#নতুন_তুই_আমি#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৭৪……………………..
!
রাতের খাবার শেষ করে রাইয়ান নামায পড়েছে। নিয়মিত নামায পড়ে সে। তবে নফল নামাযটুকু প্রতি ওয়াক্তেই বাদ দেয়। কিন্তু আজ বাদ দেয় নি। বরং অতিরিক্ত আরো দুই রাকাত নফল আদায় করেছে মায়ের সুস্থতার জন্য।
রাইয়ান নামায শেষ করে শুয়েছে মাত্র। তখনি দরজায় টোকা।
রাইয়ান জানতে চাইলো,
“কে?”
“আমি।”
“ভাবী! দাঁড়াও খুলছি।”
তামান্না রাইয়ানকে দেখে মুচকি হাসলো। এই ছোট্ট প্রচেষ্টায় এক চিলতে হাসির আভাস খেলা করে গেলো রাইয়ানেরও ঠোঁটেও। বললো,
“তুমি কি আমার সাথে ঘুমাবে?”
তামান্না তার হাতের বালিশ দেখিয়ে উত্তর দিলো,
“তা না হলে এটা আনতাম বুঝি?”
রাইয়ান কথা বললো না। মুচকি হেসে তামান্নাকে ভেতরে আসার সুযোগ দিলো। রাইয়ানের মশারী টাঙানোতে ভীষণ এর্লাজি। এরজন্য সবার কাছেই কমবেশি কথা শুনতে হয় তাকে। তামান্না অবশ্য কিছু বললো না। মশারী টাঙালো। রাইয়ানের মুখোমুখি শুয়ে প্রশ্ন করলো,
“মন খারাপ?”
রাইয়ান তামান্নার প্রশ্নের উত্তর দিলো না। সেও প্রশ্ন করলো,
“তুমি যে এলে, তোমার বর রাজি হয়েছে?”
“কেনো হবে না?”
“নাহ! তা ঠিক নয়। রাতে ছাড়লো তোমাকে আমার কাছে! অবাক লাগছে।”
তামান্না সঙ্গে সঙ্গে রাইয়ান কান ধরলো,
“তবে রে পাকনী! বেশি বুড়ি হয়ে গেছো তুমি।”
“আহ্! লাগে ভাবী।”
“বেশি পাকনামি না করে চুপচাপ ঘুমা।”
রাইয়ান চোখের পলক ফেললো। দীর্ঘ পলক। তার চোখ খুলে তামান্নার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“তুমি খুব ভালো ভাবী।”
“পাগলী! কি হয়েছে রে?”
“নাহ কিছু না।”
“বলবি না আমায়?”
রাইয়ান কিছুটা সময় নিলো। তারপর বললো,
“ভাবী, তোমারর কাছে ভালোবাসাটা কি?”
তামান্না খানিকটা অবাক হলো। তবে বিস্মিত না। সে বেশ কিছুদিন যাবত রাইয়ানের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। এতটুকু পরিবর্তন শুধু মায়ের অসুস্থতার জন্য নয়, এর পেছনে আরো কিছু থাকতে পারে বলেই মনে হয়েছে ওর। কিন্তু সেটা যে ভালোবাসার প্রশ্ন হবে-তামান্না এতটাও ভাবে নি।
তামান্নার উত্তর দিতে দেরী হওয়ায় রাইয়ান আবারো বললো,
“আচ্ছা, সহজ করে দিচ্ছি। তুমি বলো, ভালোবাসলে কেমন অনুভব হয়?”
তামান্না মুচকি হাসলো। রাইয়ানের থেকে চোখ ফিরিয়ে চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
“অস্থিরতা। প্রথমে কাউকে ভালোবাসলে তার জন্য মনের মধ্যে প্রবল অস্থিরতা কাজ করে। মানুষটার ছবি, কণ্ঠস্বর, গায়ের গন্ধ সবকিছুর জন্য মনটা উতলা হয়ে থাকে, বুকের ভেতর প্রচণ্ড অস্থিরতা একসময় মস্তিষ্কটাও ঘ্রাস করে নেয়। আর তখন ভাবতে ভালো লাগে; মানুষটাকে পেলে এই হবে, সেই হবে; কত গল্প হবে! স্পর্শ! সবকিছু ভাবনায় এসে জট পাকিয়ে ফেলে। আর প্রচণ্ড ভয় হয় জানিস? প্রচণ্ড। বুকের ভেতরে তড়পয়ায় এই বুঝি তাকে হারিয়ে ফেললাম, এই বুঝি স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।”
রাইয়ান কি ভাবলো সে জানে না। তবে তার ডান চোখের কোণা বেয়ে এক সরু অশ্রুধরা ঝড়ে পড়লো বালিশে। যেনো এই অশ্রুধারাই প্রকাশ করলো হাজার হাজার অব্যক্ত অনুভূতি! ব্যাখা করলো শত শত রঙীন স্বপ্নের অব্যক্ত কারণ।
তামান্না রাইয়ানের দিকে তাকালো। ততক্ষণে রাইয়ান চোখের জল মুছে ফেলেছে। কিছু অশ্রু কাউকে দেখাতে নেই। কিছু অশ্রু থাকে সুখের, দূঃখের আর কিছু অশ্রু পার্থনা আর কামনার। এই পার্থনা আর কামনাই মানুষ সব সময় গোপনে করে যেতে চায়, লাভ করতে চায় স্বপ্নপূরণের সুখ। আর স্বপ্ন ভেঙে গেলে যে দূঃখ পায় সে কষ্ট বুকে আগলে পা বাড়ায় ব্যস্ততায়। এই ব্যস্ততাই হৃদয়টা কাঁদে। কারো জন্য তো আবার কোনো মুহূর্তের জন্য। শুধু প্রত্যক্ষ হয় মিথ্যা একটা হাসি। কে জানে হয়তো গভীর রাতের নিমগ্ন পার্থনায় মিথ্যা হাসির মালিকটা ঠিক কতটা দূর্বল হয়ে পড়ে! ঠিক কতটা বেদনা অশ্রু হয়ে তার আঁজলা পাতা হাতে ঝড়ে পড়ে।