আমার প্রিয় তুমি পর্ব-১৭

0
1634

#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৭

৩৩.

হসপিটালের সব ফর্মালিটিস পূরন করে তানভি তাহুকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । তানভি এক মিনিটের জন্য তাহুকে একা ছারে নি ভয়ে কারণ রাকিবকে ধরতে পারে নাই। ধরার আগেই পালিয়ে যায় রাকিব । এখন পলাতক আছে তাই তানভি আর রিক্স নিতে চায় না যদি আবার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে । এ কারনে সর্বক্ষন তাহুর পাশে বসে ছিলো।

তাহুর হুস আসার পর কিছু সময় পাগলের মতো আচারণ করে । চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় আর বলতে থাকে আমাকে ছেরে দেন আমি বাসায় যাবো। আব্বু বাঁচাও আমাকে নিয়ে যাও। তানভি পাশেই বসা ছিলো তাহুর অবস্থা দেখে দ্রুত কাছে গিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে ।

‘হেই কামডাউন জান কিছু হয় নাই ,লুক এট মি।দেখ তুমি সেফ আছো বলতে বলতে তাহুকে জোর করে জরিয়ে ধরে। কিন্তু তাহু হাত পা ছুড়তে থাকে।তানভি শক্ত করে ধরে বল -হুসসসস সব ঠিক আছে দেখো। তাকাও দেখো আমি তানভি।

তানভির নামটা শুনে চোখ মেলে তাকায় ……পরক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ে তানভির বুকে আর কান্না করতে থাকে কিছুক্ষন বাদে হুস আসে এবং চোখ খোলে নিজের অবস্থান দেখে আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়।’ নিজেকে তানভির বাহুবন্ধনে থেকে ছাড়িয়ে কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠে বাবা কোথায়,বাবা ঠিক আছে তো? উত্তরে তানভি কিছুই বলে না।
…..

অনেকক্ষণ বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে উঠেছে বাবা কোন হসপিটালে আছে ,আমি যাবো বাবার কাছে।
কিন্তু তানভি চুপ ।
গাড়ির সামনে এসে বলে গাড়িতে উঠো বলছি । তাহু নিরবে গাড়িতে উঠে যায়। তানভি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।
অধীর আগ্রহে তানভির দিকে তাকিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে উঠে আপনার সমস্যাটা কি বলছেন না কেন বাবা কোথায় , না বললে কিন্তু আমি গাড়ি থেকে নেমে যাবো।

কথাটা শুনে তানভিরের রাগ উঠে কিন্তু ও যানে এখন রাগারাগী করার সময় নয় । আর যদি এখনই জানতে পারে বাবা বেঁচে নেই তাহলে হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

তাই খুব ধীরেসুস্থে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ‘ সবাই বাসায় আছে বাসায় গেলেই দেখতে পারবে।’
কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেলো সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইলো। রাস্তা যেনো শেষ হচ্ছে না কখন যাবে বাসায়।

৩৪.

রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষ এক সাথে জড় হয়ে আছে । সে দিকে খেয়াল করে বলে বাসায় এতো মানুষ কেন কি হইছে বলে তানভির দিকে তাকায় তানভি কিছু না বলে গাড়ি থামিয়ে দেয়।
নিজের আর তাহুর সিট বেল্ট খুলে ওর দিকে ঘুরে বসে । এবং হাত ধরে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।

তাহু বিরক্ত হয় এমন করছে কেন লোকটা কিছু বলছেও না যেতেও দিচ্ছে না।
তবুও জিগ্যেস করলো কি… কিছু বলবেন ।

তাহু দেখো জন্ম-মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে । এই পৃথিবীতে কেউ চিরদিনের জন্য আসে নাই সবাই চলে যাবে হয়তো কেউ আগে আর কেউ পরে। কিন্তু যাবে সবাই।

বিরক্তিতে তাহুর কপালে ভাঁজ পড়ে।
আপনি এসব কি বলছেন আমি কিছু বুঝতে পারতেছি না । গাড়ি থেকে নামেন বাসায় চলেন। বলে গাড়ির দরজা খুলতে নেয়।

তাহু তোমার বাবা আর নেই।
কথাটা শুনে তাহু চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
আপনি মিথ্যা বলছেন তাইনা। বলতে বলতে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তানভিও নেমে গেলো ওর সাথে। অনেকটা দূরুত্ব রেখে পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো।

ধীরে ধীরে পা ফেলছে তাহুর মনে হচ্ছে পায়ের সাথে কেউ কেজি দশেক ইটা বেঁধে রেখেছে। গেটে পা রাখতেই কাছের মসজিদ থেকে ভেসে এলো –
“একটি শোক সংবাদ ,একটি শোক সংবাদ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব নাসিম উদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন ।”

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো ।
পাশ থেকে এও শোনতে পেলো আইছে মুখ পুড়ি সারা রাত ভইরা ফস্টিনস্টি কইরা এহন আইছে চেহারা দেখাইতে। মুখ পুড়ি বাপটারে খাইয়া দিলো কত ভালা আছিলো বাপটা।

পাশে ঘার ঘুরিয়ে দেখলো তাহু।ওর মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না । মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে কেউ কলিজাটা কেটে টুকরো টুকরো করছে । ওর জন্য বাবা মারা গেছে । দূরে দেখে ভাই মাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে তারাও কি এই ভাবছে ।

বাবার লাশের কাছে হাত-পা ছেরে বসে পরে ।
“বাবা আমি কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি। বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নাই বাবা। ওরা সবাই বলতেছে আমি খারাপ আমি নাকি রাকিবের সাথে…….বাবা তুমি তো জানো তোমার মেয়ে কেমন । সবাইকে বলে দেও তোমার মেয়ে কিছু করে নাই উঠো বাবা।
ও…..বাবা উঠো তুমি বলে চিৎকার দিয়ে উঠে তাহু।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here