#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ২৯
_______________________
– মা আমি বিয়ে করতে পারবো না মা। দয়া করে আমাকে জোর করো না।
– ক্যান পারবি না? ওই মাইয়ারে ছাড়া যহন থাকতেই পারবিনা তো বিয়া ভাঙছিলি ক্যান?
– আমি নিরুপায় ছিলাম মা। বিশ্বাস করো আমার কাছে যদি তখন একটুও সুযোগ থাকতো আমি তাকে আমার করে নিতাম।
– যা হওয়ার হইছে বাপ। ওরে ভুইলা জীবনডা আবার নতুন কইরা শুরু কর। তাছাড়া ওর তো বিয়া হইয়া গেছে। এতদিনে মনে হয় বাচ্চাকাচ্চাও হইয়া গেছে। ও তো তোর জন্য থাইমা নাই। তুই ক্যান ওর জন্য থাইমা থাকবি?
শিহাব নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। তার স্বর্ণলতার বাচ্চা হয়েছে এই কথাটা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। শিহাবের স্বর্ণলতার গায়ে অন্যকারোর স্পর্শ, অন্যকারোর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে তার বাচ্চা, এইটা সে কিভাবে মেনে নেবে? আজ তার একটা ভুলের জন্য সব হারিয়ে যেতে চলেছে৷ সেদিন যে সুখের আশায় ও চারুকে ছেড়ে দিয়েছিলো, চারু সে সুখের স্পর্শ অবধি পেলোনা। শিহাব যদি ছেড়েই দিয়েছিলো তাহলে ওকে পাওয়ার কথা ছিলো শাওনের। শাওনের সাথে সুখে থাকার জন্যই তো শিহাব ওকে ছেড়েছিলো তবে কেনো মধ্যবয়সী জামাল হোসেনের সাথে তার বিয়ে হলো? সেখানে কি আদেও খুশি আছে শিহাবের স্বর্ণলতা?
– তোর লগে তো চারুর কোনোদিন সম্পর্ক আছিলো না বাপ। একটুখানি সময় দেখা। তুই ক্যান ওরে ছাড়তে পারতাছোস না?
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
– বিশ্বাস করো মা অনেক চেষ্টা করেছি স্বল্প পরিচয়ের সেই কিশোরীটাকে ভুলে যেতে। কি হাস্যকর কথা না, আমি আমার চেয়েও পনেরো বছরের ছোট একটা বাচ্চা মেয়েতে আটকে গেছি? যার সাথে আমার পরিচয় কিছুক্ষণের, কথাবার্তার মধ্যে কখনো কোনো ভালোবাসা সম্পর্কিত কথা ছিলো না, কখনো সে আমার জন্য গভীর অনুরাগ অনুভব করেনি কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্যই আমার এমন অসীম অভিপ্রায়।
– আমি ওর চেয়েও সুন্দর মাইয়া আইনা দিমু তোরে। দুনিয়ায় কি ও-ই একমাত্র সুন্দর মাইয়া নাকি?
– আমি সুন্দরী মেয়ে চাইনা মা। আমাকে আমার মায়াবতী ফিরিয়ে দাও।
জমিদার গিন্নি আর কথা বাড়াতে পারছেন না। কে জানে ছেলেটা কবে এত গভীরভাবে চারুলতাতে আসক্ত হয়েছে। কবে চারুলতা পরিনত হয়েছে শিহাবের ভয়ানক আসক্তিতে? কথা বাড়াতে না পেরে তিনি উঠে চলে গেলেন। শিহাবকে এখন আর জোর গলায় দুটো কথা বলা যায়না পাছে সে আবার অনেক দূরে চলে যায়। জমিদার গিন্নি চলে যাওয়ার পর শিহাব বাইরে বেড়িয়ে এলো। হাটতে হাটতে চলে গেলো গ্রামের একেবারে মাঝখানে অবস্থিত সেই বটগাছের কাছে৷ এখানেই প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ পেয়েছিল শিহাব তার স্বর্ণলতার। সেইসব স্মৃতি এখনো স্মৃতির পাতায় চির অমলিন। পুরনো সেই কথাগুলো মস্তিষ্কের একপাশে খুব যত্নে সাজিয়ে রেখেছে শিহাব। এতবছর পরেও নিজের ভিতরে তার স্বর্ণলতার জন্য ভিন্ন জায়গা,ভিন্ন অনুভব, ভিন্ন অনুরাগ। শিহাবের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে
হচ্ছে,
– ভালোবাসা আর কত কষ্ট দিবি তুই আমাকে? আমার এমন পাগলের মতো ভালোবাসা কি তোর চোখে পড়েনা? অন্যের সাথে কিভাবে সুখে আছিস তুই? একজন মানুষ যে প্রতিনিয়ত তোর জন্যই বেচে থাকে। আজও তোর অপেক্ষাতেই নিজের দিন গোনে। ফিরে আয় ভালোবাসা, ফিরে আয়। আর কত পোড়াবি আমাকে?
চোখের কোনে অশ্রু ভীড় করে। অব্যক্ত কষ্টগুলো আত্মপ্রকাশ করতে চায় কিন্তু এদেরকেও নিজের ভিতরে সযত্নে পুষে রেখে দিয়েছে শিহাব। স্বর্ণলতার প্রতি তার খুব অভিমান! সে ফিরে এলেই সকলে মিলে একসাথে নালিশ জানাবে তার কাছে। নিশ্চয়ই জানাবে। আচ্ছা স্বর্ণলতা কেনো তার হলোনা? বয়সের কারণে কি? এমন কতশত উৎভট প্রশ্ন শিহাবের মনে হানা দেয় রোজ, কিন্তু উত্তর মেলে না। গগন পানে চেয়ে সে বিরবির করে উচ্চারণ করলো,
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
এই জন্মের দুরত্বটা পরের জন্মে
চুকিয়ে দেবো মনে থাকবে?
~(সংগ্রহীত)
★★★
চারুলতা খুবই সতর্কতার সাথে নিজের বোরকা পাল্টে নিয়ে অন্য এক বোরকা পড়ে নিলো। নিজের ব্যাগটা বদল করে ফেললো বান্ধবীর ব্যাগের সাথে। এখনই সুযোগ সকলকে ফাকি দিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার। একসপ্তাহ যাবত চারু এইদিনটার অপেক্ষায় আছে৷ শেষ পর্যন্ত সুযোগ হয়েই গেলো এখান থেকে পালানোর। যত দ্রুত সম্ভব শতভাগ সতর্কতা সাথে হামিদের সাথে দেখা করতে হবে৷ চারু কোনো ঝুকি নিলো না। চারু জানে ফোনের সাহায্য লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব, তাই ফোনটাও তার বান্ধবীর কাছেই রেখে দিলো। কলেজ গেইট থেকে বেড়িয়ে সোজা একটা রিকশা নিয়ে সেটাতে উঠে গেলো। রিকশা দিয়েই একেবারে বাড়িতে পৌছানো সম্ভব কিন্তু এবারেও চারু ঝুকি নিলো না। রিকশা থেকে নেমে সিএনজিতে উঠে গেলো। বাসার থেকে কিছুদুর আগেই সে সিএনজি থেকেও নেমে গেলো। কোনোভাবে কেউ যদি ওকে ফলোও করে বা ড্রাইভার গুলো যদি পুলিশের লোকও হয় তাও যেনো হামিদকে ধরতে না পারে তাই এ প্রচেষ্টা। চারু আজও পুরোপুরি ভাবে সাজিদকে বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। এতবার ঠকে এখন আর কাউকেই বিশ্বাস হয়না চারুর। মিথ্যা দ্বারা হৃদয়টা এমনভাবেই প্রতারিত হয়েছে যে সত্যকেও এখন মিথ্যা মনে হয়। চারু খুবই সতর্কতার সহিত এলোমেলো ভাবে চলে বাড়িতে পৌঁছে গেলো। কেউ যদি ওকে ফলোও করে থাকে তাও বুঝতে পারবেনা চারু ঠিক কোথায় গিয়েছে৷ নিজেকে ধাতস্থ করে ধীর হস্তে ক্রলিং বেল বাজালো চারু। কিছুক্ষণের মাঝেই দরজা খোলা হলো। দরজাটা খুলেছে ফাতেমা।
চারুকে দেখেই ফাতেমা এক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা সত্যিই চারু তার সামনে।
– কেমন আছো ভাবি?
ফাতেমা এবার চারুকে ধরে হাউমাউ করে কেদে ফেললো। ঘটনার আকষ্মিকতায় কিছুটা চমকে উঠলো চারু। ফাতেমার কি হয়েছে? এভাবে কেনো কাদছে সে? ফাতেমা নিজে নিজে বিলাপ করতে শুরু করলো,
– আমারে মাফ কইরা দাও চারু। আমি এতদিন না বুইঝা অনেক অন্যায় করছি তোমার লগে। আমি জানি আমার অন্যায়ের মাফ নাই তাও তুমি আমারে মাফ কইরা দাও। আমি এতদিন ভাবতাম মানুষ সুন্দর হইলেই তার জীবন সুন্দর কিন্তু ওইদিন তোমার ভাই যহন আমারে তোমাগো ছোট কালের কথা কইলো। বড় হওয়ার পরের কথা কইলো, তোমার লগে ঘটা ঘটনার কথা কইলো আমার মইরা যাইতে ইচ্ছা করতাছিলো। এমন জনম দুঃখী মাইয়ারে আমি এত কষ্ট দিলাম ক্যামনে? আমি তো সবচেয়ে বেশি পাশানী। ও চারু তুমি আমারে মাফ করবা না বইন? আমি নাহয় বোকা ছিলাম, কিছু জানতাম না তুমি ক্যান আমার কথা ধইরা চইলা গেলা? বোকা মানুষগো কথা কি ধরণ লাগে? আহো তুমি ঘরে আহো। আমি আর কোথাও যাইতে দিমু না তোমারে। তুমি আমাগো সাথেই থাকবা আজকে থেকে।
চারু অনুভূতিহীনের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ফাতেমার এই কান্না তার এই আকুতি চারুর মনকে ছুয়ে যেতে পারলো না। কষ্ট হচ্ছেনা, মায়া হচ্ছে না, ভালোবাসার অনুভূতি হচ্ছেনা কিচ্ছুই হচ্ছেনা অথচ প্রথম দিকে চারু খুব চাইতো ফাতেমা তার সাথে ভালো আচরণ করুক, একটু ভালোবেসে মায়ের মতো আগলে নিক। মা আর বোনের পর ভাবি-রাই নাকি মায়ের দায়িত্ব পালন করে।
– তুমি বহো আমি তোমার জন্য পানি নিয়া আহি।
ফাতেমা চলে গেলো। ফাতেমার এমন আন্তরিকতার কারণ বুঝতে পারছে চারু। হামিদ সম্ভবত ফাতেমাকে সব জানিয়েছে আর আবেগী ফাতেমা অল্পতেই গলে গেছে। চারু সেসব নিয়ে মাথা ঘামালো না। হামিদের সাথে দেখা করাটা একান্ত জরুরি। কিছুক্ষণের মাঝেই ফাতেমা পানি নিয়ে এলো। চারু হামিদের কথা জিজ্ঞেস করতেই ফাতেমা জানালো হামিদ কিছুক্ষণের মাঝেই দুপুরের খাবার খেতে আসবে। চারু লতার কাছে গেলো। মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। কি মিষ্টি দেখতে! লতা প্রিম্যাচুয়র বেবি। সাত মাস সতেরো দিনের মাথায় লতার জন্ম হয়। হামিদ আর ফাতেমার বিয়ের তখন মাত্র তেরো মাস। ঘুমের মাঝেই দাত বিহীন একটা মুচকি হাসি দিলো লতা। চারু অনুভব করলো এই মেয়েটার হাসিতে সত্যিই অদম্য মায়া লুকায়িত আছে। চারু নিজের ছোটবেলার একটা ছবি দেখেছিলো। নানু বাড়িতে তোলা ছবি। তারা ধনী ছিলো বিধায় শখের বসে চারুর ছোট মামা একটা ক্যামেরা কিনে নেন। সেটা দিয়েই চারুর ছবি তোলা হয়। চারুর সেই ছবিটি বর্তমানে লতার মতোই লাগে। দাত বিহীন হাসির একটা ছবি। এমনকি চারুও প্রিম্যাচুয়র বেবি ছিলো। দুজনের মাঝেই কি অদ্ভুত মিল। চারুর ভিতর হঠাৎই বিষাদে ছেয়ে গেলো। চারু অনুভব করলো তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। শেষ কবে সে কান্না করেছিলো তা মনে করতে পারছেনা কিন্তু আজ ভীষণ কান্না পাচ্ছে। চারু ঘুমন্ত লতাকে বুকের মাঝে চেপে ধরলো,
– মা গো, ফুপ্পির মতো হয়েছো ভালো কথা কিন্তু ফুপ্পির ভাগ্যটাকে নিজের ভাগ্য হিসেবে বরণ করে নিও না। তোমার বাবাটা খুবই ভালো। আমার বাবার মতো নয়। তোমাকে খুবই ভালোবাসে। যতদিন তোমার বাবা আছে, ততদিনে তোমার কিচ্ছু হবেনা দেখে নিও। তোমার জন্য হলেও তোমার বাবাকে একটি সুন্দর জীবন কাটাতে হবে। তুমি চিন্তা করো না, আমার অভিসপ্ত জীবনে তোমার বাবাকে আমি জড়াবো না। বাবার ছায়া মাথায় না থাকলে একটা মেয়ে যে কতটা অসহায় হয় সেটা কেবল একমাত্র একজন বাবার ছায়াহীন মেয়েই বলতে পারে। আমিও তেমনই এক মেয়ে। বাবা থেকেও বাবা ছিলো না আমার। তোমাকে এমন জীবন ভোগ করতে হবেনা মা। তোমার বাবা করতেও দিবেনা দেখে নিও।
আচমকা চারুর এমন আচরণে লতার ঘুম ভেঙে যায়। ফুপ্পিকে চিনতে দেরি হয়নি তার। তার ফুপ্পি কান্না করছে এইটাও সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে তাই এভাবে আচমকা ঘুম ভেঙেও সে কাদছেনা। সযত্নে চারুর চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। চারু স্তব্ধ হয়ে গেলো বাচ্চা মেয়েটার এমন আন্তরিকতায়। লতা চুপচাপ চারুর কপালে আলতো একটা চুমু একে দিলো। চারু অনুভব করলো তার ভালো লাগছে। ভীষণ ভালো লাগছে। অনেক দিন পর এমন ভালোলাগা অনুভূত হচ্ছে। লতার মুখ দেখেই ভিতরটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে। এইটাই সম্ভবত রক্তের সম্পর্কের বন্ধন।
– দেহো মাইয়া তোমারে ক্যামনে চিনা নিছে।
ফাতেমার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস ঝড়ে পড়ছে। ফাতেমা শ্যামলা হলেও মুখটা মায়াবী। তাকে দেখে চারু একটু মুচকি হেসে বললো,
– রক্তের সম্পর্ক তো ভাবি। এভাবে কিভাবে ভুলে যাবে বলো?
ফাতেমা উত্তর দেওয়ার আগে বাসার ক্রলিং বেল বেজে উঠলো। প্রথমে দুইবার, তারপর একবার তারপর আবার দুইবার। ফাতেমা এবং চারু দুজনেই বুঝতে পারলো হামিদ এসেছে। এমন স্টাইলে বেল কেবল হামিদই বাজায়। ফাতেমা দরজা খুলে দিতেই হামিদ ভেতরে ঢুকলো। ফাতেমার হাসি মুখ দেখেই বললো,
– অকারণে হাসো ক্যান? ভুতে ধরছে? হাসবা না। হাসলে তোমারে কটু দেখতে লাগে।
ফাতেমার মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো তথাপি কিছু বললো না। এখন এইসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে। যথাসম্ভব স্বাভাবিক মুখ করে বললো,
– চারু আইজ আমাগো সাথে দেহা করতে আইছে।
হামিদ ফাতেমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে আসলে সত্য বলছে নাকি বায়োনাট কথাবার্তা তবে ফাতেমার কথাটা বায়োনাট বলে মনে হলোনা। হামিদ দৌড়ে ছুটে গেলো ভিতরের দিকে। চারু তখনও লতাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। হামিদকে দেখেই চারু একটু হাসলো। হামিদ ধীরপায়ে গিয়ে চারুর পাশে বসলো,
– কেমন আছস?
– আমি জেল পালিয়েছি। আমাকে কে সাহায্য করেছে জানো?
– তুই ক্যামনে জানতি সাজিদ তোরে জেল থেকে পালানোয় সাহায্য করবো? যদি না করতো? আমার কথা না শুইনা এত বড় ঝুঁকি ক্যান নিলি? এই বিশ্বাস ছিলো তোর আমার প্রতি?
– রাগ করো কেনো তুমি? আমার পরিকল্পনা তো সফল হয়েছে। নাজিমুদ্দিনকে খু*ন করার সাথে সাথে আমরা বসকে খোজার সব উপায় হারিয়ে ফেলি। সেটা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো কিন্তু সংশোধন তো করতে হবে বলো। তাকে তো আমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারিনা।
– যদি সাজিদ সাহায্য না করতো তাহলে?
– আমি জানতাম করবে। একমাত্র পুলিশের সাহায্যেই তাকে ধরা সম্ভব।
– যদি না করতো তো?
– ধুর বারবার এক কথা বলো কেনো? করেছে তো। আর যদি না করতো তাহলে আর কি? আমার ফা*সি হতো।
হামিদ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চারুর দিকে। চারু সেটাকে বিশেষ পাত্তা দিলো না। চারু জানে হামিদ তার জন্য এত উতলা কারণ হামিদ তাকে নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসে৷ হামিদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে চারুর এমন নির্বোধের মতো কাজকর্মে ওর উপর রাগ করার, ওকে শাসন করার।
– আমার কলিজাটা মনে হয় ছিড়ে যাইতাছিলো যহন তুই আমার কথা না মাইনা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কোনোকালেই পড়তাম না কিন্তু তুই নিজে যহন পুলিশের কাছে ধরা দিলি তহন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পইড়া শুধু তোর সুস্থতা কামনা করছি। তুই ভাবতেও পারবি না এই কয়টা মাস ক্যামনে কাটছে আমার। তোর কিছু হইয়া গেলে পর্যন্ত আমি খোজটা পাইতাম না।
হামিদের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক হলেও সেখানে প্রকাশ পাচ্ছে রাগ, অভিমান, জেদ আর ভালোবাসা। আল্লাহ একজন মানুষকে কখনোই সম্পূর্ণ নিঃস্ব করেননা। একদিক খালি করলে আরেকদিক ঠিকই পূর্ণ করে দেন৷ হামিদ চারুর সেই পূর্ণতা। ভাগ্য করেই হামিদের মতো একটা ভাই সে পেয়েছিলো। কয়জন মেয়ে এমন ভাগ্য করে জন্মায় যাদের হামিদের মতো ভাই আছে?
– তোমার খুব অভিমান না আমার উপর?
হামিদ উত্তর দেয় না। আসলেই খুব অভিমান তার চারুর প্রতি। চারু হামিদের কাধে নিজের মাথাটা রাখলো। সবচেয়ে প্রশান্তির এবং ভরসার একটি জায়গা। এই জায়গাটা চারুর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। দুনিয়ার কারোর সাধ্য নেই এখানে চারুর ক্ষতি করা। হামিদের জীবন চলে যাওয়ার আগে কেউ চারুর গায়ে একটা আচরও কাটতে পারবেনা চারুর বিশ্বাস।
– কিছু খাইছস? এহন কই থাকস?
– এস আই এর বাড়িতে।
– সে তোরে ক্যান সাহায্য করলো? আর তুই জানলিই বা কিভাবে সে তোরে সাহায্য করবো?
– বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। পরে বলি?
– না এহনই বল।
– আমার না তাকে ঠিক বিশ্বাস হয়না ভাইয়া।
– ক্যান?
– জানিনা। দুনিয়ার উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে। কিছুক্ষণ আগে ভাবি কত ভালো আচরণ করলো আমার সাথে কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। এই দুনিয়ায় সম্ভবত তুমিই একমাত্র মানুষ যার উপর আমি শতভাগ বিশ্বাস রাখি। চোখ বন্ধ করেও বিশ্বাস রাখি।
– তাইলে আমার কথা সেইদিন শুনলি না ক্যান?
– এখনো জানো*য়ারটাকে খোজা হয়নি যে। তার সাথে অনেক হিসেব বাকি আছে।
– আমরা নিজেরা খুইজা নিতাম তারে।
– কি দরকার? পুলিশ তো আর এমনি এমনি আমাকে সাহায্য করছেনা। নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
– কেমন কৃতজ্ঞতা?
– সাজিদের প্রাক্তন স্ত্রী সায়মার সম্পর্ক ছিলো পুলিশ অফিসার হোসেনের সাথে। তার জন্যই সাজিদের সংসার ভেঙেছে৷ তার মেয়েটা মা হারা হয়েছে। হোসেন তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে তাই সাজিদের ইচ্ছে ছিলো তাকে খু*ন করা। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় সাজিদ। সায়মার প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো না কিন্তু তারা দুজনেই ছিলো বিশ্বাস ঘাতক আর এই বিশ্বাস ঘাতককে খু*ন করেছি আমি। তাই এ কৃতজ্ঞতা।
– সে কি সায়মারেও খু*ন করতে চায়?
– না। সায়মাকে বাঁচিয়ে রাখবে নিজের চোখে তার কষ্ট দেখার জন্য তবে ওই বাসায় গিয়ে আমি কিছুটা কনফিউশানে পড়ে গেছি। আমার মনে হচ্ছে আমি এতদিন যা দেখেছি, যা শুনেছি সব সত্যি নয়। এই সত্যির আড়ালেও আরো অনেক কিছু লুকায়িত আছে। আর আমি নিশ্চিত আমি সম্পূর্ণ সত্যি জানি না।
– কি দরকার জানার? তুই চাস বসরে খুইজা তাকে খু*ন করতে। নিজের কাজ হাসিল করবি আর চইলা আসবি। পুলিশের সত্য উদঘাটনের কি দরকার?
– সেটা নিয়েই কথা বলতে এসেছি তোমার সাথে। আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো।
– হুম বল।
– সপ্তাহ দুয়েক আগে সাজিদ আমাকে আমার কলেজে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমরা বুড়িগঙ্গা নদীর ব্রিজের উপর যাই। সেখানেই সাজিদ আমাকে প্রথম বারের মতো জানায় আমি যদি চাই সে আমাকে আইনের হাতে তুলে দেবেনা। আমি নিজের মতো আমার জীবন শুরু করতে পারি।
– আইনের হাতে তুইলা দিবো মানে? অসম্ভব! তুই জানস, তুই যেই খু*ন গুলা করছোস তার জন্য তোর ফা*সি হইতে পারে?
– জানি।
– জানস তো এহনো ওইহানে পইড়া আছস ক্যান?
– আমার জীবনের এমনিও কোনো মূল্য নেই। বেঁচে থেকে কি হবে।
চারুর কথাটা বলতে দেরি হলেও হামিদের তাকে সজোরে থাপ্পড় মারতে দেরি হলো না। যে মেয়ের মঙ্গল কামনায় দিন-রাত মসজিদে বসে থাকে সেই মেয়ে কি না নিজের মৃত্যু কামনা করছে। কতটা স্বার্থপর হলে মানুষ কেবল নিজের চিন্তাই করে, তার চারপাশের মানুষদের চিন্তা করেনা?
– মারলে কেনো?
– তোরে তো খু*ন কইরা ফেলা উচিত।
চারু আর কথা বাড়ালো না। সে সম্ভবত হামিদের চিন্তাভাবনা কিছুটা বুঝতে পেরেছে তাই সে সম্পর্কে কথা না বাড়ানোই শ্রেয়। ছোট থেকে হামিদের কাছে সে কত থাপ্পড় খেয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। তাই শুধু শুধু এইটা নিয়ে মাতামাতি করে রগচটা হামিদের রাগ আরো বাড়ানোর ইচ্ছে হলো না চারুর।
– আমার কথাটা শোনো, অযথা রাগ দেখিয়ো না। আমি এমন এক গোলকধাঁধায় পড়ে গেছি যার থেকে বের হওয়া অসম্ভব প্রায়। পুলিশটার সম্পর্কে সত্য জানতেই হবে আমার। সেদিন কিছুক্ষণ ওই ব্রিজে থাকার পরেই আমি আর সাজিদ বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। বাসায় পৌছানোর পর আমি নিজের ঘরে চলে গেলেও সাজিদ নিচে থেকে যায়। আমিও ভুলে আমার ব্যাগটা নিচে ফেলে চলে গিয়েছিলাম সেটা নিতে এসেই আমি সাজিদ আর তার মায়ের কিছু কথোপকথন শুনি।
★
নিজের ঘরে ঢোকার পরই চারু বুঝতে পারলো পানি খাওয়ার সময় সে তার ব্যাগটা সোফায় রেখেছিলো। চারু আবার নিচে চলে যায় ব্যাগটা আনতে। সেই ঘরেই বসে ছিলো সাজিদ এবং নাজমা বেগম। তারা চারুকে নিয়ে পরষ্পরের সাথে কিছু কথা বলছে,
– শোন বাবা, আমি যা বলছি তা মেনে নে।
– এইটা কিভাবে হয় মা? চারুলতা এখন আমার দায়িত্ব তাই বলে আমি ওকে বিয়ে করে নিতে পারি না।
– এখন দায়িত্ব নিতে পারলে সারাজীবন দায়িত্ব নিতে পারবি না? এখন নাহয় তোর কাছে আছে কিন্তু কেস শেষ হলে তো তাকে চলে যেতে হবে। তোর ভাষ্যমতে, এই দুনিয়ায় ওর আর কেউ নেই তাই ওকে তোর সাথে থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু এরপর ও কোথায় যাবে? একা সুন্দর একটা মেয়ে কিভাবে বাঁচবে? এখানে মেয়েরা একটু সুন্দর হলেই বাবা মায়ের চিন্তার শেষ থাকেনা আর চারুলতাকে সেখানে আগুন সুন্দরী বললেও ভুল হবে না।
– তাকে নিয়ে তুমি এত কেনো ভাবছো মা? সে কিভাবে থাকবে সেটা তার ব্যাপার।
– তুই যদি তাকে বিয়ে করিস তাহলে সমস্যা কোথায়?
– তুমি বুঝতে পারছো না মা। এমনটা হয় না। হতেই পারে চারুলতার অন্য কাউকে পছন্দ। সে কেনো আমাকে বিয়ে করবে?
নাজমা বেগম দমে গেলেন। আসলেই তিনি এমন কিছু ভাবেননি। চারুর পছন্দ থাকতেই পারে।
– মেয়েটার সাথে আমাদের কথা বলা উচিত সাজিদ।
– কোনো দরকার নেই মা। এইটা সম্ভব নয়।
সাজিদ নাজমা বেগমকে আর কথা বাড়াতে দিলো না। সে উঠে চলে গেলো তবে নাজমা বেগম এরপর থেকে প্রায় সময়ই সাজিদকে চারুর সম্পর্কে এইটা সেইটা বলতো৷ মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল। একটানা কারোর কথা নিয়মিত শুনলে মনের অজান্তেই তার জন্য মনের ভিতর একটা জায়গা ঠিক হয়ে যায়। সাজিদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না৷ একসময় নিজের মেয়ের কাছে যে মেয়েকে ঘেসতে দিতে ভয় পেতো সেই মেয়েকেই তার মা হওয়ার প্রস্তাব করে সাজিদ নিজে। চারু অবাক হয়নি। নিরুত্তর, অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে ছিলো সাজিদের দিকে। চারুর এই অবাক হওয়া না দেখে অবাক হয় সাজিদ নিজেই।
– আপনি খুবই অদ্ভুত চারুলতা।
চারু উত্তর দেয়না। কোনো অনুভূতিও ব্যক্ত করেনা। কেমন যেনো অনুভূতিহীন পাথরের মতো হয়ে গেছে সে।
– চারুলতা আপনি ভেবে জানাবেন। তবে হ্যাঁ আপনার উপর কোনো জোর নেই। আমি আমার ইচ্ছে জানিয়েছি আপনি আপনার ইচ্ছে জানাবেন৷ আপনার সম্মতিতেই সব হবে৷ আমি আসছি।
★
– এরপরই আমি সুযোগ খুজতে থাকি তোমার সাথে দেখা করার। সুযোগও পাই প্রায় একসপ্তাহ পর। আর এখন আমি তোমার সামনে।
– এখন কি করতে চাস তুই?
– আমি জানি না। তোমার কি মনে হয় আমার কি করা উচিত?
– তারে বিয়া করলে সে তোরে আর পুলিশের হাতে তুইলা দিবো না তাই তো?
– স্বার্থপরের মতো কথা বলো না। মৃ*ত্যুকে আমি ভয় পাই না।
– কিন্তু তোর মৃ*ত্যুর কথা শুনলে আমি ভয় পাই।
– আমার না নাজমা বেগমকে ঠিক সুবিধার লাগছে না।
– ক্যান?
– জানি না। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমার মনে হচ্ছে নাজমা বেগম যেমন তিনি আমাকে তেমন দেখান না।
– আর সাজিদ?
– বুঝতে পারছিনা। তাকে আমি ঠিক যেমন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিনা তেমনি অবিশ্বাসও করতে পারছি না। লোকটাকে খুব ভালো মনে হয়। এতদিন তাদের বাসায় আছি সে চাইলেই সুযোগ নিতে পারতো কিন্তু কোনোদিন খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়নি পর্যন্ত উল্টো আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো।
– তোর মন কি চায়?
– আমার মন এখন কিছুই চায় না। আমি তাদের ঠিক বিশ্বাসও করতে পারছিনা আবার অবিশ্বাসও করতে পারছিনা। আমার মনে হয় তারা নিজেদের একটা আবরণীর সাহায্যে ঢেকে ফেলেছে। যা দেখাচ্ছে সবটাই মিথ্যা। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে এখানে কিছু একটা ঘাপলা আছে।
– এরা যহন এতদিনে কিছু করে নাই মনে হয় পরেও কিছু করবো না। তুই রাজি হয়ে যা। তুই তো বেঁচে যাবি, আর কি চাই?
– বেঁচে থেকে যদি আবারও কোনো এক নরকে গিয়ে পড়ি? এখন কোনো সম্পর্ক গড়তে খুব ভয় পাই আমি। ভীষণ ভয় পাই।
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
– কাল শিহাবরে দেখলাম টিভিতে। একটা হাসপাতাল বানাইতাছে। বেশ নামডাক। পোলাটাও ভালোই ছিলো। তার সাথে বিয়া হইলেই মনে হয় তোর জীবনটা সুন্দর হইতো। শুধু শুধু তুই তার সাথে বিয়েটা ভাঙলি।
চারু একটু চমকে উঠলো। সে কখনো হামিদকে বলেনি শিহাবের সাথে বিয়েটা সে ভেঙেছে তবে হামিদ কিভাবে জানলো। হামিদ সম্ভবত চারুর ভাবনা ধরতে পারলো,
– তোর ভাই আমি চারু। তোর মাথায় যদি বুদ্ধির পাহাড় থাকে আমার মাথায় কি বুদ্ধির ঢিবি থাকবো না?
– তোমার কথার কোনো যুক্তি নেই। শিহাব নাজিমুদ্দিনের সত ছেলে। হিসেবে সে আমাদের ভাই হয়।
– শিহাবের মা আর আমাদের মা কি এক?
– না।
– শিহাবের বাপ আর আমাগো বাপ কি এক?
– না।
– শিহাবের বাপ কে সেটা কেবল তার মা-ই জানতো। শিহাবকে পেটে নিয়েই সে নাজিমুদ্দিনকে বিয়ে করে তাই শিহাবের বাবাও নাজিমুদ্দিন না। বাপও এক না মাও এক না তাইলে সে কিসের আমাগো ভাই?
– তার কথা এখানে কেনো টানছো? যা চলে গেছে সেটা গেছে।
– দেখ চারু, তুই কি করবি সেটা তুই জানস কিন্তু ভুইলা যাইস না তোর জন্যই আমার চিন্তা সবচেয়ে বেশি। তোর কোনো কষ্ট আমি দেখতে পারমু না। যা করবি ভাইবা চিন্তা করবি। খালি নিজের দিকটা না দেইখা আমার দিকটাও ভাববি। তোরে ভালো থাকতে হইবো চারু। আরো অনেক বছর বাঁচতে হইবো।
– তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?
হামিদের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো,
– না তো। কে কইছে আমি তোরে ভালোবাসি? নেহাৎ মা তোর দায়িত্ব আমারে দিয়া গেছিলো নইলে এমন পেত্নী, কে নিজের ঘাড়ে ঝুলাইতে চায়?
চারুর ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হলো। সে জানে হামিদ তাকে খেপানোর জন্য কথাটা বলেছে কিন্তু তাও চারুর ভীষণ রাগ হলো। এতক্ষণ সে লতাকে কোলে নিয়েই বসে ছিলো, সাবধানে তাকে নামিয়ে দিয়ে বললো,
– দাঁড়াও রান্নাঘর থেকে লঙ্কাগুড়োটা নিয়ে আসি। ছোট বেলার কথা মনে আছে তো? এইবার এই লঙ্কা গুড়ো দিয়ে তোমাকে আমি গোসল করাবো। আবারও ছোটবেলার ফিল নাও।
#শুভ্রা_আহমেদ_প্রিয়া
বিঃদ্রঃ কিছুদিন আগেই পেইজ আপডেট নিয়েছে। তারপর থেকেই পেইজ রিচের অবস্থা যাচ্ছেতাই। যদি ১k+ রিয়েক্ট আসে তাহলেই আমি পরের পর্ব দেবো। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এর জন্য। রিয়েক্টের জন্য না কিন্তু পেইজ রিচ ঠিক রাখার জন্য আমার এইটা করতে হচ্ছে। আগের মতো হওয়া অবধি আপনাদের এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। আবারও দুঃখিত🙏
_______________________
To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া