সেই তো এলে তুমি পর্ব_৮

0
1127

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz

কপালে চিন্তার ভাজ নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে তায়শা। আজকের দিনটা তার জন্য খুব বেশি স্পেশাল। কতকিছু ভেবে রেখেছিল সে আজকের দিন নিয়ে! অথচ এখন বুশরার জন্য নিজের স্পেশাল দিনটাকেও তুচ্ছ মনে হচ্ছে। মেয়েটা গেল কোথায়? ঠিক আছে তো?
.
-রাজি থাকিলে মা কবুল বলুন?
.
কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে। আশিক বলেছে বিয়ের পরে বুশরাকে খুঁজতে সে সাহায্য করবে৷ আপাতত বিয়েটা সেরে নেওয়া যাক। এই ভেবে সে কবুল বলতে যাবে ঠিক তখনি কেউ উচ্চশব্দে বলে উঠলো, থামুন!
.
তায়শা সহ উপস্থিত সকলে চমকে যায়। একটি ছেলের পাশে বুশরা দাঁড়িয়ে আছে৷ তাকে দেখে তায়শা ও নাফিশা খুশি হলেও বাকি সবাই আশ্চর্যভাবে তাকিয়ে থাকে। তবে তায়শা নিখিলকে দেখে বেশ অবাক হয়। বুশরার সাথে নিখিল কী করছে? সে স্টেজ থেকে নামতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেয় আলিয়া খাতুন। তিনি বুশরার সামনে গিয়ে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় তার গালে। বুশরা চোখ বন্ধ করে নেয়। আলিয়া খাতুন গজগজ করতে করতে বললেন, গেলি যখন ফিরে এলি কেনো? আর এসেছিস যখন এই সময়েই এলি কেনো? আর কতভাবে অপমান করবি আমাদের?
.
বুশরা তার ফুফুর হাত ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, আমি কোথাও যাইনি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
.
এইবার কিছুটা হলেও ঘটনা বুঝতে পারে তায়শা। তার বুকটা ধক করে উঠে। তায়শার উপর প্রতিশোধ নিতে কী বুশরাকে নিয়ে গেছে নিখিল?
.
আলিয়া খাতুন বললেন, নিয়ে গেছে? কে নিয়ে গেছে?
.
বুশরা আশেপাশে তাকিয়ে সত্যটা বলতে চেয়েও বললো না। কারণ এখানে তায়শার শশুরবাড়ির লোকেরাও আছে। তাই সে বলল, আমি তোমাকে সব বলব। একবার তায়শার বিয়েটা হয়ে যেতে দাও।
.
আত্নীয়স্বজন সহ পাড়া প্রতিবেশিরা বলাবলি করতে থাকে, ও বুশরা? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? না মানে ঠিক আছিস তো তুই? না-কি কেউ সর্বনাশ করে দিছে?
.
আবার কেউ কেউ বলছে- ও নিজেই চলে গেছিলো। নিশ্চয় সুবিধা করতে পারেনি তাই চলে এসেছে।
.
এদের সাথে তাল মিলিয়ে এসব বলে যাচ্ছে নওয়াজের মা। এতে করে বুশরা অনেক কষ্ট পায়। কারণ তিনি একটু পরে নওয়াজের কান ভারী করবে।
নওয়াজ তাকে পছন্দ করে এটা তিনি বুঝেন। তাই তিনি বুশরাকে পছন্দ করেন না। হয়তো বুশরা ফুফুর আশ্রয়ে থাকে বলে!
.
সবার কথা শুনে আলিয়া খাতুন দু’কান চেপে ধরে বললেন, এইজন্যই তোকে আমি লালন পালন করেছি? এইভাবে আমার মান সম্মান নিয়ে খেলা করার জন্য?
.
এইবার মুখ খুললো নিখিল, মান সম্মান উনি নয় আপনার আরেক মেয়ে নষ্ট করেছে। আর ওর জন্যই উনারও এই হাল হয়েছে।
.
এইবার সবাই বিস্ময় এর চোখে নিখিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে তায়শা ভয়ে কাঁপতে থাকে। বুশরা নিখিলকে থামিয়ে বলল, আপনি প্লিজ যান এইখান থেকে৷ আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
.
আলিয়া খাতুন চেঁচিয়ে বললেন, সাথে একেও নিয়ে যাও। এই মেয়েকে আমি আর রাখতে পারব না।
.
নিখিল হাসে। সে এগিয়ে যায় তায়শার দিকে। আলিয়া খাতুন তার পিছু নিয়ে বলল, ওদিকে কই যাও?
-দোষী কে দেখিয়ে দিতে।
-মানে?
.
তায়শার দিকে আঙুল দেখিয়ে নিখিল বলল, আসল দোষী হলো তায়শা। দিনের পর দিন আমাকে আশা দিয়ে এখন সে অন্য কারো সাথে বিয়ের আসরে বসেছে। আর আমি ওর জন্য পাগল হয়ে ছিলাম বলে আমার ভাই ওকে তুলে আনতে যায়। কিন্তু নিয়ে আসে বুশরাকে। কারণ ভাইয়া চিনতে পারেনি তায়শাকে।
.
সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। তায়শা আমতাআমতা করে বলল, কিসব বলছেন? আমি আপনাকে চিনিই না। আজই প্রথম দেখলাম।
.
বুশরা বলল, প্লিজ আপনি যান এখান থেকে!
.
বুশরা তাকে টেনে বের করতে চাইলে আশিকের মা নিখিলের হাত ধরে ফেললেন। তিনি সবটা জানতে চাইলেন। স্টেজ থেকে নেমে আসলো আশিকও। নিখিল সব প্রমাণসহ দেখায় তাদের। সবটা দেখে আশিক বুঝতে পারলো, কেনো সে তায়শার ফোন ওয়েটিং পেত। আর কেনোই বা হঠাৎ তায়শার কাছে সে ছিল অবহেলিত। আশিকের মা চেঁচিয়ে আলিয়া খাতুনকে বললেন, নিজের ঘরের মেয়েই ঠিক নেই অন্যকে শুধু দোষারোপ করো! এমন চরিত্রহীন মেয়ে আমার ঘরের বউ করব না। যে কি না বিয়ে ঠিক থাকার পরেও অন্য কারো সাথে ঘুরাফিরা করে!
.
বুশরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তায়শার দিকে। তার মানে এতসব দামি দামি উপহার সবই ছিল নিখিলের দেওয়া! আর তায়শা ওসব আশিক দিয়েছে বলে চালিয়ে দিতো।
আলিয়া খাতুনও সবটা বুঝতে পারেন। তারপরেও তিনি বললেন, এসব চক্রান্ত। বুশরা ও এই ছেলেটা মিলে এসব করেছে। কারণ বুশরা আমাদের ভালো চায় না।
.
ওদিকে তায়শা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কী থেকে কী হয়ে গেল! সে তো আশিককেই বিয়ে করতে চায়। সামান্য লোভের জন্য তার আজ এই পরিণতি।
আলিয়া খাতুনকে আর কোনো কথা বলতে দিলেন না আশিকের মা। আশিকও বলল, বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও যে মেয়ে পরপুরুষের সাথে সম্পর্ক রাখে সে বিয়ের পরেও আমাকে ঠকাবে না এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
.
এই বলে একবার তায়শার দিকে তাকালো সে। তায়শা ধপাশ করে বসে পড়ে মেঝেতে। আর আশিক চোখের কোণে আসা পানি মুছে বেরিয়ে যায় বিয়ে বাড়ি থেকে। তার পিছু নেয় সমস্ত বরযাত্রী।
.
.
বুশরা ছুটে যায় তায়শার পাশে। তায়শাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কেনো এমনটা করলি? নিজের হাতে সবটা শেষ করলি তুই। কী পেলি এমন করে?
.
নাফিশাও বলল, এতদিন আমরা ভাবতাম ওসব দামি উপহার আশিক ভাইয়া দিয়েছে। এখন শুনছি অন্য ঘটনা। এমনটা না করলেও পারতি আপু তুই।
.
তায়শা নীরবে কেঁদে চলেছে। এদিকে আলিয়া খাতুনকে অনেকে কথা শোনাচ্ছে। একজন তো বলেই ফেললো, ভাই এর মেয়েকে সবসময় কীভাবে ছোটো করবে সেটা ভাবতে থাকে। নিজের মেয়েই ঠিক নাই। আগে নিজের মেয়েকে ঠিক করো।
.
আলিয়া খাতুন চেঁচামেচি করে সবাইকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর আচমকা স্টেজে উঠে বুশরাকে টানতে টানতে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। বুশরা বলল, ফুফু আম্মা আমি কী করেছি?
-তুই সব নষ্টের মূল। তুই চাইলেই বিয়েটা আটকাতে পারতি।
-মানে?
-মানে নিখিলের বলা কথা শুনে তো বোঝাই যাচ্ছে। তায়শা নয় তুই অন্যরুমে ছিলিস এটা সে জানতো না। পারতি না তুই বাহানা না করে নিখিলকে বিয়েটা করে নিতে বা আরও কিছু সময় ব্যয় করতে। ওতক্ষণে তায়শার বিয়েটা হয়ে যেত।
-আমি কীভাবে সময় ব্যয় করতাম? আর আমি ওভাবে কাউকে কী করে বিয়ে করে নেব? তাদের আমি চিনি?
-বোনকে ভালোবাসলে ওতটুকু তুই করতেই পারতি।
.
বুশরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি তায়শাকে বললেন, বলেছিলাম না? ওর জন্য তোর সর্বনাশ হবে। হলো তো?
.
তায়শা ছুটে ঘরে চলে যায়। আর আলিয়া খাতুনকে বুশরা ছাদ থেকে নামিয়ে সোজা গেইটের ধারে নিয়ে আসে। এরপর তাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। আলিয়া খাতুন বললেন, তুই আমার মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারলি না তো। আমিও আর কিছু করব না তোর জন্য। আমাদের সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ। তোর বাপও জানবে তুই মরেই গেছিস।
.
এই বলে বুশরার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। বুশরাও আর কিছু বলল না। তার ভীষণ রাগ হয়। কোনো অপরাধ না করেও সে অপরাধী। সবটা জেনেও তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেও আর এই ঘরে আসতে চায়না।
বুশরা চোখের পানি মুছে হাঁটতে থাকে। গন্তব্য কোথায় তার জানা নেই। শুধু জানে সে আর ফিরবে না এই বাড়িতে।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here