আত্মতৃপ্তি পর্ব ০৯

0
365

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ০৯

পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরে নিবির। অফিসে যাওয়ার জন্য ভালোই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর নিবেই না বা কেন? আজ তার অফিসের প্রথম দিন! কে জানে কেমন কাটবে অফিসের প্রথম দিন। সুপ্ত অবশ্য আজ অফিসে যেতে মানা করেছিল। কিন্তু নিবির তার কোন কথাই শুনতে রাজি না। সে আজ অফিসে যাবেই। সুপ্ত তখনও ঘুম থেকে উঠেনি। নিবির সুপ্তকে ডাক দিয়ে বলে,” সুপ্ত আমি কিন্তু অফিসের জন্য বের হলাম!” সুপ্ত খুব ভালভাবে কথা টা শুনতে পায় না। কারন সে ঘুমে বিভর। নিবির আবার সুপ্তকে একটা লাথি মেরে বলে,” আমি অফিসে গেলাম। তুই খেয়ে নিস।” সুপ্ত লাফিয়ে উঠে, আর বলে,” এভাবে কেউ ডাকে নাকি!” নিবির মিষ্টি করে বলে,

– তোর মত মানুষকে এভাবেই তুলতে হয়।

– আচ্ছা ওসব বাদ দে। তোর আজ অফিসে না গেলে হয় না। কালই জেল থেকে বাসায় আসছিস। কয়েকটা দিন না হয় রেস্ট নে, তারপর অফিসে যাস।

– না! আমি আজ থেকেই অফিসে যাব। আর পুলিশের কথা ভুলে যা। মনে কর ওইটা একটা স্বপ্ন ছিল।

– আমি না থাকলে…

সুপ্ত পুরো কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই নিবির সুপ্তকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– আমি তোর ঋন কখনো পরিশোধ করতে পারব না রে।

সুপ্ত আর কিছু বলে না। সেও নিবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এরপর নিবির বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে দোয়া নিয়ে রিকশা নিয়ে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরে।

নিবির অফিসে পৌছে সবার আগে এমডি ‘র সাথে দেখা করে। এমডি তাকে তার কক্ষ দেখিয়ে দেয়। কক্ষে মোট পাচটা টেবিল ছিল। অর্থৎ সে কক্ষে পাচজন কাজ করে নিবিরকে দিয়ে। কক্ষে ঢুকে বা’পাশে দুজন কাজ করে আর ডান পাশে তিনজন কাজ করে। নিবিরের টেবিল ছিল ডান পাশের মাঝের টেবিল। সে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেয়। তারপর নিজের আসনে গিয়ে বসে পরে। রুমে নিবিরকে দিয়ে চারজন ছিল। তার মানে আর একজন এখনও আসে নি। নিবির সেদিকে খেয়াল না করে সে তার কাজ করতে থাকে। কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে এসে তার পাশের ফাকা টেবিলে বসে। নিবিরের চোখ মাথায় উঠে যায়। সে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মেয়েটা সেই রেস্টুরেন্টের মেয়েটা। যার সাথে এই অফিসেই তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। নিবির তার সাথে আর কোন কথা বাড়াতে চায় না, তাই সে আবার কাজে মন দেয়।

অনেক্ষন কাজ করার পর মেয়েটা নিবিরের কাছে স্ট্যাপ্লার চায়। নিবির তাকে স্ট্যাপ্লার দিতে যায় তখন মেয়েটা একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। নিবির মেয়েটার চিৎকার শুনে নেই নিজেও হয় পেয়ে এদিকে ওদিকে তাকায় কিন্তু কিছু দেখতে পায় না। তখন সে মেয়েটার দিকে তাকায়, দেখে মেয়েটা তার দিকে তাকিয়েই চিৎকার করছে। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে বলে,” এই লোক এখানে কেন? ওকে কে আসতে দিছে এই অফিসে?” নিবির অবাক হয়ে যায় মেয়েটার কথা শুনে। কেননা, নিবির তার যোগ্যতার পরিচয়ে এখানে চাকরি নিয়েছে। নিবির মনে মনে বলে, এমনভাবে বলছে যেন অফিস টা ওর[মেয়েটার] বাপ-দাদার। কিন্তু ভাষায় কিছু প্রকাশ করে না। একটু পর এমডি চলে আসে। এমডি এসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে? এমনভাবে চিৎকার করছো কেন?” মেয়েটা নিবিরকে দেখিয়ে জোরে জোরে বলে উঠে, ” এই লোকটাকে এখানে ঢুকতে দিছে কে?” এমডি নির্দ্বীধায় বলে,” কেন? ও তো এখানে নতুন ইমপ্লয় হিসেবে যোগ দিয়েছে। আর ও তো খুব ভাল ছেলে। খুব দক্ষ! কিন্তু ওর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?”

নিবির চুপচাপ বসে শুধু তাদের কথা শুনছে। কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কক্ষের সব কর্মীসহ আরো কয়েকজন অন্য কক্ষ থেকে এখানে চলে আসে মেয়েটার চিৎকার শুনে। মেয়েটা আবার বলে,

– ভাল না ছাই। ওকে দ্রুত এখান থেকে বের করে দাও।[মেয়েটা]

– কিন্তু কেন? তুমি এভাবে কথা বলছো কেন ওর সাথে?[এমডি]

– একজন খুনি কখনোই এই অফিসে কাজ করতে পারে না। তাও আবার একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে![মেয়েটা]

– ওও এই কথা। আরে বাবা ও তো খুন করে নি। কোর্টে তো তা প্রমান হয়েই গেছে। আর ওর মতো দক্ষ ছেলে খুজে পাওয়া কঠিন।[এমডি]

– কিন্তু পুলিশ যে বলল ওই নাকি খুনটা করেছে। আর এজন্য আমাকে পুলিশ স্টেশনে পর্যন্ত যেতে হয়েছে।[মেয়েটক]

– তোমাকে তো বললামই যে খুনটা ও করে নি। কোর্ট তা প্রমান করে দিয়েছে। যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যাও আর মন দিয়ে কাজ কর।[এমডি]

এমডি সকল স্ট্রাফ কে যার যার কাজ করতে বলেন। সবাই সবার কাজে মোনযোগ দেয়। এমডি তখন নিবির আর মেয়েটাকে কক্ষের বাইরে নিয়ে যায়। যেতে যেতে নিবিরকে বলে,” নিবির তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ!” ” নাহহ আংকেল আমি কি মনে করব? আসলে মিথ্যা একটা কেস এর কারনে সবার খুনি ভাবছে আমায়।” বলে নিবিরও তাদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে থাকে। এমডি তাদের দুজনকে তার[এমডি এর] অফিসে কক্ষে নিয়ে যায়। তারপর দুজনের উদ্দেশ্যেই সে[এমডি] অনেক কথা বলে, এরপর তাদের দুজনকে আবার তাদের কক্ষে পাঠিয়ে দেয়। নিবির এমডির রুম থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে বলতে থাকে,” এই কথা ওই[সে রুমে নিবির রা কাজ করে] রুমেই বলতে পারত। শুধু শুধু এতটুকু হাটালো!” মেয়েটা নিবিরের ফিস ফিস শুনে বলে উঠে, ” কিছু বললেন আপনি?” নিবির অতি অস্থিরতার সাথে বলে,” না। কই কিছুই তো বলিনি।” দুজন নিজেদের টেবিলে বসে আবার কাজ করতে থাকে।

বিকেলে তাদের ছুটি হয়ে গেলে নিবির অফিসের সামনের চায়ের দোকানে চা খেতে বসে। সে খেয়াল করে তাদের কক্ষেরই একজন স্ট্রাফ যাচ্ছে দোকানের সামনে দিয়ে। এরপর সে লোকটাকে ডাক দিয়ে চায়ের দোকানে নিয়ে আসে। লোকটা প্রথম দিকে আসত্ব চায় না। কিন্তু নিবিরের জোরাজোরিতে আসতে বাধ্য হয়। লোকটা দোকানের ভিতিরে ঢুকলে সে লোকটাকে জিজ্ঞেস করে,”মেয়েটা কে ছিল? এমন ভাবে কথা বলল যেন অফিস টা ওর বাবার!” লোকটা একটু হেসে উত্তর দিল,” অফিস টা তার বাবারই!” এই কথা শুনে নিবিরের মুখের চা পরে চায় টাইলসের উপর। সে আবার লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে, ” মানে?” ” মানে, আপনি ঠিকই শুনেছেন অফিসটা তার বাবার। আপনি যে এমডি টাকে দেখলেন, উনি মেয়েটার বাবা।” বলে লোকটা চায়ের দোকান ত্যাগ করে চলে যায়। নিবির কিছুক্ষন আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকে, তারপর বাসার দিকে রওনা দেয়।

বাসায় এসে দেখে সুপ্ত আরামে ঘুমুচ্ছে। তাই সে আর সুপ্তকে ডাক দিতে যায় না। সে টিভি টা অন করে নিউজ দিকে দেখতে থাকে। একটু পর টিভির আওয়াজে সুপ্তর ঘুম ভেঙে যায়। সুপ্ত ঘুম থেকে উঠে দেখে নিবির টিভি অন করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্ত নিবিরকে ধাক্কা দিয়ে বলে,” কিরে টিভি তো ওই দিকে না এই দিকে। ওই দিকে কি দেখছিস।” নিবির চমকে উঠে বলে,” কিছু না এমনি একটু ওদিকে তাকিয়ে ছিলাম।” সুপ্ত আবার জিজ্ঞেস কিরে,

– তো অফিসের প্রথম দিন কেমন কাটল!

– ভাই প্রথম দিনটাই যা দারুন কেটেছে, তা আর ভোলার মত না।

– কেন কি এমন কি হয়েছে যে তুই ভুলতেই পারবি না। কিরে কোন মেয়ে টেয়ে আবার তোকে প্রোপোজ তো কিরে নি!

– প্রোপোজ! হুম…!

এরপর নিবির সুপ্তকে সব খুলে বলে। সুপ্ত হাসতে হাসতে ব্যাকুল হয়ে যায়। বলে,” ভাগ্য ভালো যে সবার সামনে বলিস নি যে, অফিস টা কি তোর বাবার। তাহলে তোকে আজ ঠিকই বের করে দিত অফিস থেকে।” এই সুপ্ত আবার হাসতে থাকে। নিবির বলে,

– সত্যি তুই কি আমার বন্ধু?

– কিরে তুই আবার এই কথা বলছিস কেন? আমি তোর তো খুব ভালো বন্ধু।

– বন্ধু হলে তো তুই আমাকে একটু সান্তনা দিতি। কিন্তু তুই কি না আরো হাসছিস আমার কথা শুনে।

সুপ্ত নিবিরকে বুকের মধ্যে তুলে নেয় তারপর বলে,” ওরে আমার সোনা তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে!” নিবির সুপ্তকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বাথরুমে যায় গোসল করতে।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]

পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..

https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here