#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ১৫
পুরো রুম কাজে ব্যস্ত। সবাই যার যার কাজ করছে। কিন্তু হঠাৎ কাজের সমাহার স্তব্ধ হয়ে গেল। কয়েকজন পুলিশ কন্সট্রেবল আর ইন্সপেক্টর এসে সব কাজের ব্যস্ততা স্থগিত করে দেয়। নিবির পুলিশদের দেখে দাঁড়িয়ে পরে। তার বুকের ভেতর জোরে একটা ধাক্কা দেয়। সে ভাবে সে আবারও কোন বিপদে পরতে যাচ্ছে। সে বলে উঠে,
– আপনি?
– ইয়েস…ইন্সপেক্টর মিথিলা হেয়ার। আপনাকে খুব মনে পড়ছিল, তাই আসলাম আপনাকে নিতে।[এইটা সেই ইন্সপেক্টর যে নিবিরকে এর আগে এরেস্ট করেছিল।]
– মানে? কিছু বুঝতে পারলাম না!
– এখানে কিছু বুঝতে হবে না। আপনি আমাদের সাথে পুলিশ স্টেশনে চলুন সব বুঝিয়ে দিব।
– আপনাদের কথার কিছুই বুঝছি না। আমি পুলিশ স্টেশনে যাব কেন? আর আগের কেস তো সোল্ভ হয়ে গেছে।
– সেটা তো আমি যানি। কিন্তু এখন আপনাকে আবার প্রয়োজন পরেছে।
নিবির কিছু বুঝতে পারছে না। নিশিরও কিছু মাথায় আসছে না। নিশিও ইন্সপেক্টর কে বলে,
– মিথিলা ম্যাম কি হয়েছে একটু বলবেন। আর ওকে এবার এমনভাবে পুলিশ স্টেশনেই বা নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
– আমরা এখানে কিছু বলতে পারবো না। আমাকে নিবিরকে নিয়েই যেতে হবে।
কোন মতেই ইন্সপেক্টর নিবিরকে না নিয়ে যেতে রাজি না। নিবির, নিশি ছাড়াও অফিসের এমডি, অফিসের স্ট্রাফ সবাই ইন্সপেক্টর কে অনেক রিকুয়েষ্ট করে কিন্তু কোন কাজ হয় না। সব বাধা অতিক্রম করে ইন্সপেক্টর নিবিরকে শেষ পর্যন্ত নিয়েই যায়। কেউ ঠেকাতে পারে না তাকে।
ইন্সপেক্টর নিবিরকে সেই আগের ইস্পেশাল ক্রিমিনাল সাইটে নিয়ে যায়। এরপর ইন্সপেক্টর নিবিরকে একটা লোকের ছবি দেখায়। বলে,
– এই লোকটাকে চেনেন?
– নাহহ। আমি উনাকে তো আগে কখনো দেখি নি।
এরপর আবার জিজ্ঞেস করে,
– আচ্ছা কাল রাতে আপনি হা** ব্রিজে গিয়ে ছিলেন?[হা** দ্বারা ব্রিজের নাম বুঝিয়েছি]
– হুম…। আমার অফিসের রিপোর্ট এর কাজে গিয়েছিলাম। ব্রিজ সম্পর্কে একটা কন্টেন্ট লিখতে ব্রিজের কাছে গিয়েছিলাম।
– ভালো ব্রিজ সম্পর্কে কন্টেন্ট লেখা ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। যাহোক, কন্টেন্ট লিখতে ব্রিজটা একবার দেখলেই চলে, তাই তো?
– হুম।
– তো আপনি ওখানে ছিলেন পুরো দু ঘন্টা। যাক দুঘন্টা কন্টেন্ট লিখতে ব্যস্ত ছিলেন ভালো কথা। আপনাকে প্রথমে ১৫-২০ মিনিট ব্রিজের উপর পায়চারি করতে দেখা যায়। কিন্তু মধ্যে ১ থেকে দের ঘন্টা আপনাকে ব্রিজের উপর দেখা যায় না। তারপর এক-দের ঘন্টা পর কোথা হঠাৎ চলে আসেন। আর বাসার দিকে চলে যান। প্লিজ বলবেন মধ্যের সময়টুকু কোথায় ছিলেন?
– আমি ব্রিজ টা ভালোভাবে দেখছিলাম।
– ব্রিজটা দেখতে হলে তো ব্রিজের উপরে থাকতে হবে অথবা ব্রিজের আশেপাশে থাকতে হবে। কিন্তু আপনাকে কোথাও দেখা যায় না।
– হতে পারে ব্রিজের সিসিটিভি কাজ করছিলো না তখন। তাই আমার ফুটেজ টা সেভ হয় নি। আচ্ছা আপনারা এসব প্রশ্ন আমাকে করছেন কেন? এসন প্রশ্নের সাথে আমার কি সম্পর্ক?
– আপনাকে যে লোকটার ছবি দেখিয়েছি। তিনি একজন নামি-দামি বিজনেসম্যান। গতকাল রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে তার খুন হয় সেই ব্রিজের নিচে। আর লাস সেই নদীতেই ফেলে দেওয়া হয়।
– কিন্তু তার সাথে আমার কি সম্পর্ক?
– আমার কথাই তো সেটা। আপনি যেখানেই থাকেন খুনী সেখানেই খুন করে। খুনি টা তো আপনিই না?
– কি আজে বাজে বকছেন। এর আগেও কিন্তু আপনারা আমাকে মিথ্যা কেসে ফাসিয়ে ছিলেন। আবার এখনও তাই করছেন।
– না এর আগের কেস টা মিথ্যা ছিলো না। আপনারা ভাগ্য ভালো বলে বেচে গেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য বার বার সহায় হয় না।
নিবির যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে। তাকে আবার সেই মার্ডার কেস এ ফাসানো হয়েছে। এবার সে কি করবে তাও বুঝতে পারছে না। ইন্সপেক্টর নিবিরের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর কন্সট্রেবল দের বলে সেই ব্রিজের সিসিটিভি ফুটেজ ভালোভাবে চেক করার জন্য। আর সেখানকার লোকদের কাছে কাল নিবিরের সম্পর্কে জানার জন্য। কেউ নিবিরকে কাল রাতে সেখানে দেখেছিল কি না। আর নিবির তখন কি করছিলো। সব কিছু। ইন্সপেক্টর বলে,” এবার আর ওর রেহাই নেই। ওর নাস্তানাবুদ না করা পর্যন্ত ওকে ছারছি না।” কন্সট্রেবল গুলো তাদের ডিউটি করায় ব্যস্ত হয়ে যায়। তারা সেই ব্রিজের কাছে যায়। আর তথ্য গুলো যথাযথ ভাবে সংগ্রহ করে। ইন্সপেক্টর তার কেবিনে এসে এই কেস সম্পর্ক ভাবতে থাকে। বিভিন্ন প্রশ্ন তার মনে। নিবিরই কি খুন দুটো করেছে? আর যে প্রথম খুন করেছে সেই দ্বিতীয় খুন টা সেই করেছে। নাকি অন্য কেউ খুন করেছে? হতেই পারে না, কারন একমাত্র সেখানেই খুন হয় যেখানে নিবির কমন থাকে। কিন্তু ওদের খুন গুলো করতে যাবে কেন? পুরোনো শত্রুতা নয় তো? নানান প্রশ্ন তার মনে। কিন্তু কোন প্রশ্নেরই উত্তর খুজে পাচ্ছে না সে। এদিকে নিবির অসহায় এর মত সেই রুমে বসে থাকে।
[অফিসে নিশির দৃশ্য]
নিশি খুন চিন্তায় পরে যায়। তার কাছে নিবিরের বন্ধু সুপ্তর নাম্বার টাও নেই। আর সে নিবিরের বাসাও চেনে না। সে তার বাবা অর্থাৎ এমডি কে বলে তার কাছে কোন ইনফরমেশন আছে নাকি নিবিরের বাসা বা তার অন্য কোন সম্পর্কে। নিশির বাবা তার রুমে যায় আর ইনফরমেশন ডাইরি বের করে। সেখানে নিবিরের বাসা সম্পর্কে একটা ঠিকানা দেওয়া আছে। নিশি একটা পিক তুলে নিয়ে সেই ঠিকানা অনুযায়ী যায়। নিশির বাবা তাদের[নিবির আর নিশির] সম্পর্ক – সম্পর্কে জেনে যায়। এর আগেই সে সন্দেহ করেছিলো। কিন্তু আজ সে কনফার্ম হলো। তবে এতে তার মনে কোন দুঃখ নেই। কারন নিবির কে তার ভালোই লাগে। খারাপ না ছেলে টা।
নিশি ঠিকানা অনুযায়ী সেই বাসায় পৌছে যায়। সে গিয়ে বাড়িওয়ালার রমে নক করে।
– হ্যালো আন্টি। এখানে কি নিবির নামে কেউ থাকে।
– আচ্ছা ওর সাথে কি ওর বন্ধু সুপ্তও থাকে?
– হুম।
– ও কি বাসায় আছে?
– হুম।
– ওদের রুম টা কোন দিকে একটু দেখাবেন প্লিজ!
– ওদিকে…
এই বলে বাড়িওয়ালা নিশি নিবিরের রুমে নিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে,
– আচ্ছা তুমি নিবিরকে কিভাবে চেনো? আর ওকে কি দরকার?
– আসলে আমরা একি অফিসেই কাজ করি। একটা দরকারে ওর বন্ধুর কাছে আসলা।
তারা নিবিরের রুমের কাছে চলে আসে। নিশি রুমের দড়জায় করা নারে। কিন্তু কেউ কোন শব্দ করে না। সে অমনি ভেতরে ঢুকে পরে। দেখে সুপ্ত উপুর হয়ে ঘুমুচ্ছে। নিশির রাগ হয়ে যায় । সে সুপ্তর মুখের উপর পানি ঢেলে দেয়। সুপ্ত এক লাফ দিয়ে উঠে বলে,”কোন সালা রে?” বলে সামনে তাকাতেই দেখে নিশি দাঁড়িয়ে আছে। সে অবাকের চেয়েও অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে আজ সরাসরি বাসায় চলে আসছে। অদের সহ্য হয় না নাকি? নিশি বলে উঠে,
– তারা উঠে রেডি হয়ে নাও।
– আমি রেডি হন কেন?
– কাজ আছে যা বলছি তাই করো।
– আমাকে না বললে আমি কিছুই করব না।
– নিবিরকে আবার পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে আজ সকালে।
– মানে?
– মানে নিবিরকে পুলিশ আবার অ্যারেস্ট করেছে![একটু জোরে বলে]
– শুনেছি তাই আমি বয়রা না।
সুপ্ত উঠে দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। দড়জার সামনেই বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে ছিল। কথা গুলো সেও শোনে। সে নিশিকে জিজ্ঞেস করে,
– তোমাকে কে বলল?
– আমাদের অফিস থেকে ওকে অ্যারেস্ট করেছে।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/