সাপলুডুর সমাপ্তিতে- পর্ব-১৫

0
4807

#সাপলুডুর_সমাপ্তিতে
তন্বী ইসলাম

১৫
[অন্তিম পর্ব]

শিহাব এক নজরে আমাকে দেখলো। এরপর চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো
“প্রতিবাদ করতাম, বিয়েটা ভেঙ্গে দিতাম। এটা যদি না পারতাম তবে তোকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম।

শিহাবের কথায় আমি হাসলাম। সে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকালো। বললো
“হাসার মতো কি এমন বললাম আমি?
“আমাকে নিয়ে এতটা দূর অব্দি ভেবেছিস সেটা ভেবেই হাসলাম। সে যাইহোক, এতটা রাস্তা জার্নি করে এসেছিস, হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে।।
শিহাব চলেই যাচ্ছিলো, এমন সময় তার চোখ গেলো সাইলেন্ট করে রাখা ফোনটার উপর। ফায়াজ এখনো কল করেই যাচ্ছে। শিহাব ভ্রু বাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। বললো
“কে ফোন করছে?
আমি একবার ফোনের দিকে তাকালাম। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম
“যার সাথে আমার বিয়ে হবে।

শিহাব এবারে বসে পরলো আমার পাশে। মৃদু গলায় বললো
“এবারে আমি ঠিক বুঝতে পারছি।
“কি! বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
“তোর যে এ বিয়েতে মত নেই সেটাই বুঝলাম।
আমি কিছু বললাম না। ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। শিহাব আমার হাতে হাত রেখে নরম গলায় বললো
“তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস বল..
“হঠাৎ এ কথা কেন বলছিস?
“আমি বেশ বুঝতে পারছি এ বিয়েতে তোর মত নেই। কিন্তু ঠিক কি কারণে মত নেই এটা আমাকে বলবি? বিশ্বাস কর, আর যাইহোক.. এ শিহাব তোর মনের বিরুদ্ধে কিছু হতে দিবে না।

আমি আবারও হাসলাম। ফোনটার দিকে আবারও একবার দৃষ্টিপাত করে শিহাবের দিকে চোখ ফেরালাম। ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি টেনে বললাম
“সাপলুডু খেলেছিস কখনো?
“অনেক। কিন্তু এই কথা কেন বলছিস?
দেখলাম শিহাব আমার দিকে আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে। আমি আবারও বলতে লাগলাম
“সাপলুডুর ছক বেয়ে তুই যতই উপরে উঠতে যাস না কেন ভাই, নানা রকম সাপ তোকে কামড়ে কামড়ে নিচের দিকে টেনে হিচড়ে নামাবেই। তুই একটা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলেও, তোকে নিচে নামানোর জন্য অনেক সাপ সামনে অপেক্ষায় থাকবে। আমার জীবনটাও এমন রে। যতই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠি না কেন, আবারও নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাকে টেনে হিচড়ে নিচে নামিয়ে দেয়।

যখনই সুখের সিড়ির দেখা পায়, সেটা বেয়ে উপরে যাই.. দুঃখ নামের সাপগুলো আমাকে ছিড়ে ছিড়ে খায়।
আমার চোখের কোনে পানি। শিহাব ওর হাতের উল্টোপিঠে আমার চোখ মুছে দেয়। আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে শিহাবকে প্রশ্ন করি
“আচ্ছা বল তো শিহাব.. আমার জীবনটা নাহয় সাপলুডুর ছক বেয়েই যাচ্ছি, কিন্তু আমার শেষটা কি হবে? সাপলুডুর শেষটা সবার জন্য খুশির হয় না। কেউ একশ পাড়ি দিয়ে জয়লাভ করে, আবার কেউ নিরানব্বই এর কোঠাতেই সাপের মুখে পতিত হয়ে শেষ হয়ে যায়। আমার কোনটা হবে শিহাব?

শিহাব আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো
“এমনটা কেন ভাবছিস আপা? দেখে নিস তোর এমন কিছুই হবে না। আল্লাহ নিশ্চয়ই সামনে তোর জন্য ভালো কিছুই রেখে দিয়েছেন। আর তুই যদি মনে করিস এ বিয়েতে তুই সুখী হবি না, তাহলে এখনো সময় আছ, আমাকে শুধু একবার বল।
আমি হাসলাম আবারো, বললাম
“দ্বিতীয় বার বাবার মাথাটা কাটতে চাই না রে।

সারাদিন অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছে আমার বাবা আর দুই ভাই। মা ও অনেক ব্যস্ত। যেহেতু ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে, সে কারণে তেমন কোনো আত্মীয় আসবে না। শুধু মাত্র খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া। যারা আসার তারা বিকেল দিকে আসতে শুরু করেছে। কয়েক জন এসেও গেছে। আমি আমার রুমে বসে আছি চুপচাপ। আত্মীয়রা কিছুক্ষণ পর পর আমাকে এসে দেখে যাচ্ছে। কয়েকজন আবার মিনমিনে গলায় আমাকে আগের কথা মনে করিয়ে পরোক্ষভাবে কটু কথাও বলছে। আমি গায়ে মাখছি না সেসব। সন্ধ্যের পর মা এসে সামান্য রাগান্বিত গলায় আমাকে বললো
“ছেলেটা সারাটাদিন ধরে ফোন করেই যাচ্ছে। একবার কথা বললে ক্ষতিটা কি শুনি? কালকের পর থেকে তো ওরই বউ হয়ে বাঁচতে হবে তোকে।

আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বললাম
“আরেকবার কল করলে দিয়ে যেও।
মা আমার খুশি হলো। সে হাসিমুখে ফোনটা আবারও আমার সামনে রেখে বললো
“কিছুক্ষণের মধ্যে বোধহয় কল করবে। সুন্দর করে কথা বলিস।
আমি মাথা নাড়ালাম।
মা চলে যাবার কিছুক্ষণ পরই আবারও সে কল করলো। আমি রিসিভ করে সালাম দিলাম। তিনি সুন্দর ভাবেই উত্তর দিলেন। মিষ্টি গলায় বললেন
“সারাটা দিন কল ধরো নি কেন?
“ইচ্ছে করেনি।
“তবে এবার ধরলে যে?
“মা বললো তাই।

“আমার প্রতি এতো অভিমান?
আমি সামান্যই হেসে বললাম
“অভিমান তো কাছের মানুষের প্রতি হয়। আপনার প্রতি আমার কোনো অভিমান নেই।
বুঝলাম আমার কথায় তিনি কষ্ট পেলেন। তিনি শ্রান্ত গলায় বললেন
“আমি কি তোমার কাছের কেউ নয়?
“হয়তো না।

কয়েক সেকেন্ড আবারও দুইজন নিরব রইলাম। উনি প্রশ্ন করলেন
“তুমি কি অসুস্থ তনু?
“মোটেও না।
“তাহলে তোমার কন্ঠস্বর এমন শোনাচ্ছে যে?
“কেমন?
“ভারী ভারী লাগছে।
“তাহলে রেখে দিন, বুঝতেই তো পারছেন কথা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
“এতো রাগ! ঠিক আছে, কালকের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি হাসলাম। প্রত্যুত্তরে কিছু বললাম না।
উনি ফোন রেখে দিলেন, আমিও ফোনটা খাটের পাশে থাকা টেবিলটাই রাখলাম। উনি মিথ্যে কিছু বলেন নি, সত্যিই আমি অসুস্থ বোধ করছি।

রাতে মায়ের জোরাজুরিতে সামান্যই মুখে তুললাম। ইচ্ছে করছিলো না কিছু খেতে। কিন্তু মা না খাইয়ে ছাড়বেন না। মায়ের মন রাখতে তাই সামান্য খাওয়া। পানির জগ আর একটা মগ আমার রুমে রেখে মা চলে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন যেনো তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরি আর কিছু লাগলে যেনো মাকে ডাকি। আমি মাথা নাড়িয়ে মাকে সায় জানালাম।
বরাবর ফেইসবুক না চালালেও আমার ফোনে ফেইসবুক একাউন্ট খোলা ছিলো। শখের বসে খুলেছিলাম কিছুদিন আগেই। কখনোই তেমন এক্টিভ থাকা হয় নি। আজ হঠাৎ ইচ্ছে করলো কিছুটা সময় ফেইসবুকিং করার জন্য।

আমি আইডিটা লগ ইন করে আইডিতে ঢুকলাম। কিছুটা সময় ফেইসবুকিং করার সময় মনে হলো মৃদুলের কথা। ভাবলাম একবার ওর আইডিটা সার্চ করে দেখে আসি। কালকের পর থেকে তো অন্য কারো বউ হয়ে যাবো, চাইলেই আর দেখতে পারবো না। হয়তো মন থেকে মুছতে পারবো না, তবে ভুলে থাকার নাটকটা তো করতে হবে। তার আইডিটা সার্চ দেওয়ার সাথে সাথেই সামনে চলে এলো। আমি অতি আগ্রহে চটপট তার প্রোফাইলে গিয়ে ঢুকলাম।

প্রোফাইল পিকচারে অনেক সুন্দর একটা ছবি দেওয়া৷ দামী ব্র‍্যান্ডের একটা বাইকে বসে ছবিটা তুলা হয়েছে। তবে বাইকটা তো আগে ছিলো না! মনকে বুঝ দিলাম, হয়তো নতুন শশুড়বাড়ি থেকে পেয়েছে। আমি খুটে খুটে পিকটা বার বার দেখলাম।
এরপর স্ক্রল করে একটু নিচে আসতেই বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। নতুন বউ এর সাথে বেশ সুন্দর করে একটা পিক ছাড়া হয়েছে দুদিন আগেই।

ক্যাপশনে লিখা, ‘আমি অতীত নয়, বর্তমানে বিশ্বাসী। বুদ্ধিমান লোক কখনোই অতীতকে মনে রেখে কষ্ট পায় না, বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যায়। আর এভাবে এগিয়ে যাওয়াটাই বেটার। আমি নিজেকে বুদ্ধিমান দাবী করি না, তবে আমি বর্তমানেই খুশি’

হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো আমার, দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পরলো। এক অজান ডিপ্রেশনে তলিয়ে গেলাম আমি। মাথায় নানা ধরনের উদ্ভব চিন্তা কাজ করছে, নিজেকে সুস্থ মনে হচ্ছেনা। কেন জানি হঠাৎ করেই গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো আমার। মাথাটা ঘুরছে প্রচন্ডভাবে। চোখেও ঝাপসা দেখছি আমি। আমি টেবিলটার কাছে উঠে গিয়ে জগটা হাতে নিতে চাইলাম, তবে প্রচন্ড পরিমাণে হাত আর সারা শরীর কাঁপুনিতে হাত থেকে জগটা ফসকে গিয়ে নিচে পরে গেলো।

বিয়ের বাড়ির আমেজে সারা বাড়ি মেতে উঠেছে। সবাই যে যার মত কাজ করছে। বাচ্চারা হাতে মেহেদি দিচ্ছে, আনন্দ করছে। শিহাব বাড়ির এদিক ওদিকটা বেশ ভালো মতোই পর্যবেক্ষণ করছে। যেহেতু আয়োজন খুবই অল্প, তাই ছোটখাটো একটা প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে বাড়ির দক্ষিণ দিকটায়। ওদিকে বেশ আলো বাতাস আছে। বাবা সেদিকটার দেখাশোনা করছে। ভাইয়া আছে বাবুর্চিদের কাছে। শিহাব এদিক ওদিক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো, এরপর হঠাৎ কি মনে হল তার, সে চলে এলো রান্নাঘরে মায়ের কাছে। মাকে প্রশ্ন করলো
“মা, আপা কোথায়?
“ও তো উঠেনি এখনো। রান্নাঘরের কাজ সামলাতে সামলাতে উত্তর দিলো মা।
শিহাব অবাক হয়ে বললো
“অন্য দিন তো বেশ তাড়াতাড়িই উঠে পরে, আজ ওর বিয়ে তাহলে আজই কেন এতো দেরি করছে?.

“হয়তো মন খারাপ তাই শুয়ে আছে।
শিহাব চিন্তিত গলাতেই বললো
“হয়তো।
এরমাঝে মা আবারও বলে উঠলো
“তনুকে একটু ডেকে দে তো বাপ। এখন তো শুয়ে থাকলে হবে না। কত নিয়ম কানুন পরে আছে, সেগুলি এবার সেড়ে ফেলতে হবে।
শিহাব মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে রুমের কাছে চলে এলো। রুমটা ভেতর থেকে লাগানো। শিহাব দরজায় কড়া নাড়লো, কয়েক বার কড়া নাড়ার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। সে এবারে ডাকতে লাগলো
“আপা, আপা… আপা..
বার বার ডাকার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভেতর থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। শিহাব এবারে অনেক জোরে জোরে কড়া নাড়ছে আর সমানে ডেকে যাচ্ছে৷ ফল শূন্য। ওর ডাকাডাকির শব্দে এবারে বাবা আর ভাইয়া এসেও হাজির হলো এখানে। ভাইয়া অবাক হয়ে বললো
“কি হয়েছ?

আতংকিত গলায় শিহাব বললো
“অনেক্ষন ধরে ডেকে যাচ্ছি আপাকে, দরজা খুলছে না।
ভাইয়া সামান্য রেগে গিয়ে বললো
“আজ বিয়ের দিনে এটা আবার কোন ধরনের নাটক শুরু করেছে ও?
শিহাব ভাইয়ার বিপরীতে চটে গিয়ে বললো
“নাটক করার হলে ও আগেই নাটক করতে পারতো ভাইয়া।
বাবা তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন
“এই তোরা কথা কাটাকাটি পরে কর, আগে দরজা ভাঙ।

ততক্ষণে মাও চলে এসেছে এখানে, গুটিকয়েক আত্মীয় এসে জড়ো হয়েছে। মায়ের চোখেমুখে আতংক, কপালে চিন্তার ছাপ।।
অনেক চেষ্টার পর দরজা ভাংগা হলো। হুমড়ি খেয়ে ভিতরে ঢুকলো সকলেই। কিন্তু যা দেখলো তা দেখার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। মা চিৎকার করে বলে উঠলেন
“তনু রে… মা রে আমার। এ তোর কি হলো?
সকলের চোখেমুখে আতংক। তনুর নিথর দেহটা মাটিতে পরে আছে। পাশেই ভাংগা জগ, পানিতে ভিজে আছে সারা শরীর। শিহাব তনুর গায়ে স্পর্শ করে দেখলো গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। চিৎকার করে সে বলে উঠলো
“তারাতাড়ি আপারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো।

শীঘ্রই বাড়ির পাশের একটা সিএনজি ওয়ালাকে ডেকে আনা হলো, মায়ের আর্তনাদ আর আত্মীয়স্বজনের হাহাকারে পুরো বাড়িতে দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে। শিহাব, ভাইয়া আর বাবা মিলে তনুকে নিয়ে যাওয়া হলো হসপিটালে। হসপিটালে নেওয়া মাত্রই ইমার্জেন্সিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। পেছনের গাড়িতে মা’সহ কিছু আত্মীয়স্বজনেরাও আসছে। কিছুক্ষণ যাবৎ চেকাপ করার পরেই একজন ডক্টর বেরিয়ে এলেন। ততক্ষণে মা’সহ বাকিরাও চলে এসেছে।
ডাক্তার আসামাত্রই উনাকে ঘিরে ধরা হয়েছে। বাবা আতংকিত গলায় বললেন
“আমার মেয়ের কি অবস্থা ডাক্তার সাহেব?
উত্তর দেওয়ার আগেই শিহাব বলে উঠলো
“কি হলো, কিছু বলছেন না যে। আমার বোনটা এখন কেমন আছে? কি হয়েছে ওর?

“উনি আর বেঁচে নেই।

ডাক্তারের একটা ছোট্র উত্তরেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো চারপাশটা। সবাই হতভম্বের মতো তাকালো ডাক্তারের দিকে। হঠাৎ মায়ের আর্তচিৎকারে কেঁপে উঠলো হসপিটালটা। কেঁপে উঠলো বাকি সকলেই। বাবা থপ করে বসে পরলো হাসপাতালের ফ্লোরে। ভাইয়ার অবস্থাও খারাপ। শিহাব অবিশ্বাসের সাথে চিৎকার করে বলে উঠলো
“মানে কি এইসবের? কি বলছেন আপনার কোনো ধারণা আছে? এতগুলো মানুষের সামনে কি করে এমন মিথ্যা কথা বলতে পারেন আপনি?
ডাক্তার সাহেব শিহাবকে সামলে বললো
“দেখুন, আমরা ডাক্তাররা রোগীকে বাচাতে চেষ্টা করি, মারা যেতে নয়। আর মৃত্যু নিয়ে আমরা মজা করি না। উনি মারা গেছেন গতকাল রাতেই। আর আজ আপনারা আসছেন উনার ডেথবডি নিয়ে? সারাটা রাত কি করছিলেন আপনারা?

সবাই আবারও চমকালো। মা আবারও আর্তনাদ করে বললো
“আমার মেয়েটা গতরাতেও ঠিক ছিলো, আমি নিজে দেখে আসছিলাম।।
“হয়তো আপনি আসার পরেই সে স্ট্রোক করেছে।
বাবা বিস্ময়ে বলে উঠলো
“স্ট্রোক!!
“হুম, আপনার মেয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করেছে গতরাতে। হয়তো প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ছিলো, টেনশন করতো বোধহয় প্রচুর।

কিছুটা সময় সবাই নিস্তব্ধ, শুধু চিৎকার করে যাচ্ছে মা। ডাক্তার বললেন
“আমাদের কিছু ফর্মালিটি আছে, সেগুলো কমপ্লিট করে আপনারা লাশ নিয়ে চলে যেতে পারবেন।

তনুকে দাফন করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। জানাজায় ছিলো ফায়াজ সহ তার সাথে আসা পুরো বর‍যাত্রী। ফায়াজের চোখেও পানি, প্রচন্ড যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে তার বুকটাও। কিন্তু দেখাতে পারছেনা কাউকে। শিহাবকে দেখা গেলো কবরের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে থাকতে। বাবাকে আগলে ধরে রেখেছে কিছু আত্মীয়। মায়ের আহাজারিতে ভেসে যাচ্ছে পুরো গ্রাম। ভাইয়া গিয়ে হাত রাখলো শিহাবের পিঠে। শিহাব কেঁপে উঠলো। আর্তনাদ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরলো ভাইয়াকে। ভাইয়া নিজেও ভেঙ্গে পরেছে। তবে সবাইকে সামলানোর দায়িত্বে সে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে। শিহাব দৌড়ে এলো মায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরে বললো
“সাপলুডুর সমাপ্তিটা খুব খারাপ হলো মা, শেষে এসেও আমার আপাটা রেহাই পেলো না। খেয়ে নিলো মৃত্যু নামের সাপটা।

মা গম্ভীর, নিস্তব্ধ, শিহাবের মাথায় হাত রেখে শক্ত গলায় বললো
“কাঁদিস না বাপ, তনু ওর মেয়ের কাছে গেছে। মেয়ের ডাকে, সাড়া নিয়ে পারলোনা আমার মেয়েটা।

____[সমাপ্ত]____

[যারা যারা গল্পটা পড়ছেন, তারা রিয়েক্ট করে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন গল্পটা কেমন লাগলো। নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো খুব তারাতাড়িই]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here