#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩১
_______________________
– পুতুল কোথায়? কাল থেকে একবারও তাকে দেখলাম না।
– সে নিজের বন্ধুর বাড়ির আছে। কাল শান্তর জন্মদিন ছিলো। শান্ত জেদ ধরেছে পুতুল না গেলে ও কেক কাটবেনা তাই মেয়েটাকে ওখানে রেখে আসতে হলো। দুটো যতই মারামারি করুক না কেনো দিনশেষে একজন অন্যজনকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা।
– বাসায় আসবে কবে?
– আসবে কবে কি? আসার সময় প্রায় হয়ে এলো। আমি তো ভাবছি এখনো কেনো আসছেনা।
– পুতুল কি আমাকে মেনে নেবে?
– মানবেনা কেনো?
– পুতুল তো আর বাচ্চা নয় যে তাকে এইটা সেইটা বুঝিয়ে রাজি করিয়ে নেবেন।
– বাচ্চা নয় তো কি? মাত্র আট বছর বয়স।
– বাবার কাছে মেয়েরা হয়তো সবসময় ছোটই থাকে। পুতুল কিন্তু যথেষ্ট বড় হয়েছে। বোধশক্তিও হয়েছে। সে যদি আমাকে মা হিসেবে মানতে না চায় তো?
সাজিদের কপালে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। চারুর কথা নেহাৎ ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বিয়েটা করার আগে সম্ভবত একবার পুতুলের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। সাজিদের চিন্তাভাবনার মাঝেই ক্রলিং বেলের আওয়াজ পাওয়া গেলো,
– খুলে দেবো নাকি এখনো মেয়ের থেকে দূরে থাকতে বলবেন?
– আপনি যদি আমার মেয়ের মা হতে রাজি থাকেন তাহলে অবশ্যই খুলে দেবেন। আমি আপনার উপর বিশ্বাস রাখতে চাই মা কখনো সন্তানের ক্ষতি চাইবেনা কিন্তু আপনি যদি পুতুলকে না মানতে পারেন তবে দয়া করে ওর থেকে দূরে থাকবেন।
– আপনি তো আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন সাজিদ তাহলে আজ এ প্রশ্ন উঠছে কেনো?
– আমি আপনাকে আমার স্ত্রী রূপে বিশ্বাস করেছি, ভালোবেসেছি। আমি আপনাকে আমার জীবনসঙ্গিনী হওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, আমার মেয়ের মা হওয়ার প্রস্তাব নয়। আপনি যদি আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে না চান আমি জোর করবোনা। আমিই আমার মেয়েকে ভালোবাসতে পারবো। তবে হ্যাঁ, আমাকে ভালোবাসার দায়িত্ব কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে।
– আর যদি আপনার মেয়ের মা হওয়ার দায়িত্বও নিতে চাই?
– আমার কোনো আপত্তি নেই শুধু বলবো ওকে একটু ভালোবাসবেন। মায়ের ভালোবাসার কাঙাল সে ছোট থেকেই। তবে আমার মেয়েকে ভালো না বাসলেও কষ্ট দেবেন না চারুলতা। আমি সহ্য করতে পারবো না।
আবারও ক্রলিং বেল বেজে উঠলো। চারু আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। দরজার কাছে আসতেই দেখা গেলো নাজমা বেগমকে।
( গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া)
– তুমি আবার উঠে এলে কেনো মা? আমিই তো খুলে দিতাম।
– আমি খুলে দিচ্ছি। আপনি রেস্ট নিন আন্টি।
– আন্টি বলবে এখনো? মা ডাকবে না?
চারু প্রতিউত্তরে একটু মুচকি হাসলো তবে তার মন এখনো জানেনা নাজমা বেগম মা ডাকটি শোনার উপযুক্ত কি না। একজন অনুপযুক্ত মানুষকে মা ডেকে মা ডাকটাকে অসম্মান করার ইচ্ছে হলোনা চারুলতার। সে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। চারুলতাকে দরজা খুলতে দেখে অবাক হলো পুতুল। এতদিনে কখনো এমন হয়নি। পুতুল একটু হেসে বললো,
– কেমন আছো আন্টি?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
– আমিও ভালো।
– তোমার বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেমন কাটলো?
– ভালো। পাপা কোথায় আন্টি?
– ঘরে আছে।
পুতুলের কাছে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই। সবকিছু ঠিক থাকার শর্তেও ঘরটা এলোমেলো লাগছে কিন্তু পুতুলের বাচ্চা মস্তিষ্ক সেই এলোমেলো জিনিসটা কি তা ধরতে সক্ষম হচ্ছেনা। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সাজিদের ঘরের দিকে। সাজিদ তাকে দেখেই একটু মিষ্টি হেসে বললো,
– কেমন আছো মাম্মাম?
সাজিদের ঘরে প্রবেশ করতেই বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো পুতুল। বিছানায় দুটো বালিশ, কাভার্ডের এক পাশের একটু অংশ খোলা সেখানে দেখা যাচ্ছে নীল রঙা এক শাড়ি। এই শাড়িটি কার সেটা পুতুল জানে। এই শাড়িটি দিয়েই চারু তাকে শাড়ি পড়ানো শিখিয়েছিলো। ড্রেসিং টেবিলে বেশ কিছু সাজগোজের জিনিস এবং গহনা, ঘর থেকেও মেয়েলি একটা গন্ধ ভেসে আছে। এইটা অবশ্য পুতুল বুঝতে পারলোনা। পুতুল ধীরে ধীরে খাটে এসে বসলো,
– চারুলতা আন্টির জামাকাপড় তোমার ঘরে রাখা কেনো পাপা?
সাজিদ কিছুটা বিভ্রান্ত হলো। পুতুলের চোখেমুখে স্পষ্ট কৌতুহল। আজ অবধি নাজমা বেগম ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে সে সাজিদের ঘরে দেখেনি। বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে এলেও সে ড্রইংরুমেই বসে থাকতো। সাজিদ নিজের ঘরে আসার অনুমতি কাউকেই কখনো দেয়নি এমনকি পুতুলের মা অবধি ডিভোর্সের পর এই ঘরে আসতে পারেনি। পুতুল কখনোই সায়মার সাথে দেখা করেনি। সে সাজিদের ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকতো। যেই মা এতদিন ওর সাথে দেখা করেনি সেই মায়ের আর দেখা করার প্রয়োজন নেই বলেই সে মনে করে। খুব অভিমান তার মায়ের উপর।
পুতুলের পিছুপিছু চারুও ঘরে প্রবেশ করলো। পুতুলের প্রশ্ন সে শুনেছে। সাজিদের মুখে চিন্তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে কিভাবে শুরু করবে তা ঠিক ভেবে উঠতে পারলো না।
– মাম্মাম!
– হুম।
– আন্টিকে তোমার কেমন লাগে?
– আন্টি তো ভালোই। আন্টি দেখতে কত সুন্দর, কত সুন্দর করে কথা বলে, গান গায়! আমার তো খুব ভালো লাগে। আমি বড় হয়ে আন্টির মতোই হতে চাই।
– তাই নাকি মাম্মাম?
– হুম তো।
– কেমন হয় যদি তোমার আন্টি সবসময় আমাদের সাথে থাকে?
– সবসময় আমাদের সাথে থাকবে?
– হুম।
– কিভাবে?
– ধরো তোমার মা হয়ে!
পুতুলের মুখ হঠাৎই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলো। চোখেমুখে ফুটে উঠলো তীব্র বিস্বাদ।
– তুমি বিয়ে করে নিয়েছো পাপা? এভাবে?
পুতুলের কণ্ঠে কিছু ছিলো সাজিদ সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে গেলো।
– মাম্মাম আমি,,,
– তুমি আমার জন্য সত মা এনেছো?
– মাম্মাম তুমি,,,
– সেও কি নিশুর মায়ের মতোই হবে? নিশুর মা মারা যাওয়ার পর ওর বাবা আবার বিয়ে করে আনে তারপর থেকেই ওর সত মা ওকে অনেক কষ্ট দেয়। তুমি আমার জন্য সত মা কেনো আনলে পাপা? এরচেয়ে তো ভালো ছিলো তুমি আমাকে আমার মা-ই এনে দিতে। সে তো অন্তত আমাকে কষ্ট দিতো না।
এতক্ষণ যাবত সকল ঘটনাই প্রত্যক্ষ করছিলো চারু। তার কোনোরকম অনুভূতি-ই হচ্ছেনা। ও সম্ভবত এসব কিছুর জন্য প্রস্তুতই ছিলো। চারু একবার পুতুলকে ডাকলো। পুতুল ওর দিকে তাকালো কিন্তু কোনো উত্তর করলো না।
– পুতুল, মা তোমার কি মনে হয় আমি এমন কেউ যে বাচ্চাদের অত্যাচার করি?
– নিশুর মা-কেও এমন মনে হয়না। সেও খুব সুন্দর দেখতে।
– নিশুর মাকে টেনো না এখানে। তুমি আমাকে দেখো! কি মনে হয় আমাকে দেখে?
চারুর কণ্ঠস্বরে কিছু একটা ছিলো যা খুব সহজেই পুতুলের মনে জায়গা করে নিলো। সত্যিই বাচ্চারা খুব সহজ সরল হয়। তাদের যেভাবে খুশি গড়ে নেওয়া যায়। চারুর কন্ঠস্বরেই বোধহয় এমন মায়া ছিলো!
– তুমি কি সত্যিই নিশুর মায়ের মতো ব্যাবহার করবেনা আমার সাথে? আমার ভালো মা হবে?
★★★
– আপনে যে কাইল চারুরে নিয়া বাইরে গেলেন ওরে নিয়া আসলেন না ক্যান? ওরে কোথায় রাইখা আসলেন? আমি তো বলছিলাম এহন থেইকা ও আমাগো সাথেই থাকবো।
– কালকের কথা টানতাছো ক্যান?
– তাইলে টানমু না? আমি কাইল তাড়াতাড়ি ঘুমায়া গেছি, আপনে কহন আইছেন টের পাই নাই।
– ভালা কাম করছো। এহন আমার মাথা না খাইয়া যাও নাস্তা বানাও।
– কিন্তু চারু!
– চারুর সংসার আছে। নিজের সংসার রাইখা ও তোমার কাছে আইসা পইড়া থাকবো ক্যান?
– চারুর সংসার আছে মানে? ওর বিয়া হইলো কবে?
– কাল।
– আপনে কি আমার সাথে মজা নিতাছেন?
– মজা নিমু ক্যান? ওর কি বিয়া হইতে পারেনা?
– পারবো না ক্যান কিন্তু আমি তো কিছুই জানতাম না।
– ও কি কোনো জায়গায় সাক্ষর করছে, তোমারে না জানায়া ও বিয়া করবো না?
– তা হইবো ক্যান? কিন্তু আপনে আমারে জানাইলেন না ক্যান? আমিও যাইতাম। হঠাৎ এর মধ্যে কিছু জানাইলেন না শুনাইলেন না!
– তোমার এই অপয়া চেহারা নিয়া কোনো শুভ কাজে গেলে সেই শুভ কাজ নষ্ট হইবোই। তোমারে কোন দুঃখে আমি এমন এক জায়গায় নিয়া যামু? নিজের চেহারা কোনোদিন আয়নার দেখছো?
ফাতেমা ভীষণ রকম অপমানিত বোধ করলো। চোখ জলে ভরে এলো। হামিদের অবহেলা গুলো আর সহ্য হচ্ছেনা।
– আপনে আমারে কথায় কথায় এমন অপমান করেন ক্যান?
– তুই কি সম্মানের যোগ্য যে তোরে সম্মান করমু। নিজের চেহারা দেখছস আয়নায়?
– হ দেখছি। ভালো কইরাই দেখছি। আপনে ক্যান দেহেন নাই? আমি কি আপনেরে জোর কইরা কইছিলাম আমারে বিয়া করেন? তাইলে বিয়া কইরা এমন অপমান ক্যান করবেন আমারে?
– ওইডাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু পোড়া কপাল শোধরানোর উপায় নাই।
– আপনে বাপ হিসাবে খুব ভালো হইতে পারেন, ভাই হিসাবে আদর্শ ভাই হইতে পারেন কিন্তু জামাই হিসেবে আপনে জঘন্য। আপনের মতো জামাই যেনো আমার শত্রুরও না হয়।
– এতই যহন আমারে নিয়া সমস্যা, যা না তোর বাপের বাড়ি যা। আমিও দেখমু তোরে কয়দিন রাখে।
– আইজ যাওনের জায়গা নাই দেইখাই আপনে আমারে এমন অবহেলা করেন। যেইদিন থাকমু না ওইদিন বুঝবেন আমি কি ছিলাম।
– হায়রে ফ্যামেলি ড্রামা! কতবার তো কইলি এই কথা। আজ অবধি তো গেলি না। তুই গেলে আমি একটা সুন্দর মাইয়া বিয়া কইরা আনমু। দেখ আমার মাইয়ার দিকে চাইয়া দেখ। একবারে পরীর মতো হইছে। তোর লগে থাকলে ও-ও কালা হইয়া যাইবো। তুই গেলে আমরা বাপ, মাইয়া দুইজনেই বাঁচি। কবে যাবি?
ফাতেমা চোখের জল বাধ মানতে চায়না। আর কত অপমানিত হতে হবে তাকে? আর কত অবহেলা সহ্য করতে হবে? মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় গলায় দ*ড়ি দিতে কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেওয়া হয়না। মেয়েটা না আসলে বোধহয় ঠিকই ফাতেমা গলায় দ*ড়ি দিয়ে হামিদের পথের কাটা সরিয়ে দিতো। এমন জীবন আর সহ্য হয় না। বিষণ্ণ মুখে সে চলে গেলো নাস্তা বানাতে। কিছু মানুষের জন্মই হয় অবহেলা পাওয়ার জন্য, মৃত্যুর আগ অবধি তারা কেবল অবহেলাই সহ্য করে যায়।
★
নাস্তা বানানোর প্রায় শেষ পর্যায়ে হামিদ রান্নাঘরে এলো। ফাতেমা দেখেও একপ্রকার না দেখার ভান করলো,
– এক গ্লাস পানি দাও তো।
হামিদের দিকে না তাকিয়েই ফাতেমা গ্লাসে পানি ঢেলে দিলো। হামিদ ফাতেমাকে পাশে বসে পড়লো,
– আরে আরে কি করেন? এইহানে বহেন ক্যান?
– তোমার কি বিন্দুমাত্র আক্কেল নাই? পানি আবার কেউ দাঁড়ায়া খায় নাকি?
– ঘরে বইসা খান। এইহানে গরমের মধ্যে,,
– তোমার মতো আজব মাইয়া আমি দুনিয়ায় আর দেহি নাই বুঝছো? আমি তোমারে এত অপমান করি তাও আমার কথা এত ভাবো। ক্যান?
– জামাইয়ের পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত। আপনের কথা না ভাবলে আর কার কথা ভাবমু?
– কে কইছে জামাইয়ের পায়ের নিচে বেহেস্ত? এমন কোনো হাদিস নাই তবে জামাইয়ের স্থান অনেক উপরে। মাইনা চলতে হয়।
– আমার মা যে কইতো?
– তিনি সম্ভবত ভুল জানতেন। হাদিস কুরআনে কোথাও এমন বলা হয় নাই।
– ওহ।
– ফাতেমা!
– হুম।
– যা কইছি রাগের মাথায় কইছি কিছু মনে নিয়ো না। আর চারুরেও কিছু বইলো না এসব।
ফাতেমা ফিক করে হেসে ফেললো। ফাতেমার হাসি দেখে হামিদ তার ভ্রুযুগল কুচকে ফেললো।
– হাসো ক্যান?
– আপনে চারুরে খুব ভয় পান তাই না?
– এইসব ফাউল কথা তোমারে কে কইছে?
– কাইল যহন চারু কইছিলো রান্নাঘর থেকে লঙ্কাগুড়ো আনবো আপনে তহন দৌড়ায়া বাতরুমে ঢুইকা গেছিলেন আর যেইহানে আপনের গোসল করতে মাত্র দশ মিনিট লাগে আপনে ওইহানে একঘন্টা বাতরুমে ঢুইকা বইসা ছিলেন।
– ওহ আচ্ছা, দেইখা নিছো। ভুইলা যাও! জামাইয়ের অপমান মনে রাখতে হয়না।
ফাতেমা আবারও হেসে ফেললো। হামিদের আচার আচরণ গুলো সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। কখনো ভালো তো কখনো খারাপ কিন্তু এতকিছুর মাঝেও হামিদকে ঘৃণা করার সাধ্য তার নেই। ভালোবাসা সবসময় যুক্তি তর্ক না মেনেই হয় তাই হামিদের এত অবহেলার পরেও হামিদকে সে ঘৃণা করতে পারে না। সম্ভব না।
– ফাতেমা!
– হুম।
– চারুর সাথে দেখা করতে যাইবা?
– আমি? আমারে কইতাছেন?
– এইহানে তুমি ছাড়া আর কে আছে?
– সত্যিই নিয়া যাইবেন?
– হুম।
– আপনে নিয়া গেলে যামু। চারুর জামাই কি করে?
– পুলিশ।
– ও বাবা। গেলে আবার আমাদের জেলে ঢুকায়া দিবো না তো?
হামিদ উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। ফাতেমা অপলক চেয়ে থাকে সেদিকে। সত্যিই ছেলেটার হাসি খুব সুন্দর। অসম্ভব রকমের সুন্দর!
– যাও তৈরি হইয়া আসো।
– আচ্ছা।
ফাতেমা উঠে চলে গেলো ঘরের দিকে। এই মেয়েটাকে দেখে মাঝে মাঝে খুব অবাক হয় হামিদ। এত ধৈর্য্য কোথায় পায় সে? মেয়েরা সম্ভবত, জন্ম থেকেই খুব ধৈর্যবান হয়। জন্ম থেকেই মেয়েদের শুধু সহ্য করতেই দেখে আসছে হামিদ। এক ছিলো মনোরমা, আরেকজন চারু আর অপরজন তার জীবনসঙ্গিনী। রাগ বলে অনুভূতিটা সম্ভবত সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের দান করেনি। তারা রাগ করলে যে এই ধরণী ধূলিসাৎ হয়ে যেতো। তবে হামিদ হয়তো জানেনা মেয়েদেরও রাগ হয়, কষ্ট হয়, অভিমান হয়। হামিদ কি কখনো ফাতেমার ভিতরের সুপ্ত রাগ, সুপ্ত অভিমান দেখতে পারবে? হয়তো না! হামিদের কাছে চিরকাল তা অপ্রকাশিতই থেকে যাবে।
★★★
– ওমা তুমি রান্নাঘরে আসছো কেনো? আমিই তো রান্না করতাম। তুমি বাচ্চা মানুষ, এইসব করতে পারো নাকি?
– পারবোনা কেনো? বাসায় সবসময় আমিই রান্না করতাম।
– ভালো কাজ করতে তবে এখন থেকে করবেনা। তুমি আমার ছেলের বউ না তুমি আমার মেয়ে। আর আমার মেয়েকে আমি কোনো কাজ করতে দেবো না। যতদিন আমার দুইহাতে জোর আছে আমিই রান্না করে খাওয়াবো। আর যেদিন পারবোনা সেদিন কাজের লোক রাখবো তাও আমার মেয়েকে আমি কাজ করতে দেবো না।
নাজমা বেগম যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন। সে কোনোরকম অভিনয় করছেনা। তার ভালোবাসাটা সত্য কিন্তু যুক্তিহীন। কিছু একটা স্বাভাবিক নয়। নাজমা বেগমের এমন ব্যাবহার চারুকে সহজ করার বদলে আরো কেমন অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে।
– আজ কি খাবে বলো তো মা। আজ সব তোমার পছন্দ অনুযায়ী রান্না হবে।
– আমার তেমন কোনো পছন্দ নেই আন্টি। আপনি রবং আপনাদের তিনজনের পছন্দের খাবার বানান আমি সাহায্য করি।
– তা কি করে হয়? একজনের মানুষের কিছু পছন্দ নয় তা কি কখনো সম্ভব?
– আমার সবই পছন্দের আন্টি। আবার কিছুই আমার পছন্দ নয়।
– তুমি খুবই অদ্ভুত চারুলতা!
– হুম কিছুটা!
– কিছুটা না মা। অনেকটা!
চারু কথা বাড়ালো না। সম্পূর্ণ কাজ নাজমা বেগম একা হাতেই সামলালেন। চারুকে কোনো কিছুই করতে দিলেন না। চারু চেয়েও সবটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেনা। চারুর এ সন্দেহ কি অহেতুক নাকি আসলেই এর কোনো ভিত্তি আছে? সাজিদকে কিছুটা বাজিয়ে দেখা যায়। ও কি কিছু জানবে? জানতেও পারে।
– সাজিদ!
– এই আপনি শরীরে বেলিফুলের স্মেল কোথা থেকে আসে বলুন তো। আপনি ঘরে প্রবেশ করলেই সম্পূর্ণ ঘরে ফুলের সুভাষ ছেয়ে যায়।
– একটু বেশি হয়ে গেলো না?
– না বেশি হলো না। বিশ্বাস না হলে আপনি মা কিংবা পুতুলকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
– ছাদে থাকা বেলিফুল গাছ থেকে প্রতিদিন একটা ফুল আমি নেই কিন্তু তাতে সম্পূর্ণ ঘর ফুলের সুভাষে ছেয়ে যাবে তা আমি বিশ্বাস করিনা।
– আপনি বিশ্বাস না করলে সত্যটা মিথ্যা হয়ে যাবেনা বেলিফুল।
– আপনার পরিবারটা খুবই সুন্দর সাজিদ।
– তাই নাকি? কি দেখে হঠাৎ এতদিন পর আপনার এ কথা মনে হলো?
– আন্টিকে দেখে। উনি কি সুন্দর ভালোবেসে কথা বলেন, কাজ করেন। একদম নিজের মেয়ের মতো।
– আসলে আমার মায়ের মেয়ের খুব শখ ছিলো ছোট থেকেই। আল্লাহ দেননি। বাবা মা*রা যাওয়ার পর চিন্তাভাবনা করলেন আমার বউকেই মেয়ের জায়গাটা দেবেন। সায়মাকেও দিয়েছিলো সে সেটার মর্যাদা রাখতে পারেনি। আপনি রাখবেন আশা করছি বেলিফুল। আপনারও তো মা নেই। আমার মা-কে একটু ভালোবেসে দেখুন। একমূহুর্তের জন্যেও মনে হবেনা সে আপনার নিজের মা না। দেখবেন আমাদের পরিবারে সবসময় সুখ শান্তি বিরাজ করবে। আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবাসবেন বেলিফুল। সত মা আপনারও ছিলো। আপনি তো যন্ত্রণাটা জানেনই। আমার মেয়েকে আমি তেমন কোনো কষ্ট পেতে দেখতে পারবোনা।
– আমার কিছু বলার নেই সাজিদ। শুধু বলতে পারবো ভরসা রাখবেন।
দরজায় ক্রলিং বেল বেজে উঠলো। চারু জানে নাজমা বেগমই খুলবে কিন্তু তারপরও সে গেলো। যথারীতি চারুর সন্দেহ এবারেও সঠিক হলো। চারুর আগেই নাজমা বেগম এসেছেন। তিনি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। দরজার সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে সম্ভবত সে জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই। চারু কিছুটা সামনে এগোতেই দেখলো হামিদ, লতা এবং ফাতেমা। হামিদ ততক্ষণে নিজের পরিচয় দিয়ে দিয়েছে। হামিদকে দেখে চারুর থেকেও বেশি খুশি হলেন নাজমা বেগম। তিনি দ্রুত তাদের ভেতরে ঢোকালেন। চারু বেশ অবাক হলো। নাজমা বেগম হামিদকে কিভাবে মেনে নিলো? তিনি তো জানতেন এই দুনিয়ায় চারুর আর কেউ নেই। হামিদকে দেখে তার তেমন কোনো ভাবান্তরই হলোনা। নাজমা বেগম সমানে বলে যাচ্ছেন হামিদ এবং ফাতেমাকে বসতে। নাজমা বেগমের ব্যাবহারে হামিদও কিছুটা ভড়কে গেলো। মহিলা এমন করছে কেনো? হামিদ চারুর দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসা বোধক চাহুনি! সম্ভবত মহিলার এমন করার কারণ জানতে চাইছে। চারু চোখের ঈশারায় হামিদকে স্বাভাবিক থাকতে বললো। প্রথমবার বোনের শশুড় বাড়িতে এসেছে, খালি হাতে তো আসা যায় না। হামিদ হাতে করে অনেক কিছুই নিয়ে এসেছে। এসব দেখে নাজমা বেগম বললেন,
– আরে বাবা এইসব আবার আনতে গেলে কেনো? তোমরা যে এসেছো তাতেই আমি খুব খুশি হয়েছি।
চারু নিজের মনের প্রশ্নটা আর চেপে রাখতে পারলোনা। সে জিজ্ঞেস করেই ফেললো কথাটা।
– আন্টি আপনি কিভাবে আমার ভাইকে চিনলেন?
– ও-ই তো বললো ওর নাম হামিদ। আর সাজিদ বলেছিলো তোমার ভাইয়ের নাম হামিদ আর তাছাড়া আলাদা করে চেনার কি আছে? তোমাদের দুজনকে দেখে যেকেউই বলে দেবে তোমরা ভাই-বোন।
নাজমা বেগমের স্বাভাবিক উত্তর তবে স্বাভাবিক হতে পারেনা চারু৷ সাজিদ ওর মা-কে ঠিক কি বলেছিলো? সে তো বলেছিলো এই দুনিয়ায় চারুর কেউ নেই তবে এখন নাজমা বেগম কি বলছেন?
চারু হামিদ আর ফাতেমাকে ওখানে রেখেই ঘরের দিকে ছুটলো। হামিদ দুরের কেউ নয় যে তার সাথে ফর্মালিটি দেখাতে হবে তবে উত্তর জানাটা বিশেষ প্রয়োজন।
– সাজিদ!
– হুম।
– আপনি আন্টিকে কি বলেছিলেন আমার সম্পর্কে?
– কি বলেছি?
– সেটাই জিজ্ঞেস করছি সাজিদ। কি বলেছেন? মানে আমার পরিবার সম্পর্কে?
– বলেছি আপনার পরিবারের সবাই খুন হয়েছে শুধু আপনি একাই বেঁচে আছেন। আপনার আর কেউ নয়। তবে হ্যাঁ, একটা গণ্ডগোল করে ফেলেছিলাম পরে।
– কি?
( গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া)
– কথায় কথায় হামিদের কথা বলে ফেলেছি। পরে বলেছি যে হামিদ প্রবাসী। দেশে আসবে আরো তিন-চার বছর পর। কেনো কিছু হয়েছে? মা কি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে?
– আমার ভাই আর ভাবী এসেছে। তাদের সাথে কথা বলছেন আন্টি।
– ওহ শিট! মা কি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে এ সম্পর্কে?
– না।
– ভাগ্যিস হামিদের কথা বলেছিলাম। নইলে কি হতো ভাবতে পারছেন বেলিফুল? কাজিন বলেও চালানো যেতো না। আপনাদের দুজনকে দেখলে যেকেউই বুঝতে পারবে আপনাদের সম্পর্কে। অন্যদিকে আমি আমার মায়ের কাছে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হতাম। শুনুন বেলিফুল, মা কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবেন, বাবা-মায়ের মৃ*ত্যুর সংবাদ পেয়ে হামিদ আগে চলে এসেছে। বুঝতে পেরেছেন?
– তার আর দরকার হবে বলে মনে হয়না। আন্টির হাবভাবে মনে হয়না তিনি এমন কিছু জিজ্ঞেস করবে।
– না করলেই ভালো। চলুন তাড়াতাড়ি নীচে যাওয়া যাক। হামিদ উল্টাপাল্টা কিছু বললেই সর্ব*নাশ!
সাজিদের কথায় চারু কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও নাজমা বেগমের উপর থেকে সম্পূর্ণ সন্দেহ কেটে গেলো না তার। এই মহিলাকে ঠিক বিশ্বাসযোগ্য লাগছেনা। নাজমা বেগম হামিদ আর ফাতেমার জন্য কিছু রান্নাবান্না করলেন। দুপুরে খেয়ে যেতেই হবে। তবে এক্সটা দ্বিতীয়বার রান্না করায় ওনাকে বিরক্ত হতে দেখা গেলো না। চারুকে বললো তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে। অনেকদিন পর ভাই, ভাবি আর ভাতিজির সাথে দেখা হলো। চারু দ্বিমত করেনি।
– চারু তুমি তো খুব ভালা একখান শাশুড়ী পাইছো। কি ভালোবাসে তোমারে। আজকাল এমন শাশুড়ী পাওয়া যায় নাকি?
– সেটাই তো সমস্যা ভাবি।
– সমস্যা মানে?
– না কিছুনা।
– তুমি এত কথা কইতাছো ক্যান? মাইয়ার খিদা পাইছে যাও ওরে খাওয়াও।
অনেকগুলো ঘর আছে, চারু ফাতেমাকে গেষ্ট রুমে নিয়ে গেলো। ফাতেমা নাহয় লতাকে খাওয়াক। হামিদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
– কেমন আছস চারু?
– এখনো অবধি ভালোই।
– সাজিদ কেমন?
– আগের মতোই লাগছে এখনো অবধি তবে নাজমা বেগম!
– ওই মহিলারে আমারও সুবিধার লাগলো না। কথায় আছে না অতিভক্তি চোরের লক্ষণ, ওই টাইপের কিছুটা।
– কিছুটা না, অনেকটাই।
– আমি তো মনে কর ভয় পাইয়া গেছিলাম। মহিলা এমন করে ক্যান?
– কিছু একটা ঠিক নেই বুঝলে।
– বুঝতাছি। তোর কি মনে হয় মহিলা বসের লগে কানেক্টেড?
– সম্ভবত হ্যাঁ। কিংবা না।
– মহিলা কানেক্টেড হলে কি সাজিদ হবেনা?
– জানিনা। হতেও পারে।
– একটা জিনিস খেয়াল করছস?
– কি?
– আমরা বসের এতগুলা বিশ্বস্ত মানুষ মারলাম কিন্তু বসের কোনো হেলদোল নাই। ক্যান?
– খেয়াল করেছি তবে বুঝতে পারছিনা। হয়তো সে আরো বড় কোনো ষড়যন্ত্র করছে।
– এহন কি করবি?
– এই পরিবারটাকে অবজারভেশনে রাখবো। আমি নিশ্চিত এখানে কিছু একটা ঘাপলা আছেই।
এমন সময়েই দরজায় নক হলো। দরজা বন্ধ ছিলো না। কেউ ভদ্রতার খাতিরে নক করেছে। নিশ্চয়ই সাজিদ। চারু ভিতরে আসতে বললো। সন্দেহ ঠিকই ছিলো, আসলেই সাজিদ।
– কেমন আছো হামিদ?
– ভালোই আছি। আপনে কেমন আছেন?
– আমিও ভালো।
– একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।
– হ্যাঁ করো না।
– কেসটা কতদূর আগালো?
– আর সামনে যাবে! তোমরা তো বসের কাছে পৌছানোর কোনো উপায়ই রাখো নি। সবারই মোটামুটি ইন্না-লিল্লাহ হয়ে গেছে।
সাজিদের কথার ধরণে হেসে উঠলো হামিদ। সাজিদ একটু মুচকি হাসলো,
– আচ্ছা বেলিফুল, আপনি নাজিমুদ্দিনকে কিভাবে খু*ন করেছিলেন?
– এইটা আমি কম হলেও দশবার বলেছি আপনাকে।
– কিন্তু এই দশবার আপনি প্রতিবারই আমাকে নতুন কিছু না কিছু তথ্য দিয়েছেন। আবার একবার বলুন। আমি একটা ক্লু ও ছাড়তে চাই না।
#শুভ্রা_আহমেদ_প্রিয়া
➡️বিঃদ্রঃ এইযে শিহাব ভক্তরা এখানে আসুন। আপনারা তো দেখছি সবাই শিহাবের বিরহে শিহাবের থেকেও বেশি পাগল হয়ে গেছেন।🙄 আরে ভাই এইটা রোমান্টিকের চেয়েও বেশি থ্রিলার। আমি শিহাবের সাথে বিয়ে করাতেই পারতাম কিন্তু তাতে কাহিনী গুলো এক সুতায় বাধতে পারতাম না। তখন গল্পতে জগাখিচুরি হয়ে যেতো৷ দয়া করে গল্পটা আমাকে আমার মতো সাজাতে দিন। কেউ ইন্সট্রাকশন দেবেন না কি করবো।🙂 আমি যদি আপনাদের মন মতো দিতে যাই গল্পের সৌন্দর্য হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। রহস্যও ভেদ হবেনা। আমাকে আমার মতো লিখার স্বাধীনতা দেওয়ার অনুরোধ রইলো। 💗
➡️২য় বিঃদ্রঃ মোবাইলে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। ডাটা ব্যাবহার করে এফবিতে ঢুকতে পারছি না। দুইদিন যাবত আব্বুর মোবাইল থেকে হটস্পট ভিক্ষা করে চালাচ্ছি। গল্পটাও এভাবে দিলাম। পর্বটা তেমন গোছাতেও পারলাম না। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং!💗
_______________________
To Be Continued…