরও কত কিছু! মুখে যা আসলে তাই বললেন তিনি। তামান্না এসে তার বোনকে নিয়ে গেলো রুমে। আমাকে বলে গেলো তামান্না
‘তোমারও না হয়েছে ভাবি। কী দরকার এসব দেখার? যে যাই করুক সবকিছুতে নাক গলানো স্বভাব আর যাবে না তোমার নাকি?’
শাশুড়ি আমাকে কিছু বললেন না আর। দুলাভাইর সামনে গিয়ে দুলাভাইকে সোফায় বসিয়ে বসিয়ে বললেন,
‘দামান্দ বসো। এতো তাড়াতাড়ি মাথা গরম করলে হবে বলো? আমার বড় ছেলের জায়গা দখল করে আছো তুমি। আর তুমি যদি এভাবে এসবে রেগে যাও তাহলে এই বুড়ো শ্বশুর শাশুড়িকে সামাল দিবে কে? হয়তো নুপুর তোমার মতো দেখতে কাওকে দেখেছে তাই…’
‘না মা। আমার স্বামীর মতো কাওকে দেখেছে মানে? তুমিও কি সায় দিচ্ছো এখন?’
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো ননাস। শাশুড়ি মা আমতা আমতা করে বললেন,
‘না আসলে আমি…’
‘কোন না না মা। তোমার আদরের পুত্রবধূ এক্ষুণি আমার স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর নাহলে আমি আর এক মুহূর্ত এই বাড়িতে থাকবো না।’
দেখলাম দুলাভাই উঠে গেলো সোফা থেকে। আপার হাতে ধরে কী কানে কানে কী যেনো বললো। আমি আর কারোর কিছু বলার অপেক্ষায় রইলাম না। দুলাভাইর সামনে গিয়ে সরি বলে উপরে চলে এলাম নিজের রুমে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। আর যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতো, তাহলে আর আমি এখানে থাকতাম না। বাবার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতাম। তাতে অন্তত আমার কিছুটা কষ্ট লাঘব হতো। ছোট বেলায় যখন মা, ফুফুরা আমাকে বকা দিতো, এক দৌড় দিয়ে চলতাম বাবার কাছে। জড়িয়ে ধরে কান্না করতাম। আল্লাহ আমার সেই জায়গাও রাখলেন না। রাখলেন না।
রুমে বসে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর শাশুড়ি মা রুমে এলেন। ওনার হাতে এক প্লেইট তরমুজ। রুমের এসি অন করতে করতে বললেন,
‘এই গরমে এসি অন করোনি কেন নুপুর?’
আমি জবাব দিলাম না। আমার পাশে বসে শাশুড়ি মা বললেন,
‘জানি রে মা। এই কষ্ট কেমন। আর এই অপমান সহ্য করার শক্তিও কেমন। নিচে কিছু বলিনি। তুমি তো দামান্দের কারো সাথে এফেয়ার এইটা একবারের জন্যও বলোনি। কিন্তু সে নিজ থেকেই সেইটা বললো! তুমি কি সত্যি সত্যিই তাকে দেখেছো?’
আমি এবার শাশুড়িকে বিস্তারিত খুলে বললাম। এও বললাম যে আসিফকে আমি প্রথমে সন্দেহ করেছিলাম। তারপর এই একই কালারের শার্ট দেখে সন্দেহের তীরটা দুলাভাইর উপর যায়। কিন্তু দুলাভাই যে কারো গাড়িতে উঠতেই পারে। গাড়িতে উঠা দোষের কিছু না। সে যে এফেয়ারের কথা বললো…’
শাশুড়ি মা আমার মুখ আটকে দিলেন। জড়িয়ে ধরে আমাকে কান্না করতে করতে বললেন,
‘মা রে এমন যদি কিছু হয়, তাহলে আমার মেয়েটা বাঁচতে বাঁচতে মরে যাবে। এমন কিছু যদি হয়, তাহলে তানিয়া আর সহ্য করতে পারবে না৷ জীবনে মা হওয়ার যে সাধ, সেই সাধ থেকেও আমার মেয়েটা বঞ্চিত৷ হায় আল্লাহ! আমার মেয়ের জীবনটা আর এমন করো না। বিষিয়ে তুলো না।’
অন্যদিকে রুমে গিয়ে বদরুল তানিয়াকে বললো,
‘কী যা তা বলে বসো হুট করে? যদি সে সরি না বলতো তাহলে সত্যি সত্যিই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতা?’
তানিয়া বদরুলের বুকে মাথা রেখে বললো,
‘জানো বদরুল, তোমার উপর কেউ মিথ্যা অপবাদ দিক এ আমি সইতে পারবো না। আমাকে যে যাই বলার বলুক, তোমাকে কেন বলবে? আর আমি জানি তুমি এমন করতে পারো না। আমার বিশ্বাস কখনো এমন করতে পারে না। এই বিশ্বাস আমি তোমার উপর করেছি। আমার নিজের স্বামীর উপর। আর সে ক্ষমা না চাইলে, আমার এই বাড়িতে থাকার মোহ সত্যি সত্যিই নেই। আমার জন্য তুমিই সবকিছু। তুমিই।’
আবারও জড়িয়ে ধরলো বদরুলকে তানিয়া তার ভালোবাসার ছোঁয়ায়।
(চলবে)