#অনুভবী_হিয়া’
#মাইশাতুল_মিহির
৮.
নীমতলা.! মিহিরের প্রিয় জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। এখন এখানেই বসে আছে সে। সাথে তার প্রান প্রিয় বাটনফোন মানে বান্ধুবি মিতু।
‘জেলাস জেলাস!’ মজার ছলে বলে মিতু। বিস্ময় চোখে তাকায় মিহির। তারপর বললো, ‘জেলাস মানে? তুই কি বুঝাতে চাইছিস?’ মিতু ফিক করে হেসে ফেলে। মিতুর হাসি এই মুহূর্তে মিহিরের শরিলে তেলে বেগুনে জ্বলিয়ে দিচ্ছে। রেগে বলে, ‘মিতু কা বাচ্ছি, হাসবি না বল।’
‘আরে শুভ ভাইয়া জেলাস। তোকে আর সবুজ ভাইয়া কে এক সাথে ফুচকা খেতে দেখে ওনি রেগে মেগে এটম বোম হয়ে আছে। ভাইয়া এখনো তোকে ভালোবাসে। তাইতো অন্য কারোর সাথে তোকে দেখে রেগে গেছে।’
‘ভালোবাসে? হাহ্!’ তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে মিহির। মিতু কিছুক্ষণ নিরব থেকে স্বাভাবিক স্বরে বলে, ‘দেখ, ওই দিন ভাইয়া রাগের মাথায় এমন করেছিলো জানি তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলি। ভাইয়া এখন অনুতপ্ত মিহির। আদিলের কাছে যা শুনলাম ভাইয়া নাকি এই দুই বছর তোকে পাগলের মতো খুঁজেছিল। এখনো তোকে অনেক ভালোবাসে মিহির। আরেকটা সুযোগ দিতেই পারিস ভাইয়াকে। ভাইয়ার সাথে আলাদা দেখা করে দেখ ভাইয়া কি বলতে চাই। ভুল তো মানুষেরই হয়। ভুলে যা সব, দ্বিতীয় সুযোগ তো দেওয়ায় যায় বল?’
‘কখনোই না মিতু। ওই লোকটা আমাকে রেস্টুরেন্টে সবার সামনে অপমান করেছিলো আর তুই বলছিস ভুলে যেতে? তুই অন্তত্য এইগুলা বলিস না। কত অবহেলা সয্য করে তার কাছে একটু সময় চেয়েছিলাম দিয়েছিলো সে আমাকে? ভালোই যদি বাসতো তাহলে অন্তত্য আমাকে একটু সম্মান করতো, সময় দিতো আমাকে। ওনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না মিতু। দ্বিতীয় সুযোগ তো দূরের কথা।’ ঠোঁট কামরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে মিহির। আহর্নিশের কোণায় জল চিকচিক করছে। মিতু আর কথা বাড়ায় না। এক হাতে আগলে নেয় মিহির কে। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলে তাকে।
__________________
কৃষ্ণতলায় বসে আছে শুভ, সামির, আদিল এবং রাহুল।
‘তোর কি মনে হয়? দুই বছর মিহির তোর লাইগা বইয়া থাকবো? এইডা মিহিরের বয়ফ্রেন্ড নায়তো হবু মিলাইয়া দেখিস।’ রাহুল বলে। আদিল রাহুলের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বলে, ‘শা:লা ক্ষেত সুন্দর করে কথা বলতে পারিস না? মিহিরের কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নাই আমি হান্ডেট পারসেন্ট সিউর।’
‘তাহলে ছেলেটা কে?’ চিন্তিত হয়ে বলে শুভ। সামির বিরক্ত স্বরে বলে, ‘আরে ভাই এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো। এমনও হতে পারে মিহিরের কাজিন ব্রাদার।’
‘ভাই, কাজিনের সাথেও কিন্তু বিয়ে হালাল ভুলে গেলা নাকি? পোলাডা মিহিরের হবু হইলে আমি মসজিদে ৫০০ টাকা দান করমু।’ পকেটে মোবাইল ঢুকাতে ঢুকাতে বলে রাহুল। শুভ কোকের বোতল রাহুলের দিকে ঢিল দিয়ে বলে, ‘শা:লা হারামি, এই দো’য়া করোস তুই? আমার না হওয়া সংসার ভেঙে যাচ্ছে কই সমাধান করবি না ওল্টা পাল্টা কথা বলতেছিস খালি।’
‘আদিল তুই মিতুকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর। আর হ্যা লাউডস্পিকারে দিবি কিন্তু।’ সামির বলে। আদিল পকেট থেকে মোবাইল বের করে মিতুকে কল দেয়। মিতু কল রিসিভ করে ‘হ্যালো!’ বলে।
‘কেমন আছো মিতু?’
‘একটু আগে না কথা হলো এখন আবার জিজ্ঞেস করছো কেনো?’
‘না মানে এমনি। কি করতেছো তুমি?’
পাশ থেকে সামির মাথায় চাপড় মেরে ফিসফিস করে বলে, ‘শা:লা তোরে প্রেম করতে ফোন দিতে বলছি? আসল কথা জিজ্ঞেস কর।’ আদিল সামিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা মিতু একটা সত্যি কথা বলবে মিহির কি কোনো বয়ফ্রেন্ড বা হবু আছে?
হঠাৎ আদিলের এমন প্রশ্ন শুনে খানিকটা বিস্ময় হয় মিতু। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারে আদিলের সাথে বাকি তিন জনও আছে আর শুভ যে আদিলের মাধ্যমে জানতে চাইছে বুঝতে সময় নেয়নি তার। এই সুযোগে ব্যাটাকে জ্বালানো যাক।
‘কেনো বলোতো? আজ হঠাৎ মিহিরের কথা জিজ্ঞেস করলে?’ মিতু।
‘না এমনি। বলো বয়ফ্রেন্ড আছে মিহির?’
‘উম্মম, নেই বললেও হবে না, আবার আছে যে তাও না।’ ঠোঁট চেপে হাসে মিতু।
একে অপরের দিকে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় চার জন। আদিল বলে উঠে, ‘মানে এটা আবার কেমন কথা?’
‘মানে টা স্বাভাবিক। বুঝলে বুঝো না হলে আর বলতে পারবো না।’
‘আচ্ছা ওই দিন মিহির কার সাথে ফুচকা খেতে গিয়েছিলো?’
‘ওহ! ওই দিন তো মিহির মামাতো ভাই সবুজ ভাইয়ার সাথে গিয়েছিলো।’ বলেই জিহ্বে কামড় দেয় মিতু। ইশ তাড়াহুড়ো করে বলে দিলো।
‘তার মানে ছেলে টা মিহির জাস্ট কাজিন ব্রাদার টাইপ আর কিছু নাহ?’
‘না এমন না। আই থিংক সবুজ ভাইয়া মিহিরকে লাইক করে বাট বলে না। না হলে দেখো কুমিল্লা থেকে ঢাকা কিছু দিন পর পর ব্যবসার উছিলায় আসে কি হুদাই? আমার তো এমন মনে হয় না! এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে যে কেউ প্রেমে পরে যাবে আমি হলেও প্রেমে পরে যেতাম, মিহিরও প্রেমে পরবে আই’ম ড্যাম সিউর।’ বলেই হাই তুললো মিতু। শুভ চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে বসে আছে। আদিল কাটকাট গলায় বলে উঠে, ‘তুমি প্রেমে পরবা মানে? আমি থাকতে প্রেমে কেনো পরবা?’
‘আরে না এমনি বললাম। সবুজ ভাইয়া পারসোনালিটি কিন্তু অনেক ভালো। আজকালকার যুগে এমন পারসন পাওয়া ওনেক টাফ।’
‘মিহিরের মামার বাড়ি কোথায় জানো?’
‘কুমিল্লা, সুন্দরপাড়া। কেনো বলো তো?
‘কিছু না, সবুজের মাঝে লাল দাগ বসাবো। এখন রাখছি!’ বলেই ফোন কেটে দেয় আদিল।
‘ভাই অনেক দিন ধরে অপারেশনে নামি না। কি বলিস তোরা।’ আড়মোড় ভেঙে বলে রাহুল। প্রতি উত্তরে বাঁকা হাসে শুভ।
_________________
লাইব্রেরীতে বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে বই খুঁজছে মাহিন। হঠাৎ পিছন থেকে ‘মিঃ হালুক!’ ডাক কর্ণগোচর হলো তার। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে সুহা দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো দু পাশে বেনী করা, চোখে চশমা, গায়ে সাদা কলেজ ড্রেসে দারুণ লাগছে। কিছু সময়ের জন্য থমকে যায় মাহিন। নিজের অবস্থা দেখে নিজেকে কয়েক দফা গালি দিয়ে ফের বই খুঁজায় মনোযোগ দেয়। মাহিনের এমন খাপছাড়া ভাবে খানিকটা অপমানিতবোধ করে সুহা। ফ্যালফ্যাল ভাবে তাকিয়ে থেকে বলে, ‘আমি আপনাকে ডাক দিলাম কথা বলতে অথচ আপনি না দেখার ভান করছেন কেনো?’
‘আমি কোনো হালুক ভাল্লুক নয়। আমার একটা নিদিষ্ট নাম আছে। এইসব আলতু ফালতু নামে ডাকলেই আমাকে সাড়া দিতে হবে নাকি। আজিব পাবলিক।’ বুকশেলফ থেকে বই নামাতে নামাতে বলে মাহিন। সুহা মুখের হাসির রেখা বড় করে বলে, ‘আপনি তো আবার ভাবওয়ালা লোক তাই নাম বলেন নি। যেহেতু আমি আপনার নাম জানি না তো মিঃ হালুক বলেই ডাকবো। উম্ম নয়তো হ্যান্ডসাম কানা বিলাই!’ বলেই উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠে সুহা। মাহিন বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় বলে, ‘এই মেয়ে সমস্যা কি হ্যা? আমার পিছে কেনো পরে আছো? এইসব নামে আমাকে ডাকবে না খবরদার।’
‘নাম না বললে ডাকবোই। কি করবেন আপনি?’ ঠায় দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে সুহা। মাহিন কিছু একটা ভেবে আশেপাশে তাকায়। তারপর ঘাড় কাত করে এক পা দু পা করে সুহার দিকে এগোতে থাকে। মাহিনের এমন আচরনে খানিকটা ভরকে যায় সুহা। ভয়ে পিছিয়ে বুকশেলফের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়ায়। পিছানোর আর জায়গা নেই। এখন নিজেকেই শ’খানেক গালি দিচ্ছে কেনো এখানে একা আসতে গেলো। মাহিন একহাত বুকশেলফে রেখে সুহার দিকে ঝুকে দাঁড়ায়। সুহা ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মাহিন গভীর দৃষ্টি দিয়ে সুহাকে প্রখর করছে। অসাধারন মোহনীয় লাগছে সুহাকে। কিছুই হচ্ছে না দেখে সুহা চোখ খুলে মাহিনের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায়। শুকনো ঢুক গিলে সুহা।
‘অনেক কিছুই হতে পারে যা তোমার এই ছোট মস্তিষ্কে ঢুকবে। তুমি মেয়ে বলে বেঁচে গেছো। ফারদার আমার সাথে লাগতে আসবে না। এটা কেবল মাত্র টেইলার ছিলো মুভি কিন্তু আমি নিজেই লিখতে পারি।’ বলেই বই হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায় মাহিন। সুহা স্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনার কথা মনে পরতেই গালে লাল আভা ভেসে উঠে। উফফ এ কেমন অনুভূতি।
চলবে..!!
[অনেক দিন পর গল্পটা দিলাম। এখন থেকে রেগুলার গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং🌼]