#আমার_প্রিয়_তুমি
#মেহজাবিন_তানিয়া
পর্ব-১৯
৩৭.
তানভি সম্পূর্ণ মনোযোগ গাড়ি চালানোতে দিয়ে রেখেছে আর তার পাশে বসে সেই কখন থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে তার সদ্য বিয়ে করা বউ তাহু ।
নিরবতা ভেঙ্গে তানভি বলে উঠলো তাহু আর কত কাঁদবা এবার তো থামো মাথা ব্যথা করবে তো।
কিন্তু তাহু তো তাহুই নিচের দিকে তাকিয়ে এক মনে কান্না করে যাচ্ছে ।
ওকে যত কান্না করার আজ করে নেও আজকের পর থেকে আর কখনো যেনো কান্ন করতে না দেখি।
কথাটা শুনে একবার চোখ তুলে তাকালো ঠিক কিন্তু কান্নার থামার কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না আবার নিচে দিকে তাকিয়ে কম শব্দ করে ফুঁপাতে লাগলো।
ওর জিবনটা কেমন হয়ে গেলো কেমন হবার কথা ছিলো আর কেমন হয়ে গেলো ।
মানুষ যে কতো নিষ্ঠুর হতে পারে তা তাহুর ছোট্ট মন ভালো ভাবে বুঝে গেছে । মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জীবনটা কোথা থেকে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ।
জীবনের প্রথম পুরুষ নিজ আইডল বাবাকে হারিয়ে ফেলছে । কোথাও না কোথাও তাহু মনে করে ওর জন্যই বাবা আজ পাশে নেই । এখন মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলার পাল্লাটা বেশি ভারী হয়ে গেছে ওর জীবনে।
__________________
তানভি যখন চেয়ারম্যানের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতেছিলো তখন হঠাৎ করেই তাহু মাথা ঘুরে নিচে পরে যাবে ঠিক সে সময় তানভি তাহুকে জড়িয়ে ধরে। আর গ্ৰামে মানুষ তা দেখে আরো হইচই শুরু করে দেয় অনেকে মুখের ভাষার বাঁধ ভেঙে যায় ।
তাহুর দাদি,মা আর ভাই চলে আসলে বাসায় এতো মানুষ আর হৈচৈ দেখে প্রথমে তারা ভয় পেয়ে যায় । মেঘ ভীর ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে তানভি তাহুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এবং তা নিয়ে পাশের মানুষ গুলো বাজে মন্তব্য করছে ।
মেঘ তাহুকে তানভির কাছে থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে তানভি তাহুকে ছারে না বরং সবাইকে জোরে এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় অনেক হয়েছে এদের আজেবাজে কথা বলা এবার আর সহ্য করা যাচ্ছে না এদের কে উচিত জবাব দিতে হবে । তাই মেঘকেও বলে ভাইয়া আপনার কাছে রিকোয়েস্ট তাহু আর আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন । এখন এই মুহূর্তে এই অবস্থায় আমি তাহুকে বিয়ে করতে চাই ।
উপস্থিত থাকা সবাই খুব অবাক হয়ে যায় তানভিরের এই কথায় শুনে । সবাই কানাঘুষা শুরু করে । ব্যপারটা কেউ ভালো চোখে তো কেউ খারাপ চোখে নিচ্ছে । কিন্তু চেয়ারম্যান যখন দেখলো তার প্লানিং ফেল হয়ে যাচ্ছে তখন সে কথার মোর অন্য দিকে নিয়ে যায়। আজিজ হাওলাদারের কানে কানে বলতে শুরু করেন।
হাওলাদার সাহেব দেখেন আপনার নাতি এই নষ্টা মাইয়ারে বিয়া করবার চাইতাছে যদি এই মাইয়ারে বিয়া করে তাইলে আপনেগো মানসম্মান থাকবো মানষে না আপনাগো থুথু দিবো চিন্তা কইরা দেখেন হাওলাদার সাহেব।
দেখো বড় হিসেবে তোমারে একটা পরামর্শ দেই চেয়ারম্যান শুনো -তোমার ঐ চেয়ারম্যান গিরির চেয়ার সামলাও পরবর্তীতে তোমার এই চেয়ার থাকে কি না সেটাও তো চিন্তা করার বিষয় তুমি আমার নাতির সাথে পাঙ্গা নিছো তোমারে এমনে এমনেই ছাইড়া দিবো ভাবছো আর আমার পরিবার সামলানোর জন্য এখনো আমি বিদ্যমান আছি , তোমার চিন্তা তুমি কর।
চেয়ারম্যান যখন কোনো দিকে সুবিধা করতে পারলো না তখন আস্তে করে কেটে পড়ে সেখান থেকে।
এদিকে হাওলাদার সাহেব আসার সময় তানভিরের সম্পর্কে সব খুলে বলে মেঘকে।
তাই মেঘেরও কোনো আপত্তি নেই। সব দিক বিবেচনা করে মেঘ বিয়ের আয়োজনে লেগে পরে।
৩৮.
তানভি তার বউকে নিয়ে তাদের ঢাকার বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । আর হাওলাদার সাহেব তানভির মাকে বুঝিয়ে যাচ্ছেন সেই আসছে পর থেকে।
তিনি তানভি আর তাহুর আগেই ঢাকা চলে আসেন যাতে তাহুর বেপারে কোনো খারাপ ধারনা না আসে তাদের মনে। তাছাড়া মেয়েটা আজ বাবাকে হারিয়েছে তাই ছেলেকে ভালো করে বলতে আসছে যে এক বাবা হায়িছে তো কি হয়েছে তার আরেক বাবা তো আছে ।
সে যেনো বাবা আদর থেকে বঞ্ছিত না হয়।
হাওলাদার সাহেব বাসার সবাইকে বুঝিয়ে ফেলছে ঠিকই কিন্তু একমাত্র ছেলের বউকে ঠিক মতো এখনো বুঝাতে পারলো না । তার একই কথা ছেলে কেন আগে বললো না তাকে যে এই মেয়েকে তার পছন্দ তাহলে তো আর এভাবে বিয়ে করা লাগতো না । ছেলের বিয়ে নিয়ে কতো শখ-আল্লাদ ছিলো তার সব নষ্ট করে দিলো এই ছেলে ।
তানভি সদর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে জোরে বলে উঠলো ‘কারো আমার বউকে ভালো না লাগে বলুক আমি এখনই চলে যাবো আমার বউকে নিয়ে।’ শুধু শুধু এতো কথা খরচ করার কোনো মানে হয় না।
কথাটা শুনে তানভির মা বলে উঠলো দেখেছেন বাবা দেখেছেন বিয়ে করতে না করতেই আলাদা হয়ে যাবার কথা বলছে । তাহলে বুঝেন সামনে আর কি কি করবে এই ছেলে । বলি কি বিয়ে করে যদি মা-বাবাকে এখন আর ভালো না লাগে তাহলে এখানে আসার দরকার কি ছিলো ,বউ নিয়ে অন্য কোথাও থেকে যেতো।
তানভি বুঝতে পারলো মা কষ্ট পেয়েছে তাই ইমোশনালি ভাবে বলতে লাগলো মা তুমি কি আসবা অনেকক্ষন ধরে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি পা ব্যথা করছে আর তুমি যদি বলো একবার চলে যাই তাহলে কিন্তু কান্না করতে করতে সাগর বানিয়ে ফেললেও আসবো না । তখন কিন্তু বলতে পারবে না আমি জানাই নাই তোমাকে। তানভি জানে তার মা এখনই দৌড়ে আসবে বরন করার জন্য।
সাবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মা- ছেলের আদর মাখা ঝগরা দেখতে লাগলো । সবাই জানে আর যাই হোক ছেলে বিচ্ছেদ কখনো সহ্য করবে না তানভিরের মা ।
ঠিক আছে ঠিক আছে বরন করে নিচ্ছি মানে এই না যে আমার রাগ কমে গেছে আর আমি সব মেনে নিছি।
সবাই তানভির মার কাহিনী দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে । তানভি নিজেও মার কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে।
তাহু তো ভেবেই নিয়েছিলো এই বাড়িতে ওর জায়গা হবে না আর ওর জন্য তানভিও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাবে।
চলবে………….
কেউ ছোট বলে লজ্জা দিবেন না । দু’দিন যাবত অনেক ব্যস্ত আজ তিন দিন ধরে একটু একটু করে লিখে এই পর্যন্ত আসছি। রিভিশন দেওয়ার টাইম পাই নাই ।ভুল গুলো ক্ষমাশূর্ন দৃষ্টিতে দেখবেন।
ও,,,হে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
♥️♥️♥️♥️♥️