সেই তো এলে তুমি পর্ব_৭

0
1072

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz

জ্ঞান ফিরে আসতেই নিজেকে একটি অফিস রুমে আবিষ্কার করলো বুশরা। সোফার উপরে শুয়ে আছে সে৷ আস্তেধীরে উঠে বসে চারপাশটা দেখে বুকটা ধক করে উঠলো তার। অফিস রুমটা এমনভাবে সাজিয়ে রেখেছে যেন কোনো বিয়ের আসর!
সে দাঁড়িয়ে পড়ে। অস্থির হয়ে এদিক ওদিক হাঁটতে থাকে। দরজা বন্ধ থাকায় সে বেরুতে পারছে না। এ কোথায় চলে এল সে! কেনোই বা ওই মধ্যবয়স্ক লোকটি তার সাথে এমন করলো? সবকিছুই তার কাছে ঝাপসা এবং অস্পষ্ট। সে চিৎকার করতে যাবে তখনি একটি টেলিফোন দেখতে পায়। ছুটে যায় সেদিকে। কিন্তু আফসোস! টেলিফোনটিরও লাইন কাটা। তাই সে বাধ্য হয়ে চিৎকার দিয়ে বলল, কেউ কি আছেন? আমায় কেনো নিয়ে এসেছেন?
.
নিখিল সবেমাত্র এসেছে। তায়শাকে বউ সাজে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে সে। যেতেও চেয়েছিল তায়শার কাছে। কিন্তু নিহির বলল, কাজি বিয়ে পড়ানোর পর ওর সামনে যাবি তুই। কেননা ও তোকে দেখলে চেঁচামেচি করবে, ঝগড়া করবে। এতে সময় নষ্ট হবে। এখন আমি ভয় দেখিয়ে কবুল বলিয়ে নেব। দু’জন দুই রুম থেকে কবুল বলা শেষ করে এরপরেই মুখোমুখি হবি।
.
নিহিরের কথাতে রাজি হয় নিখিল।
নিহির কাজি সাহেব ও খালেকুজ্জামান কে নিয়ে আসে বুশরার কাছে। দরজা খুলতেই নিহির কে দেখে চমকে যায় বুশরা। সে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি?
-হুম। কী ভেবেছিলে? আমার ভাইকে ঠকিয়ে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে?
.
এতক্ষণে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় বুশরার কাছে। তার মানে তায়শা কে শাস্তি দেওয়ার জন্য তায়শা ভেবে তাকে তুলে আনা হয়েছে?
সে রেগেমেগে বলল, কেমন মানুষ আপনারা? একটা মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার বিয়ের দিন তাকে তুলে আনেন?
-শাস্তির কি দেখেছ এখনো? চুপচাপ বসে নিখিলকে বিয়েটা করে নাও। নাহয় তোমার পুরো ফ্যামিলির সুখ শান্তি কীভাবে উধাও করতে হয় আমার জানা আছে।
.
এইবার আরও বেশি চমকে যায় বুশরা। এসব কী হচ্ছে তার সাথে! এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে জোর গলায় বলল, বিয়ে মানে? কিসের বিয়ে?
-নিখিল কে বিয়ে।
-নিখিল কে আমি কেনো বিয়ে করব?
-তোমাকেই করতে হবে তায়শা।
-কিন্তু আমি তায়শা নই! আমি বুশরা।
.
একথা শুনে নিহির ও খালেকুজ্জামান একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর নিহির উচ্চশব্দে হেসে উঠে বলল, বিয়ে থেকে বাঁচতে এইবার নিজের পরিচয়ও গোপন করছ? এত নাটক করতে পারো তুমি।
.
এইবার কেঁদে ফেলে বুশরা। সে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, সত্যি আমি তায়শা নই। ওর বড়ো বোন বুশরা।
-আচ্ছা! বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
-হচ্ছে। কারণ ও সবকিছুতে আমার চেয়ে এগিয়ে।
.
নিহির ধমকের সুরে বলল, চুপ করে বিয়েটা করে নাও। নাহলে কী হবে দেখবে?
-কী?
.
নিহির তার দিকে একটা ভিডিও এগিয়ে দেয়। ওখানে দেখা যায় আলিয়া খাতুনকে। যিনি অনেক খুশি তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে। সবাই কত খুশি! তায়শা এখনো আসেনি হয়তো। সে তো আরও বেশি খুশি আশিককে পেতে চলেছে বলে। আজ বুশরার জায়গায় তায়শা এলে তার সবখুশি মাটিতে মিশে যেত।
নিহির বলল, আমার লোক আছে ওখানে। তুমি যদি রাজি না হও তবে ওটা আর বিয়ের আসর নয়, বোমার আসর হয়ে যাবে।
.
বুশরা কাঁপা কণ্ঠে বলল, বোমা?
-হু। তুমি কী নিজের সুন্দর বাড়িটাকে লাশঘর হিসেবে দেখতে চাও?
.
থমকে যায় বুশরা। সে নিশ্চুপ হয়ে মেঝেতে ধপাস করে বসে পড়ে। একদিকে তার পরিবার ও তায়শার খুশি, অন্যদিকে তার খুশি! নওয়াজকে সে ভীষণ ভালোবাসে। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে কখনো ভাবেনি সে। এই লোকটি মানতেও রাজি না সে তায়শা নয়। এখন কি করতে পারে সে!
-কী হলো?
.
নওয়াজের কথা ভেবে বুশরা ক্ষীণস্বরে বলল, একবার কী নিখিল কে ডাকা যায় না? ও নাহয় বিয়েটা করতে চায় কী না দেখুন?
.
একথা টি নিহিরের মনে কোনো প্রভাব না ফেললেও খালেকুজ্জামানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। কেনো যেন তার মেয়েটিকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তিনি ধীরপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিখিলের কাছে আসে। তাকে সবটা জানায়। নিখিল ছুটে যায় সেখানে। এসে দেখলো কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করেছে। আর একটি মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলে যাচ্ছে, আমি তায়শা নই। আমি বুশরা!
.
সাথে সাথেই নিখিল চেঁচিয়ে বলল, থামো!
.
নিহির তাকে দেখে বলল, তোকে না বলেছি নিখিল এইখানে আসবি না।
.
নিখিলের নাম শুনে বুশরা দাঁড়িয়ে পড়ে। ছুটে গিয়ে তাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, প্লিজ উনাকে বলুন আমি তায়শা নই!
.
এবার নিহিরও অবাক হয়ে যায়। সে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিখিলের দিকে। নিখিল বুশরাকে শান্তনা দিলে সে নিখিলকে ছেড়ে সামলে নেয় নিজেকে। নিখিল বলল, উনি তায়শা নয়। তাছাড়া আমি উনাকে চিনি না। কিন্তু বুশরা নামে তায়শার কোনো বোন আছে সেটা শুনেছিলাম। তুমি ভাইয়া তাকেই নিয়ে এলে? তায়শা কে আনতে না পারলে আমায় জানাতে। তাই বলে তার বোন কে বিয়ে করব আমি?
.
নিহির তার ভাই এর কাছে এসে বলল, আমি ভেবেছি এই মেয়েটিই তায়শা।
-না ও তায়শা নয়।
-সেদিন যে শপিংমল এ ওকে দেখিয়েছিলি।
-আমি তোমাকে জামার রঙ বলেছিলাম।
.
নিহির বুশরার দিকে তাকাতেই সে বলল, একই রঙের ড্রেস পরেছিলাম আমরা সেদিন।
.
এইবার নিহির নিজের মাথায় হাত দেয়। সেদিন বুশরাকে তায়শা ভেবে সে কতকিছুই না বলল। কই! বুশরা তো সেদিন কোনো প্রতিবাদ করেনি? সে রাগে বুশরাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিখিল তাকে থামিয়ে বলল, প্লিজ ভাইয়া। আর কোনো তামাশা আমি চাইনা তোমার। এইবার যা করব আমিই করব।
-মানে?
.
সে কিছু না বলে বুশরার হাত ধরে চলে যেতে থাকে। নিহির তাকিয়ে থাকে তাদের পথের দিকে। খালেকুজ্জামান বললেন, কী করতে যাচ্ছে নিখিল?
-নিশ্চয় তায়শার বিয়েটা ভাঙতে!
.
.
তায়শা পার্লার থেকে বাড়ি এসেছে অনেকক্ষণই হলো। একে একে অনেকেই তায়শার সাথে ছবি তুলতে এলেও বুশরা আসেনি। নাফিশাকে পাঠালে সেও বুশরা কে খুঁজে পায় না। আলিয়া খাতুন এসে তায়শা কে বললেন, কী ব্যাপার রে? তখন বললি বুশরার সাজ শেষ। সে তো এলো না এখনো। তোরা এসেছিস অনেকক্ষণই তো হলো।
-বুশরা আসেনি মানে?
-আসেনি তো!
.
তায়শা দাঁড়িয়ে পড়ে৷ সে নাফিশাকে চেঁচিয়ে বলল, হা করে কী দেখছিস? সারা বাড়ি খুঁজ। সবাইকে জিজ্ঞাসা কর আপিকে দেখেছে কী না।
.
বুশরা বাড়ি ফেরেনি মুহুর্তের মাঝেই খবরটা বিয়ে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলতে থাকে, নিশ্চয় পালিয়ে গেছে৷ মা বাবার ছায়া মাথার উপরে না থাকলে এমনি হয়।
.
কেউ আবার তার পক্ষ নিয়ে বলছে, যে পরিমাণে আলিয়া তাকে জ্বালাতন করে না পালিয়ে করবে টা কী!
.
বুশরার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার মানে সে পার্লার থেকে বাসায়ই ফেরেনি৷
আলিয়া খাতুন বললেন, আমাদের ছোটো করে সে কার সাথে চলে গেছে কী জানি! হায় হায় হায়! আমি আরও ভালো ঘরে তার বিয়ে দেব ভাবছিলাম।
.
মা কে থামিয়ে ওখানে তায়শাকে কারও খুঁজতে আসা ও কেনো বুশরা নিচে নেমেছিল সবটা খুলে বলে তায়শা। তিনি সবটা শুনেও বললেন, ওসব ওর চালাকিও হতে পারে।
.
তায়শা ও নাফিশা বোনের জন্য কাঁদতে শুরু করলো। এদিকে বরপক্ষও চলে আসে। তারা আসার পথেই খবর পেয়ে যায়, তায়শার বোন পালিয়েছে কারও সাথে!
বরের মা এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আলিয়া খাতুন বললেন, ও কী আমার নিজের মেয়ে? ভাই এর মেয়ে। সে পালালেও আপনাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। আমার মেয়েরা কেমন ওটাই দেখেন। এমন ভালো মেয়ে এলাকায় নেই।
-তাহলে কী বিয়েটা সেরে নেব?
-অবশ্যই। পরের মেয়ের জন্য বিয়ে আটকে থাকবে কেনো?
.
তায়শা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, আপি যায়নি। আপির নিশ্চয় কোনো ক্ষতি হয়েছে। তাকে নিয়ে এসো। নাহয় আমি বিয়ে করব না।
.
আশিক তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, বিয়েটা করে নিই। এরপর সবাই মিলে খুঁজব তাকে।
.
আশিকের পরিবারের জোরাজোরি তে বিয়ে সেরে নিতে রাজি হয় তায়শা।
এদিকে গাড়ি চালিয়ে তাদের বাড়ির দিকেই আসছে নিখিল। তার পাশের সিটে রয়েছে বুশরা। বুশরা নিখিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আপনি সঠিক সময়ে না এলে আজ কী যে হত! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
.
নিখিল কোনো জবাব দেয় না। সে দ্রুত গাড়ি চালায়। তায়শার সাথে বিয়ে না হোক তার। আর কারও সাথে তায়শার বিয়েও সে হতে দেবে না…
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here