#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
পর্ব:-২৮……………………………..
“রিহি???”
“হুম…..”
“মেয়েটা কে রে??”
“কোনটা??”
“ঐ যে সোনালি ফ্লোড পড়া…..”
“ওহ!!এ তো রাইয়ান।সিয়ামের কাজিন।”
“ও…..”
“একদম পিচ্চি।সবে ইন্টারে পা রেখেছে কিন্তু খুব মিষ্টি।”
“একদম বাচ্চা পরী…..”
কথাটা আনমনেই বলে ফেললো আকাশ।
রিহি হা করে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
আকাশকে পলকহীন দৃষ্টিতে রাইয়ানের দিকে তাঁকাতে দেখে অবাক হয়ে যায় রিহি।
আকাশের চোখের সামনে হাত নাড়িতে ফিক করে হেঁসে দিলো সে।
আকাশ রিহির মাথায় একটা ঘাট্টা দিয়ে বলল,
“হাঁসিস না।মেয়ে টা আসলেই পরী।”
“আকাশ!!!তুই ঠিক আছিস??”
“বোন আমার বিশ্বাস কর,আগে ছিলাম। কিন্তু এই মেয়ে এমনভাবে দৌড়ে সবার মাঝ দিয়ে তামান্নার কাছে আসল আর আমার নজরে আটকে গিয়ে……”
“দোস্ত!!আর ইউ মেড??তোর ভার্সিটির এত সুন্দরী মেয়েদের দিকে নজর পড়ে না।আর তুই কি না……”
আকাশ রিহির কথার পাত্তা না দিয়ে রাইয়ানের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“She is natural,I want to talk her……”
রিহি মুঁচকি হাঁসল।সে নিশ্চিত হয়েছে তার বন্ধু এই পিচ্চির জালে জড়িয়ে যাচ্ছে।
রিহি জবাব দিলো,
“তো কি আর করার?যা কথা বল….”
আকাশ রিহির দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“কিভাবে??”
অবাক হলো রিহি।বলল,
“মানে???”
“কি বলবো ওকে??দেখছিস না কু রকম বাচ্চা দের মতো আইসক্রিম খাচ্ছে।”
“তো??তোর কথা বলতে মন চাইলে বলবি না??”
“কি দিয়ে শুরু করবো তাই ভাবছি।”
“আজব!!!কত মেয়েরে ল্যাং দিয়া ফালাইয়া দিলা তুমি আর এই মেয়ের কাছে যাও না।
হুহু…ভাব যত…..”
“চল কথা বলে আসি।”
“আমি তো ওর সাথে কথা বলেছি অনেকবার ইভেন আজও বলেছি।তুই যা……”
আকাশ রিহির দিকে তাঁকিয়ে জোর দিয়ে বলল,
“চল…..”
“না করলো না রিহি।রাইয়ান যেখানে দাঁড়িয়ে খাচ্ছিলো সেখানে চলে যায়।
রিহি আর আকাশকে আসতে দেখেই রাইয়ান চেঁচিয়ে উঠে,
“উমমমমম….রিহি আপু!!!আসো আসো…..দেখো এই আইসক্রিম কি জোশ!!!”
“তুমি এতো আইসক্রিম খাচ্ছো কখন থেকে??”
“বাসায় তো আম্মুর জন্য খেতে পারি না আপু।খালামনিকে কত করে রাজি করিয়ে এই আইসক্রিম পার্লারের আয়োজন করিয়েছি।আর আজ আইসক্রিম খাবো না??”
“ওহ।আচ্ছা।তুমি এই ভাইয়াকে চিনো রাইয়ান??”
রাইয়ান আইসক্রিম একটা বিট বসিয়ে তৃপ্ততার সাথে সেটা গ্রাস করে বলল,
“হুমমম।চিনি তো।ভাইয়া মানে তোমাদের ফ্রেন্ড।”
“গুড।ওর নাম আকাশ।ও না তোমার মতো আইসক্রিম খেতে খুব পচ্ছন্দ করে।”
রাইয়ানের খুশিতে ভেসে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
“সত্যি?????”
আকাশ হাঁসল।কোনো মেয়ে এতটা উচ্ছ্ব হতে পারে!!!
একদম ছোট্ট টুনটুনি পাখি।
আকাশের আর কথা বলা হলো না রাইয়ানের সাথে।
তার আগেই ওদের সবার ডাক পড়ে যায়।
কনের যে কবুল বলার সময় এখন।একমাত্র ননদ আর বন্ধুরা কি তার পাশে থাকবে না???
রাইয়ান তো রিহি আর আকাশকে ফেলেই ভৌ দৌড় দিলো।তামান্নার পাশে মৌলভী বসে আছে।সব নিয়ম কানুন মানে তামান্নাকে কবুল বলার জন্য বলা হচ্ছে।
কিন্তু তামান্না কিছুতেই সাহস করে উঠতে পাচ্ছে না।
ওর ভাইয়া পাশে এসে দাঁড়ায়।
ভাইয়ার দিকে তাঁকিয়ে তামান্না অনেকটা সাহস জুগিয়ে নেয়।
“কবুল…..”
তারপর ছলছল চোখে তার বাবার দিকে তাঁকিয়ে মৌলভীর সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“কবুল….”
ব্যাস আরও একটা কবুল। তারপর সিয়াময়ের সম্মতি গ্রহণে ইসলামী শরিয়তে বিবাহ সম্পন হয়ে যায় তাদের।
এবার যে বিদায় পালা।
মেয়েকে স্টেজ থেকে গাড়ির সামনে নিতেই তার মাম্মাম সেন্সলেন্স হয়ে যায়।
তামান্না যেনো না বুঝে তাই ধরাধরি করে তামান্নার আড়লেই তাঁকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।বাবা বুকে মাথা রেখে কাঁদছে তামান্না।
বাবার চোখেও পানি পড়ছে মেয়ের মাথায়।জেঠিমনি,ভাবী,ভাইয়া,মামা,মামী,ওয়াসিম, সবাই কাঁদছে।নিজেদের বাড়ির একমাত্র মেয়েকে সারা জীবনের জন্য অন্য বাড়িতে পাঠানো যে কতটা হৃদয়বিদারক সেটা যাদের মেয়ে যায় শুধু তারাই বুঝে।
ভাইয়া তামান্নার হাত টা সিয়ামের হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“দেখো রেখো প্লিজ….”
আর কিছু বলতে পারে নি ভাইয়া।বোনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
আর তামান্না!!!তার বুকের বাঁধ তো অনেক আগেই ভেঙে গেছে।বুক ফেটে চিৎকার আসছে তার।
পাশ থেকে আত্নীয়স্বজনরা এসে তামান্নাকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়।
গাড়িতে উঠেও ভাইয়ের হাত টা শক্ত করে ধরে রাখে তামান্না।
বোনেও হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে ছলছল চোখে ভাইয়া বলল,
“ভালো থাকিস।”
হাত টা ছুটিয়ে নিয়ে একরকম দৌড়ে ভেতরে চলে সে।এতো আদরের বোনকে এভাবে চোখের সামনে দিয়ে বিদায় দেওয়ার কষ্ট টা আর সহ্য করতে পারছে না সে।
তামান্নার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।এতক্ষণে সে তার মাম্মামের কথাটাও জেনে গেছে।
এই মুহুর্তে যে মাম্মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে তার!!!!
বিধির বিধান তো!!কিচ্ছু করার নেই।মেয়ে যে সে পরের ঘরে তো যেতেই হবে।যত কষ্টই হোক সব ভুলে পা বাড়াতে হবে নতুন ঠিকানায়।
সিয়াম এসে তামান্নার পাশে বসল।সবার চোখে এমন পানি দেখে রাইয়ানও কেঁদে ফেলছে।সিয়াম অনুধাবন করতে পেরেছে তামান্না আর তার পরিবারের মনের দিকটা।
তাই সে ও একরকম স্তব্ধ।
সিয়ামের বাবা তামান্নার পরিবারকে কথা দিয়ে যাচ্ছে-তাদের মেয়েকে কখনো অসুখী রাখবে না।
শেষমেষ বিদায় ঘন্টা বাজে যায়।গাড়ি টা বেড়িয়ে যায় সেন্টার থেকে।আর সাথে বাপ-ভাইয়ের কলিজাটাও ছিড়ে বেড়িয়ে যায়।
অসহায় মায়ের বিপালে সবার চোখে জল ভরে আসে।মা যে বিদায় বেলা মেয়েটা একবার চোখের দেখাও দেখতে পারল না।