নতুন তুই আমি পর্ব-১৪

0
2179

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-১৪……………………….
!
বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চালানোর পর সিয়াম খেয়াল করলো তামান্নার মাথাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে।
গাড়ি রাস্তার সাইডে দাঁড় করিয়ে দেখলো তামান্না ঘুমিয়ে গেছে।
হাঁসলো সিয়াম।
বাসায় পৌঁছাতে ওদের আরোও ঘন্টা খানেক লাগবে।
সিয়াম তামান্নাকে তাঁর নিজের সিটে ভালো করে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিলো।
আর্শ্চযজনক ব্যাপার হলো তামান্না সাধারণত একটুতেই জেগে যায় তবে আজ জাগে নি।কেঁদে ঘুমিয়েছে হয়তো তাঁর জন্য টের পাচ্ছে না।
সিয়াম খুব ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে।
তামান্না ঘামছে তাই গাড়ির এসি ওন করে দিলো।
সিয়ামের খুব ইচ্ছা করছে তামান্নার হিজাব টা খুলে দিতে।
বারবার মনে হচ্ছে ও তো তামান্নার হাজবেন্ড ।
সেক্ষেত্রে এই সামন্য হিজাব খোলার অধিকার কি ওর নেই??
আবার পরমুহুর্তে শুধু হাজবেন্ডের অধিকার নিয়েই ও তামান্নার খোলা-চুলের সৌর্ন্দযে হারাতে চাইছে না-এটাও ভাবছে।
সিয়াম তামান্নার খোলা চুলে স্বামীর অধিকার নয় স্বামীর ভালোবাসা নিয়ে মাতোয়ারা হতে চায়।
আর এর জন্য তামান্নার সম্মতির দরকার।
যেটা এই মুহুর্তে সিয়ামের কাছে নেই।
তবে খুব তাড়াতাড়ি-ই সিয়াম সে সম্মতি আদায় করে নিবে।
হ্যাঁ-ভালোবাসবে সিয়াম খুব করে নিজের অর্ধাঙ্গানীকে।
খুব যত্ন করে আগলে রাখবে এই বুকে।যে বুকে তামান্না নিজে আশ্রয়খুঁজে নিয়েছে।
সিয়াম তামান্নার ঘুমন্ত মুখটা দেখছে আর ভাবছে।
“কি মায়া!!!!যেনো বিধাতা সমস্ত মায়া এই আদলেই দান করেছেন।যে মায়া আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে ওর মাঝে…..”
বিড়বিড় করে আবারও বলে উঠে সিয়াম,
“কাঁদতে দিবো না।কাঁদলে মুখ টা আরোও মায়াবী লাগে।কিন্তু আমার বুকের বাঁ পাশে খুব ব্যথা হয়।চিনচিন করে…..একদম কাঁদতে দিবো না তোকে…..।”
ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে আসার কারণে এক ঘন্টার জায়গায় বাকী জায়গাটুকু আসতে ওদের প্রায় দু-ঘন্টাটা লেগে গেলো।
বাড়ির সামনে এসেও ঘুম ভাঙে নি তামান্নার।
আসলে ওর এতো গভীর ঘুমের কারণ শুধু কান্নায় নয়।
আরোও একটা কারণ আছে।
আর সেটা হচ্ছে কাল রাতে সিয়ামে সাথে কথা বলার পর একদম ঘুমায় নি তামান্না।
শুধু আযানের আগে একটু ঘুমিয়েছিলো।এক-ঘন্টারও কম সময় ছিলো সেটা।
এজন্যই এতো গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে বেচারী।
“তামান্নু……তামান্নু……উঠ,বাড়ি এসে গেছি আমরা……”
তামান্নার কোনো সাড়া শব্দ নেই।
সিয়াম আবার ডাকছে,
“তামান্নু,এই তামান্নু উঠ….তোর বাড়ির সামনে আমরা……”
“উমমমম….মাম্মাম,আর একটু ঘুমাই….প্লিজ…..”
সিয়াম এবার তামান্নার হাতে হাত রেখে ডাকলো,
“সিয়াম আমি।আর তুই গাড়িতে উঠ……”
তামান্না ঘুমের ঘোরে বলল,
“সিয়াম,প্লিজ।আজ আর ডাকিস না।ঘুমাই প্লিজ।কাল সারা রাত ঘুমাতে পারি নি।”
উৎসুক হয়ে সিয়াম জানতে চাইলো,
“কেনো কেনো??কাল কেনো সারা রাত ঘুমাস নি??”
“বা রে।তোর সাথে ঘুরতে যাবো একটা টেনশন আছে না।তারউপর এখন তো আমার হাজবেন্ড তুই…..”
সিয়ামও বেঘোরে থাকা তামান্নার সাথে তাল মিলাচ্ছে।
ভালো লাগছে ওর এমন বেঘোরী তামান্নাকে।
তাই সে জানতে চাইলো,
“হাজবেন্ড হয়েছি বলে তোর এতো চিন্তা??”
ঘুমের মাঝেই মুঁচকি হাঁসলো তামান্না-বলল,
“হুম তো।খুব টেনশন।তুই বলেছিলি না তোর কথা মতো সাজতে??”
“হুম…..”
“তার মানে কি??তুই কি মনে করেছিস আমি বুঝি নি??আমি ঠিক বুঝেছি তুই আমাকে তোর মনের মতো করে দেখতে চাইছিলি….”
সিয়াম ভড়কে গেলো একটু।
তামান্না কি সত্যি সত্যি মনের কথা আন্দাজ করতে পেরেছে??
নাকি ঘুমের চোটে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছে??
সিয়াম তামান্নাকে আবার ডাকতে যাবে এমন সময় তামান্না আচমকা সিয়ামকে ঝাপটে ধরলো।
বলল,
“মাম্মাম….আর একটু…..”
তামান্না গরম নিঃশ্বাস সিয়ামের ঘাড়ে লাগছে।
কোনো পুরুষের কাছে তাঁর নিজের বউ যদি এমন করে কাছে থাকে তাহলে তাঁর মনে কি শুরু হয় একমাত্র সেই জানে।
সিয়ামের এই মুহুর্তে ইচ্ছা করছে তামান্নাকে খুব করে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু পারছে না।যদি তামান্না জেগে যায়??
তারপর কিছু মনে করে??
সিয়াম তামান্নার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্ঠা চালালো এবার।
সফলও হলো।
বারবার দেখতে ইচ্ছা করছে তামান্নাকে।তাঁকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে খুব খুব খুব।
চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের সীটে গা মেলিয়ে দিলো সিয়াম।
চোখের সামনে প্রথম দিন দেখা তামান্নার সেই খোলা চুলের দৃশ্য ভাসছে।
দ্রুত চোখ মেলে তাঁকায় সিয়াম।
তামান্নার হাতে বেশ জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসে তামান্না।
ঘুমের মাঝে আবার কে মারলো??
পাশ ফিরে সিয়ামকে দেখে আর কিছু বুঝার বাকী রইলো না তাঁর।
রাগে দুঃখে ঘুম ঘুম গলায় প্রশ্ন করল,
“মারলি কেনো??”
“কখন থেকে ডাকছি।উঠার নাম নেই।জলহস্তির মতো ঘুমাচ্ছিস।উঠ….তাড়াতাড়ি বাসায় যা…….”
“ধুর।তুই না,সব সময়……”
গাড়ি থেকে নামলো তামান্না।
সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে প্রশ্ন করল,
“বাসায় আসবি না??”
“না গো জলহস্তি।আপনি যান আর আমাকে উদ্ধার করুন….”
“সিয়াম!!!!!”
“যাবি বাসার ভেতরে তাড়াতাড়ি???”
“ধুর।ভাল লাগে না…..”
তামান্না শাড়ির কুঁচিগুলো ধরে দ্রুতগতিতে বাসার ভেতরে চলে গেলো।
হাঁসতে লাগলো সিয়াম।
তামান্নার যাওয়া অবদি তাঁকিয়ে থাকলো।
তারপর গাড়ি টা চালু করে নিজের বাড়ির দিকে পথ ধরলো।
তামান্না বাসায় ডুকা মাত্র ওর মা আর জেঠি জানতে চাইলো-সিয়াম কেনো বাসায় এলো না।
তামান্না ওদের বারবার বলে ক্লান্ত তবুও তাঁদের ব্যাখা শোনে যেনো মন ভরে না।
তাই বাধ্য মেয়ে তামান্না বারবার সবার কাছে সিয়াম বাসায় না আসার কারণ ব্যাখা করছে।
!
বাসায় ফিরে সোজা নিজের রোমে ডুকেছে সিয়াম।
ওর মা অবশ্য কথা বলার অনেক ছুতো খুঁজছিলো কিন্তু সিয়াম দেয় নি।
দরজা লাগিয়ে নিজের রোমে ডুকে ফ্রেস হয়ে একদম সোজা বিছানা।
ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুমন্ত পরীর ছবিগুলো দেখছে।
হ্যাঁ সিয়াম ছবি তুলেছে।
তামান্না যখন ওর বুকে ঘুমাচ্ছিলো তখন নিজের অবচেতন মনে ঘুমন্ত পরীটার বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছে সিয়াম।
নিজের বুকে একহাতে নিজের ঘুম রাজ্যের রানীকে চেপে ধরে রেখছে সিয়াম-এই ছবি টা চরম হয়েছে।
দেখলে মনে হয় এই বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর জন্যই এই ঘুমকন্যার জন্ম।
শুধু বুকেই না সীটে বসানোর পরও নানা এঙ্গেলে আরোও বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছে সিয়াম।
প্রত্যেকটা ছবিতে তামান্নাকে কোনো অপসরীর চেয়ে কম লাগছে না।
আর সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগছে সিয়ামের বুকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here