নতুন তুই আমি পর্ব-৪০

0
2514

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৪০…………………………….
সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে আজ বাসায় ব্যাক করছে।আজও বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তামান্না খুব কান্না কাটি করেছে।
সিয়াম সবটা বুঝলেও তাকে রেখে আসতে পারে নি।কারণ আরও দু একদিন থাকলে তামান্না এর চেয়ে আরও বেশী কান্না কাটি করতো আসার সময়।তার চেয়ে তামান্নাকে সে বলছে আগামী সপ্তাহে আবার নিয়ে আসবে।
দুটো বাসার দূরত্ব আর বেশী না।
আধা ঘন্টার রাস্তা।
!
তামান্না গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে।
সিয়ামের সাথে একটা কথাও বলছে না।
সিয়াম ঘাটাচ্ছে না তাঁকে।
কিছুক্ষণ নিজের মতো থাকুক।
সিয়াম গাড়িটা একটু অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।কি জানি তামান্না সেটা খেয়াল করছে কি না!
অথবা এটাও হতে পারে সে খেয়াল করেছে তবুও কিছু বলছে না।
তামান্না রবীন্দ্রসংগীত শোনতে ভালোবাসে।
সিয়াম তাই নিজের ফোন প্যাড টা গাড়ির সাথে এড করে প্লে করে দিলো।
তামান্নার খুব প্রিয় একটা গান……
“আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে
তখন কে তুমি তা কে জানত।
তখন ছিল না ভয়, ছিল না লাজ মনে,
জীবন বহে যেত অশান্ত।
তুমি ভোরের বেলা ডাক দিয়েছ কত
যেন আমার আপন সখার মতো,
হেসে তোমার সাথে ফিরেছিলাম ছুটে
সেদিন কত-না বন-বনান্ত।
ওগো, সেদিন তুমি গাইতে যে সব গান
কোনো অর্থ তাহার কে জানত।
শুধু সঙ্গে তারি গাইত আমার প্রাণ,
সদা নাচত হৃদয় অশান্ত।
হঠাৎ খেলার শেষে আজ কী দেখি ছবি –
স্তব্ধ আকাশ, নীরব শশী রবি,
তোমার চরণপানে নয়ন করি নত
ভুবন দাঁড়িয়ে গেছে একান্ত।”
!
গান টা শেষ হলে তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকালো।হয়তো তার কাছে গানটা ভালোই লেগেছে।তা না হলে নিশ্চয় নিজেই বন্ধ করে দিতো।সিয়াম তামান্নার দিকে তাঁকালো।
তবে অল্প সময়েরই মধ্যেই দুজনেই চোখ সরিয়ে নিলো।
আবারও গাড়ি চলছে।তামান্না গাড়ির কাঁচ টা খোলে দিয়ে হিজাব টা খুলে নিলো।
এতক্ষণ গাড়ির এসি টা বন্ধ ছিলো।
সিয়াম তামান্নার বিষয় টা খেয়াল করে এসি অন করে দিলো।
হিজাব খোলার পর তামান্না গা এলিয়ে দিলো সিটে।চোখ দুটো বন্ধ করে পা দুটো তুলে বসলো।
সিয়াম হাঁসলো।কিছু বললো না।
কিছুক্ষণ পর রাস্তার সাইডে গাড়িটা পার্ক করলো সিয়াম।
তামান্না ভেবেছে ওরা বাসায় এসে গেছে তাই চোখ মেলে তাঁকালো।
কিন্তু ততক্ষনে সিয়াম গাড়ি থেকে নেমে গেছে।
তাই তাঁকে জিঙ্গাসা করতে পারলো না-কেনো এখানে গাড়ি থামলো!!
তামান্না জানালা খোলে বাইরে তাঁকিয়ে দেখলো-এই জায়গায় সে এসেছিলো আগে।
মিরপুর চলন্তিকার মোড়।
বন্ধুরা মিলে প্রায় সময় এখানে ফুচকা খাওয়া হতো ওদের।
কিন্তু সিয়াম তো ফুচকা পচ্ছন্দ করে না।
তাহলে হঠাৎ এখানে এলো কেনো!
‘যাক যা মন চায় করুক!তাতে কার কি।’
এই ভেবে তামান্না আর কিছু মাথায় আনলো না।
চুপচাপ জানালা টা লাগিয়ে বসে রইলো গাড়িতে।
!
সিয়াম ফিরে এলো-হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ আর মাঝারী একটা প্লেট নিয়ে।
তামান্না চোখ বেটে সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়াম বললো,
“এভাবে তাঁকিয়ে আছিস কেনো??”
তামান্না কিছু বললো না।
সিয়াম গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে পলিথিনের ব্যাগ টা খোলে তামান্নার জন্য আনা ফুচকাগুলো সাজিয়ে নিলো।
তামান্না অবশ্য সেটা খেয়াল করে নি।সে আগের মতো চোখ বন্ধ করে ফেলেছে এতক্ষণে।
সিয়াম ছোট্ট একটা বোতলে করে টকও নিয়ে এসেছে।
সেটাও রাখলো প্লেটে।
তারপর তামান্নার কাছে একটু ঘেষে বলল,
“একটু চোখ টা খুলবি??”
তামান্না চোখ খোললো।
সিয়াম হাতের ইশারায় সামনে রাখা ফুচকার প্লেট টা দেখিয়ে বলল,
“তোর জন্য।”
তামান্না বেশ অবাক হলো।
সিয়াম ওর জন্য ফুচকা এনেছে!!
যে কিনা হাজার বার বলার পরও ফুচকা খাওয়াতে বা খেতে রাজি হয় না।
সিয়াম তামান্নার অবস্থাটা বুঝতে পেরে বলল,
“এতো ভাবার কি আছে?আমি তো আর নিজে খাচ্ছি না।তোর জন্য এনেছি।খা…..”
তামান্নার কি যে হলো!
সে হঠাৎ ফিক করে হেঁসে ফেললো।মনে হলো এতক্ষণের মেঘ জমে থাকা আকাশ টায় হঠাৎ করেই রঙধনু উঁকি দিয়ে উঠেছে।
সিয়ামের বড্ড ভালো লাগলো এই হাঁসিটা দেখে।
সে ও মুঁচকি হাঁসলো।
তারপর বললো,
“এই হাঁসিটাই বেশী মানায়।আর রাগী লোক টা।মন খারাপের সময় একদম পেতনী লাগে…..”
তামান্না কথাটায় খুব একটা রাগলো না।তবে চোখে চোখ রেখে বললো,
“তাতে তোর কী!পেতনীও ভালো….”
“আচ্ছা!ঠিক আছে।আজকের জন্য তোর পেতনী লোক টা মেনে নিয়েছিলাম।এরপর থেকে দেখলে মাইর খাবি।এবার ফুচকা টা খা…..”
তামান্না আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।
প্লেট টা হাতে তুলে নিলো।
সিয়াম তাঁকিয়ে আছে তামান্নার দিকে।
হিজাব না খোললে বাইরে নিয়ে যেতো তামান্নাকে।কিন্তু এই ভাবে তো তামান্না বাইরে যেতো না তাই সে নিজেই তামান্নার মন ভালো করার জন্য গাড়িতে ফুচকা আনছে।
তামান্না একের পর এক ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে।কেমন করে বড় করে হা করছে তাতে আবার পুরো ফুচকাটাই পুরো দিচ্ছে মুখে!!টক মুখ তুলে চোখ টা কি সুন্দর কাঁচুমুচো করছে!!!
এই দৃশ্য টা যে এতো সুন্দর হতে পারে সিয়াম তা কল্পনাও করে নি।
কয়েকটা ফুচকা খাওয়ার পর তামান্না হাঁসোজ্জল হয়ে সিয়ামকে বললো,
“এই তুই কয় প্লেট এনেছিস?দুই??”
সিয়াম হাঁসলো,
“হুম।”
“ভালো করেছিস।এক প্লেটে কিচ্ছু হয় না।আর টক টা বেশী আনার জন্যও ভালো লেগেছে আমার।”
“তা তো লাগবেই।খা এবার….”
তামান্না নিজের মুখে আরো একটা ফুচকা ডুকিয়ে সিয়ামের মুখের সামনে একটা ফুচকা ধরে বলল,
“তুইও খা।দেখবি,অনেক মজার জিনিস।”
সিয়াম নিজের মুখটা একটু পেছন দিকে সরিয়ে বলল,
“ধুর!তুই ই খা…..”
“খা না প্লিজ প্লিজ…..”
“তামান্নু!!!তোর মতো এই অখাদ্য আমি খেতে পারবো না।”
“কিহ!!!!”
তামান্না রাগ করে প্লেট টা সামনে রেখে দিলো।
বললো,
“আচ্ছা।এই রাখলাম অখাদ্য।”
“আরে…মানে কি?শেষ কর….”
“গাড়ি স্টার্ট কর….”
“আচ্ছা।দে খাচ্ছি আমি….”
সিয়াম কেনো জানি তামান্নার নীরব মুখ টা দেখতে চাচ্ছিলো না।তাই জীবনে যে জিনিস মুখেও তুলে নি সেটা আজ খাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো।
তামান্নার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
“সত্যি??”
“তোর জন্য।তবে শুধু একটা….”
“ওকে…..”
তামান্না সিয়ামের মুখে ফুচকা তুলে দিলো।টক দিয়ে চাইলে সিয়াম নিলো না।
খুব ঝালের কারণে সিয়াম মুখটা কাঁচুমুঁচো করে কোনো রকমে ফুচকা টা খেয়ে বললো,
“উফফ!!এটা কি খাস!!!!বাবা রে কি ঝাল….”
তামান্না হাঁসছে।
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিশাল সেই হাঁসির উন্মাদনা।
তামান্নার হাঁসি দেখে সিয়ামও মুঁচকি হাঁসলো।
তারপর কি যে হলো তার।
সে তামান্নার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে একটা ফুচকা হাতে তুলে বললো,
“হাঁসি থামিয়ে হা কর….”
তামান্না হাঁসি থামিয়ে অবাক হয়ে সিয়ামের হাতের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।যে হাতে সে ফুচকা তুলে ধরছে তামান্নার মুখের সামনে।
“নে হা কর….”
“না না আমার কাছে দে আমি খেয়ে নিচ্ছি…”
“রোজ রোজ তো দেখছি সকাল বেলা আম্মু তোকে খাইয়ে দিচ্ছে।এখন আমার হাত থেকে না হয় ফুচকা খেলি!”
তামান্না আর কিছু বললো না।
সিয়ামের হাত থেকে ফুচকা খেতে লাগলো।
তার মনে হলো আজকের এই ফুচকাগুলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুচকা।
যার স্বাদ পৃথিবীর কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না।
আচ্ছা ভালোবাসা মেশানো যে কোনো জিনিস-ই এমন মধুর লাগে!!
তামান্না জানে না সেটা।
তবে এতোটুকু জানে,সিয়ামের ভালোবাসা যদি তারসাথে থাকে তাহলে প্রতিটা মুহুর্তই তার কাছে মধুর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here