আত্মতৃপ্তি পর্ব ২০

0
3689

#আত্মতৃপ্তি

#লেখক_জীবন

#পর্ব ২০(শেষ পর্ব)

নিবির তার অতীতের কথা বলতে শুরু করে,❝ আমরা ছিলাম দু-ভাই। আমি আর আমার বড় ভাই নিরব। আর আমাদের পরিবারে ছিল চারজন সদস্য – আমি, আমার বাবা-মা আর আমার বড় ভাই। আমার বাবা একজন রিপোর্টার ছিল, যে কিনা তোমার বাবার অফিসেই কাজ করত[ নিশির দিকে তাকিয়ে নিশির বাবার অফিসের কথা বলে]। আমার বাবা আমাদের দু-ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে সক্ষম ছিলেন না। তাই আমি ছোট থাকতেই আমার চাচার বাড়ি যাই পড়াশোনা করতে। আর আমাদের বাসায় থাকে আমার পরিবারের বাকি তিন সদস্য।

সেদিন বাবা অফিস থেকে অনেক রাতে বাসায় ফিরছিলেন। সে সাধারনত হেটে বাসায় ফিরতেন। আব্বু আসার সময় দেখে রাস্তার পাশে একটা কার দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে সেখানে তিনি দাড়ান নি, তিনি দাড়িয়েছিলেন সেই কার থেকে একটা মেয়ের চিৎকার এর আওয়াজ শুনে। আর মেয়েটা চিৎকার করে বলছিল তাকে বাচাতে। আব্বু এগিয়ে গিয়ে দেখে ম্যাজিস্ট্রেট আর একজন এই এলাকারই নামিদামি নিসনেসম্যান[সেই দুজন যাদেরকে নিবির খুন করেছে] মেয়েটাকে রেপ করছে। আব্বু যেহেতু একজন রিপোর্টার ছিলেন তাই বেশির ভাগ সময়ই তার কাছে ক্যামেরা থাকত। তাই সে তখন সে রেপ এর কয়েকটা ছবি তোলে আর ভিডিও রেকোর্ড করে। এরপর আব্বু সেই কার-এ নক করে এবং সেই দুজন দড়জা খোলে। আব্বু তাদের নিশেধ করে এই জঘন্য কাজ করতে। আর পুলিশকে বলে দেওয়ার ধামকিও দেয়।

কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তখন বলে,

– তুই আমাদের পুলিশের ভয় দেখাচ্ছিস। আমি নিজেই একজন পুলিশ!

– লজ্জা করে না পুলিশ হয়েও এই জঘন্য কাজ করতে?

– এসব লজ্জা-টজ্জা তোর কাছেই রাখ, আর এখান থেকে ভাগ!

আব্বু সেখান থেকে চলে যায়। তারা দুজন ভাবে আব্বু বাসায় চলে গেছে। কিন্তু আব্বু বাসায় না যেয়ে পুলিশ স্টেশনে যায় এবং রিপোর্ট লিখতে বলে। কিন্তু কোন পুলিশ-ই তার কথা শোনে না। বরং বলে, তাদের সাথে লাগতে যায়েন না। তারা খুব ডেঞ্জারাস মানুষ! আপনি যা দেখেছেন ভুলে যান। আর ভাবেন কিছুই দেখেন নি। আপনার ভাগ্য ভালো যে আপনি তাদের ধামকি দিয়েছেন, কিন্তু আপনাকে ওরা কিছু বলে নি। এখনও সময় আছে। ভালোভাবে বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন।

আব্বু তাদের কথায় খুব রেগে যান। কিন্তু তাতে তার কোন কিছু করার ছিল না। কিন্তু সে মেয়েটার আসল বিচার করেই ছাড়বে। সে দ্রুত তার বস অর্থাৎ নিশির বাবার কাছে যায় আর সব কিছু খুলে বলে। ছবিসহ ভিডিও নিশির বাবার কাছে দেয়। আর বল, স্যার দেখেন। পুলিশকে বললাম তারা কিছু বলল না। কিন্তু আমি চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে চুপচাপ থাকতে পারি না। তাই যদি নিউজ এবং সোসাল মিডিয়াতে যদি এই খবর দেখানো যায়। তাহলে জনগন এর চাপে হয়ত জানোয়ার গুলোর বিচার হত। তাই আপনার সাহায্য দরকার।

নিশির বাবা বলে, আমার কাছে এসেছেন ভালো হয়েছে। আপনি একদম ঠিক কাজ করেছেন। ওদের এর শাস্তি পেতেই হবে। আপনাকে আর টেনশন করতে হবে না। আপনি বাসায় গিয়ে ঘুমান গিয়ে। যা করার এবার আমি করছি। আব্বু তার উপর বিশ্বাস করে বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। আমার বড় ভাই আগের থেকেই ঘুমিয়েছিল। আব্বু আম্মুকে সব বলে। আম্মু শুনে বলে, এসব ঝামেলার মধ্যে পরতে গেলে কেন? আব্বু বলে,মেয়েটা যদি আমাদের মেয়ে হত টাহলে কি এমন কথাই বলতে। আম্মু তার নিজের ভুলটা শুধরে নেয়। এরপর দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।

এদিকে নিশির বাবা আর তারা দুজন[যারা রেপ করেছিল] যে ক্লজফ্রেন্ড আব্বু তা জানত না। নিশির বাবা তার সেই বন্ধুদের ফোন করে সব বলে দেয়। আর সে[নিশির বাবা] নিজেও তাদের সাথে তখনই দেখা করে। আর তার দুজন বন্ধু আমার বাবা-মাকে মারার প্লান করে। তার তিনজন মিলে আমাদের বাসার সামনে যায়। আর আমাদের বাসার চারদিকে পেট্রোল দিয়ে আমাদের ভেতরে আমার বড় ভাইসহ বাবা-মাকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। আর পুড়িয়ে দেয় আব্বুর তোলা ছবি আর ভিডিও সহ কামেরা।

আমি পরদিন সকালেই আমার বড় চাচার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে চলে আসি। আর আমার বাবা-মা আর ভাইয়ের মরা মুখ দেখি। তাদের দাফন কার্য সম্পন্ন হলে আমার কাছে একজন লোক আছে। আর সে নাকি দেখেছে আমার বাবা-মাকে কারা মেরেছে। সে সেদিন রাতে সব দেখিছিল। আর সব কিছু আমাকে খুলে বলে। আমি তখনই কুড়াল হাতে নিয়ে তিনজনকেই মারতে বেড়িয়েছিলাম। কিন্তু সেই লোক আর আমার বড় চাচা আমাকে ঠেকায়। লোকটা আমাকে বলে,” বাবা তুমি তাদের মারতে পারবে না। ওরা খুব খারাপ লোক। ওদের সামনে এক চেহারা আর ভিতরে অন্য চেহারা।” সে আরো বলে,” তুমি যদি তোমার বাবা-মার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাও তোমাকে আগে বড় হতে হবে। আর সব কিছু প্লান অনুযায়ী করতে হবে।”

আমি লোকটার কথা বুঝতে পারি। আমার মনের ভেতর তখন একটা আগুনই জ্বলত, তা হচ্ছে প্রতিশোধ এর আগুন।

আমি অনেকটা বড় হয়ে যাই। কিন্তু ভাবি ওদের মারব কি করে? তখন আমার সুপ্তর সাথে দেখা হয়। যার বাবা-মা মরা! আমি এটাও জানতে পারি ওর একটা বন্ধু আছে যে একজন উকিল। আর এটা ছিল আমার জন্য এক লটারি। কারন সুপ্তর সাথে যদি আমি বন্ধুত্ত করি, তাহলে আমি এ্যারেস্ট হলে ও আমাকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। আর তাই আমি ওর সাথে বন্ধুত্ত করলাম। তবে আমি সুপ্তকে খুব ভালোওবাসতাম। তখন আমি ছিলাম আমার বড় চাচার বাড়ি। আর সুপ্ত একটা চাকরি পেয়ে ঢাকা চলে আসে।

কিছুদিন পর আমাকেও ও ঢাকা আসার জন্য রিকুয়েষ্ট করে। আর আমি ঢাকা চলে আসি। এরপর যা হয়েছে তা তো তোমরা দুজনেই জানো। আর যে লোকটা আমাকে আমার পরিবার এর খুন এর কথা বলেছে সে আর কেউ না, ইন্সপেক্টর মিথিলা’র প্রিয় কন্সট্রেবল রফিক। আর সেই আমাকে আপনার সব চাল আগে থেকেই বলে দিয়েছে[ইন্সপেক্টর মিথিলার দিকে তাকিয়ে]।❞

এতক্ষন নিশি আর ইন্সপেক্টর মিথিলা মোনযোগ দিয়ে সব শুনছিল। নিশি তার বাবার নামে এরকম কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। সে ভাবে তার বাবা এরকম কাজ করতেই পারে না। নিশি নিবিরকে জিজ্ঞেস করে,” আমি বিশ্বাস করি না যে আমার বাবা তোমার পরিবারকে মেরেছে!” নিবির বলে উঠে, ” তাহলে তুমি কন্সট্রেবল রফিক কে জিজ্ঞেস করতে পারো।” এর মধ্যেই কন্সট্রেবল রফিক সেখানে পৌছে যায়। নিশি তার কাছে দৌড়ে গিয়ে বলে, তার বাবা নিবিরের পরিবারকে খুন করেছে কি না। কন্সট্রেবল রফিক বলে,”হুম। আপনার বাবাও ছিল তাদের সাথে। আমি নিজ চোখে দেখেছি। শুধু তাই নয় এছাড়াও অনেক খারাপ কাজের সাথে যুক্ত আছে আপনার বাবা।” নিশি এতক্ষন তার বাবার উপর যে ভরসা টা করত, তা এক নিমিষেই ঘৃনার পরিনত হয়ে গেল। নিশি তার বাবাকে ফোন করে। কিন্তু ফোন ধরছে না তার বাবা। নিবির বলে উঠে, ” কি ফোন ধরছে না তোমার বাবা। আরে ধরবে কি করে! তাকে পরপারের টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে।। সুপ্তকে যখন ওরা কিডনাপ করে, আমি সবার আগে তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমার বাবার কাজটা সেরেছি। তারপর এখানে এসেছি।”

নিশি কি বলবে বুঝছে না। আর কি করবে তাও জানে না। সে কি কাদবে তার বাবার মৃত্যুর জন্য নাকি তার বাবার খারাপ কাজের জন্য তাকে ঘৃনা করবে। সে থো মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। নিবির সেখান থেকে তার বাসায় চলে আসে। ইন্সপেক্টরও তাকে আর এ্যারেস্ট করে না। কিন্তু কি ভেবে সে নিবিরকে এ্যারেস্ট করে না তাও জানে না সে। শুধু এত টুকু জানে সে নিবিরকে এ্যারেস্ট করতে পারবে না।

[৭দিন পর…..]

নিবির রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাচ্ছে। এমন সময় নিশি আর ইন্সপেক্টর মিথিলা চলে আসে। তারা দুজন কোন কথা বা বলে শুধু নিবিরের টেবিলে বসে পরে। নিবির দুজনের দিকেই তাকায়। কিছু বুঝতে পারে না তাদের মতলব। একটু পর নিশি আর মিথিলা একসাথে বলে উঠে, ” আমি তোমাকে বিয়ে করব!” নিবির এ কথা শুনে তার মুখ দিয়ে খাবার পরে যায়। সে একটু পানি খেয়ে নেয়। তারপর মুখটা টিস্যু দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে। নিশি আর মিথিলা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশি বলে উঠে,

– তুমি তো একজন পুলিশ! এরপরও নিবিরকে বিয়ে করতে চাও![নিশি]

– পুলিশ হয়েছি তো কি হয়েছে? আমারও তো মন আছে ভালোবাসার জন্য। আসলে আমি যেদিন নিবিরকে দেখেছিলাম সেদিনই নিবিরকে পছন্দ হয়ে যায় আমার![মিথিলা]

নিশি মিথিলার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এরপর নিশি নিবিরকে বলে উঠে,

– আমি কিছু জানি না। আমি তোমাকেই বিয়ে করবে।[নিশি]

– আমিও কিছু জানি না আমি তোমাকেই বিয়ে করব ব্যস![মিথিলা]

– আরে আমি দুজনকে বিয়ে করবে কি করে? যেকোন একজনকে তো আমার বিয়ে করতে হবে।[নিবির]

– আমি কিছু জানি না! একমাত্র আমার বাবাই বেচেছিল। তুমি তাকেও মেরেফেলেছো! এখন আমার কেউই নেউ তুমি ছাড়া, আমি তোমাকেই বিয়ে করব![নিশি]

– আর আমি যে ওকে এ্যারেস্ট না করে ছেড়ে দিলাম! তার কি হবে।[মিথিলা]

– আচ্ছা ঠিক আছে। দুজনেই যেহেতু বিয়ে করতে চাও। কিন্তু একজনকে তো সেকরিভাইস করতেই হবে।

এই বলেই নিবির একটা পয়সা বের করে টস করার জন্য। সে নিশি আর মিথিলা দুজনকেই টদ এর কথা বলে। দুজনেই রাজি হয় টস করতে। নিবির হাতের আঙুল দিয়ে পয়সা টা উপরে তোলে। পয়সা ঘুড়তে ঘুড়তে উপরে উঠতে থাকে। এদিকে নিশি আর মিথিলা দুজনের বুক শুধু ধরফর করছে। নিশি আর মিথিলা আবারো দুজন দুজনের দিকে তাকায়। আর মাথা নাড়ায়। এরপর দুজনেই নিবিরকে জড়িয়ে ধরে আর একসাথে বলে,

” টস করতে হবে না! আমরা দুজন মানিয়ে নিব!”

________°সমাপ্ত°________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here