#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#ধামাকা_পর্ব
নিভু নিভু চোখে আনজুমার জ্ঞান ফিরে এলো। অচেতন অবস্থায় তার সঙ্গে কি ঘটেছে অজানা তার! নিজেকে সে চেয়ারে হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। শরীরের ব্যথা-যন্ত্রণা সবে অনুভব করে সে। এতক্ষণ অজ্ঞানরত থাকার কারণে যন্ত্রণার অনুভূতি স্পর্শ করেনি তাকে। অথচ এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সে। তাকে অজ্ঞান করে বিধ্বস্ত ভাবে মা’রা হয়েছে। কিন্তু আতঙ্কে আনজুমার মন বিষিয়ে উঠে। শরীরে কি এই যন্ত্রণা মা’রে’র নাকি ধ’র্ষ’ণের শিকার হলো সে! পবিত্র শরীরে কি কেউ কাটা ফুটিয়েছে ইয়া আল্লাহ্। ভেবেই গলা শুকিয়ে গেল আনজুমার। সে বুঝছে না শরীরের নির্মম ব্যথাগুলো কিসের!
মাথা উঁচিয়ে কেউ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করে। তবে রুমটা অন্ধকারময়। রুমের ভেতরে কোনো জিনিস আছে বলে মনে হচ্ছে না তার। কাঁপা কাঁপা গলায় খেকিয়ে উঠে।
‘কে কেউ কি আছেন! প্লিজ হেল্প মি। কেউ শুনছেননন প্লিজজ হেল্প!’
আনজুমার শব্দবাক্য পুরু রুমেই বিরাজ করছে। বাহিরে তার আওয়াজ গিয়েছে কিনা বুঝা মুশকিল। নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে সে। হাত জোরে জোরে ঠেলে দড়ির ধার হালকা করার প্রয়াস করে। তৎক্ষণাৎ কারো সচল পায়ের শব্দ তার শ্রবণইন্দ্রিয়ে প্রবেশ করে। ক্ষণিকে অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) দরজা খুলে গেল রুমের। ভেতরে এলো কয়েকজোড়া পায়ের মালিক। অজ্ঞানের ভান ধরে শুকনো ঢোক গিলে আনজুমা। লাইটের নিচে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। ফলে সে চোখ নির্মলভাবে বন্ধ রেখেছে। যেন নিখুঁত প্রমাণ হয় সে এখনো অব্দি অজ্ঞান!
‘মা** আমাকে চড় মেরে ছিল! মন তো চাচ্ছে এক চড়ে বিছানায় ফেলে শরীর লুপে খাই।’
আনজুমা এ কণ্ঠের মালিককে চিনতে পেরেছে। এই যে সেই গু’ন্ডা বদ’মা’ইশ অফিসার! অফিসারের কথা শুনে তার সঙ্গে আসা ব্যক্তিটি বাঁকা হাসি দেয়। আনজুমা অপর ব্যক্তির অস্তিত্ব রুমের মধ্যে অনুভব করল। কিন্তু চোখ বন্ধ থাকার অভিনয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। আকস্মিক অফিসার সেই ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে শুধায়।
‘এক কাজ করি তুই আমাকে যে ডাবল পেমেন্ট দিবি বলছিলি। তা তুই নিজের কাছে রেখে দেই। আমি এ মালটারে লুপে খেতে নিয়ে যাব। রক্ষিতা বানাবো আমার।’
কথাটি শুনে আনজুমার অন্তআত্মা কেঁপে উঠে। চেয়ারের হ্যান্ডেল তাদের চুক্ষগোচরে শক্ত করে মুঠো করে ধরে। অফিসারের মুখের কথায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো অপর ব্যক্তি। সে আনজুমার কাছে গিয়ে তার চৌপাশ ঘুরে দেখে। তার মুখের উপর ঝুঁকে ব্যক্তিটি অফিসারের উদ্দেশ্যে বলে,
‘হুম নট এ ব্যাড আইডিয়া! জমবে বিষয়টা। তুই এরে নিজের জন্য নিয়ে যাহ্। আমাকে না হয় ভরে দিবি ব্যাংকে। এই দেশি মেয়েদের দিয়ে আমার জ্বালা মেটে না। আমি বিদেশিতেই মতঁ থাকি বেশি। মজা পায় অনেক। এরে ইচ্ছে করে ধরেনি বুঝছস! এ মেয়েটার সঙ্গে মিস্টার ফাওয়াজ এর গভীর সম্পর্ক। আর ঐ ফাওয়াজকে অপমান না করে কষ্টের লাইনে আনার বেস্ট ওয়ে এ মেয়েটা। সেদিন দেখেছিলাম এ মেয়েটার প্রতি মিস্টার ফাওয়াজের ডেস্পারেট হওয়া। এমন শুধু প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্যেই হয়। ডেস্পারেট দেখেই বুঝেছি। মেয়েটা কাজে আসবে আমার। এজন্য জালের গুটি বানিয়েছি মিস্টার ফাওয়াজকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমার অপমানের শোধ না নেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাব না। তার জন্য বড় পদক্ষেপ এরে তোর কাছে বেছে দেওয়া। এনি ওয়ে মালটা বেশ স্ফট রাইট!’
‘উফফ মালের পর্দার উপর থেকেই খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে ডক্টর ডেভিড! তুই তো তোর অপমানের শোধ নেওয়ার তাড়ায় আছস। আমি আছি আমার ভোগবস্তুকে হাতে পাওয়ার আপোষে। কবে যে মালটার উপর নিজের শরীর এলিয়ে দেব উফ! ভাবতেই ঠোঁট জিভে লাভা চলে আসছে।’
অফিসার এপাশওপাশ পায়চারী করতে থাকে। ডক্টর ডেভিড কুৎসিত হাসি দেয়। সে আনজুমার কাছ থেকে সরে আসে। তার হাতের পার্লস চেক করে দেখে জ্ঞান ফিরেছে তবে ক্লান্তিজনক কারণে ঘুমিয়ে আছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে মস্তিষ্কে এঁটে রাখে। অফিসার নিশ্চুপ পায়ে হেঁটে এলো আনজুমার নিকটে। তার নরম তুলতুলে হিজাবের মধ্যে উম্মুক্ত মুখশ্রীতে হাত লাগায় সে। গালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে থেকে হাতের স্পর্শ আনজুমার ঠোঁটে রাখে। সেটার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেয়েটার ঠোঁট ভিজে আছে ঘামের কারণে। যা অফিসারের শরীরে আগুন ধরিয়েছে। সে ঠোঁটের চৌপাশ স্লাইড করতে থেকে মুখ আগায়। যেই না ঠোঁটে ঠোঁট মেলবে তার পূর্বেই ডক্টর ডেভিড থামিয়ে দেয়। বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে সে ডক্টরের দিকে তাকায়। ঝুঁকে ছিল ঠোঁটের লোভ মেটাবে বলে। কিন্তু ডক্টরের থামানোতে সে আর্জিটুকু মিটে গেল। অতিষ্ঠ চোখে চেয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
‘থামিয়েছিস কেন! আমার জিনিসে আমিই ছুঁবো তো নাকি।’
বাক্যহীন ডক্টর ডেভিড তার বাহু ধরে দরজার বাহিরে নিয়ে গেল। আনজুমার চোখ খুলে তৎক্ষণাৎ জোরালো শ্বাস ছাড়ে। চোখে জমানো অশ্রুজল ফেটে গাল বেয়ে পড়তে থাকে। তার অন্তর ফেটে যাচ্ছে পরপুরুষের বিশ্রী ছোঁয়ায়। যে শরীর,যে গাল,ঠোঁটে শুধু সুয়াইব নাম স্বামীর ছোঁয়া আছে। সেখানে কেমনে এই অমানুষ তার ছোঁয়া দিতে চেয়ে ছিল।
তবে আশ্চর্যের বিষয় আরভীক এর ছোঁয়াও তো সে পেয়েছে তার কোমরে ও গালে! তখন কেনো পরপুরুষের নোংরা ছোঁয়া অনুভব হয়নি তার। ভেবে কুল পাচ্ছে না। বরং আরভীক এর ছোঁয়ায় সে তার স্বামীর অজানা অনুভূতি পায়। চোখ বুজে চিৎকারহীন অশ্রুসিক্ত করে। কেননা আনজুমা জানে তার চিৎকারে অফিসার বুঝে যাবে যে তার চেতনশক্তি ফিরে এসেছে। তখন তাকে জোর জবরদস্তি করে ভোগ করবে। এখন অত্যন্ত চেতনহীন হওয়ায় বারংবার ডক্টর ডেভিড থামিয়ে দিয়েছে। আর এই ডক্টর ডেভিডের রুপ দেখে আনজুমা হতবাক। এখন বুঝতে পেরেছে আরভীক এর করা বাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্য! কেনো সে ঐদিন ডক্টর ডেভিডের সঙ্গে অপমানজনিত কথাবার্তায় লিপ্ত হয়েছিল। আর আনজুমা নিজেই অনুতপ্ত ! আরভীককে না বুঝে তার রসিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। একটা প্রবাদ আছে না!
‘মানুষের মন বোঝা দুঃসাধ্য জটিল বিষয়। হাসলেই মানুষ সুখি হয় না, কাঁদলেই মানুষ দুঃখী সেটা বুঝা যায় না। সবকিছুর আড়ালে রহস্য আর রহস্য। মানুষটাকে সবসময় রসিকতাপূর্ণ দেখে বলে সে বুঝেনি মানুষটা অন্তর থেকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি ভাবে ও বুঝে! আনজুমার নিজের কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে। বিপদ সামনে থেকেও বুঝেনি। অথচ আরভীক আজ্ঞা করেছে প্রতিবার! আনজুমা নিজের বোকামিতে ফেঁসেছে, সঙ্গে তার নিষ্পাপ বাচ্চাটিও কেঁদেকুটে নাজেহাল দশায় কাটাছে ঐখানে!
আশফির কথা মনে পড়তেই আনজুমার আর্তনাদ বেড়ে গেল। ‘উউমম উমম’ করে কেঁদে গেল।
মনে মনে শেষবার আল্লাহর কাছে চাইছে সব যেন পরিশুদ্ধ হয়ে যাক! চমৎকারের ফেরেশ্তা পাঠিয়ে দেওয়া হোক!
অন্যদিকে, অফিসার রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে ডক্টর ডেভিডের উপর। সে বাক্যহীন তাকে মেয়েটার পাশ থেকে নিয়ে এসেছে। এখনো ধরে রেখেছে যেন সে তার তদারকি করে। অফিসার তার বাহু ঝামটা মেরে ডক্টর ডেভিডের হাত ছাড়িয়ে নিল। ডক্টর ডেভিড দেখে নিজের হাত উঁচিয়ে ইনোসেন্ট বোঝায় নিজেকে। আহ্লাদী গলায় শুধায়।
‘মিষ্টি খেতে হলে ধর্য্য ধরতেই হয়।’
‘কিসের ধর্য্য যতক্ষণ মাইয়াটারে রক্ষিতা না বানায়ছি। ততক্ষণ শান্তি পাবো না। তোর আস্তানা থেকে কবে বের হতে হবে ক জলদি।’
‘আরে ভাই রিলেক্স! তোর কি লাগে এই খেলায় আমি আর তুই সামিল আছি ভাবছিস। না রে, না। আমার মাথায় এতদূর পৌঁছানোর কল্পনাই ছিল না।’
‘মানে!’
‘হুম আনজুমাকে ধরে আনতে আমার উপর সর্বোচ্চ প্রেসার ক্রিয়েট করেছিল শ্রেয়া জাফরে। এই হলো খেলার প্রধান মালকীন। তোর কি মনে হয় রিপোর্টিং হওয়া তোকে মেলায়তনে পাঠানো। সব বুঝি আমি করেছি উহুম! আমি না। তোকে সুযোগও করে দিয়েছে এই শ্রেয়া জাফরে। অসাধু ব্যবসায়ের কথাও এই মেয়েই আমাকে বলেছে।’
‘ওয়াট এ ডেঞ্জারাস গার্ল! ভাবা যায়।’
‘ওয়েট এন্ড সি কল দেয় শুনে দেখ তার কথাগুলো!’
ডক্টর অফিসারের সঙ্গে কথার ইতি টেনে ফোন বের করে। কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল ডায়ল করে। পরক্ষণে ঐপাশের ব্যক্তি কল রিসিভ করে উত্তেজিত কণ্ঠে শুধায়।
‘কি ডক্টর কাজ হয়েছে! মেয়েটারে ধরতে পারলে।’
‘ইয়েস ম্যাম। সে এখন আমাদের আন্ডারে আছে।’
‘গুড ভেরি গুড। পেমেন্ট ঠিকমত পেয়ে যাবে। আর ভুয়া অফিসারকে বলবে গা ঢাকা দিতে। আর একটু অপেক্ষা করো আমার গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে। যতক্ষণ ঐ আনজুমাকে কয়েক মা’ই’র না লাগায় ততক্ষণ শান্তি পাবো না। এই শ্রেয়া জাফরকে গা’লিগা’লাজ করে ছিল, আমারই আরভীকের সঙ্গে ঢলাঢলি মে’রেছিল। এত সহজে কেমনে ছেড়ে দেব। মা’ইর লাগিয়ে মন শান্তি করেই মেয়েটারে বেছে দেব। এ শ্রেয়া জাফর কথার খেলাফ হয় না।’
বলে কল কেটে দেয়। ডক্টর চোখের ইশারায় অফিসারকে বলে, ‘বুঝছস এবার’। অফিসার হাঁফ শ্বাস ছেড়ে কোমরে হাত রেখে মাথা নাড়ে। মেয়েটার কথা আর স্বভাবে বোঝা যায় ! আরভীক বলতে পাগল সে। এখন তাদের একটাই কাজ আনজুমাকে বন্দি করে রুম তালাবদ্ধ করে রাখা। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রেয়া আসেনি ততক্ষণ পর্যন্ত অফিসার মেয়েটাকে পাবে না। ভেবেই রাগে গা জ্বলে উঠছে তার। তবে একটুখানি অপেক্ষা করে নেবে এ আরকি!
ডক্টর ডেভিডকে প্রশ্ন করে।
‘শ্রেয়ার মা’ই’র লাগানোর কথা জায়েজ! তবে তুই কেন প্রথমদিকে আঘাত করছিলি।’
‘বা’লচু** মেয়েটারে দেখে আমার চোখে অপমানের লাভা ফুটে উঠছিল। তাই তো নিজের হাত নোংরা করিনী। ঐ দুই মহিলারে দিয়ে আঘাত করিয়েছি।’
অফিসার ‘হু হু’ করে হেসে ডক্টরের কাঁধে হাত রেখে ‘শাবাশ শাবাশী’ দেয়। তারা হেঁটে পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের দিকে গেল। সেখানে মদের বোতল রেখে ছিল খাওয়ার জন্য। এখন খাওয়ার পর্বই চলবে তাদের।
৩২.
আশফি থেমে থেমে কেঁদে হিঁচকি তুলছে। ছোট বাচ্চাটির শরীর একদিনেই নেতিয়ে গেছে। কিন্তু কেনো যেন আরভীক এর কোলে এসে থেমে গেল বাচ্চাটির কান্না! তার কোলে মাথা রেখে লেপ্টে রইল। আরভীক উঠানে আশফিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাঁ শাঁ করে স্বল্পখানিক বাতাস বইয়ে চলছে। ইতিমধ্যে আনজুমা কোথায় আছে তার খবর জেনে গিয়েছে! তবে হানা দিচ্ছে না এখনো অব্দি। তার মনের কল্পনামাফিক সব কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই সে! আশফি ঘুমের ঘোরে,
‘পাপ্পা মাম্মাকে এনে দাও পাপ্পা পাপ্পা মাম্মাকে প্লিত!’
বলে কাতরে উঠে। আজকের ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনাটি বাচ্চাটির মনের গহীনে গেঁথে গিয়েছে। না হলে ঘুমের ঘোরেও কোনো বাচ্চা দৃশ্যটি ভেবে বিড়বিড় করবে!
আরভীক আশফির চোখ-মুখে ও মাথায় গভীরভাবে চুমু খেয়ে দেয়। তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘চ্যাম্প নট ক্রাই বেবি! তোমার পাপ্পা মাম্মাকে নিয়ে আসবেই।’
‘বাবা!’
নিজের বাবার কণ্ঠ পেয়ে আরভীক পিছু ঘুরে। আরাজ সাহেবের চিন্তিত মুখশ্রী এখন অব্দি কাঁটেনি। দিন পেড়িয়ে রাতের প্রহর চলছে। সবেই তিনি অফিসের কাজ দেখে শেষ করে এসেছে। আজ সারাদিনের কাজ তিনি সামলেছে। অঞ্জয়রা আনজুমাকে খোঁজার পথে ছিল।
আরভীক তার বাবাকে দেখে মৃদু হাসি দেয়। হাসিটি তাচ্ছিল্যে আরাজ সাহেব তা বুঝতে পারল। ছেলে তার মনের দিক থেকে কষ্টে আছে! তিনি এগিয়ে গিয়ে আশফিকে তার কোলে দেওয়ার জন্য ইশারা করে। আরভীক পলকহীন আশফির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘নো ড্যাড হি ইজ মাই চ্যাম্প ! একে নিয়ে বুকে জ্বলা আগুন ধামাচাপা দিচ্ছি। আজকের রাত তাদের শেষ রাত করে দেব। যে এক মাকে তার ছেলের থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। আমার খু’নে’র উপর র’ক্ত মাখিয়েছে। তাদের র’ক্তে এসিড ঢেলে দেব।’
চোয়াল শক্ত করে আরভীক বলে। তার মুখশ্রী তৎক্ষণাৎ হিংস্র,বর্বরতায় চেয়ে গেল। আশফি ঘুমন্ত হওয়ায় এই মুখ দেখার সাধ্য হয়নি তার। না হলে সেও ঘাবড়ে কেঁদে উঠতো। আরাজ সাহেব ছেলের পিঠে হাত চালিয়ে আশ্বস্ত করে। আরভীক নিবিঘ্নে আশফিকে তার কোলে দিল। বাবা না হলেও বাবার মত অনুভব হওয়া আরভীক এর কাছ থেকে ছন্নছাড়া হতেই জেগে উঠে আশফি। কান্নামাখা চোখে একপলক আরাজ সাহেবকে দেখে আরেক পলক আরভীক এর দিকে তাকায়। আরাজ সাহেবকে উপেক্ষা করে হাত নাড়িয়ে আরভীক এর কাছে যাওয়ার জন্য কেঁদে উঠে। আরভীক এর চোখ জ্বলছে যাচ্ছে। এ বাচ্চাটির সাথে তার সম্পর্কটা কোথায় সে জানে না! তবে সে মনপ্রাণ দিয়ে বাচ্চাটিকে নিজের খু’ন’ বলে দাবি করে। কেননা সে ভালোবাসে আনজুমাকে! সেই প্রথমদিনে একপলক দেখাতেই প্রাণেশ্রয়ী বানিয়ে ফেলছিল। তবে একরাতের ঘোর অপমানে অন্ধকারে ধেবে গিয়ে ছিল একটুখানি ভুলের জন্য। এরপর থেকে আর কোনো শোধের পেছনে না ছুটে ভালোবাসা আদায় করার লোভে ছুটে চলে ছিল আনজুমার কাছে। মেয়েটি তার কাছে চঞ্চলহীন হলেও বোঝা যায় সে চাই কাউকে! স্বামী হিসেবেই চাই। তাই হয়তো তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এবার সেও হাল ছাড়বে না। মনে মনে পণ করে নেই আরভীক।
‘এবার কোনো কথা নেই, সোজাসুজি বিয়ের মন্ডপে কবুল বলায় ছাড়ব। যতক্ষণ ধরে আশফির বাবা হওয়ার অধিকার পাব না ততক্ষণ নাছোড়বান্দার মত লেগেই থাকব।’
ভেবেই তার মনে একচিলটি হাসি ফুটে উঠে। মুচকি হেসে আশফির গাল দুহাতের আদলে নিয়ে বলে,
‘পাপ্পা তোমার মাম্মাকে আনতে যাচ্ছে। দেখবে মাম্মা এসে এত এত চুমু দেবে তোমাকে।’
‘তত্তি!’
‘হুম বুকভরা নিঃশ্বাসের সত্যি রে চ্যাম্প!’
বাজে দিনের দৃশ্যটি কেটে পরিশেষে বাচ্চাটি খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। এতক্ষণের কষ্টের গ্লানি যেন তার মন থেকে উড়ান ছুঁ হয়েছে। আরাজ সাহেব চোখের ইশারায় যেতে বলে আরভীককে। সেও মাথা নেড়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে উঠানের পাশে গ্যারেজে ঢুকে। গ্যারেজের দরজা খুলে তার লাইফস্ট্যান্ডার্ড বাইক চালু করে। পুরু দমে মাফিয়ার ফিটে ফাইটে যাবে সে।
বাইকের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে হেলমেট পরে ডান হাতের দুই আঙুল দেখিয়ে ‘বাই’ জানায়।
আশফি হাত তালি দিতে থেকে তার আরভীক নামক বাবার দিকে চেয়ে থাকে। আরাজ সাহেব ছেলের কাছ থেকে সুখ পেয়ে গর্ব বোধ করছে। আজ সারাদিন তার মনটাও বিষন্নতায় চেয়ে ছিল। আশফির জন্য মনটা তার আনচান করছিল। ফলে সেই মনের গহীনতা কেমনে যেন আরভীক জেনে গিয়ে ছিল। সে স্বেচ্ছায় আশফিকে আনজুমার প্রতিবেশির কাছ থেকে নিয়ে তার বাসায় এনেছে। আশফিকে পেয়ে আরভীক নিজ হাতে আনজুমার কাছ থেকে দেখা উৎসাহে সাদাভাতের সঙ্গে অমলেট বানিয়ে খাওয়েছে। ফিচেল হাসি দিল তিনি। আশফিকে নিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। তিনি মেঝেতে আশফিকে রাখতেই সে বাসার মধ্যে থাকা গার্ডগুলো আশপাশ ঘিরে খেলতে থাকে। গার্ডগুলোর বেশ মায়া হলো বাচ্চাটির উপর। তারাও আশফির সঙ্গ দিয়ে খেলতে থাকে। আরাজ সাহেব চিন্তামুক্ত নজরে সোফায় বসে দেখে যায়।
৩৩.
ফাহাদ,সায়াজ এবং অঞ্জয় ফোর্স নিয়ে পরিত্যক্ত বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে বেঁধে আনা হয়েছে অপরাধের বেশভূষায় রিপোটার্স কে। দুজন রিপোর্টার আনজুমার ভিডিও ভাইরাল করে ছিল। সায়াজ যেহেতু ক্রাইম রিপোর্টার। সেহেতু সে আয়েশে ভাইরালকৃত ভিডিওটা সার্ভার থেকে মুছে ফেলে। এতে প্রতিটা জায়গা থেকে ভিডিওটি তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যায়। অঞ্জয় তার সঙ্গে আসা ফোর্সকে আদেশের সুরে প্রস্তুত থাকতে বলে।
‘আরভীক কবে আসবে রে ডুড!’
‘সে বলছে রাস্তায় আছে এখনি পৌঁছে যাবে নাকি!’
‘হুম কেন জানি আজকের গেমটা নাইস হবে মনে হচ্ছে!’
সায়াজের কথায় ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে চোরাচোখে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘নাইস নাকি ডেড হয় দেখ!’
থতমত খেল সায়াজ! অঞ্জয় মিটমিটে হাসি দেয়। সে জানে আজ ধামাকা হবে। তাও তার বসের ফার্মহাউজে নয় এই পরিত্যক্ত বাড়িতে। প্রথমে তার বস চেয়ে ছিল ফার্মহাউজে খেলা আরম্ভ করার। পরক্ষণে মত পাল্টে ফেলে সে ! আরভীক চাইছে আনজুমাকে যেখানে বন্দি করা হয়েছে সেখানেই খেলার আয়োজন করার। তার কথা অনুযায়ী সবাই এখন পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে ডক্টর ডেভিড মদ গিলার পরও হুঁশে থেকে বসে আছে। কেননা দেশি মদ তার জন্য চলে না। বিদেশি মদই তার হুঁশ উড়ায়। অথচ অফিসার খেয়ে সে তার নেশার ঘোরে বকবক করেই যাচ্ছে। ডক্টর ডেভিড ঘড়ি দেখছে আর অসম্ভব কিছু পাওয়ার জন্য অস্থিরচিত্ত ভাবে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। মুখ ঘুরাতেই দেখে অফিসার আনজুমার রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ দেখে ডক্টর ডেভিড আর থামায়নি। নেশাখোর কে থামানো সম্ভব না। ফলে তিনি আয়েশ ভঙ্গিমায় অন্য মদের বোতল মুখে পুরে নেই।
অফিসার তাল-মাতাল হয়ে ঢুলুঢুলু পায়ে পকেট থেকে চাবি বের করে। আনজুমা কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে থরথর করে কাঁপছে। সে বুঝেছে প্রথমদিকের ব্যথাগুলো মা’ই’রের কেননা তার শরীরে নিযার্তন চললে তলপেটের করুণ অবস্থা হতো। এখন যে দরজা খুলছে সে নিশ্চিত মাতাল হওয়া অফিসার! কেননা তাদের কথাবার্তা সব শুনেছে জানালা দিয়ে। অফিসার ভেতরে এসে দরজা আঁটকে দেয়। ‘হু হা’ করে বিশ্রী ভয়ানক হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল। কুৎসিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আনজুমা চিৎকার করে ‘বাচাঁওওও প্লিজ!’
বলে কাতরানো আরম্ভ করে। শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দড়ি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নড়চড় করতে থাকে। অফিসার অতিষ্ঠতায় সপাটে চড় লাগায়। গালের ব্যথায় সে মরমরা প্রায়। তবুও হাল ছেড়ে দিল না। পা দিয়ে অফিসারকে ল্যাং মেরে মেঝেতে ফেলে দিল। সে ব্যথা পেয়ে চোয়াল শক্ত করে ভয়ংকর দৃষ্টিতে আনজুমার দিকে তাকিয়ে ‘খা**’ বলে নোংরা গালি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সে ভেবে নিল মেয়েটাকে বাঁধা অবস্থায় ইজ্জতহরণ করবে!
ফলে ধীরস্থির ভাবে আনজুমার হিজাব টান দেয়।
আনজুমা চিৎকার চেঁচামেচি করে ‘না না বাঁচাওওওওও প্লিজজ।’
চলবে….
(কাল ধামাকা পর্ব_০২ দেব ইন শা আল্লাহ্)